আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপ্রতিহত অমানবিকতা: রামু থেকে উখিয়া

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন : “ধর্মের নামে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে নির্যাতন চালাইয়াছিল” (ইত্তেফাক, ৯-০৩-’৭২)। চল্লিশ বছর পেরিয়ে গত ২৯-৩০ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে “বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, রামু, টেকনাফ, উখিয়া, পটিয়ায় ১৯ বৌদ্ধবিহার ও ৪৫ বাড়িতে আগুন” এবং “বৌদ্ধবিহারে আগুন// ফেসবুকের আপত্তিকর ছবিকে পুঁজি করে তা-ব//, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বৌদ্ধদের মন্দির, বসতবাড়ি//, হিন্দু মন্দিরও//জামাত-শিবিরের মদদে এ ঘটনা ঘটেছে”। এখন চরম অমানবিকতায় ক্ষতিগ্রস্ত-আহত মানুষ বলতেই পারে, ধর্মের নামে বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে। সহৃদয় পাঠক, তাহলে দোষ কি হবে বক্তার, নাকি যারা সংঘটনকারী এবং আমরা যারা অপকর্ম-অপঘাতের পর ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দেশ’ বলে ‘ক্লিশে’ সুভাষণেই দায়িত্ব সম্পন্ন করি, তাদেরও? শুধু ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর কথা ভাবলেই মনে পড়বে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, তার আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং তারও আগে সাতক্ষীরার বড় অঘটনগুলো। অপকর্মের আগে অজুহাত প্রয়োজন, ইংরেজি প্রবচন, ‘কুকুরটাকে বদনাম দাও, তারপর গুলি করো’।

ঈশপের গল্পের নেকড়ে এবং রামু-উখিয়ার সন্ত্রাসীদের অজুহাতের অভাব হয়নি কখনো। রামুর উত্তম বড়–য়ার ফেসবুকে ‘কোরান আবমাননা’র ছবি ট্যাগ করায় অঞ্চলজুড়ে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ ঘটানো হলো। অথচ “উত্তম বড়–য়াকে ছবিটি ট্যাগ করেছিলেন তার কোনো এক ফেসবুক-বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এতে তার কোনো ভূমিকা ছিল না” (অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, প্র.আ, ৫-১০-১২)। কবি-প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক আবুল মোমেন লিখেছেন, “আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মী এই একই ছবি তাদের মোবাইলে পেয়েছে মাস দুয়েক আগে।

বানোয়াট নামে এসব অপকর্ম চালানো হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। আমাদের এই সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির সহজ উপায়ৃ ধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে খেপিয়ে তোলা, যারা সমাজে অস্থিরতা চায়, তারাই এ কাজ করছে। এর মধ্যে ঢুকে পড়ে লুটেরা প্রকৃতির সন্ত্রাসীরাও” (প্র.আ, ৩-১০-১২)। সাতক্ষীরার ঘটনার কিছুদিন আগে হাটহাজারীতে গুজব তোলা হয়েছিল, মসজিদ ভাঙার। কিন্তু পরে জানা যায়, যারা গুজব ছড়িয়েছিল তারাই কামলা লাগিয়ে অমন কা-টি করছিল।

কিন্তু যা ঘটাবার, তা-ই ঘটানো হয়েছিল, সংখ্যালঘুদের লাঞ্ছনা, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙা ইত্যাদি। এখানে প্রসঙ্গতই স্মরণ করুন, ‘ব্লাসফেমি’ আইনের দেশ পাকিস্তানে কিছুদিন আগে পবিত্র কুরআন অবমাননার দায়ে খ্রিস্টান কিশোরী গ্রেপ্তারের কথা। অথচ পরে জানা গিয়েছিল, ‘ধার্মিক ফরিয়াদি’ নিজেই সাজিয়েছিলেন ঘটনাটি। এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম এমন আন্তরিক বিশ্বাস থেকেই যে, প্রকৃত ধর্মপ্রাণ কোনো মানুষই কোথাও পরধর্মের অবমাননা করতে পারে না, করে না। সর্বত্রই অপকর্ম করে ধর্ম-ব্যবসায়ী চক্রান্তকারীরা।

ইউনেস্কো-ঘোষিত প্রতœসম্পদ আফগানিস্তানের বামিয়ানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি ভেঙেছিল তালেবানরা, ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল বিজেপি-শিবসেনা আর রামু-উখিয়াতে ‘রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী’ ভেঙেছে বুদ্ধমূর্তি, জ্বালিয়েছে মন্দির-বসতবাড়ি। এরা সকলেই ধার্মিক সেজে পরধর্মে আঘাত করে, স্থান-কাল-নাম ছাড়া চরিত্র-কর্মের কোনো ফারাক নেই । লেখার মূল ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.