আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিসিক নির্বাচন: কেন আরিফুল হককে ভোট দেব?? আমার দেখা আরিফুল হক ও কিছু কথা

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ ভূমিকা সাদা চুলের মহিলা ও কালো চুলের কিংবা পাগরীওয়ালা সিংজি দেরকে খুশী করার জন্য সরকার একটা নির্বাচন দিয়েছে। যেটাকে খুবই অগুরুত্বপূর্নই বলবোনা শুধু, এটা একটা গুরুত্বহীন নির্বাচন বিরোধী দলগুলোর জন্য। আমি ঠিক জানিনা একজন সিটি মেয়র মনজুর আলম কিংবা সাদেক হোসেন খোকা ঠিক কতটুকু ভুমিকা রাখতে পারেন রাজনীতির মেইনস্ট্রিমে যখন ক্ষমতায় থাকবে আওয়ামীলীগ। আমার কাছে মনে হয় আল্টিমেট টার্গেট হওয়া উচিত সরকার পতন, সংসদে সংখ্যাগরিস্ট আসন দখল করা। সংসদে যদি আপনি সংখ্যা গরিষ্ট না হন তাহলে এরকম ৮/১০টা সিটি মেয়র দিয়ে কোন কিছুই করতে পারবেননা।

তবুও বিএনপি যখন লাফাতে লাফাতে সরকারের এই ফাঁদে পা দিয়েছে তখন আর কি করা ভোট তো দিতেই হবে। তাই আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ প্রকারান্তরে ১৮ দলীয় জোট প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের একজন আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিকের নাম, যেসব কারনে তিনি আলোচিত বা সমালোচিত তার কিছু কিছু আজ মন পড়েছে, তাই কি-বোর্ড হাতে বসলাম আজি- ১. স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের বিগত ৪২ বছরের ইতিহাসে সিলেট শহরে সর্বোচ্চ উন্নয়ন কাজ সাধিত হয়েছে বিগত ৪ দলীয় জোট সরকার আমলে। সাইফুর রহমান যখন মৃত্যুর ঠিক আগের দিন জুমার নামাজ শেষে কোর্ট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল নয়নে আপ্লুত হয়ে বলেন, "বাবা শাহজালালের পূন্যভূমি, সুরমা নদীর তীরে যেন তিনি বার বার ফিরে আসতে পারেন। " এই কথাটা বলে যখন একজন প্রভাব প্রতিপত্তিশীল রাজনীতিক হু হু করে বাচ্চাদের মতো কেঁদে ফেলেন তখন বুঝতে আর কোন দ্বিধা থাকে না সিলেট শহর ও সিলেট বাসীর প্রতি তার মমত্ববোধ কত গভীর আর কতটা আকাশ ছোঁয়া।

তাই বুঝি তিনি শহর সিলেটকে আলোকিত করে গেছেন, দু হাত ভরে সিলেটের উন্নয়নে কাজ করেছেন। আর সাইফুর রহমানের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যে মানুষটি সার্বক্ষনিক অক্লান্ত পরিশ্রম করে সফল করেছেন। কখনো হাতে ধরে, কখনো পায়ে ধরে কিংবা কখনো ধমক দিয়ে কিংবা প্রভাব বিস্তার করে সে মানুষটি আজ আপনার দুয়ারে ভোটের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। সেই মানুষটি আরিফুল হক। ২. সিলেট শহরের বড় রাস্তাগুলো এতই ছোট যে এগুলোকে বড় রাস্তা বলতে লজ্জা করবে।

তো সেই কথিত বড় বড় (!) গুরুত্বপূর্ন রাস্তাগুলোকে জনসাধারনের চলাচল ও সূদীর্ঘ যানজট থেকে মুক্ত করার জন্য সাইফুর রহমান সাহেব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করলেন। সে পরিকল্পনা পাশ হলো। টাকা পয়সা বরাদ্ধ হলো। ঠিকাদার নিয়োগ হলো। কিন্তু কার সাধ্য শহরের সব বড় বড় হোমরা চোমরা, হেন-মেনোদের অট্টালিকায় হাত দেয়।

সিটি কর্পোরেশানের কর্মচারীরা বুলডোজার নিয়ে অবৈধ কিংবা বৈধ (ক্ষতিপূরন সাপেক্ষে) স্থাপনা ভাংতে যায়। কিন্তু সাহসে কুলায় না। ডাকো আরিফকে। আরিফ সাহেব তরিঘরি পরি মরি দৌড়ে যান ঘটনা স্থলে। শুনেন দুপক্ষের কথা, দেখেন আদালতের ইনজাংশন আবার সিটি কর্পোরেশান এর স্থাপনা ভাঙার নোটিশ।

