সব কিছুই কেমন উদাসী লাগে। পৃথিবীর সবরূপ কেমন অপূর্ণ মনে হয়। রাজা ভাইয়ের সান্নিধ্যে দারুণ দিন কাটে। বাকি সময় হাহাকার। নিজেকে দারুণ অপরাধী ভাবে প্রিয়া ।
কাওসারের ব্যাপারটা রাজাকে জানায় নি তাই। বলতে গিয়েও বলা হয়নি। ভয়। অজানা আশংকা। সে রাজাকে ভালবেসে ফেলেছে বোধ হয়!ব্যাপারটা বিরক্তিকর কিন্তু সত্যি।
বন্ধরীরা টিপ্পনি কাটে। রাজা ভাইয়ের কর্মময় প্রেমহীন জীবনে প্রেমের ছোয়া লাগলো কিনা সেটাও জানে না প্রিয়া। তবে এতটুকু নিশ্চিৎ রাজা ভাই তাকে যথেষ্ট পছন্দ করেন। গুরুত্ব দেন। প্রিয়ার মন শিহরিত হয়।
রাজা ভাই যদি তাকে প্রপোজ করেন!
বন্ধবীরা তাকে সতর্কও করেন বারবার। রাজা ভাই এক কথার মানুষ।
কাওসারকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। এতটুকু এগুনোর পর পিছানো ঠিক হবে না। কাওসার যদি ভয়ানক কিছু করে বসে ব্লা ব্লা ব্লা।
প্রিয়া এসব কথা কানে নেয় না। রাজা ভাইয়ের সান্নিধ্য থেকে সরাতেই তারা এটা বলে।
রাজার সান্নিধ্য তার ভাল লাগে। তার সঙ্গে সারাজীবন কাটানো যাবে নিশ্চিন্তে। তার উপর ভরসা করা যায়।
তার জন্য সব কিছু করা যায়।
রাজা ভাই সবাইকে ডেকেছেন। বিজ্ঞান ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায়। যারা কাওসার কেন্দ্রিক বিবাদে জড়িয়েছেন সবাইকে । যে ছেলেটি মার খেয়ে হাসপাতালে ছিল সে নাকি আর্মস নিয়ে এসেছে।
প্রিয়া ভয় পেয়েছে। ছেলে গুলা টুকটাক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাফ এন্ড টাফ বলা চলে। রাজা ভাইকে কোন অপ্রীতিকর ঘটনায় পরতে হয় যদি। তার জন্যই এমন ঝুকি পূর্ণ অবস্থা।
রাজাভাই আগে প্রিয়াকে বলেছে ক্যাম্পাসে যতগুলি ঝমেলা হয়েছে সবগুলো হয়
চাদাবাজী কেন্দ্রিক কিংবা নারীঘটিত।
রাজা ভাই দারুণ একটা বক্তব্য দিলেন। মনে হলো একটা দর্শন। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুণ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া করো সামনে বিরাট ভবিষ্যৎ। যদি ঠিক ভাবে চলতে পার।
প্রচন্ড পরিশ্রম করতে পারো। নাহলে ভীষণ নাজুক অবস্থা। ঝগড়া বিবাদ কোন্দল কে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বা তো মরবা। রাজনীতিকে ব্যবহার করো রাজনীতি যেন তোমাদের ব্যবহার করতে না পারে। রাজনীতি করে কয়জন লাভবান হয়েছে? কয়দিন চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ব্যাস।
অনেকের পড়াশুনা শেষ হয় না। অনেকের অকালে জীবনাবসান।
যে দলই কর । ভাবছ তোমাদের দল ক্ষমতায় আছে থাকবে। কিংবা বিরুধী দলে আছ নিশ্চিৎ পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসবে্ ।
এসব ভ্রান্ত ধারণা তোমাদের বিপথগামী করে তুলে্ । দলের আনুগত্য দেখাতে গিয়ে অনেকে ভয়ানক সবফাঁদে আটকা পরতে থাকে। সেগুলো থেকে সহজে বের হওয়া যায়না। মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে জীবন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যায়। তাই সাবধান।
নীতি নির্ধারকরা তোমাদের এটা বুঝাতে সক্ষম হবেন যে পরবর্তী সময়ে নিশ্চিৎ ক্ষমতা। তাদেরর মিষ্টি কথায় ফাঁদে পরা চলবে না।
প্রিয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যা হওয়ার হয়েছে। সব ভুলে যাও। অন্তত কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোন যৌক্তিকতা নাই্ ।
ঝগড়া ফ্যাসাদ যা হওয়ার হয়েছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন তোমরা কোলাকুলি কর। হাসি বিনিময় কর। দুপুর বেলা মিতালীতে সবাই একসঙ্গে খাব।
রাজার সবকিছু ই প্রিয়ার ভাল লাগে। কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দারুণ কাজ করেছেন। জানতে চাইলে রাজা বলেন দেখা যাবে কে কি বলে বসে পরে তিল থেকে তাল হয়ে যাবে। ছোট ঝামেলা বড় ঝামেলার সৃষ্টি করে ফেলবে । তাই এ পদ্ধতি।
ভাল লাগে না কাওসারের কর্মকান্ড। ইদানিং সে বড্ড অনিয়ম করছে। সে নাকি প্রায়ই ড্রিংকস করে। কি সমস্ত ম্যাসেজ পাঠায়। মনে আশংকা জাগে।
