বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়।
ওভিদঃ ল্যাটিন কবি ওভিদ ছিলেন অগাস্টাসের রাজত্বকালীন সময়ের কবি। তিনি চিরায়ত পুরাণতত্ত্বের প্রায় পুরোটাই লিখেছিলেন। সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমে তিনি সুপরিচিত পৌরাণিক কাহিনীগুলোকে বর্ননা করলেন বিশাল অবয়বে। একজন বড়ো কবি ও দক্ষ গল্পকার হলেও তিনি চিরচেনা পৌরাণিক বিষয়বস্তু থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিলেন।
তার পূর্ববর্তী লেখক ও কবিদের তিনি মূর্খ বলে অভিহিত করেছেন ও তাদের বর্নিত পুরাণকে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করেছেন - তার ভাষায় “চমৎকার ভাবে ও অধিকতর সুচারুরূপে”। কিন্তু প্রাচীন গ্রীক কবি হেসিওড ও পিন্ডার যেভাবে লিখেছিলেন, তা ছিলো তাদের কাছে আশাজাগানিয়া গভীর ধর্মীয় সত্য। সেগুলো ওভিদের হাতে হয়ে উঠলো যথার্থ গল্প, কখনো রসালো ও আনন্দদায়ক, কখনো আবেগ সম্পৃক্ত ও চরমভাবে বাগড়ম্বরপূর্ন। কিন্তু প্রাচীন রচয়িতাগণ বাগড়ম্বরপূর্ন নন, ভাবপ্রবণতা থেকেও তারা ছিলেন অনেকাংশে মুক্ত।
হেসিওডঃ হেসিওড ছিলেন খৃস্টপূর্ব দশম শতকের, যদিও কেউ কেউ ধারণা করেন নবম শতকের।
তিনি ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, স্বাভাবিকভাবেই তার জীবন ছিলো কষ্ট ও তিক্ততায় ভরপুর। এই রুঢ় পৃথিবীতে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয় তা তিনি দ্যাখানোর চেষ্টা করেছেন তার “কাজ ও দিনসমূহ” কাব্যে। প্রথম কাব্য জীবনযাপন নিয়ে লিখলেও দেবতাদের নিয়ে তার অনেক কিছু বলার ছিলো, যা তিনি বলেছেন তার দ্বিতীয় কাব্য “থিওগোনি” তে। তার বর্ননা সত্য হলে তিনিই ছিলেন প্রথম গ্রীক, শহর থেকে বহুদূরে বাস করা একজন বিনয়ী কৃষক যার মনে উদয় হয়েছিলো এই বিশ্বভ্রহ্মান্ড সৃষ্টির কারণ, দেবতা ও মানবজাতির রহস্য, তিনি খুঁজে বেড়িয়েছেন এইসবের কোন ব্যাখ্যা। এইসব নিয়েই তার পুরাণতত্ত্বভিত্তিক কাব্য “থিওগোনি”।
হোমারঃ হোমার খৃস্টপূর্ব দশম শতকের একজন অন্ধ কবি। তার রচিত “ইলিয়াড” ও “ওডিসি” ধারণ করে আমাদের কাছে আগত প্রাচীন গ্রীক পুরাণতত্ত্বের অনেকটা। যদিও তার রচনাকাল সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, ধারণা করে হয় তার রচনা “ইলিয়াড” খৃস্টপূর্ব দশম শতকে রচিত। হোমারের “ওডিসি” ও “ইলিয়াড” হেসিওডের “কাজ ও দিনসমূহ” ও “থিওগোনি” এর সাথে তূলনাযোগ্য। তিনি অনেক ত্রোস্তগীত রচনা করেছেন।
ত্রোস্তগীত হলো এক ধরণের কবিতা, যেগুলো বিভিন্ন দেবতাদের বন্দনা করে লিখা হয়েছিলো। এগুলোর রচনাকাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা সম্ভব না। তেত্রিশটি ত্রোস্তগীত উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্নজনের বর্ননায়।
পিন্ডারঃ পিন্ডার ছিলেন গ্রীসের সর্বশ্রেষ্ঠ গীতি-কবি। খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন।
গ্রীসের জাতীয় উৎসবসগুলো ও বিভিন্ন খেলাধুলায় বিজয়ীদের জন্য তিনি স্তুতিমূলক গাঁথা রচনা করেন। এইসব স্তুতিমূলক প্রতিটি কবিতায় প্রচ্ছন্নভাবে বিবৃত হয়েছে বিভিন্ন পুরাণ। গুরুত্বের দিক দিয়ে তিনি হেসিওডের সমান।
