আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাখালীর ইস্ট-ওয়েস্ট ক্যাম্পাস

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! মহাখালীর ইস্ট-ওয়েস্ট ক্যাম্পাস ---------------ড: রমিত আজাদ তারুণ্যের উচ্ছলতা, যৌবনের উদ্দামতা, শিক্ষার্থীদের পদচারণা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা, এই সবকিছুতে কেমন মুখরিত ছিল মহাখালীর ইস্ট-ওয়েস্ট ক্যাম্পাস। সায়াহ্নের সূর্য হেলে পড়ত বনানির লেকে, গাউছুল আজম মসজিদ থেকে ভেসে আসতো মধুর আজানের সুর, আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত মহাখালীর ব্যাস্ত সড়ক, তার প্রায় পাশ ঘেষে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচটি বহুতল ভবন কেমন ঘিরে ফেলেছিল, কমার্শিয়াল জায়েন্ট স্কয়ার-কে বন ছেয়ে যাওয়া পিংক কাসিয়া ফুলের মত ফুরে ফুরে উল্লাসে ভরপুর চত্বরে বছরের প্রতিটি দিনই ছিল যেন ফুলেল বসন্ত, ঐটুকু ক্যাম্পাস হতোনা রঙিন কৃষ্ণচূড়া আর বেগুনী জারুলে ছেয়ে, বাগানবিলাস আর মালতিলতাও ঢেউ খেলেনি ছাদে না ছিল দেবদারু আর নাগকেশরের আবাহন তারপরেও অপুর্ব সুন্দর ছিল ঐ ধুলোমাখা ক্যাম্পাস জোন একটি বটগাছ ছিল কেবল নামেই, বটের বিশালত্ব ছিলনা কিছুই, বড় কোন রেইনট্রির কাছে সে একেবারেই ছোট্টটি, তারপরেও তো বট তলা! কেমন জমজমাট আড্ডা জমে যেত ঐ ছোট্ট বটের নীচেই! বৃক্ষ, বিটপী, বাগান ভরা অপূর্ব শোভাময় ছিলনা তো সে, তারপরেও রঙে রঙে রাঙত তার আকাশ, আমাদের মনের রঙে। ক্যাম্পাসের একটি মাত্র ভাঙাচোরা পথ ঐ নাতিদীর্ঘ পথের ধারেই ছিল টং দোকান একটা ক্লাস শেষ হলেই চা খেতে ছুটে যাওয়া, মন ছুঁয়ে যেত বনানীর লেক থেকে ভেসে আসা দক্ষিণা ক্লান্ত হাওয়া। কখনো যানবাহন ও যানজটের অনেক ধকল সয়ে আসতে আসতে খিটখিটে হয়ে যাওয়া মেজাজটা ক্যাম্পাসে ঢুকলেই কেমন ভালো হয়ে যেত! প্রিয় ছিল বড় বেশী ঐ মুখরিত ক্যম্পাস কত। নিশ্চুপ ক্লাসরূমগুলোতে শিক্ষকদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা বুক ঢিপঢিপ করে একমনে লিখে যাওয়া পরীক্ষার হল, দশতলার ছোট্ট একটি ক্যান্টিন আমাদের হৈচৈ-এ উচ্ছল হয়ে ওঠা। মধুচাঁদ হেসে উঠা বহুতল ভবন গুলোর ছাদ গায়ে গা ঘেষে পাচটি ভাই যেন পরিচিতি মুখগুলো বারবার দেখেও হতোনা ম্লান, ছুটির দিনগুলোতেও ঝট করে চলে আসতাম যদি কারো দেখা পাই! অনেক টুকরো স্মৃতি ছড়িয়ে আছে ক্লাশরুমে, লাইব্রেরীতে, ডিপার্টমেন্টে, ল্যাবরেটরিতে, স্যারের রূমে আর অডিটোরিয়ামে, ঠাট্টার পর কৌতুক খেলা চোখে সহপাঠির অট্টহাসির উন্মত্ততা, কখনো কখনো মনের গভীরে প্রিয়জনের এঁকে দেয়া দু'একটি টুকরো ব্যাথা, সহপাঠিনীর মৃদু হাসি, কপট অভিমান, রঙতুলি আর ধুলিমাখা এক চিলতে বিকেল এক নিজস্ব ব্যাকুলতায়, কেমন আকুল হয়ে উঠত মন! এই সব কিছু দেখে দেখে মনে মনেই লিখে ফেলতাম দু'একটি রোমান্টিক কবিতার গান। সময়ের প্রয়োজনে সে ক্যাম্পাস গিয়েছে সরে, সব উচ্ছাস, উল্লাস, উৎকন্ঠা, অভিমান, আনন্দ হাসি ভালোবাসা আর বেদনার গান, এখন আফতাব নগরের নবনির্মিত ভবনে, নতুন ছাত্রদের, নতুন স্বপ্নের, আরেকটি নতুন ভুবনে, একদা তারুণ্যের উচ্ছলতায় মুখরিত মহাখালীর ক্যাম্পাস এখন নিতান্তই অফিস পাড়া। নিরানন্দ, নিশ্চুপ শূণ্যতায় নিঃসিম স্থবিরতা, কেবলই স্মৃতিচারণমূলক নিরব নিথর কবিতা!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।