আমাদের দেশে একটা ভুল প্রবাদ প্রচলিত আছে যে নেড়া বেলতলায় একবারই যায় | কিন্তু আমি দেখছি যে নেড়া বার বার বেল তলায় যায় | প্রবাদের কথা অনুযায়ী নেড়া একবার বেলতলা গিয়েছিল ঠিক কি করতে গিয়ে ছিল তা জানাজায়নি| আমরা ধরে নেই বেলতলার প্রতি নেড়ার একটা বিশেষ আকর্ষণ ছিল | হতে পারে বেলতলায় অনেক ভালো হওয়া বয় বা বেলতলায় ইয়ে করতে অনেক ভালো লাগে যাই হোক বেলতলা নেড়ার প্রিয় জায়গা | একদিন সে বেলতলায় গেছে আর কোথা থেকে আসে এক দমকা হওয়া|তারপর কি থেকে যে কি হয়ে গেল সেটা জ্ঞান ফেরার আগে সে বুঝতে পারল না |এনিওয়ে বেলতলায় সে কি করতে গিয়েছিল তা সে কোন মতেই মনে করতে পারল না |সেটা মাথায় সদ্য গজে ওঠা আলুর কারণেই হোক আর আলু ওঠার ব্যথার কারণেই হোক |সে কিছুতেই মনে করতে পারল না আর এই কারণেই নাকি আলুর কারণেই বেলতলার প্রতি তার প্রীতিতে ভাটা পরে গেল জেগে উঠলো তীব্র রাগ (আসলে ভয় ) |এই নেড়া কি আর বেলতলায় যায় ? তার তো যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে | এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল , তা অনেক দিন পর তার এক বন্ধু বেলতলায় যাওয়ার প্রস্তাব করলে সে প্রত্যাখান করে |এরপর অনেক ভাবে বুঝানোর পর তার বন্ধু যখন নিশ্চিত করলো যে বেলগাছে বেল নাই তারপর সে রাজি হয় | যাই হোক তারা আবার বেলতলায় গেল | দুর্ঘটনা যে দ্বিতীয় বার ঘটবে না এমন তো কেও কখনো বলেনি | তো আমাদের নেড়ার মাথায় দ্বিতীয় বারের মত আলু গজালো এখন সে দিনে-রাতে চোখে বেল দেখে | এই ঘটনার কিছুদিন পর সে জানতে পারে যে বেল গাছ কাটা হচ্ছে তো এই ব্যাপারে যে তার অত্যাধিক উত্সাহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক |মানুষের (মানবিক কি না জানিনা) বৈশিষ্ট অনুযায়ী সে ঈর্ষা করতে তার আপন ভাই কেও ছাড়েনা আর বেলগাছ তো কোন ছাড় | একটা ফলবতী বৃক্ষ কে আঘাত করলে তো সে নিউটনের দ্বিতীয় সুত্র অনুযায়ী একটু আধটু রিয়াকশন করবেই , তো বৃক্ষ তার শরীর থেকে কিছু ফল ফেলে এই রিয়াকশন টুকু করলো আর তাতে যা হবার তাই হলো | আমাদের নেড়া তৃতীয় বারের মত মাথায় কিছু আলু পেল | আমাদের সাম্প্রদায়িকতার শুরু ঠিক কবে এটার সঠিক কোন ইতিহাস নাই | পুন্ড্র নগর কে যদি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন নগর ( ডয়েচে ভেলের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন নগর পুন্ড্র নগর ) হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তাহলেও আমাদের সাম্প্রদায়িকতার শুরু অনেক আগে থেকে আর তার প্রমান পুন্ড্র নগরের অদূরে ধংশ প্রাপ্ত বৌদ্ধ মঠ আর গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল আর দক্ষিন পচিমাঞ্চলে তাদের অনুপস্থিতি | শুধু দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের বসবাস এটাই প্রমান করে যে তারা কোন এক কালে এই সব অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়েছিল | আমাদের জানা ইতিহাস, ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় রক্তের বন্যা | ১৯৭১ এও আমরা কম সাম্প্রদায়িক ছিলাম না | তারপর ও আরো ছোট-খাটো অনেক ঘটনায় ঘটেছে | প্রত্যেক ঘটনা ঘটার পর আমরা অকপটে শিকার করেছি আর বলেছি যে এই ভুলের পুনুরাবৃতি আর যেন না হয় | ভুল থেমে থাকেনি বার বার ঘটেছে এবং ঘটছে | হয়ত সেই দিন আর হুব বেশি দেরিনাই যখন হামলার শিকার সংখালঘু পরিবারের পিতার মত মেয়েকে বাঁচাতে আমাদেরও বলতে হবে "বাবা ও তো ছোট , তোমরা একজন একজন করে যাও " | পাকি আর তাদের দোসররা আমাদের মা বোনদের উপর অত্যাচার করেছিল , নির্বিচারে মানুষ মেরে ছিল , ঘরবাড়ি জালিয়ে ছিল আর এইকারণে আমরা তাদের ঘৃনা করি তাদের ফাসি চাই | আমরা আমাদের কবে ঘৃনা করব ? আমরা আমাদের ফাসি কবে চাইব ? যে দেশের অসাম্প্রদায়ক সরকার এই ধরনের ঘৃণ্য ঘটনা ঘটার পর ও নির্বিকার বসে থাকে | লালন , নজরুলের মত অসাম্প্রদায়ক , সাম্যবাদীর জন্মের পরেও সাম্প্রদায়কতা চলতে থাকে , সে দেশের মানুষ বার বার বেলতলায় যাবে , মাথা ফেটে মরার আগ পর্যন্ত যাবে |
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।