আমাদের চারিপাশে রয়েছে বিভিন্ন রকম পরিবেশ তার
মধ্যে একটি হলো ইকোলজিক্যাল (Ecological)
পরিবেশ। সাধারণত ইকোলজিক্যাল পরিবেশ বলতে
মানুষ এবং তার চারিপাশের বিদ্যমান প্রাণীদের সাথের
সম্পর্ক কে বুঝায় । আসুন আজ আমরা জেনে নেই
কিছু প্রাণী সম্পর্কে -
১. ইঁদুর (Rat)
ইঁদুর Rodentia বর্গের Muridae গোত্রের লম্বা লেজবিশিষ্ট
স্তন্যপায়ী । ইঁদুর Rattus ও এর নিকট সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি
গণের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি। ইঁদুর সব ধরণের পরিবেশ খাপ খাওয়াতে
পারে এবং কুমেরু ছাড়া পৃথিবীর স্থলভাগের সর্বত্র বিস্তৃত।
সব
ধরণের খাদ্যে অভ্যস্ত হওয়ায় সামর্থ্য ও অত্যধিক প্রজনন
ক্ষমতর কারণে পরিবর্তনশীল পরিবেশে অভিযোজনে দক্ষতা
Rodentia বর্গের সাফল্যের মূল কারণ ।
চোয়ালের পেশীবিন্যাস ও করোটির নানা বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে
রোডেন্টরা তিনটি দলে বিভাজ্য : কাঠবিড়ালীসদৃশ, ক্যাভিসদৃশ,
ও ইঁদুরসদৃশ। স্থন্যপায়ীদের সর্বমোট প্রজাতির এক-চতুর্থাংশের
বেশি তৃতীয় দলের অন্তভুক্ত। Muridae গোত্রের সহস্রাধিক প্র-
জাতির মধ্যে বাংলাদেশে আছে ১০ প্রজাতির ইঁদুর। এগুলি স্বল্পায়ু
হলেও অল্পবয়স থেকেই পর্যাপ্ত প্রজননক্ষম।
এদের রজঃচত্র ও
প্রসবকাল সংক্ষিপ্ত এবং প্রজনন মৌসমুম দীর্ঘ ।
কিছু ইঁদুর ও নেংটি (নেংটি ইঁদুর=House rat) ইঁদুর দু’মাসের
মধ্যেই প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে, তিন সপ্তাহ গর্ভধারণের পর প্রতিবার
৮ টি বাচ্চা প্রসব করে এবং ত-৪ সপ্তাহ পর আবারও বাচ্চা দেয়।
এর সাধারণত ২ বছরের বেশি বাঁচে না । এগুলি রোগজীবাণুর (প্রায়
২০ ধরণের) বাহকও । ইঁদুরের এক বহিঃপরজীবি ফ্লি (Flea) মানুষের
প্লেগ রোগের জীবাণু ছড়ায়।
এগুলির মাংস কোন কোন আদিবাসীর
খাদ্য। পোষা ইঁদুর ও বাদমি ইঁদুর গবেষণাগারে এবং ঔষধ ও
অন্যান্য সামগ্রী পরীক্ষায় সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
২.অজগর
অজগর (Python) Serpantes বর্গের অন্তর্গত Boidae গোত্রের
নির্বিষ সাপ্ অজগরের ৯ টি প্রজাতি আছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এ-
শিয়া, নিউগিনি এবং অস্ট্রোলিয়ায় অজগর রয়েছে। করোটির গঠন ও
প্রজনন পদ্ধতি দ্বারা অজগরকে বোয়া থেকে পৃথক করা যায়।
অজগর
প্রকাণ্ড আকৃতির সাপ। এদের দেহের ব্যাস তুলনামূলকভাবে দৈর্ঘ্যের
দিক থেকে অন্য যেকোন সাপের তুলনায় বেশি । আঁশ মসৃণ। অজ-
গরের দাঁত অত্যন্ত শক্তিশালী কিন্তু কোন বিষদাঁত নেই। গ্রীবা স্পষ্ট,
মস্তক প্রশস্ত এবং তুণ্ড দীর্ঘ।
অধিকাংশ াজগর কিচুটা বৃক্ষবাসী। বনে-জঙ্গলে এদের পাওয়া যায়।
তবে নদী, হাওর কিংবা ঝিলেও অজগর দেখা যায়। পানিতে এরা স্থির
ভাবে থাকে, প্রয়োজনে দক্ষতার সাথে সাঁতারও কাটতে পারে। তবে
অজগর সাধারণত পানির কিনারায় তুণ্ড বাইরে রেখে আংশিক কিংবা
সম্পূর্ণভাবে ডুবে থাকে।
সম্ববত ছাগল অথবা ছাগলের মতো অন্য প্রাণী
শিকার করে খায় বলেই স্থানীয়ভাবে এদের নাম দেয়া হয়েছে অজগর।
বাংলাদেশে অজগরের দুটি প্রজাতি আছে । এর একটি অজগর বা
ময়াল সাপ (Rock Python) , Python molurus এবং অন্যটি
গোলবাহার (Reticulated Python), Python reticulata।
সাপের মধ্যে সবচেয়ে বড় ময়াল সাপ। এরা ৫.৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা
হয়।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অথবা দক্ষিণ-পূর্ব অচ্ঞলে মিশ্র-চিরহরিৎ
