যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য আমি সব সময়ই বলি, বোমাবাজি নয়, সন্ত্রাসী হামলাও না, আবার গান্ধীজীর অহিংস নীতি ও না, সমাজ পরিবর্তনের জন্য গণবিপ্লব মানে গণআন্দোলনই কার্যকর পন্থা। উগ্রবাদিতা বা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সমাজ পরিবর্তনের তত্ত্ব এখন শুধু অচলই না, তা জনগনের গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। তাই নাফিস নামক বাংলাদেশি যুবকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুনিয়া ব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী নীতি, দেশে দেশে সামরিক হামলা আর আধিপত্য বিস্তার এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে মার্কিন অর্থনীতিতে আঘাত হানার পরিকল্পনা শুধু অকার্যকরই না, তা উগ্রবাদী অপরাধমূলক চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের বোমাবাজিতে সমাজ পরিবর্তন তো হবেই না, বরং তা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে দেশে দেশে সামরিক হামলার অজুহাত সৃষ্টি করে দিবে। সাম্রাজ্যবাদ তার অবৈধ হামলা, দেশ দখল আর লুটপাটকে বৈধতা দেয়ার জন্য বরাবরই তার প্রতিপক্ষ দাঁড় করায় এবং প্রতিপক্ষকে অন্যায়কারী, অপরাধী, অমানবিক, উগ্র, জঙ্গি এসব পরিচয়ে এমনভাবে তুলে ধরে যেন তার বিরুদ্ধে লড়াই এর নামে সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তারের নৈতিক এবং আদর্শিক ভিত্তি জনগণকে দেখাতে সক্ষম হয়।
এক সময় আম্রিকা সবখানেই কম্যুনিজমের ভূত দেখতে পেত, এখন সব খানেই জঙ্গিদের জুজু দেখিয়ে তার আধিপত্য বিস্তারের বৈধতা খুজে নেয় সে। ইরাকে হামলার আগে আমরা এফ বি আই, সি আই এ এর মিথ্যাচার এর নমুনা দেখেছি, আল কায়েদার সাথে সাদ্দামের সম্পর্ক আর তার কাছে গনবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা জুজু দেখিয়ে ইরাকে হামলার রসদ যোগায় এসব গোয়েন্দা বাহিনী, তারও আগে ৯/১১ এর টুইন টাওয়ার এ সাজানো হামলা করে সব দোষ আল কায়েদা নামক মহাশক্তিধর (!) দানবীয় মুসলিম জঙ্গিদের উপর চাপিয়ে তাদের দমনের অজুহাতে আফগানিস্তান আর পাকিস্তানে হামলা চালানোর ইতিহাসও ভুলে গেলে চলবে না, মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর ইতিহাস হচ্ছে মিথ্যাচারের ইতিহাস, সাজানো গল্পের ইতিহাস। তাই এফ বি আই যা বলবে তা সারা পৃথিবীকে বিশ্বাস করে নিতে হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ছদ্মবেশী এজেন্টের ফাঁদে পা দিয়ে 'স্টিং অপারেশন'-এ ধরা পড়ে নাফিস। মার্কিন গোয়েন্দারা কার্যত কয়েক মাস আগে থেকেই নাফিসের পিছু নিয়েছিল।
ছদ্মপরিচয়ে এফ বি আই’র একজন এজেন্ট বোমা হামলা চালানোর জন্য আসল বিস্ফোরকের আদলে নকল বিস্ফোরক তাকে সরবরাহ করে। ভ্যান ভর্তি সেসব নকল বোমা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করতে গেলে তাকে একেবারে হাতেনাতে আটক করা হয়। মার্কিন গোয়েন্দারা কারও বক্তব্য বা কাজে সন্ত্রাসী কাজে ‘আগ্রহের আভাস’ পেলে তাকে সহমর্মী সেজে সহযোগিতা করেন। এমনকি প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করেন। ২০০৯ সালে এ রকম একটি আলোচিত ঘটনায় কয়েকজন ব্যক্তি নিউইয়র্কের এক ইহুদি উপাসনালয়ে ‘বোমা’ পাতেন, যা গোয়েন্দারাই সরবরাহ করেছিলেন।
