আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন ক্ষুদা, দরিদ্রে আর অপমানে অপদস্ত "শিক্ষক মান" ; তখন নিরবে আর নিভৃতে মুখ লুকিয়ে কাঁদে "জাতির প্রান"

সবাইকে শুভ সকাল । শুক্রবারের এই সকালে একটু বিবেককে নাড়া দিন এই ব্যাক্তিটির বিষয়ে । জি, হাত বেধে নিয়ে যাওয়া ব্যাক্তির কথাই বলছি। ভয় পাবেন না বা এখনি ঘৃণার চোখে তাকাবেন না , না ইনি চোর নন কিংবা নন কোন দাগি আসামী , ইনি হলেন শিক্ষক ,একজন শিক্ষক যার অপরাধ তার ছেলে তাকে জামিন রেখে টাকা ধার নিয়েছে এবং সেটা ফেরত দিতে পারেনি বলে তাকে পিছন থেকে হাত বেধে সাড়া গ্রাম ঘোরানোর শাস্তি দিয়েছে গ্রাম্য পঞ্চায়েত । না না হে ক্ষনআবেগময়ি বাঙ্গালী এখনি আবেগে আপ্লুত হবেন না এই ব্যাক্তির যেই অপরাধ তাতে তার আরও বেশী শাস্তি হওয়া উচিত ।

প্রথমত, এই ব্যাক্তির মানসিক ভারসাম্য আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে কেননা তিনি এই মূর্খ জাতি গড়ার কাজ হাতে নিয়েছিলেন । দ্বিতীয়ত, এই মানুষটি এমন অনেককেই ক্যান মলা দিয়েছেন যাদের অনেকেই আজ জজ-ব্যারিস্টার কিংবা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার । তৃতীয়ত, এই শিক্ষক অনেকের কাছ থেকে টিউশন নেয় নি সে মেধাবী গরীব দেখে । ওই টাকাগুলী একসাথ করলেও আজ হয়তো পুত্রের ঋণের টাকা দেয়া সম্ভব হত । এরপর দেখুন তার আরও কত দোষ - , সে সত্যি বলতে শিখিয়েছে ।

সে বলেছে জ্ঞ্যান অর্জন কর মিথ্যা বর্জন কর । সে বলেছে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড । সে বলেছে পরিশ্রম সাফল্লের চাবিকাঠি । সে বলেছে মানবিক হউ । সে বলত নজরুল পড় , কবিগুরু পড় ।

সে খেলার মাঠ থেকে ধরে এনে বসিয়েছে পড়ার টেবিলে, সে আযান পড়ার সাথে বলেছে মসজিদে যাও । এরুপ অনেক অনেক দোষেই তাকে শাস্তি দেয়া যেতে পারে। একজন সফল মানুষের জীবনের সবচেয়ে গরত্তপুরন শিক্ষা পায় তার স্কুলজীবনে আর ওই শিক্ষক যিনি আমাদের ভিতর মানুষ হওয়ার বীজটি প্রথম বুনে দেন তিনিই তো মানবতার দেবতা । কিন্তু দেবতা আজ কোথায় ? সেতো আজ ভুলন্থিত । সে আজ আবেগে আপ্লুত , সে আজ নস্টালজিক হয়ে হত বিহব্বল ।

আজ দেবতা ভাল নেই, আজ দেবতার চোখে পানি । একজন আইনস্টাইন, একজন শেক্সপিয়ার , একজন ডারউইন কিংবা একজন ডাল্টন বানাতে হলে ,সেটা কখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের দামি দামি দালানে সম্ভব নয় সেটা একমাত্র সম্ভব ওই দেবতার ভালবাসা যুক্ত কানমলায় যা অতি অল্প বয়সে আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায় । কিন্তু আজ তারা কেমন আছেন ? এই চিত্র কিন্তু আমাদের সমাজের আয়না যে আমরা কোথায় যাচ্ছি । এই শিক্ষক এর মুখে আমরা খাবার দিতে পারছি না , এই শিক্ষকের গায়ের কাপর পুরনো , এই শিক্ষকের ঘরে আসবাব পত্র নেই , এই শিক্ষক ঈদে সন্তানদের জামা কিনে দিতে পারেন না , এই শিক্ষক কোরবানি দিতে পারবেন কিনা জানেন না, এই শিক্ষক আজও মাইলের পড় মাইল হেতে স্কুলে যান । তাহলে কই এগুচ্ছি ? কিসের দম্ভ জাতি হিসেবে ? যেই জাতির শিক্ষকরা রিকশাওালাদের চেয়ে কম টাকায় জীবন নিরবাহ করে সেই অধম জাতিতো লজ্জায় ৩৬৫ দিনই শোক দিবস পালন করা উচিৎ।