বনে এদের পাওয়া যায়। ময়াল সাপ দেখা যায় সুন্দরবনে ও চট্রগ্রামের
পার্বত্য অনচলে। বাংলাদেশে দুটি প্রজাতির অজগর সাপ ই বিরল ।
দেশে উভয়কে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অজগর
স্তন্যপায়ী, পাখি এবং সরীসৃপজাতীয় প্রাণী নির্বিচারে খায়।
তবে
স্থন্যপায়ী প্রাণী বেশি পছন্দ করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর
, খরগোশ, ছাগল , ভেড়া, শিয়াল এবং হরিণ শিকার করে। খাবার
পূর্বে অজগর তার শিকার পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ/বন্ধ করে মেরে ফেলে।
অজগর এর প্রজনন সময় শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারি মাসের
মধ্যে। যৌন মিলনের তিন-চার মাস পরে এরা ডিম দেয়।
ন্ত্রী অজগরের
চারদিকে কুণ্ডলী পাকিয়ে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে মা তাদের
পরিচর্যা করে না। অজগরের চামড়ার বাণিজ্যিক মূল্য খুব বেশি।
৩ কাঠবিড়ালী
কাঠবিড়ালী (Squirrel) Rodentia বর্গের Sciuridae গোত্রের প্রধানত
বৃক্ষবাসী স্থন্যপায়ী । শরীর লম্বাটে, লেজ লম্বা ও ঝোপালো।
কাঠবিড়ালী
বহুদৃষ্ট স্তন্যপায়ীর অন্যতম। অস্ট্রেলিয়া ও কুমেরু ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র আছে।
উসনোমণ্ডলীয় কিছু কাঠবিড়ালীর শরীরে কালো ও সাদা ডোরা থাকে। অনে-
কেরই চোখ বড়, দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ন এবং আছে ডালপালার মধ্যেকার দুরুত্ব মাপার
মতো প্রখর বোধশক্তি। এদের সামনের পা খাটো, পায়ের আঙুলে ধারালো নখ, তা
দিয়ে বৃক্ষবাসী প্রজাতিরা স্বচ্ছন্দে গাছে ওঠানামা করে।
পেছনের পা খাটো, পায়ের
আঙুল এ ধারালো নখ, তা দিয়ে বৃক্ষবাসী প্রজাতিরা স্বচ্ছন্দে গাছে ওঠানামা করে।
পেছনের পা থেকে সামনের পা পর্যন্ত ছড়ানো ও কজ্বিতে যুক্ত লোমশ চামড়া।
হাত-পা ছড়িয়ে এরা শরীরের উপরিতলের আয়তন বাড়িয়ে লেজকে হাল হি-
সেবে ব্যবহার করে এক গাছ থেকে অন্য গাছে দৌড় বা গাছে ওঠায় অসুবিধা
এড়াতে এ টি গুটিয়ে রাখে। উডুক্কু কাঠবিড়ালী সাধারণত কাঠবিড়ালীর তুলনায়
কম চটপটে। গোটা বিশ্বের কাঠবিড়ালী প্রজাতি সংখ্যা ২৭০ , বাংলাদেশে
রয়েছে ৮ প্রজাতি।
৪.কাক
কাক Passeriformes বর্গের Corvidae গোত্রের তুলনামূলকভাবে বড়
আকারের অতি পরিচিত পাখি। দেহ চকচকে কালো রঙের এবং অধিকাং-
শেরই শক্তিশালী কালো ঠোঁটের গোড়া পালকে ঢাকা। কাক সর্বভুক। প্রকৃত
কাকেরা Corvus গণবুক্ত, যারা সাধারণত কালো রঙের এবং পৃথিবীর
সর্বত্র বিস্তৃত। অত্যন্ত বুদ্ধিমান এই পাখি সহজেই পোষ মানে, মানুষের কণ্ঠ-
স্বর অনুকরণেও দক্ষ।
শুধু কা কা নয় সুরেলা কণ্ঠেও ডাকে। এরা যুথচর,
মাঝে মধ্যে খুব বড় দলেও থাকে, কিন্তু একত্রে ঘুমায় না। প্রত্যেক জোড়ার
পৃথক বাসা থাকে। বাসা খুব সাধারণ , ডালপালার একটি মাচান। ন্ত্রী ও
পুরুষ উভয়ই বাসা তৈরি করে, বাচ্চাদের খাওয়ায়।
গাঢ় দাগসহ হালকা
সবুজ বা জলপাই রঙের ৫-৬ টি ডিম পাড়ে। পালাক্রমে দুজনই ডিমে তা
দেয়। কোকিলরা বাসা বানায় না, প্রায়শ কাকের ডিম ফেলে দিয়ে ওদের
বাসায় ডিম পাড়ে। পৃথিবীতে কাকের (Corvus গণের) প্রজাতি সংখ্যা
৪৩, তন্মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ২টি । একমাত্র দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া
কাকদের প্রজাতি প্রত্যেক মহাদেশেই আছে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।