তারপর ঘোষনা দেন রাস্তাটা আগে হোক। পরে দেখা যাবে অন্য কিছু। অনুরোধ করেন, দয়া করে রাস্তার জন্য জায়গা দেন আপনারই লাভ হবে। তারপরও যদি খুশি না হন তাহলে মামলাটা আরিফের নামেই যেন করে দেন। এভাবেই তারর হাত ধরে 'সার্কিট হাউজ থেকে এয়ারপোর্ট', 'কীন ব্রীজ থেকে আম্বরখানা', 'শাহজালাল ব্রীজ থেকে শাহী ইদগাহ', 'মির্জা জাংগাল থেকে মিরা বাজার' ইত্যাদি রাস্তা প্রসারিত হওয়ার ইতিহাস তৈরী হয়।

৩. হবিগঞ্জ বা মৌলভী বাজার, শ্রীমঙ্গল যাদের বাড়ী তারা খুব ভালো করেই জানেন সিলেট-হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস নামক বাস সার্ভিসের মালিক কর্মচারীদের ক্ষমতার দৌড়াত্ম। তবুও এরা খুব ভালোবাসেন এই পরিবহনের গাড়ি চড়ে কারন এরা এটলিস্ট একটা নুনন্যতম মান বজায় রাখতো লোকাল বাস সার্ভিসের মধ্যে। এদের সমিতিটা খুব শক্তিশালী, এরকম শক্তিশালী যে পুরাই গন্ডারের মতো। এরা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত গন্ডারের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। কারো কোন কথা শুনে।

ওদিকে যাত্রী সাধারনের দূর্ভোগ কানেই তারা তুলেনা। তো এই গন্ডারসম মালিক সমিতি একবার ধর্মঘট ডাকলো। নিজেরা গাড়ী চালাবে না আবার কাউকে চালাতেও দেবেনা। এভাবে ১ দিন যায় ২ দিন যায় ৩ দিন যায় কোন সমাধান নেই। এদিকে ভোক্তভুগী মানুষ প্রভাবশালী রাজনিতিক আরিফ সাহেব কে অনুরোধ করেন বিষয়টা দেখার জন্য।

আরিফ সাহেব ডিসিকে দিয়ে একটা বৈঠক ডাকালেন যদিও এর আগে ডিসি সাহেব কয়েকটা বৈঠক করে ব্যার্থ হয়েছেন। তবুও অগত্যা তিনি মিটিং ডাকলেন সেখানে আরিফুল হক উপস্থিত থেকে যা বললেন তা হুবহু পরেরদিনের ভারতের আলো টাইপ পেপার গুলোতে ছাপা হয়। যখন কোন সমধান হচ্ছিলো না, মালিক সমিতি অনড় তাদের অবস্থানে তারা গাড়ী চলতে দিবেনা। তখন আরিফুল হক হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, " আমি আরিফ সিলেটের মন্ত্রী, সিলেটের এমপি। কাল থেকে সিলেট হবিগঞ্জ রুটে গাড়ী চলবে।

এটাই আমার শেষ কথা। " জানিনা এমন হুমকি পেছনে কি ছিলো কিন্তু পরের দিন থেকে ঠিকই ধর্মঘট উঠিয়ে গাড়ী চলেছিলো। ৪. বিশিস্ট নাস্তিক হাবিবুর রহমান (যদিও আমার কিছুটা আত্মীয় হন সম্পর্কে) শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক নাস্তিককূল শিরমনি জাফর ইকবাল, তার স্ত্রী ও গৌরাঙ্গ চক্রের আধিপত্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকাল সিলেটের মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষক হওয়া প্রায় স্বপ্নের বাইরে ছিলো। জানিনা কি এক অদ্ভুত কারনে সিলেট বিদ্বেষ কাজ করছিলো এদের মধ্যে। কারন কথিত চেতনাধারী না হলে শাহজালালের শিক্ষক হওয়া খুবই কষ্টকর ছিলো সাধারনত।

এই আরিফুল হকের প্রচেস্টায় সাম্প্রদায়িক জাফর চক্রের আধিপত্য কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ ও সিলেট বিদ্বেষী মনোভাব কঠোরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। যার কারনে আজ আমরা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী সিলেটি শিক্ষক দেখতে পাই। ৫. কোন এক অদ্ভুত কারনে এক সময় আরিফুল হক প্রতিদিন ভোরে ফজরের পরেই তার নিজ এলাকা কুমার পাড়া রোডের এমাথা থেকে ওমাথা অবদি ঝাড়ু দিতেন। আমি জানিনা আরিফুল হক এখনো কন্টিনিউ করছেন কিনা? তবে সেদিন মানুষ তাজ্জব হয়ে গেছিলো সিলেটের এতোবড় একজন প্রতাপশালী রাজনীতিক লোক দেখানোর জন্য হোক আর মানুষকে মটিভেট করার জন্যই হোক এমন ছোট ছোট কাজও করতে পারেন। ৬. যোগ্যতার বিচারে হয়তো এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে ছিলেন এহসানুল মাহবুব জোবায়ের।