আলেকজান্দ্রীয় কবিগণঃ খৃস্টপূর্ব ২৫০ সালের দিকে গ্রীক সাহিত্যের কেন্দ্র গ্রীস থেকে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় সরে গিয়েছিলো। এই সময়ের মধ্যে যারা কাব্যসাহিত্য রচনা করেছিলেন তাদেরকে আলেকজান্দ্রীয় কবি বলে অভিহিত করা হয়।
রোডসের অ্যাপোলিনিয়াস, থিওক্রিটাস, বায়ন ও মস্কাস – এই চারজন ছিলেন আলেকজিন্দ্রীয় কবি। অ্যাপোলিনিয়াস লিখেছেন বিখ্যাত স্বর্ণমেষের চামড়া অভিযান, বর্ননা করেছেন আরো কিছু পুরাণ। আলেকজিন্দ্রীয় কবিগণ হেসিওড ও হোমারের পুরাণতত্ত্বভিত্তিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও ট্র্যাজেডি রচয়িতাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীর ভাবগাম্ভীর্য ও গভীরতা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলেন, তবে ওভিদের মতো এতোটা দূরে যাননি।
ট্রাজেডি রচয়িতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন সফোক্লেস (উপরের ছবিতে)। তার বিখ্যাত ট্র্যাজেডি “কিং ঈডিপাস” অ্যাখনো সমান জনপ্রিয়।
আরেকজন হলেন ইওরিপিডাস, দুইজনই ছিলেন অপেক্ষাকৃত তরুণ। প্রবীণতম ট্র্যাজেডি রচয়িতা ঈস্কিলাস পিন্ডারের সম-সাময়িক। ঈস্কিলাসের “পারস্যবাসীরা” ছাড়া সকল নাটকেই রয়েছে পৌরাণিক বিষয়বস্তু। আরো একজন গ্রীক লেখক ছিলেন অ্যাপোলোডোরাস। ওভিদের মতোন বিশাল পরিসরে পুরাণতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন তিনি, কিন্তু ওভিদের তূলনায় তার রচনাভঙ্গী ছিলো অনেক বেশি বস্তুনিষ্ঠ ও বৈচিত্রবিহীন।
এইকারনে তার জনপ্রিয়তাও ছিলো অনেক কম। তার রচনাকাল খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক বলে জানা যায়।
আরো কয়েকজন গ্রীক কবি-লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কমেডির রচয়িতা অ্যারিস্টোফেনেস, তার সময়কাল খৃস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে চতুর্থ শতক পর্যন্ত। তার কমেডি জুড়েও থাকতো পুরাণতত্ত্ব। আরেক গ্রীক লেখক লুসিয়ানের লেখার ধরণটি ছিলো একেবারেই স্বতন্ত্র।
তিনি তার লেখায় দেবতাদের বিদ্রুপাত্মক চরিত্রে পরিণত করেন। তার লেখায় দেবতারা হয়ে উঠলেন তামাশার বিষয়। তারপরেও তিনি দেবতাদের সম্পর্কে অনেকটাই তুলে এনেছেন।
রোমান কবি-লেখকদের পুরোধা হলেন ভার্জিল (উপরের ছবিতে), সম-সাময়িক ওভিদের মতো দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন হলেও পৌরাণিক চরিত্রসমূহের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন মানবিক বৈশিষ্ট্য। এইসব চরিত্রের মধ্যে তিনি মর্তের জীবন সঞ্চারিত করেন।
উল্লেখযোগ্য আরেক রোমান লেখক হলেন আপুলিয়াস। কিউপিড ও সাইকি’র মতো বিখ্যাত কাহিনীটি লিখেছেন আপুলিয়াস, অনেকটা ওভিদের মতো করে। আরো অনেক রোমান কবি-লেখক পুরাণতত্ত্ব নিয়ে লেখালেখি করেছেন, য্যামন হোরেস। কিন্তু তারা কেউই ততোটা গুরুত্বপূর্ন নন। মূলত গ্রীক কবি-লেখকেরাই হলেন পুরাণতত্ত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ, তারা যা বিশ্বাস করেছেন তাই লিখেছেন।
আরো পড়তে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।