আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাগঐতিহাসিক অতিকায় প্রানী, ম্যামথ ( Pre-Historic Giants- Mammoth)

প্রবাসী গত আগস্ট মাসের শেষের দিকের ঘটনা। মস্কো থেকে ৩,৫০০ কিলোমিটার উত্তর পুর্বে সাইবেরিয়ার চির তুষার আবৃত শহর সোপোচনায়া কারগা (Sopochnaya Karga)। উত্তর তাইমির উপদ্বীপের এই শহরের মেরু গবেষনা কেন্দ্রের পাশের ১১ বছরের যাযাবর ছেলে ইয়েভগেনী সালিন্ডার ঝেনিয়া (Yevgeny Salinder Zhenya)সেদিন কুকুর সাথে নিয়ে হাটছিল ইয়েনসি নদীর পাশ দিয়ে। নাকে পঁচা গন্ধ আসায় কৌতুহলী হয়ে খুজে পেতে বার করল মাটির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা অদ্ভুত কালো কিছু। বাড়ীতে গিয়ে তার দেখা মাটির নীচে ঢাকাপড়া কোন প্রানীর অংশের বর্ননা দি্লে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলেন বিজ্ঞানীদের সাথে।

সেন্ট পিটার্সবার্গের জুয়োলজিক্যাল মিউজিয়ামের পরিচালক আলেক্সেই তিখোনভ ( Alexei Tikhonov, ) আন্তর্জাতিক ম্যামথ কমিটির একজন বিজ্ঞানীকে সাথে নিয়ে উড়ে এলেন রাশিয়ার এই তুন্দ্রা অঞ্চলে। সোপকারগা মেরু স্টেশনের কর্মীদের সাথে নিয়ে পাঁচ দিনে ধরে মাটি খুড়ে তারা যা উদ্ধার করলেন তা ছিল প্রাগঐতিহাসিক যুগের লোমশ হাতী ম্যামথের মৃতদেহ। ম্যামথ ঝেনিয়া ঝেনিয়া সালিন্ডারের দেখা অংশ ছিল মাটির নীচে ঢাকা পড়া প্রাগঐতিহাসিক যুগের লোমশ হাতী “ম্যামথ”এর মৃতদেহের পায়ের গোড়ালী। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে পাঁচমিটার উপরে মাটির নীচে ঢাকা পড়া এই ম্যামথের মৃতদেহ ছিল ডান দিকে কাত হয় শুয়ে থাকা। তিখোনভ বলেন “এটি ছিল ১৯০১ সালের পর খুজে পাওয়া সবচে সংরক্ষিত ম্যামথের মৃতদেহ।

১৫/১৬ বছর বয়সের এই লোমশ হাতী মারা গিয়েছিল ২০- ৩০,০০০ বছর আগে। এর চোখ, কান, চামড়া এবং শুড় ছিল অবিকৃত। পুরুষ এই ম্যামথের দুটো বড় দঁতের একটি ছিল না , এক মাত্র দাঁতটি ছিল ১.৫ মিটার লম্বা এবং তাতে ছিল আঘাতের চিহ্ন যা থেকে ধারনা করা হয় সম্ভবত আদিম যুগের মানুষ অথবা অন্য কোন ম্যামথের আঘাতে মারা গিয়ে থাকবে ম্যামথটি। উচূ ছিল ৬ফুট এবং ওজন এক টনের কাছকাছি। ম্যামথের হাড়গোড় ছিল সম্পূর্ন অবিকৃত এবং পাঁজড়ের হাড়ের ভিতরের হৃৎপিন্ডও সম্ভবত অবিকৃত।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সাইবেরিয়ার অনেক এলাকা বেরিয়ে আসছে বরফের আবরন থেকে ফলে বেশী করে আবিস্কার হচ্ছে প্রাগঐতিহাসিক যুগের প্রানীদের দেহাবশেষ। মজার ব্যাপার হল প্রাগঐতিহাসিক যুগের জীবদের ফসিল বা জীবাশ্ম যেখানে পাথরে পরিনত হওয়া দেহাবশেষ , ম্যামথের দেহাবশেষগুলো কিন্তু বরফের নীচে ঢাকা পড়ার কারনে থাকে একেবারে অবিকৃত। এর অবিকৃত ডি,এন,এ যদি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় তাহলে হয়ত ক্লোনিং এর মাধ্যমে জীবন্ত ম্যামথ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এমন আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিখোনভ। আবিস্কারক বালক ঝেনিয়ার সম্মানে ম্যামথের নামকরন করা হল ঝেনিয়া। শিল্পীর চোখে লোমশ হাতী ম্যামথের দল।

