আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজয়ের পথে দেশের জাহাজশিল্প

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অপার সম্ভাবনাময় সেক্টর হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে উঠেছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প। বিদেশে যে জাহাজটি নির্মাণে ৪০-৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হয় সেই জাহাজটি নারায়ণগঞ্জ বন্দর ডকইয়ার্ডে নির্মাণ করতে ব্যয় হবে মাত্র ৯-১০ কোটি টাকা। নির্মিত এ জাহাজগুলো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

সে ক্ষেত্রে দেশেই থেকে যাবে দেশের অর্থ। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানি করা গেলে উপার্জন করা যাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু অপার সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি প্রতিবন্ধকতা ও অবহেলায় রুগ্ণ হয়ে আছে। নানা নিয়মের বাঁধনে শিল্পটির উন্নয়নে পথে পথে রয়েছে অন্তরায়। সরেজমিনে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও রূপগঞ্জে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জাহাজ নির্মাণ শিল্প।

এ শিল্পকে ঘিরে লাখো মানুষের পদচারণায় এখন কর্মমুখর জনপদে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। বন্দর উপজেলায় আলিফ ডকইয়ার্ড, জননী ডকইয়ার্ড, বাদশা ডকইয়ার্ড, নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড, বন্দর ডকইয়ার্ড, খন্দকার ডকইয়ার্ড, সাওঘাট ডকইয়ার্ড, একরামপুর ডকইয়ার্ড, শাহ আলম ডকইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং ডকইয়ার্ড, জামান ডকইয়ার্ড রয়েছে। অপর দিকে রূপগঞ্জে মাস্টাং ডকইয়ার্ড, খান ডকইয়ার্ড, ফাহিম ডকইয়ার্ড, শামস ডকইয়ার্ড, তালহা ডকইয়ার্ড, আমির ডকইয়ার্ড, মালেক ডকইয়ার্ড, ফটিক ডকইয়ার্ড, ভাই ভাই ডকইয়ার্ড, মনির ডকইয়ার্ড, মাস্টাং ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। ট্যাঙ্কার শিপ, কার্গো শিপ, প্যাসেঞ্জার শিপ, ক্যাটামেরিন শিপ, ওয়াটার বাস, ফেরি, জেটি, পন্টুন, বালুবাহী ট্রলার, ড্রেজারসহ বিভিন্ন শিপ তৈরি হয় শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা এসব ডকইয়ার্ডে। দিনভর টানা খুটখাট আর টং টং শব্দে মুখরিত এলাকাতে অচেনা আগন্তুক এলে হয়তো ভাবতে পারেন এলাকাজুড়ে চলছে উৎসব।

এ ছাড়া জাহাজ তৈরির কারখানাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে গর্দার ব্যবসা, লেদ মেশিন, খুচরা যন্ত্রাংশ আর পান-সিগারেটের দোকান দিয়ে এলাকার মানুষ বাড়তি উপার্জন করছে। বন্দর উপজেলার বন্দর ডকইয়ার্ড, খন্দকার ডকইয়ার্ড ও সাওঘাট ডকইয়ার্ড ভাড়া নিয়ে জাহাজ তৈরির কাজ করছেন থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের এজিএম (পারচ্যাজ) মো. লোকমান হোসেন জানান, বিদেশে একটি ভ্যাসেল তৈরিতে যেখানে ৪০-৪৫ কোটি টাকার প্রয়োজন সেখানে তারা মাত্র নয় কোটি টাকায় তা তৈরি করছেন। যিনি ওই ভ্যাসেলটি অর্ডার দিয়েছেন তিনি তা বিদেশে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে হিসাব কষে দেখেন, একই ভ্যাসেল নারায়ণগঞ্জ বন্দর ডকইয়ার্ডে মাত্র নয় কোটি টাকায় নির্মাণ করা সম্ভব। সেই ভ্যাসেল তারা নয় কোটি টাকায় নির্মাণ শুরু করেছেন।

শুধু তাই নয়, এখানকার জাহাজ বিদেশে রপ্তানি করা গেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। তবে এ শিল্পের প্রতি সরকারের সহযোগিতা নেই বললেই চলে। পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না। জেনারেটরের মাধ্যমে কাজ চালাতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, রং আমদানিতে ৬৫ শতাংশ ট্যাঙ্ দিতে হচ্ছে। ব্যাংককে ২০-২৫ শতাংশ ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে। পোশাকশিল্পের ন্যায় শিপবিল্ডিং শিল্পেও পাঁচ শতাংশের সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রতিষ্ঠানটির মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার আকবর হোসেন জানান, একটি জাহাজ তৈরিতে সাধারণত ছয় থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। তবে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন না তারা।

৫০০ থেকে ৮০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাঙ্কার শিপ তৈরিতে আট মাস লাগে। আর এক হাজার ৬০০ কিংবা তার ঊধের্্ব ট্যাঙ্কার শিপ তৈরিতে ১৬ মাস লেগে যায়। জাহাজ তৈরির প্লেট ও মেশিনারিজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ডিজাইন, জনশক্তি, ইলেকট্রোড ও অ্যাঙ্গেল দেশে পাওয়া যায়। তারা বছরে ১০ থেকে ১২টি জাহাজ তৈরি করছেন।

এর মধ্যে একটি ক্যাটামেরিন শিপ তৈরি করছেন যা ঢাকা টু চাঁদপুর রুটে চলাচল করবে। সম্প্রতি ঢাকার সদরঘাট থেকে যে ওয়াটারবাস চলেছিল তা নারায়ণগঞ্জেরই একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিল। শিপবিল্ডার্সরা জানান, ওয়েল্ডিং রডের দাম কমানো প্রয়োজন । একটি চক্র ওয়েল্ডিং রড উৎপাদন খরচের দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। বিদেশে প্রতি প্যাকেটের (চার কেজি) দাম ৪০০ টাকা।

বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৫০ টাকা। অথচ তারা ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রূপগঞ্জের জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি, মাস্টাং ইঞ্জিনিয়ারিং ও মাস্টাং ডকইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদ হোসেন তুহিন জানান, জাহাজ তৈরির কারখানাগুলো যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তার আশঙ্কা। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য বার বার চাপ দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আর রাজউক ও বিআইডবি্লউটিএ'র অনাপত্তিপত্র ছাড়া ছাড়পত্র প্রদান করছে না পরিবেশ অধিদফতর।

এ কারণে তারা চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।