আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চেচনিয়ার স্বাধীণতা সংগ্রাম ও বর্তমান চেচনিয়ার হালচাল...

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] চেচনিয়ার অবস্থান ইউরোপের দক্ষিণ - পূর্বে, উত্তর ককেশাস পর্বতমালার মধ্যে , এর রাজধানী গ্রোজনী। ২০১০ এ পরিচালিত রাশিয়ার আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ১২,৬৮,৯৮৯। সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার বিরুদ্ধে চেচনিয়ার স্বাধীণতার সংগ্রাম শুরু হয় আঠারশ শতকের শেষভাগে, নকশবন্দী সুফি তরীকার শেখ মনসুর উসুরমার নেতৃত্বে।

মনসুর চেয়েছিলেন একটি ট্রান্সককেশাস ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যুদ্ধে আহত ও বন্দী হোন এবং অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। চেচেনদের স্বাধীণতার শিখা পুনরায় প্রজ্জ্বলিত হয় বিপ্লবী ইমাম শামিলের নেতৃত্বে। তিনি ১৮৩৪ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে চেচেনদের স্বাধীণতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। সোভিয়েত আমলে বিশেষকরে নরখাদক জোসেফ স্তালিন সরকার আমলে চেচনিয়া, দাগেস্তান ও ইঙ্গুশেটিয়ার জনগণের উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

১৯৫৬ সালের পরে স্তালিন উত্তর সময়ে, নিকিতা ক্রশ্চেভের শাসনকালে চেচেনদের পুনরায় তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হয়। তবে চেচেনদের রুশীকরণ করার প্রক্রিয়া ১৯৫৬ সালের পরেও অব্যাহত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর চেচেনরা আবার স্বাধীণতাকামী হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে প্রথম চেচেন যুদ্ধ সংগঠিত হয় যা অব্যাহত ছিল ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। চেচেন মুজাহিদদের আক্রমণে পিছু হটে রাশিয়া এবং ১৯৯৬ সালে বরিস ইয়েলেৎসিনের রাশিয়া যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

এক বছর পরে তারা চেচেনদের সাথে একটি শান্তি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। ইসলামিক ইন্টারন্যশনাল পিস কিপিং ব্রিগেড (IIPB) দাগেস্তান দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে রাশিয়ান ফেডারেশন ১৯৯৯ সালের ২৬ শে আগস্ট দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ শুরু করে। ২০০০ সালের মে মাসে রাশিয়া চেচনিয়ায় প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ককেশাস অঞ্চলজুড়ে চেচেন মুজাহিদদের তীব্র প্রতিরোধ সংগ্রামের কারণে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ১৬ এপ্রিল ২০০৯ সালে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তথাকথিত "সন্ত্রাসবাদ নির্মূল অভিযান" শেষ করে।

রমজান কাদিরভ ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে চেচনিয়ার ক্ষমতায় আসেন রমজান কাদিরভ। রমজান কাদিরভ চেচনিয়ার সাবেক প্রসিডেন্ট আখমেদ কাদিরভের ছেলে। চেচনিয়ার ইতিহাসে কখনো কোনো রাজা ছিল না। তবে আজকের চেচনিয়ার শাসক রমজান কাদিরভকে বিবিসি সহ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম চেচনিয়ার রাজা হিসেবেই আখ্যায়িত করে। বর্তমানে ক্রেমলিন সরকার চেচনিয়ার স্তিতিশীলতার জন্য প্রাক্তন চেচেন বিদ্রোহী ও বর্তমান চেচনিয়ার শাসক রমজান কাদিরভের উপরই নির্ভরশীল।

দুদফা যুদ্ধে বিধ্বস্ত চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী শহর এটা সত্য যে দুদফা যুদ্ধে বিধ্বস্ত চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী কাদিরভের নেতৃত্বে আবারো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, চেচনিয়ায় স্থিতিশীলতাও ফিরে এসেছে অনেকাংশে। অবশ্য মস্কো তাকে সাহায্য করছে শত শত কোটি ডলার দিয়ে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাশিয়া যে কোন মূল্যে চেচনিয়ার স্বাধীণতা ক্রয় করতে চাচ্ছে। গ্রোজনীতে এখন আছে নতুন নতুন রাজপথ, সুউচ্চ ভবন, একটি নতুন ফুটবল স্টেডিয়াম। কাদিরভের সমর্থকদের মতে তিনি চেচনিয়াকে পরিণত করেছেন উত্তর ককেশাসের সবচেয়ে স্থিতিশীল একটি অঞ্চলে।

বর্তমানে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী শহর - ১ বর্তমানে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী শহর - ২ তবে রাশিয়ার চিন্তাধারার সাথে কাদিরভের চিন্তাধারায় যে বেশ অমিল তা কাদিরভের কথাতেই স্পষ্ট ফুটে উঠে। কাদিরভের ইচ্ছা ঐতিহ্যবাহী ইসলামের পৃষ্ঠপোষকতা করা। তিনি চান চেচনিয়াকে রাশিয়ায় ইসলামের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে। আর এ লক্ষ্যেই তিনি চেচনিয়ায় তার পিতার নামে নির্মাণ করেছেন ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। গ্রোজনীতে অসংখ্য রেষ্টুরেন্ট থাকলেও সেখানে মদ বিক্রি করা হয় না।

এছাড়া পোশাক পরিচ্ছদেও কিছুটা কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। চেচনিয়ায় নির্মিত ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ, আখমেদ মসজিদ মসজিদের অভ্যন্তরে সালাত আদায়রত চেচেন মুসলিম মানুষ যখন বৈষম্যের শিকার হয়, যখন সে অধিকার বঞ্চিত হয়, যখন নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়, তখনই সে সংগ্রামী হয়ে উঠে, স্বাধীণতার জন্য আন্দোলন করে। কাদিরভ সম্ভবত চাচ্ছেন রাশিয়ার সাথে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে এর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিতে, মস্কোর সাথে গ্রোজনীর যে বৈষম্য রয়েছে তা কমিয়ে আনতে। আর এ কারণেই কাদিরভের চেচনিয়া হয়ে উঠেছে রাশিয়ার সাথে ইসলামের এক বিচিত্র মিশ্রণ। রাশিয়ার সহায়তায় কাদিরভ চেচনিয়াকে গড়ে তুলছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে।

তবে স্বাধীণতার শিখা যদি কোন অঞ্চলের মানুষের মাঝে একবার জ্বলে উঠে তা নেভানো অসম্ভব না হলেও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। বর্তমানে গ্রোজনীর রাস্তাঘাট চেচনিয়া এখনো রাশিয়ার অংশ হলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তা ক্রমশই রাশিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। চেচনিয়ার অনেকেই বিশ্বাস করে যে, গ্রোজনী হবে ভবিষ্যতের দুবাই। ধীর গতিতে হলেও চেচনিয়া গড়ে উঠেছে রাশিয়া থেকে সম্পূর্ণ এক আলাদা সত্তা নিয়ে। যার সাথে মূল রাশিয়ার মিল খুবই সামান্য।

রাশিয়া নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারছে না তো? তথ্যসূত্রঃ Chechnya Second Chechen War www.infoplease.com/atlas/country/russia.html Ramzan Kadyrov Kadyrov's Chechnya rises from the ashes, but at what cost? Chechnya's rise from the ashes কাদিরভের চেচনিয়া জেগে উঠছে  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।