আসলে বলতে হয় যে এই জাতির হার্টে তো কোলেস্টরল জমে গেছে এই জাতির হার্ট অ্যাটাক আসন্ন । সুপ্রাচীন কালথেকেই আমাদের দেশের শিক্ষকরা হত দরিদ্র ঠিক আমাদের কৃষকদের মতই । খাদ্য ও জ্ঞ্যানের চাষ করেই গেলেন এই মানুষগুলি কিন্তু কোন দিন একটু সুফল ভোগ করতে পারেন নি তবে তাতে এনাড়া দুঃখিত নন এই জন্যই তারা মহান । কিন্তু বিবেকের দূষণ হতে হতে আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা এখন এই শিক্ষককে এখন সম্মানটিও দিচ্ছি না । উপরের এই কোন এক গ্রামের ছবিটিই এর উৎকৃষ্ট প্রমান এবং যা আমরা আমাদের জাতীয় জিবনেও দেখি ।

বরং বলা উচিৎ এটি অনেক মানবিক অন্তত পুলিশের হাতে বেধড়ক মার খাওয়ার চেয়ে । এত কৃপণ কিভাবে হলাম , এত দূষণ হল কখন আমাদের বিবেকের ? আমার মা স্কুল শিক্ষক । আপনাদের অনেকেরই পিতা বা মাতা শিক্ষকতার সাথে জড়িত । অনেক কষ্ট করেন ইদানিং কেননা শরীর ভাল থাকেনা । তারপড়ও স্কুলের চাকরী ছাড়বেন না কেননা স্কুলের ওই কচি মুখগুলিই এখন তার জীবন ,সেগুলি সকালে উঠে না দেখলে মনে হয় দিন্তার শুরুই হয়নি ।

অথচ প্রাপ্তির ভাণ্ডার একেবারেই শূন্য । যেই ত্রান (এটি বেতন বলা যায় না) দেয়া হয় সেটা আমার ছোট বোনের (জনৈক ইংলিশ মিডিয়াম এর শিক্ষার্থী ) এক মাসের এডুকেশনাল এক্সপেন্স । শুধু একবার চিন্তা করেন যে যাদের পিতা স্কুল শিক্ষক আমার মায়ের মতন এবং তাদেরকে পরিবার চালাতে হয় আদৌ কি সম্ভব এই ঢাকার বিশাল অট্টালিকার মাঝে বিশাল বাসা ভাড়া দিয়ে ,দ্রব্যমুল্লের অসিম দানবের সাথে যুদ্ধ করে বেচে থাকা । সম্ভব নয় তাও পরিবারের টানে হয়ত এই যুদ্ধ করেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত । আজ সমাজে করা মাথা উঁচু করে দারিয়ে আছে ? কারা দামি গাড়ি ,দামি বাড়ি,আর বিলাসবহুল জীবনযাত্রার মাঝে ডুবছে , ব্যাবসায়ি ? চাকুরীজীবী ? ডাক্তার ? ইঞ্জিনিয়ার ? রাজনিতিবিদ ? হয়ত আপনি আমি এই ক্যাটাগরিতে পড়ে যাই তারপরও ভুলে গেলে চলবে না দিনের শেষে পর্দার আড়ালে ওই শিক্ষকই এই সমাজ বুকে ধারন করে , লালন করে গড়ে তুলছে তিলে তিলে ।

তাই সময় এসেছে এবার তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার । আত্ম সমালোচনাঃ আসলে কষ্ট পেয়ে কি হবে আমরা কিছু কি করেছি এই দেশের শিক্ষকের জন্য ? আমাদের এত যে প্রচার মাধ্যম টেলিভিশন , বেতার , প্রিন্ট , সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এগুলুতে কি কখনো কেও দেখেছেন এরুপ শিক্ষকের কষ্টের কথা বলতে । আমি কোন ঘটনাকে ছোট করে দেখছিনা বা তুলনা করছি না তবে জাতি কোন দিনও সঠিক জায়গায় আন্দোলন করতে পারেনি । অথচ হে সাংবাদিক এই শিক্ষকই আপনাকে লিখতে শিখিয়েছে কথা বলতে শিখিয়েছে । কতবার যে বানান ভুল করেছেন আপনি তার কোন হিসেব ছিল না তার পরো আপনাকে অক্ষর লিখিয়ে আজ আপনি আপনি হয়েছেন ।

তাই আজ আপনাকে লিখতে হবে তার জন্য । হে আমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়েরা আরেকটি রুগি দেখার আগে বা আরেকটি ভবন বানানোর পূর্বে ওই শিক্ষকের কথা একটু মনে করুন যিনি প্রথম প্রাণিবিদ্যার ক্লাস নিয়েছিলেন কিংবা যিনি প্রথম বলেছিলেন এফ=এমএ । হে কবি তুমি কি ভুলে গেছ রবীন্দ্র আর নজরুল চিনিয়েছিল কে তোমায় ? তার তরে কি লিখেছ দুটি লাইন কভু ? হে চাকুরীজীবী, তোমার জীবনের শৃঙ্খলা আনয়নকারী তোমার ওই শিক্ষককে কি ভুলে গেছ যে তোমাকে শিখিয়েছিল সময়ের মর্যাদা । হে সেনাপতি কোনদিন কি মনে পড়েছে তোমার যে কে তোমাকে বানিয়েছে এত সাহসী ? তোমার কি মনে পড়ে সেই বৃদ্ধর কথা যে বলেছে সাহসী হউ যোদ্ধার মতন ? পারিনি , পারিনি , পারিনি .........  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।