আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসাম্রদায়িক সরকার ও সাম্প্রদায়িক হামলা

ধর্মই মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার সবচেয়ে বড় অন্তরায় গত শনিবার (০৩.১১.২০১২) রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার শিবপুর এলাকায় মাদ্রাসার কিছু “ধর্মবেশ্যা” বাউল গানের অনুষ্ঠানে হামলা চালায় এবং একজনকে হত্যা করে। আরও ১৫ জনের মতো আহত হয়। কি অন্যায় ছিল ওই বাউলদের যারা নির্জন একটা জায়গায় তাদের প্রাণের গানের আসর করেছিল? বাউলরা নিরীহ মানুষ। তারা লালনের দর্শনে দীক্ষিত হয়ে বাউল হয়েছে। তারা কারো কোন ক্ষতি করে না।

তারা কারো আগে বা পাছে থাকে না। যে বিত্ত-বৈভবের জন্য আমাদের অস্থিরতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, কাটাকাটি-মারামারি সেই বিত্ত-বৈভব আর সংসারের মোহ ত্যাগ করে তারা “মনের মানুষের” খোঁজে ঘুরে বেড়ায় এখানে সেখানে। তাদের দ্বারা কখনও কারও অনিষ্ট সাধন হয়েছে এমনটা শোনা যায়নি। বাউলরা মানুষে মানুষে জাতী, ধর্ম, বর্ণ, ধনী, গরীব যাবতীয় ভেদাভেদ অস্বীকার করে, সাম্যতার ডাক দেয়, মানবতার ডাক দেয়। এই কি তাদের অপরাধ? নাকি তারা নিরীহ এটাই তাদের অপরাধ? শাহ্ আব্দুল করিম, হাছন রাজা, কুদ্দুস বয়াতির ভূমি সিলেটে বাউলদের উপর এই আক্রমণ লজ্জাস্কর।

এদেশে গুণীর কদর নাই। তাই লালনেরও এদেশে মুল্য নাই। লালনের জীবদ্দশায়ও তাঁর উপর “ধর্মবেশ্যারা” আক্রমন করেছিলো। সেই আক্রমন এখনও চলছে। লালনের মতো এমন মহাত্মা যিনি তাঁর গানের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এবং তাঁর মনবতাবাদী দর্শনের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত করেছেন তাঁর প্রতি নুন্যতম সম্মানটুকুও আমরা দিতে পারিনি।

বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকা বিমানবন্দরের সামনে লালনের একটা ভাস্কর্য হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সরকার ওই “ধর্মবেশ্যাদের” ঘেউ ঘেউ এর কাছে নতি স্বীকার করে ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ রাখে যা অত্যান্ত লজ্জাজনক। এরূপ নতি স্বীকারের ফলশ্রুতিতেই আমিনির মতো লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যগুলো ভাঙ্গার হুমকি দেয়। বেশ্যালয়ের চারদেয়ালের গণ্ডি একজন বেশ্যার দুনিয়া। তার খদ্দের আর খিস্তি তার দুনিয়া। বাইরের পৃথিবী তার কাছে অজানা, অচেনা।

তেমনি মাদ্রাসা নামক ধর্মবেশ্যালয়ে যারা বড় হয় তাদের চিন্তার গণ্ডিও এর ভেতরেই সীমাবদ্ধ। আলিফ, বা, তা পর্যন্ত যাদের দৌড়। দিনে পাঁচবার মাটিতে ঠক ঠক করে মাথা ঠোকাই যাদের জীবনের অন্যতম প্রধান কর্ম। আরবি অক্ষরে লেখা অশ্লীল কথাও তাদের কাছে জীবনের চেয়ে অধিক মূল্যবান। এরা সুন্নত রক্ষার্থে মূত্রত্যাগের পর বেহায়ার মতো লিঙ্গ ধরে লম্ফঝম্ফ করে আর দুর্গন্ধযুক্ত ঢিল আর কাপড়ের টুকরোর স্তূপ তৈরী করে পরিবেশ দূষণ করে।

তবে এর চেয়েও অধিক দুর্গন্ধ পাওয়া যায় তাদের গায়ে, ঘামের কারনে। কারণ তারা নবীজির সুন্নত রক্ষা করতে গিয়ে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমেও মাথা থেকে পা পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে রাখে। আরবী হরফে লেখা গুটিকয়েক কিতাবের বাইরে আর সব কিছু তাদের কাছে হারাম। কবিতা, গান, শিল্প, সাহিত্য সব তাদের কাছে হারাম জিনিস। লালন, রবীন্দ্রনাথ, জীবনান্দ, সুনীল, শেইক্সপিয়ার, কিট্স, হোমার, রবি শংকর, ডারউইন, ফ্রয়েড, আইনস্টাইন, নিউটন এরা সবাই তাদের কাছে বিধর্মী কাফির ছাড়া আর কিছুই নয়।