পৃথিবীর তাপমাত্রা উঠানামা করার ফলে কখনো বিস্তীর্ন এলাকা ঢাকা পড়ে বরফের আস্তরনে আবার তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে বরফের এলাকাও কমে আসে। এই বিস্তীর্ন বরফের যুগ হল ice age, বা glacial age, আর দুই বরফ যুগের মধ্যখানের সময় হল "interglacials".বিজ্ঞানীরা ৫টি বড় বরফযুগ বা ice age, এর বর্ননা করে থাকেন। শেষ বরফ যুগ প্লিওস্টিন যুগ আজও চলছে। আজও উত্তর এবং দক্ষিন মেরুর বিস্তীর্ন এলাকা পুরু বরফের আস্তরনে ঢাকা। প্লিওসিন যুগ যা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৫০ লক্ষ বছর আগে সেই সময় থেকে খৃস্টপূর্ব ২০০০ - ৪০০০ অব্দ পর্যন্ত অতিকায় হাতী “ম্যামথ” পৃথিবীতে বাস করত ।

রুশ শব্দ ম্যামথের আভিধানিক অর্থ হল “বিশাল শিং” এখন ইংরাজীতেও ম্যামথ শব্দ ব্যবহৃত হয় “বিশাল” বা “অতিকায়” বোঝাতে। কেমন ছিল ম্যামথেরা-ম্যামুথাস ( Mammuthus ) জেনাসের গজদন্ত ওয়ালা প্রানী ছিল ম্যামথ। কয়েক প্রজাতির ম্যামথের মৃতদেহ পাওয়া গেছে । আকার আয়তনে হাতীর মত দেখতে বেশ বড় প্রানী ছিল ম্যামথেরা। বিশাল গজদন্ত ছিল এদের কোন কোন গজদন্ত থাকত ১৩ ফুট বা ৪ মিটার লম্বা।

সবচে’ বড় যে ম্যামথের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তার ওজন ছিল ৯ টন আবার কতগুলো ম্যামথ ছিল অনেক ছোট। উচ্চতা থাকত সমগোত্রীয় হাতীর মতই, কোন কোন ম্যামথ কাঁধের জায়গায় ১৩/১৪ ফুট উঁচু হলেও অধিকাংশ ম্যামথ ছিল আধুনিক এশিয়ান হাতীর মতই। এদের মাথার দিক অপেক্ষাকৃত উচু এবং লেজের দিক ক্রমশঃ ঢালু হত। কাঁধ থাকত সবচে’ উঁচুতে আর বেশ বড়সড় কুজ থাকত কাধের উপর। এ পর্যন্ত অধিকাংশ ম্যামথের মৃতদেহাবশেষ পাওয়া গেছে উত্তর গোলার্ধে।

ইউরেশিয়ার উত্তরাঞ্চল, রাশিয়ার উত্তরাংশে সাইবেরিয়ায়, আমেরিকা আলাস্কা, কানাডার উত্তর অংশে আলবার্টায়। ইউরোপের প্রাচীন গুহামানবদের আঁকা ছবিতেও দেখা মেলে এদের। শেষ ম্যামথের সন্ধান পাওয়া যায় সাইবেরিয়ার র্যা ঙ্গেল দ্বীপে ( Wrangel Island ) ১৬৫০ খৃস্টপুর্বাব্দে । বরফের প্রানী হওয়ার কারনে দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে দেহ ঢাকা থাকত বড় বড় লোমে। এ জন্যে ম্যামথদের লোমশ হাতীও বলা হয়ে থাকে।

এদের শরীরের চামড়ার নীচে থাকত প্রায় ৯ সেন্টিমিটার পুরু চর্বির আস্তরন যা ঠান্ডার মধ্যেও এদের তাপমাত্রা বজিয়ে রাখতে সাহায্য করত। শিকাগোর যাদুঘরে ম্যামথ ল্যুবা ( Lyuba) কেন লুপ্ত হল ম্যামথেরা এর সঠিক কারন জানা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা ধারনা করে থাকেন যে জলবায়ুর পরিবর্তন, বরফের এলাকা ক্রমশঃ কমে আসা ,খাদ্যের অভাব এবং অনান্য প্রানী বিশেষ করে মানুষের আক্রমনে মারা পড়ে এই অতিকায় ম্যামথেরা ক্রমশঃ বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। রয়াল ওন্টারিও মিউজিয়ামে ম্যামথের কঙ্কাল। ম্যামথ ক্লোনিং- ম্যামথের অবিকৃত দেহাবশেষ পাওয়ার ফলে আশার বানী শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এদের চুল হাড় প্রভৃতি অংগ প্রত্যংগ থেকে ডি,এন,এ সংগ্রহ করে ক্লোনিং ইয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেস্টা করছেন দক্ষিন কোরিয়া এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা।

সূত্র-১ ২ ৩ ৪ ৫ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.