মরে টরে যায় কি না। কোথাও বেড়াতে গিয়েও লাভ নেই। কিভাবে যেন কাওসার গিয়ে হাজির হয়। ব্যাপরটা ইদানিং বিরক্তিকর লাগে। বন্ধুরা এই নিয়ে তার উপর যথেষ্ট বিরক্ত আছে এসব ছাড়তে চাইলেও কাওসার ছাড়তে দিচ্ছে না।
কাওসার ইদানিং তার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেয়। টাকাগুলো নেশার পিছনে ওড়ায়। চাকুরীহীন বেকার জীবন তাকে এমন করে ফেলেছে। হতাশা থেকে তার নেশা। প্রিয়া তাকে আশ্বস্তও করতে পারছে না।
বাবা-মা চাকুরিহীন ছেলেকে প্রিয়ার পাত্র হিসেবে মেনে নিবে না। এসব ভাবলে প্রিয়ার খুব খারাপ লাগে।
ক্যাম্পাসে মিথুন নামে একছেলে খুন হয়েছে। সেমসাইড কেস। দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ।
ছেলেটি আহত হলে পরবর্তী দফায় কে বা কারা তাকে রড দিয়ে প্রচন্ড আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিৎ করে গেছে। মিথুন স্পষ্টবাদী ছেলে ছিল। তাই তার মৃত্যু বরণ করতে হলো। অপরাধীরা ধরা ছুয়ার বাইরে। ক্যাম্পাস অপরাধীদের নিরাপদ আবাস।
যাই কর কোন বিচার নাই।
ছাত্ররাজনীতিকে ইস্যু করে যে ঘটনা ঘটে সেগুলোতে হস্তক্ষেপ ঘটে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির। ফলে প্রকৃত বিচার হয়না্ । অন্যায়কারী কয়দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকে তারপর আবার সব স্বাভাবিক। অপকর্ম সাধনকারী ব্যাক্তি দলীয় অবস্থান উন্নত হয়।
তার পিছনে বাহবা দেয়ার লোক বেড়ে যায়। তাকে দলে টানার জন্য ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলে। অদ্ভুত কিন্তু বাস্তব।
মিথুন বাবা-মার একমাত্র সন্তান। তার লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলো।
তার লাশ দেখার জন্য সব গণ্যমান্য রাজীতিবিদের আগমন । পেপারে নিউজ এল । এক মেধাবী তরুণের অকাল মৃত্যু। সব ছাপিয়ে তার বাবা মার কান্নাকাটি বেদনা উপাখ্যান। মরে গেলেই আমার কেমন মেধাবী হয়ে ওঠি!
শাহবাগ থেকে রিক্শা সহজে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে চায় না।
তারা ওটাকে মৃত্যুপুরী ভাবে বোধ হয়!পত্রপত্রিকায় যে ধরণের নিউজ আসে তাতে সেটা ভাবাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মানেই ত্রাস। ত্রাসের রাজত্ব। আর সেই রাজত্বে যাদের বাস তারা সবাই ভয়ানক প্রাণী। ড্রাকুলা ধরণের কিছু।
তা না হলে রিকসাওয়ালারা তার ভিতরে ঢুকতে চয়না কেন? ক্যাম্পাসের ভিতরটা কিন্তু স্বাভাবিকই বলতে হয়। রেগুলার ক্লাস হচ্ছে। তরুণতরুণীর হাসি গানে উচ্ছাসে প্রাণবন্ত এলাকা। প্রেম বিরহ মিল অমিল সবকিছু মিলে এ গ্লামারাস স্পট।
আজ প্রচন্ড রৌদ্ ।
এই রৌদ্রে হেটে কার্জনে যাওয়া দারুণ কষ্টকর বটে। ভ্যাপসা গরম। বৃষ্টি হবে বোধ হয়। বৃষ্টি হওয়ার আগমুহুর্তটা অসহ্যরকম। বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতল একটা অনুভূতি মনে প্রশান্তি এনে দেয়।
বৃষ্টিতে ভিজতে দারুণ ভাললাগে । ঠান্ডা বাতাস। ঝির ঝিরে বাতাস। খরতাপে অলস সময় হঠাৎ কেমন প্রালবন্ত হয়ে ওঠে। একপশলা বৃষ্টি ক্লান্ত লোকালয়ে চঞ্চলতা নিয়ে আসে।
প্রেমিক মনেও প্রেমের ছুয়া দিয়ে যায়। প্রিয়া হাটছে দারুণ লাগছে । বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে। সারাশরীর ভিজে একাকার। পায়ের জুতো হাতে নিয়ে ধীর পায়ে বৃষ্টি ভেজা উপভোগ করছে।
মনটা কেমন সতেজ লাগছে । ছেলেরা সবুজ মাঠে ফুটবল খেলছে। কাদায় পিছলে পড়ছে। বল আটকে যাচ্ছে । দলধরে পিছলে পরে দারুণ মজা করছে।
কিছু রিকশাচালক রিকশার ভিতর পলিথিন দিয়ে গা ঢেকে ঝিমুচ্ছে। গাছের ডালে কাকের দল ভিজছে। মাঝে মাঝে ঠোট দিয়ে পাখা শরীর আচড়ে নিচ্ছে। গাছগুলো আরো সবুজ আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেছে। একপশলা বৃষ্টি সবকিছু কেমন সতেজ করে দেয়।
রাজার উপস্থিতি ঠিক তেমনি। রাজা কি বৃষ্টিতে ভেজা পছন্দ করে!............>
প্রেম অপ্রেমের গল্প-১
প্রেম অপ্রেমের গল্প-২
প্রেম অপ্রেমের গল্প-৩
প্রেম অপ্রেমের গল্প-৪
প্রেম অপ্রেমের গল্প-৫ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।