নারী তাদের কাছে মানুষরূপী যৌন চাহিদা মেটানোর বস্তু আর সন্তান উৎপাদনের মেশিন। তাদের শেখানো হয় ভিন্ন বিশ্বাসের সবাই তাদের চরম শত্রু। শেখানো হয় ভিন্ন বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র নামে, ধর্মের নামে জিহাদ, জিহাদে মৃত্যু হলেই শহীদ-নিশ্চিত বেহেস্তের টিকিট। বেহেস্তে গেলেই সঙ্গমের জন্য সদা প্রস্তুত চিরকুমারী, চিরসবুজ সুন্দরী নারী। আহ্ ... সার্থক জনম মোর।

বলতে পারেন একটা পশু আর এদের মধ্যে পার্থক্য কতখানি? মনে হয় না খুব বেশী। এরাই লালনের উপর হামলা করে, মন্দির আগুন দেয়, উদীচীতে বোমা মারে, Innocence of Muslim এর প্রতিবাদে গাড়ি ভাংচুর করে, মালালাকে খুন করতে গুলী করে, রামুতে-উখিয়াতে বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে ভস্ম করে। এই পশুদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী কি বা আশা করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা, আমাদের সরকার এইসব পশু সৃষ্টির খামার বা ধর্মবেশ্যালয়গুলোকে ধ্বংস করি না কেন? ধ্বংস তো করি না বরং তাদের অন্যায় আবদারগুলোকে মেনে নিয়ে প্রশয় দিয়ে থাকি। একের পর এক তারা হামলা করে আমদের সংস্কৃতির উপর, খুন করে একের পর এক নিরীহ বৌদ্ধ ভিক্ষু আর বাউলদের মতো মানুষ।

কোন বিচার হয় না। সরকার আসে সরকার যায়। বি, এন, পির কাছে এ ব্যাপারে কোন প্রত্যাশা নাই কারণ তারা নিজেরাই তাদের বন্ধু। কিন্তু আওয়ামীলীগ যারা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তারা কি করে? এই সরকারের আমলেই তো অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। কেন তাদের সময়ে মহাপুরুষ লালনের ভক্তদের মতো নিরীহ বাউলদের অনুষ্ঠানে ঘৃনিত এবং বর্বরোচিত হামলা করা হয়, তাদের চুল কেটে ফেলার মতো অমার্জনীয় অপরাধ সংঘটিত হয়।

তার চেয়ে বড় কথা এই অপরাধের কোন বিচার হয় না। তাহলে কি আমি বলতে পারি না যে এইসব কাজে সরকারের সমর্থন আছে? বিচার হয় না বলেই এবং সরকারের সম্মতি আছে বলেই ওই সব মানুষরূপী নিকৃষ্ট পশুরা বারংবার নিরীহ বাউলদের উপর হামলা চালায়। আমরা এইসব অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। আমারদের ভোটে নির্বাচিত এবং আমাদের করের টাকায় পরিচালিত সরকারের কাছে এই চাওয়া নিশ্চয়ই অসম্ভব বা অযাচিত কোন চাওয়া নয়, বরং একান্তই ন্যায্য দাবী যা আমাদের চাওয়ার অপেক্ষা রাখে না।

আর আমরা নিজেরা কি কিছুই করতে পারি না? অবশ্যই পারি। আসুন আমরা মাদ্রাসা নামক ওই ধর্মবেশ্যালয় বন্ধে বদ্ধপরিকর হই। আমাদের কোমলমতি শিশুদের ধর্মবেশ্যা বা পশুর খোঁয়াড়ে না পাঠাই, তাদের মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দেয় যারা গান শুনবে, কবিতা পড়বে, গানের-কবিতার আসরে বসাবে। যারা নজরুলের সাথে বলবে, “বল বীর চির উন্নত মম শীর”, রবীন্দ্রনাথ পরে জানবে, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়” আর লালনের সাথে গাইবে, “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে” অথবা “সময় গেলে সাধন হবে না”। [বিঃদ্রঃ আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনসময়ই “বেশ্যা” বা “বেশ্যালয়” শব্দ গুলো ব্যবহার করি না।

পরিবর্তে, আমি “যৌনকর্মী” এবং “যৌনপল্লী” ব্যবহার করি। মাদ্রাসার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে আমি ওই শব্দগুলো ব্যবহার করেছি। ]  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.