আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেন বাস্তবায়ন কাজের দুটি প্যাকেজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমেছে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি।

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেন বাস্তবায়ন কাজের দুটি প্যাকেজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমেছে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার এ প্রকল্পগু ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও মামলাজনিত জটিলতা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের খামখেয়ালিপনার কারণে এর কাজ এখনো শুরুই করা যায়নি। এ কারণে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) বাস্তবায়নাধীন জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রশংসিত হলেও সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি এর বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছে। সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলীদের এ আচরণকে দুঃখজনক ও সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ।

তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্যর্থ হওয়ার কারণে নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যোগাযোগমন্ত্রী বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু কমিশন-বাণিজ্য বন্ধের আশঙ্কায় প্রকৌশলী সমিতি যে ষড়যন্ত্র করছে, তা কঠোর হাতে দমন করা দরকার। জানা গেছে, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি প্যাকেজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া সম্পর্কিত এক সভা ৯ অক্টোবর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের প্রথম দরপত্র ২৯ জুলাই ২০১০ আহ্বান করা হয়। মূল্যায়ন শেষে ঠিকাদারকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

দরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করায় ভৌত কাজ শুরুর আগে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দরপত্র কার্যক্রমে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া যায় এবং চুক্তি বাতিল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার হাইকোর্টে রিট করেন এবং সওজ যথাসময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় রিট নিষ্পত্তিতে দেরি হয়। সভায় বলা হয়, সওজ যথাযথভাবে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করলে মামলাটি সরকারপক্ষে নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সওজ যথাযথ ভূমিকা না নেওয়ায় প্যাকেজ দুটির দরপত্র আহ্বানে দেরি হয়। ফলে মহাসড়কের অন্য দুটি প্যাকেজের কাজ ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি শুরু হলেও এই প্যাকেজ দুটির কাজ এখনো শুরুই করা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৩ সাল পর্যন্ত। সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে প্যাকেজ দুটির কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের সভায় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি জানান, আইনগত কোনো প্রতিবন্ধকতা এখন আর না থাকায় সেনাবাহিনী এ কাজের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। সেনাবাহিনী বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে গুণগত মান বজায় রেখে কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জয়দেবপুর-রাজেন্দ্রপুর ও রাজেন্দ্রপুর-মাওনা অংশের কাজ ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হলো।

সেনাবাহিনী পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে সড়ক বিভাগকে অবহিত করবে। সেনাবাহিনীর লিখিত সম্মতির পর প্যাকেজ দুটির সব ড্রয়িং, ডিজাইন, দলিল-দস্তাবেজ সওজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে। সূত্রমতে, এর পরই ১৫ অক্টোবর সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি মফিজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এ কে ফজলুল করিম যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে তাদের তীব্র আপত্তির কথা জানান। স্মারকলিপিতে বলা হয়, সওজের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগে প্রকৌশলীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, সেতু ও ফ্লাইওভার নির্মাণে সওজ বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন সরকারি সংস্থা।

তা সত্ত্বেও সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প নির্বিঘ্নে বাস্তবায়নের স্বার্থে সংস্থাটি মেঘনা সেতু পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। সওজের আওতাভুক্ত কাজ ক্রমাগত অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করার কারণে একদিকে যেমন সংস্থাটির কার্যপরিধি সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এর সামর্থ্য ও কর্মদক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অবাধ প্রতিযোগিতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের নির্মাণশিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি মনে করে, সামগ্রিক বিবেচনায় সওজের অধিভুক্ত কাজ কোনো অবস্থাতেই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা যুক্তিসংগত হবে না। কারণ মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণে সওজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি দক্ষতা রয়েছে, যা অন্য কোনো সংস্থার নেই।

এমতাবস্থায় জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিলের জন্য সমিতি জোর দাবি জানাচ্ছে। জানা গেছে, শুধু স্মারকলিপি দিয়ে সড়ক প্রকৌশলীরা থেমে থাকেননি। তারা এ নিয়ে নানামুখী প্রচারণায় নেমেছেন। সরকারকে বিব্রত করতেও চলছে নানা তৎপরতা। তাদের এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি শুধু নয়, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণও বটে।

সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ হলে স্বচ্ছতা থাকবে এবং দ্রুত কাজ শেষ হবে। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ দেওয়ার বিরোধিতা করছে। কারণ এতে তাদের কমিশন-বাণিজ্য বন্ধ হবে। সরকারের উন্নয়নবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে দমন করা দরকার বলে মনে করেন ইকবাল হোসেন সবুজ। প্রসঙ্গত, রাজধানীর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী ইতিপূর্বে কৃতিত্বপূর্ণ আবদান রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দুটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে যানজট লাঘবে ভূমিকা রেখেছে তারা। তাদের অধীনে হাতির ঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। সেনাবাহিনী বর্তমানে মিরপুর-বিমানবন্দর সড়কের ফ্লাইওভার, বনানী ওভারপাস নির্মাণ এবং মেঘনা সেতু পুনর্বাসন প্রকল্পের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত হয় এবং দ্রুততম সময়ে এর ফল পাওয়া যায়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি বাস্তবায়ন করতেই সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার চিন্তা করা হয়।

অন্যদিকে সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। বেসরকারি খাতে সড়ক নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম করারও সুযোগ থাকে। এতে প্রকল্পের টাকা লুটপাট ও ভাগাভাগির অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের একাধিক সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে সওজের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণকাজের অভিযোগ রয়েছে। কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আলোচ্য জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি প্যাকেজ (ডবি্লউআই-১ ও ডবি্লউআই-২) জয়দেবপুর-রাজেন্দ্রপুর ও রাজেন্দ্রপুর-মাওনা অংশের কাজ এসব বিবেচনায় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের কথা উঠেছে। সূত্র জানায়, বড় একটি কাজের অনিয়ম লুটপাটের সুযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবায়ন করতে না দেওয়ার অংশ হিসেবেই সওজ প্রকৌশলী সমিতি বিরোধিতায় নেমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমার হাতে এক বছর সময় আছে। এর মধ্যে আমি কাজটা শেষ করতে চাই। প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের কাজ এগিয়ে গেছে।

এ দুটি শুরুই করতে পারিনি। আমরা বাঁচার জন্য কাজটি সেনাবাহিনীকে দিয়েছি। ' তিনি বলেন, 'তাদের হাতে কাজ দিয়ে আমি নিশ্চিত থাকতে পারছি। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট নাজমুল হুদা সাহেব চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি। আমি সেনাবাহিনীকে দিয়ে এটা করিয়েছি।

'  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।