আমরা প্রবাসী শ্রমিক নামে বিদেশে নব্য দাসত্ব করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মরি, পায়ে পিষে মরি, মালিকের গুলি খেয়ে মরি, সাগরে ডুবে মরি, প্লেনের চাকায় পিষে মরি, বিদেশের জেলখানায় মরি, ফ্রিজ লরির ঠান্ডায় জমে মরি, মরে সাগরের মাছের/হাঙ্গরের খাবার হই আমরা। আমরা আজো দুইডাভাতের জন্য বিদেশে গিয়ে প্যাকেটভর্তি লাশ হয়ে দেশে ফিরি, এয়াপোর্টে সর্বশান্ত হই। কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে হয় স্রেফ যৌনদাসী।
আমরা দেশেও মরি। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠানের দর্জিগিরির নামে আরেক দাসত্ব করতে গিয়ে আমরা এখানেও আগুনে পুড়ে পরি, ভবনের নিচে চাপা পড়ে মরি, পায়ে পিষে মরি, পোশাক চুরির দায়ে মালিকের ভাড়াটে বাহিনীর পিটানি খেয়ে মরি, লঞ্চ ডুবে মরি, অধিকার আদায় করতে গিয়ে চিরতরে গুম হয়ে যাই হই বালির নিচে, পানির নিচে, মাছের পেটে।
আমরা দলে দলে, শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে মরলেও কারো কিছু হয়না। কারণ আমরা নব্য দাস, মানুষ নই। দাস মরলে কারো কিছু হয়?
দর্জিগিরি নামে এই নব্য দাসত্বের কারনে আজ আবার নতুন করে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। তাদের কথামত না চললে তারা আমাদের পোশক রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে আমাদের বিপদে ফেলার হুমকি দেয়। দেশবিরোধী নানা স্বার্থ আদায় করে নেয়।
আমাদের জিম্মি করে নানাভাবে।
গোটা দেশ আজ এই দর্জিগিরি এবং রেমিট্যান্স ব্যবস্থা নামক নব্য দাসত্বের নিগড়ে বাঁধা । এরপরও এই নব্য দাসপ্রথার পক্ষে যুক্তির অভাব নেই। কারণ প্রশ্নটা বাঁচা-মরার। খেতে পাওয়া বা না পাওয়ার।
বিষয়টা এখন ঠেকেছে না খেয়ে মরার প্রশ্নে। তাই এর বিরুদ্ধে কোন যুক্তি নিয়ে কেউ দাড়াতে গেলে সে টিকতে পারেনা। টিকতে দেয়া হয়না। তাকে দেশবিরোধ, গরিব বিরোধী, নারীর ক্ষমতায়ন বিরোধী ।
কথায় কথায় তারা বলে গার্মেন্টস শিল্প এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ না থাকলে দেশের অর্থনীতি বলতে আজ কিছু থাকতনা, থাকবেনা।
এ দুটি ব্যবস্থা ধ্বংস হলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশে বিশঙ্খলা নেমে আসবে। নৈরাজ্য দেখা দেবে। এ দুটি খাতই দেশকে টিকিয়ে রেখেছে। দেশের অর্থনীতির এখন একমাত্র চালিকা শক্তি হল গার্মেন্টস এবং রেমিট্যান্স।
এছাড়া দেশ অচল। দেশ টিকিয়ে রেখেছে এ দুটি খাত। এরাই আমাদের চালিকা শক্তি।
তার মানে হল ১৬ কোটি মানুষের এই দেশটাকে দর্জিগিরি এবং প্রবাসী শ্রমিক ব্যবস্থা নামক নব্য দাস ব্যবস্থার অধীন করে ফেলা হয়েছে। আমাদেরকে পুরোপুরি একটি দাসের জাতিতে পরিণত করা হয়েছে।
গত ৪০ বছরে লুটেরা, শোসক, অপদার্থ, অযোগ্য, ব্যর্থ রাজনীতিবিদরা আমাদেরকে মাথা উচু করে দাড়ানোর পরিবর্তে একটি দাসের জাতিতে রূপান্তর করেছে। আমার কাছে এটাই এর একমাত্র সোজা মানে। আমাদের শিল্প কারখানা সামান্য যা ছিল তাও সব শেষ করে দিয়ে এবং নতুন করে কোনদিকে কোন কিছু না করে শুধু দাসত্বের আয়োজন করে চলেছে তারা।
সবদিকে শত ব্যর্থতার মধ্যেও যেহেতু এ দু;টি খাত দেশকে টিকিয়ে রেখেছে তাই সকলের সব ব্যর্থতা ঢাকা পড়েছে। লুটেরা শোসক শ্রেনি মনের আনন্দে লুটপাট করতে পারছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ।
কোন অসুবিধা হয়না, হয়নি। দেশ গড়ার কোন কাজ করার দরকার হয়না। দেশ চালাতে যোগ্যতাও লাগেনা। শুধু লুটেপুটে খাবার যোগ্যতা থাকলেই হয়। আর লুটেপুটে খাওয়ার পথে যারা বাঁধা তাদের দমন করার কৌশল জানলেই চলে।
দেশ চালাতে তাদের আর কোন কিছুর দরকার হয়না। কারণ গার্মেন্টশ ও রেমিট্যান্স নামক নব্য দাস ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে দেশ। দাসেরা টিকিয়ে রাখবে দেশ। এখানে শাসকের কাজ শুধু লুটে নেয়া, লুটে নিতে জানা, পছন্দের লোকদের জন্য সব ওলট পালট করে দেয়া লুটেপুটে খাওয়ার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।