তাই জামায়াত-শিবিরের মনক্ষুন্ন নেতা-কর্মীদের বলছি, আপনাদের মনোকষ্ট বুঝি। এমনকি বিএনপির সবাই বুঝে। তাই আপনাদের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি রেখেই বলছি। আপনাদের জন্য এই সময় নির্বাচন করার সময় নয়। ১৮ দল থেকে যদি জুবায়ের ভাইকে মানোনীত করা হতো, দেখতেন সাথে সাথেই ইন্ডিলীগের পুলিশগুলা আপনাডএর উপর ঝাঁপিয়ে পরছে।

আপনাদের কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার নেতা কর্মী এতোদিনে গ্রেফতার হয়ে যেতো। প্রচার-প্রচারনার কাজে কাউকেই পেতেন না। ফাঁকাতালে কামরান আর তার ৫০ হাজার হিন্দু ভোট নিয়ে পাশ করে যেতো। অবশেষে আপনারা বিষয়টা বুজতে পেরেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ। এর বাইরে যারা "আওয়ামী-জামায়াত" বন্ধুত্ব বা "জামায়াত খাটে-বিএনপি ভোটে" কন্সপাইরেসী থিওরী আবিষ্কার করছেন তারা হয় রাজনীতি বুঝেন না, আর না হলে জ্ঞান পাপী।

তাই জামায়াত-শিবিরের ভাইদেরকে বলছি বিভেদ ভুলে কাজ করুন দিনের শেষে সিলেটেরই লাভ হবে। ৭. শামসুজ্জামান জামান ভাই। সিলেটের রাজনীতির ইতাহাসে সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বড় উত্থান, সবচেয়ে বেশী আলোচিত, সবচেয়ে বেশী সমালোচিত। আপনাকে বলছি। প্লিজ একটু ধৈর্য ধরেন ভাই।

আপনি মানুষটা যে আবার বিএনপি করতে পারবেন তা আপনার নিজেরও কল্পনায় হয়তো ছিলো না। তবে এটা জানি আপনি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন। সিলেটের উদীয়মান, দাপুটে ক্রেজ থেকে হঠাৎ করেই আপনি অতি সাধারন তুচ্ছ জামান ভাই হয়ে গেছিলেন। আপনার তৈরি করা হাজার হাজার ছেলে পেলে নিমিষেই আপনাকে ছেড়ে আরিফুল হকের দুয়ারে ভীর করছিলো। কিছু মানুষ সেদিন উল্লাস করে মিষ্টি বিতরন করেছিলো যে জামানের হাত থেকে বিএনপি-ছাত্রদল মুক্তি পেয়েছে।

তারপর আপনি যখন আগুনে পুড়তে পুড়তে খাঁটি হচ্ছিলেন তখন সিলেটের গন মানুষের নেতা ইলিয়াস আলী আপনাকে সুযোগ করে দিলেন। তাই বলছি জামান ভাই রাজনীতি বড়ই ভয়ানক এক খেলা। সেখানে আপনি একজন তুখোড় খেলোয়ার হয়ে গেছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন মাঠ থাকলে খেলা হয়, মাঠ যদি না থাকে খালি খালি শত্রু থাকলে খেলা কোথায় হবে?? বিএনপি বেঁচে থাকলে, জাতিয়তাবাদী শক্তি বেঁচে থাকলে, গনতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে একদিন সিলেটের মেয়র হবেন নিশ্চয়ই। আপাতত প্লিজ আরিফুল হকের বিরোধীতা করবেন না।

আওয়ামীলীগের হাত থেকে দেশ বেঁচে থাকলে আপনাদের মতো তরুন নেতৃত্ব ভবিষ্যৎ রাজনীতির ধারক ও বাহক হবেই। প্লিজ দরকার হলে ঘরে বসে থাকুন তবুও বিরুধীতা করবেন না। জামায়াত একটা ভিন্ন রাজনৈতিক দল হয়ে যদি পারে আপনি কেন পারবেন না বিএনপির মানুষ হয়ে?? উপসংহার আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নই। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে সরকারকে বৈধতা দেয়া তাদের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন করার। সরকারকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীতা করা।

যে সরকার রাতের অন্ধকারে গনহত্যা চালিয়ে নিজ দেশের মানুষ খুন করার মতো হায়েনারূপী কাজ করতে পারে সে সরকারকে সহযোগীতা করা নিজেদের অসহায়ত্বই প্রমান করে। তবুও জনগন ও গনতন্ত্রের প্রতি আস্থা ও সম্মান দেখিয়ে বিরোধী দল নির্বাচনে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমিও গনতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উপরোক্ত কারনে আরিফুল হক চৌধুরীকে "টেলিভিশন" প্রতিকে ভোট দিয়ে সিলেটের মানুষের জন্য একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চেস্টা করবো। আপনিও কি সেই পরিবর্তনের শরিক হবেন না?? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।