চারজনকে দণ্ড দিলেও বিচারক এ কৌশলের সমালোচনা করে বলেন, ‘সরকার তাদের সন্ত্রাসী বানিয়েছে। ’ মার্কিন আদালতই যেখানে বলছে মার্কিন সরকার গোয়েন্দাদের ‘স্টিং অপারেশন' এর মাধ্যমে অপরাধপ্রবণদের সন্ত্রাসী বানিয়েছে, সেখানে নাফিসকে ট্র্যাপে ফেলে তার উগ্রবাদিতার সুযোগ নিয়ে তাকে সন্ত্রাসী জঙ্গি প্রমাণ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নতুন রসদ আর অজুহাত আবিষ্কার করেছেন, এটা বলা যেতেই পারে।
নাফিসের দোষ অবশ্যই আছে, নাফিসের অপরাধ সে গণবিপ্লবের পথে না গিয়ে উগ্রবাদি পথে পা বাড়ানোর নীতিতে বিশ্বাসী , তবে এফ বি আই এর সাজানো খেলা, কারো উগ্রবাদি চিন্তার সুযোগ নিয়ে তাকে ট্র্যাপে ফেলে আল কায়েদা বানিয়ে ওই অপরাধীর দেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি সামরিক আক্রমণের শিকার বানানোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুড়ি নেই, আমি জানি সবাই এখন নাফিস আর বাংলাদেশকেই দুষবে, কিন্তু আল কায়েদা, তালেবান, নাফিস এরা আমেরিকার উগ্র সন্ত্রাসি কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট ক্ষুদ্র সন্ত্রাসী , বড় সন্ত্রাসীর গলায় মালা পরিয়ে সবাই ছোট সন্ত্রাসিকে গাল দিবে, যেমন সমাজের বড় মাস্তানরা ছোট মাস্তানদের শায়েস্তা করে, ঠিক তেমনি...... নাফিসদের উগ্রবাদিতা অবশ্যই মস্ত বড় অপরাধ। এ ধরনের উগ্রবাদী চিন্তা ধারণ করা থেকে সমাজের তরুণদের মুক্ত করা অনিবার্য। কিন্তু নকল বিস্ফোরণ দিয়ে উস্কানি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করে সন্ত্রাসী ধরার সাজানো নাটক শুধু এক নাফিস নামক উগ্রবাদীর অপরাধনামা না, এর সাথে জড়িয়ে আছে মার্কিন রাজনীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের রসদ যোগান দেয়া আর বাংলাদেশকে আরও অনেক বেশি করে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা ! নিরাপত্তা ইস্যু মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ইস্যু, সামনে ওখানে ইলেকশন, এই ব্যাপারটাকে কাজে লাগানো হবে, সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকা দক্ষিন এশিয়ায় সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের বিস্তার ঘটাতে চায়, আগামি দিনে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন আগ্রাসন আরও বাড়ানোর প্লান আছে ওদের, তাই নাফিসকে আল কায়েদার জঙ্গি প্রমান করে বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে লাগানো হবে এই ইস্যু, বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক নিয়ন্ত্রন বজায় রাখার জন্যও এটা প্রমান করা দরকার যে এদেশে জঙ্গির আস্তানা আছে!TICFA চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এদেশের উপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নীতি বাস্তবায়নের অজুহাত আরও পাকাপোক্ত হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী নীতি বাস্তবায়নে প্রতিপক্ষ দাঁড় করানোর নীতি, সন্ত্রাসী দমনের নামে , জঙ্গি হটানোর নামে দেশ দখল আর লুণ্ঠন এর রাজনীতি মাথায় না রেখে নাফিস ফেনমেননকে শুধুমাত্র এফ বি আই;র বয়ানে বিশ্বাস করলে প্রকৃত সত্য ধরা দিবে না। নাফিস কি ৯/১১ এর মতই মার্কিন কূটচালের শিকার কিনা, তাও তদন্ত করা দরকার, কিন্তু কে কার তদন্ত করবে, আমেরিকার রাজনৈতিক তদন্তের ইতিহাস স্মরণ করলে ভরসা পাওয়া যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।