আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরআনের বাণী সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য! তবে তাঁর আবেদন কি কেবল একটি কওমের জন্য?

সারা পৃথিবীতে একদিনে পবিত্র ঈদ যেমন পালন করা যায় না অনেকে'ই শিকার করবেন, ঠিক শবেকদর এর একটি রাত্রী সারা পৃথিবীর মানুষ একই সাথে পাবে না। সৌদিতে যখন শবেকদর ঠিক তখন আমেরিকায় দিন। যখন আমেরিকানরা রাত্রী পাবে তখন সৌদির শবেকদর শেষ। তবেকি মক্কার পরে আবারো অন্য দেশে নতুন করে শবেকদর হবে? যতি তায় হয় তবে কোরআন নাজিলে রাত্রি পার হবার পরেও আবারো অন্য দেশে রাত্রিবেলা নতুন করে কোরআন নাজিলের রাত আসবে কি করে? সিয়াম অর্থ রোজা। কোরআন বলছে রাত্রের কৃষ্ণরেখা না দেখা পর্যন্ত পনাহার কর ও সূর্যাস্তের সাথে সাথে রোজা ভঙ্গ কর।

এবার যদি আমরা এই নিয়োমে রোজা শুরু করি তাহলে উত্তর মেরু ও দক্ষীণ মেরুবাসীরা কিভাবে রোজা করবে? আসলে এই কোরআন এরনির্দেশ কেবল কার জন্য একটু ভাবনার বিষয়। কবি নজরু কিংবা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার কবি তার অর্থ এই নয় যে তাদের বাণী পৃথিবীর অ্ন্য দেশের কেউ নিতে পারবে না, মানতে পারবে না। জ্ঞানিদের জ্ঞান বাক্য সবায় নিতে পারবে; তারপরেও কথা থাকে সেই গুণির স্থান কাল পাত্র কোথায়? কবিদের সকল বাণী সারা পৃথিবীর মানুষ নিতে পারে অবলিলায়। ঠিক আসমানী কিতাবগুলোর সকল বাণী মানুষের কল্যাণের জন্য, কল্যাণ সাধনের জন্য। এই বাণী যে কেউ নিতে পারে, মানতে পারে; তার অর্থ এই নয় যে বাধ্যতামূলক এই কিতাবের বাণী সারা পৃথিবীর মানুষকে মানতে হবে।

আসলে কোরআন কার জন্য? কাকে মানতে হবে এই কিতাব? চলুন দেখি কোরআন কি বলেঃ সূরা আশ-শুরা ৪২:৭ আয়াতঃ وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ অর্থঃ এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সূরা আন আম ৬:৯২ আয়অতঃ وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلِتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالآخِرَةِ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَهُمْ عَلَى صَلاَتِهِمْ يُحَافِظُونَ অর্থঃ এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামায সংরক্ষণ করে। উপরের দুইটি আয়াতে স্পষ্ট যে এই কোরআন দিয়ে মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করাতে বলেছে।

এবার নিচের আয়াতগুলো দেখি চলুন। সূরা ইউসূফ ১২:২ আয়াতঃ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ অর্থঃ আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। আল্লাহ্ বলছে একে (কোরআন) আরবী ভাষায় নাজিল করেছে কেবল আরবী ভাষাভাসি মানুষের জন্য। এটা ইংরেজী হলে সারা পৃথিবীর জন্য হতো এতে কোন সেন্দহ নাই; যেহেতু পৃথিবীর ইন্টারন্যাশনাল ভাষা'ই হলো ইংরেজী। সূলা হামিম ৪১:৪৪ আয়াতঃ وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى أُوْلَئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ অর্থঃ আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার।

যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। উপরের এই আয়াত আল্লাহ বলছে যারা মুমিন নয় তাদের কানে আছে ছিপি আছে ও কোরআন তাদের জন্য অন্ধত্ব। অনারব ভাষায় কোরআন নাজিল করলে লোকে বলতো কিতাবের আয়াত সমূহ পরিস্কার ভাষায় কেন হয়নি। আরও বলতো কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী।

এই খানেও চমৎকার সত্য লুকিয়ে আছে না শুনলে কানে ছিপি আর না বুঝলে কোরআনের ভাষায় অন্ধ। এই কথাতেও বোঝা যায় কোরআন আরবের জন্য আরবী ভাষায়। কেবল রাসুলের উম্মতরা যেন সহজে বুঝতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোরআন মতে আপনার ভাষা কি আরবী? সূরা ফাতির ৩৫:২৪ আয়অতঃ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خلَا فِيهَا نَذِيرٌ অর্থঃ এমন কোন সম্প্রদায় নেই যেখানে সতর্ককারী আসেনি। একটি নবী বা রাসুল দিয়ে পৃথিবী শাসন আল্লাহ করেন নাই বলে কোরআনে আল্লাহ বলছেনসকল সম্প্রদায়ের উপরে'ই তিনি সতর্ককারী প্রেরণ করেছেন।

তাহলে এখানে বোঝা যাচ্ছে নবী রাসুল কেবল গ্রোত্রের জন্য। সূরা শুরা ৪২:১৫ আয়াতঃ فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ وَقُلْ آمَنتُ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِن كِتَابٍ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ اللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ اللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ অর্থঃ আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা। আমাদের জন্যে আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম। আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সমবেত করবেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তণ হবে।

উপরের আল্লাহ শুরা ১৫ আয়াতে বলছে অন্যদের পালন কর্তা সে আমাদেরও পালন কর্তা। আমাদের জন্যে আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম। আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ নেই। তাহলে আমাদের মাঝে ধর্ম নিয়ে কারা বিবাদ করছে? সূরা শো’আরা ২৬:১৯৮-৯৯ আয়াতঃ وَلَوْ نَزَّلْنَاهُ عَلَى بَعْضِ الْأَعْجَمِينَ যদি আমি একে কোন ভিন্নভাষীর প্রতি অবতীর্ণ করতাম, فَقَرَأَهُ عَلَيْهِم مَّا كَانُوا بِهِ مُؤْمِنِينَ অতঃপর তিনি তা তাদের কাছে পাঠ করতেন, তবে তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করত না। উপরের সূরায় আল্লাহ্ বললেন যে কোরআন যদি তিনি অন্য ভাষাভাসি মানুষের প্রতি দিতেন তাহলে সেটা তারা বিশ্বাস করতো না।

এই কারনেই যদি বলি এটা অঞ্চল ভেদের কথা বলে? সূরা ইয়াসীন ৩৬:৫-৬ আয়াতঃ تَنزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ অর্থঃ কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ, لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ অর্থঃ যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল। উপরের এই সূরা ও আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট বলছে এই কোরআন দিয়ে এমন এক জাতীকে সতর্ক করতে যাদের উপর কোনদিন কোন সতর্ককারী আসেনী। আপনার কি ধারনা ইহুদী, খ্রীষ্টিয়ানদের উপর কোন সতর্ককারী আসেনী? হ্যাঁ এসেছে্ তবে কি কোরআনের কথা অনুযায়ী এই কোরআন তাদের জন্য? এমন অনেক কোরআন থেকে বলা যায়। তবে কোরআনের এই আয়াত গুলো অনেকেই মনে করবেন লেখক ভুল বলছে।

কোরআনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন আয়াতগুলো ঠিক আছেকি না। সত্য চির দিন'ই সত্য সূর্যদয়ের মত। আল্লাহ আমাদের সকলকে কোরআন বুঝে পড়ার তৌফিক দান করুন---আমেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।