যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য আগের দিন রানা ফ্লাজায় ফাটল ধরা পড়ার পরও ভবন নামের ঐ মৃত্যুকূপে হাজার হাজার শ্রমিককে আজ কাজ করতে বাধ্য করে কারখানার যে মালিক শত শত শ্রমিককে হত্যা করেছে, আহত করেছে তার কোন বিচার হবে কিনা জানি না, ফাটল ধরার পর থানা প্রশাসন মেরামতের কথা বললেও "এটা কোন ব্যাপার না , প্লাস্টার করলেই ঠিক হয়ে যাবে" বলে ভবনের যে মালিক হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র প্রস্তুত করল, আরও পিছনে গেলে লক্ষ টাকা লোপাট করার তাগিদে যে ডেভেলপার কোম্পানি এমন ঠুনকো (মাত্র ৩-৪ বছরেই তা ধসে পরল) ভবন তৈরি করে এই হত্যাযজ্ঞের অনিবার্য কারণ জারি রাখল – তাদেরও কোন বিচার এই নিপীড়ক রাষ্ট্র করবে বলে মনে হয় না, এই রাষ্ট্র বরং এসব মুনাফাখোর পুজিপুত্রদের সমস্ত লুণ্ঠন, শোষণ আর জুলুমকে নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছে! ঐ বুর্জোয়া মালিক কি জানত না এই মৃত্যুকূপে কাজ করলে ভবন ধসে পড়ে নির্ঘাত শ্রমিক মারা যাবে, অবশ্যই জানত, তার চোখের সামনেই তো ভবনের ব্যাংক, বীমা আর বিপণি বিতানের কর্মকর্তারা তাদের কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে আজ, তাহলে পোশাক মালিক কেন ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে শ্রমিকদের বাধ্য করল? কারণ তার চোখে এই হাজার হাজার শ্রমিক মানুষ না, এরা কেবলি উৎপাদনের যন্ত্র, যন্ত্রের চেয়েও মূল্যহীন এদের জীবন, এই মুনাফাখোর মালিকের কাছে তৈরি পোশাকের অর্ডার সময়মত সম্পন্ন করাই মূল্যবান, তার কাছে সময় মানেই অর্থ, প্রতি মিনিট মানেই প্রতি ডলার মুনাফা, শ্রমিকের জীবন এর দাম তার কাছে এক পয়সাও না, তাই জোর করে বাধ্য করা হল কাজে যোগ দিতে, এসব মালিকদের পুঁজিবাদী বা বুর্জোয়াও বলা যায় না, পুঁজিবাদেও শ্রমিককে বাঁচিয়ে রাখা হয় উৎপাদনের স্বার্থেই, কিন্তু এদেশের দানবীয় খুনি মালিকরা পুঁজিবাদের এথিকসও মানেন না, এরা শ্রমিকের মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও তাদের শ্রম আদায় করে নেয়, নির্ঘাত মৃত্যুঝুঁকি থাকলেও একদিন কাজ বন্ধ করে রাখতে চায় না, এরা সুস্পষ্টভাবেই শ্রমিক হন্তারক, এদের এই লাগামহীন মুনাফাখোরী চেতনাকেই এই সমাজ আর রাষ্ট্র বৈধতা দেয় উন্নয়ন এর নামে, জিডিপি অর্জনের নামে, কার উন্নয়ন? কিসের উন্নয়ন? শ্রমিক গণহত্যা জারি রেখে যারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে এই শুয়োরের বাচ্ছাদের (মালিক গোষ্ঠী)নিপীড়ন জারি রাখে তারা জালিম, শ্রমিকদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়ে যারা কাঙ্ক্ষিত জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বপ্ন দেখে তারা বর্বর, এদেশের সমাজ, রাষ্ট্র, আইন-আদালত সমেত সমস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো এই লাগামহীন মুনাফাখোর শ্রমিক হন্তারকদের বিচার তো দুরের কথা উল্টা তাদের প্রোটেকশন দিয়ে রাখে যেন এই নির্যাতন নিপীড়ন নির্বিঘ্নে অব্যাহত থাকে! তাই বাংলাদেশের চলমান রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো নিজেই এই শ্রমিক হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী, এই রাষ্ট্রের কাছে আপনি কিসের বিচার দাবি করেন? কার বিচার দাবি করেন? যে রাষ্ট্রযন্ত্র ১৪০ জন শ্রমিক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত তাজরিন ফেশনস এর মালিকের বিচার না করে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব দেয় সে রাষ্ট্রযন্ত্র কি করে রানা প্লাজার মালিকের বিচার করবে?কি করে পোশাক কারখানার মালিকের বিচার করবে? কি করে ডেভেলপার কোম্পানির বিচার করবে? এই রাষ্ট্রযন্ত্র তো তৈরিই হয়েছে এসব খুনি লুটেরা পুঁজিপুত্রদের সমস্ত দুর্নীতি আর ব্যভিচারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্য? এই রাষ্ট্র কাঠামোর কাছে এদের বিচার চাওয়া এখন সবচেয়ে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে! শুধু শোক প্রকাশ করে যেসব নাগরিক লাগাতার শ্রমিক হত্যার প্রেক্ষিতে নিজেদের মানবিক দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখতে চান তারা নিজেরাও এই লুটেরা খুনিদের পরোক্ষ সহযোগী, এই বর্বরতা যদি আমরা আর না দেখতে চাই, এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ যদি আমরা আর না দেখতে চাই তাহলে চলমান নিপীড়ক সোশ্যাল অর্ডার ভেঙ্গে ফেলতে হবে, ভেঙ্গে ফেলতে হবে এই জালিম রাষ্ট্রকাঠামো, তার জন্য যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা দরকার তাতে শামিল না হয়ে কেবল শোকে চোখের পানি ফেললে শ্রমিকের রক্ত ঝরা বন্ধ হবে না, বন্ধ হবে না এই স্ট্রাকচারাল হত্যাকাণ্ড![/sb এই মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ না এই জল্লাদের উল্লাস-মঞ্চ আমার দেশ না এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না এই রক্তস্মাত কসাইখানা আমার দেশ না
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।