আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাণ্সার এক ধরনের জীবনঘাতী মারাত্মক রোগঃ সামান্য সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চললে ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব

আমি সত্য জানতে চাই অসুস্থ্যতা এক অজানা আতঙ্ক। অসুস্থতার কথা কানে আসলেই মনে কেমন যেন এক ধরনের অপার্থিব অনুভব অনুভূতি হয়। অসুস্থ্যতার সঙ্গে সঙ্গেই নিজের মৃত্যুর কথা মনে পড়ে যায়। আর অসুস্থতাটি যদি হয় ক্যান্সার নামক মরণ ঘাতক ব্যাধি তাহলে তো কথাই নেই। ক্যান্সার নামটা শুনলে প্রথমেই প্রিয়জনের হারানোর ভয় হয়।

মনে হয় যার ক্যান্সার ধরা পড়েছে তিনি আর বাঁচবেন না। কারণ এখন পর্যন্ত এই রোগেই মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ক্যান্সার এক ধরনের রোগ বাংলাতে একে কর্কট রোগ বলে অভিহিত করা হয়। বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়।

এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারনভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। চিকিৎসা সাস্ত্রে একে টিউমার বলে। এই টিউমার বেনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। এখন পর্যন্ত ২০০ প্রকারেরও অধিক ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব রয়েছে। একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছেঃ ১। খুব ক্লান্ত বোধ করা ২।

ক্ষুধা কমে যাওয়া ৩। শরীরের যে কোনজায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া ৪। দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙ্গা ৫। মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া) ৬। জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া ৭।

অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা ৮। অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া ৯। ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষনা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি।

ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরেনর চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। ঠিক কি কারণে ক্যান্সার হয় সেটা এখনও নিশ্চিত নয় তবে গবেষণায় সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর।

ঠিক কি কারণে ক্যান্সার হয় সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে সব ক্যান্সার আগে থেকে বুঝা যায় না বা চিকিৎসা করা যায় না। তবে সামান্য সতর্কতা আর নিয়ম মেনে চললে আপনি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক একটি রোগ থেকে অনেকাংশেই দূরে থাকতে পারবেন। একটু খেয়াল রাখলেই নিজের এবং পরিবারের সবার বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারেন।

তই ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় সকলের জানা থাকা ভালোঃ ১। অসুস্থতার প্রাথমিক ধাপ হলো মানসিক টেনশন দুঃখ চিন্তা। চেষ্টা করুন মানসিক চাপমুক্ত থাকতে। অতিরিক্ত টেনশনের কারণগুলো খুঁজে বের করুন আর সেই কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকুন। ২।

আমাদের শরীরে কিছু অসুস্থতা আসে বংশগত কারণে আর তাই আপনার পরিবারের মেডিক্যাল ইতিহাস জানতে চেষ্টা করুন। কোলন, স্তন, এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের মতো বিশেষ ধরনের ক্যান্সার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সঞ্চালিত হতে পারে। আপনার পরিবারে ক্যান্সারের কোন ধরনের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। পরামর্শ, যথার্থ স্কিনিং এবং সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। ৩।

দামী বা অপ্রতুল ফলমূল না খেয়ে নিয়মিত মৌসুমী ফল খেতে চেষ্টা করুন। প্রচুর তাজা ফলমূল, সবুজ শাক, লতাপাতা জাতীয় খাবার এবং তাজা সবজি খান। অরগানিক ফলমূল, শাকসবজিও আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। ৪। বাজার থেকে আনা ফল ও সবজি ভাল করে ধুয়ে নিন।

ফল ও সবজিতে প্রচুর কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ভালভাবে না ধুয়ে এসব কীটনাশকযুক্ত খাবার খেলে তা আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। ৫। মাংস বলতেই আমাদের জিভে অন্যরকম স্বাদ জাগে কিন্তু এই মাংসই মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের উপকরণ। তাই মনে রাখতে চেষ্টা করুন সব সময় খাদ্য তালিকায় মাংস আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিবর্তে মাছ বা মুরগির মাংস বেছে নিন। যদি খেতেই হয় অল্প খান। ৬। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মাছ রাখতে চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ, কারণ সামুদ্রিক মাছে ক্যান্সার প্রতিরোধক অনেক জরুরি উপাদান থাকে।

তবে মাছের শুঁটকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করুন। ৭। খাবার পানি ভাল করে ফিল্টার করুন। পরিবারের সবার মাঝে প্রচুর পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকালে খালি পেটে আর সারা দিনের কাজের মাঝেও পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

