আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রণাংগন চলন্ত ক্যাম্পাস

ভার্সিটির বাস নিয়ে এর আগেও একটা লেখা লিখেছিলাম। সেটা ছিল সুখের স্মৃতি নিয়ে লেখা (লেখাটা পড়তে চাইলে এই খানে ক্লিক করুন Click This Link ) । এই বাস নিয়ে এত রকমের অভিজ্ঞতা যে আজ আবারও লিখতে বসলাম। আরো আগেই লিখতাম। আলসেমী করে হয়ে উঠছিল না।

Click This Link (ক্লিক করুন) খবরটা লেখার বেলায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করল। কিঞ্চিৎ বাসের মামাদের কথা আগেই বলেছি, তারা দামী গাড়িগুলোকে ইচ্ছে করে একটু ঘষা দিয়ে যেতেন। অনেকটা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মত সেইসব গাড়ির মালিকদের সাথে তাদের ঝগড়া লেগে যেত। এদিকে আমাদের কারো ক্লাস, কারো পরীক্ষায় দেরি হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ছাত্রদেরকে নেমে আসতে হতো বাস থেকে মামার পক্ষে কথা বলার জন্য।

মামারাও দেখিয়ে দিতে পারতেন হোমড়াচোমড়াদেরকে যে, তারা কী জিনিষ! চাইলে তারা কী না করতে পারেন! শুধু এবারের মত দয়া করে গাড়িটা ভেঙ্গে দেন নি! মামাদের এইসব পায়ে পা লাগানো ঝগড়া দেখতে দেখতে বিরক্ত শিক্ষার্থী অনেক সময় ইচ্ছে করে চুপ করে বসে থাকতো বাসে। আর ক্ষণিকা বাসের মহসিন মামাকে (শুনেছি এখন তিনি চৈতালীর রুটে বাস চালান) যারা চেনেন, তারা তো জানেনই তিনি কী! আগের দিন কোন পাবলিক বাসের সাথে তার সমস্যা হয়েছে, এজন্য তিনি পরের দিন সকালের ট্রিপে পুরো রাস্তা ব্লক করে বাস আড়াআড়ি করে রেখে সেই বাসের কাউন্টারে যেয়ে হম্বিতম্বি শুরু করে দিলেন। আর এদিকে আমাদের ক্লাস, পরীক্ষার দেরি হয়ে যেত। বাধ্য হয়ে ছাত্ররা নেমে আসত। আর গাড়ি ভেংগে ফেলার একটা হুমকি নিয়ে যে ছাত্ররা নেমে আসতো, একটা ত্রাস তৈরি করে ফেলত রাস্তায়, এটাই তাদের নিরামিষ জীবনের একটা চার্ম।

গাড়ি ভাঙ্গাভাংগি করার মধ্যে কোথায় যেন একটা বাহাদুরি আছে। কোন অন্যায়ের প্রতিবাদও তো আমরা ঠিকমত করতে জানি না। রাস্তার গাড়ি ভেঙ্গে আরেকটি অন্যায় না করে প্রতিবাদ কি আমরা করতে পেরেছি? এমনই বাহাদুর আমরা! এমনও হয়েছে, আমাদের ক্ষণিকা আসে নি, সবাই অন্য পাবলিক বাসে উঠে পড়েছি এবং তারা ভাড়া দাবী করছে আমাদের কাছে। বাহাদুর ছেলেরা একজোট হয়ে ঐ বাসের ড্রাইভার আর হেল্পারকে পারলে মারে (এর মধ্যে আমার এক সুইট লক্ষ্ণী জুনিয়র ছেলে ছিল। ও অবশ্য কথাটথা কিছু বলেনি।

শুধু পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। আর সবাই যখন ড্রাইভারকে মারবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন সেও ঘুষি পাকানোর মত ভান করেছিল। সংগদোষে পড়লে যা হয় আর কি! ঐ দৃশ্য দেখে আমি অনেক হেসেছিলাম সেদিন। )। এসব কারণে অন্য বাসগুলোতে আমাদেরকে অনেক সময় নিতে চাইতো না।