৮। পছন্দের সাবান, লিকুইড সোপ কিংবা বডিকেয়ার সামগ্রীগুলোতে ক্ষতিকারক উপাদান আছে কিনা নিশ্চিত হোন। যদি থাকে তাহলে অবশ্যই তা ব্যবহার বন্ধ করুন। এইসব পণ্য ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবানের বদলে সাধারণ সাবান ব্যবহার করাই যথেষ্ট ৯।

দৈনন্দিন জীবনে আপনার ব্যবহৃত আসবাবপত্র থেকেও ক্যান্সার হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে আপনার সচেতনতাই পারে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে। বাসার ফ্রাইং প্যানটি কিছুদিন পর পর পরিবর্তন করুন। চেষ্টা করুন ননস্টিক, দাগ পড়ে না এমন সব বাসন কোসন ব্যবহার করতে। ১০।

প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তার দিক লক্ষ্য রাখুন। আপনার মুঠোফোন থেকে নির্গত ফ্রিকোয়েন্সি মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কথা সংক্ষিপ্ত করুন আর ক্ষুদে বার্তা ব্যবহারে নিজেকে অভ্যস্ত করুন। ১১। যান্ত্রিক এই জীবনে বর্তমানে আপনার হয়ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শারীরিক পরিশ্রম করতে পারছেন না।

কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। শারীরিক পরিশ্রম আপনার সম্পূর্ণ দেহের জন্যই স্বাস্থ্যকর। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দৈনিক ৩০ মিনিটের জন্য হলেও হাল্কা ব্যায়াম করতে চেষ্টা করুন। ১৩। দেহের অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ।

যদি আপনি অতিরিক্ত মোটা হন, তবে নিয়মিতভাবে ওজন কমিয়ে আপনার ইগও ঠিক রেখে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারেন। ১৪। আমরা সাধারণত এমনি এমনি ডাক্তারের কাছে আমরা যেতে ভয় পাই। আমাদের অধিকাংশেরই ধারণা অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, আগে নয়। আবার অনেকে শুধু পয়সা নষ্ট হবে ভেবে অবহেলা করেন।

বছরে অন্তত একবার রুটিন চেকআপের প্রয়োজন রয়েছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, ক্যান্সার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার চাইতে প্রথম পর্যায়ে ক্যান্সারের উপসর্গ ধরতে পারলে তা দশ গুণ সহজে নিরাময়যোগ্য হয়। আর তাই আপনার শরীরে ক্যান্সারের বীজ রয়েছে কিনা তা নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপের মাধ্যমে পরীক্ষা করে অনেক আগে থেকেই প্রতিরোধের সুযোগ নিন। ১৫। তবে অপ্রয়োজনীয় মেডিক্যাল স্ক্যান এড়িয়ে চলুন।

যদি সিটি স্ক্যান ও এক্স-রে মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় তবে সতর্ক থাকুন। কারণ এসব ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম থেকে উচ্চ রে বের হয়। আর তা লিউকেমিয়ার কারণ হতে পারে। ১৬। ছোটবেলা থেকেই ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করুন।

অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিন। ধূমপানের কারণে ফুসফুস, কিডনি, গলা ও মুখের ক্যান্সার হতে পারে। আপনার জীবনের সবচাইতে সহজ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো সিগারেট বর্জন। এর পরোক্ষ ধোঁয়া আরও বেশি বিপজ্জনক। নিজ দেহের আশঙ্কার সঙ্গে সঙ্গে পরিবার-পরিজনদের মাঝেও আপনার এই ধূমপানের মাধ্যমে ক্যান্সার হতে পারে।

আর তাই এখনই ধূমপানকে না বলুন। ১৭। মেডিটেশন করুন। বলা হয় মেডিটেশন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বর্তমানে অধিকাংশ ক্যান্সার রোগীদের মেডিটেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।

মেডিটেশন শুধু মাত্র ক্যান্সার প্রতিরোধক নয়, আপনার শারীরিক, মানসিক এবং পারিবারিক প্রশান্তির জন্যও এটা বিশেষ করে কার্যকর। ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে যেমন হতাশাগ্রস্ত তার সঙ্গে পুরো পরিবারটি হয়ে পরে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে আশার কথা ক্যানসার গবেষকেরা বর্তমানে কাজ করছেন আগামী প্রজন্মের ক্যানসারের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে। এতে বর্তমানে প্রচলিত কেমোথেরাপি ও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের বিকল্প অনুসন্ধান চলছে। সুতরাং শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করান।

সতর্ক হোন সুস্থ্য থাকুন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।