এটা নিয়ে আমি কমিটির এক বড় আপুর কাছে বলেছিলাম, ছাত্রদের এমন আচরণ করাটা কি ঠিক? আপু উলটো সাফাই গাইলেন, ‘’পাবলিক বাস আমাদের না নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে কীভাবে যায় দেখে নেবো!’’ অথচ, আমাদের ভার্সিটির বাস যে প্রায়ই আসতো না, দেরি করতো, আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতো এজন্য কোনদিন তাদেরকে মারমুখী হয়ে উঠতে দেখা যেত না। আর রংসাইড দিয়ে বাস যাতায়ার করার ব্যপারটা আমরা শিক্ষার্থীরা মনে মনে সমর্থনই করতাম। কী করবো, রাস্তায় এত জ্যাম! মামারা রংসাইড দিয়ে বাস চালান বলেই না আমরা সময়মত ক্লাসে পৌঁছুতে পারতাম, পরীক্ষা দিতে পারতাম। রাস্তায় নিয়ম মেনে না চলাটাই এখন নিয়ম হয়ে গেছে, সেখানে আমরা কেন হাবার মত জ্যামে বসে থাকবো? এই জ্যামের কোন সমাধান তো আমাদের থাকে নেই! অনেক সময় আমাদের বাসে সাধারণ যাত্রী উঠে পড়ত। কেউ না বুঝে, কেউ ইচ্ছে করেই (ভাড়া দেওয়া লাগবে না), আবার কারো দেরি হয়ে যাচ্ছে বাস পাচ্ছে না বলে।

এইসব সাধারণ যাত্রীদের সাথে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রদের কথাই বলবো আমি, ভীষণ খারাপ ব্যবহার করে তাদেরকে নামিয়ে দিত। একদিন এক জুনিয়র ছাত্রকে আমি এজন্য কিছু কথা বলেছিলাম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ এমন আচরণ আশা করে না, আমাদেরও এমন আচরণ করা ঠিক নয়। ঐ যাত্রীকে ভালভাবে বললেই নেমে যেত। আমার কথা স্বভাবতই রক্ত গরম ছেলেটির ভাল লাগে নি।

বললো, ‘’আপনার কাছ থেকে ভদ্রতা শিখতে হবে নাকি?’’ --না জানতে তো শিখতেই হবে! আমি তোমার সিনিয়র, সে হিসেবে তোমার ভুল হলে আমি বলতেই পারি। --আপনার আইডিটা দেখান (ছেলেটি বাসের কমিটির কেউ, তাই নিজেকে কি না কি ভাবছে! আর এদিকে আমিও সিনিয়র হয়ে যাওয়ায়, ক্লাস কম থাকায় বাসে নিয়মিত নই, আমাকে চেনার কথা নয় ওর)। --আগে তোমার আইডিটা আমাকে দেখাও। শুধু এই ছেলেটিই নয়, এই ক্ষণিকা বাসে এয়ারপোর্ট থেকে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী যাতায়াত করে থাকেন (হয়ত এখনও যান)। কোন সাধারণ যাত্রী যদি এই বাসে উঠে পড়ত, তিনি যাত্রীটিকে মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে যেতেন।

এই ভদ্রলোকের জন্য প্রায়ই গণ্ডগোল হতো। তার এই কাজের বিরোধিতা তো কেউ করতোই না, উলটো তার পক্ষেই থাকতো ছাত্ররা। ভালো কোন কাজে আমরা এক হতে পারি না, কিন্তু যে কাজটা ঠিক নয় তাতে আমাদের প্রায় সবার সম্মতি থাকে। এটা আমাদের জাতিগত সমস্যা। এই বাসেই এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, জুনিয়র ছাত্র ভীড়ের মধ্যে সিনিয়র ছাত্রীর নিতম্বে চিমটি কেটেছে।

এসবের পরে কী সমাধান হয়েছে আমি জানি না। আজ এসব কথা বলতে আমার যে খুব ভাল লাগছে তা নয়। কিন্তু বলতে হলো। আমার পরে আর কাউকে যেন ভার্সিটির বাস নিয়ে এমন স্মৃতিচারণ করতে না হয়। প্রিয় লাল বাসগুলো থাকুক আমাদের সুখের স্মৃতি হয়ে, ক্যাম্পাসের টুকরো স্মৃতি হয়ে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।