আমিতো মরে যাব চলে যাব রেখে যাব স্মৃতি.................... বাংলাদেশে সুফি-দরবেশরাই ইসলামের প্রচারক ছিলেন। তাঁদের দরবারে সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সমান যাতায়াত ছিল। শাহজালাল (রহ.) এর সিলেট বিজয় ও তাঁর মাজারকে ঘিরে সর্ব ধর্মীয় সম্প্রীতির এক ঐতিহ্যবাহী বন্ধন রচিত হয়েছে। সকল ধর্মের মানুষই শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে গিয়ে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পান। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সিলেটের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য।
সম্প্রীতির এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে।
শাহজালাল (র.) এর মাজারে দুইদিন ব্যাপী ৬৯৩ তম পবিত্র ওরস উপলক্ষে শনিবার ‘সিলেট অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও প্রকৃতি রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত এক আন্ত: ধর্মীয় আলোচনা সভায় বক্তারা এ মতামত ব্যক্ত করেন। ‘সিলেটের ঐতিহ্যগত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে শাহজালালের (রহ এর প্রভাব’ শীর্ষক এ সভায় বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন ।
রাতে সিলেট নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ আন্ত: ধর্মীয় অলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সৈয়দ বজলুল করিম বিপিএম। প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ বিলাল।
আলোচনা সভার আয়োজক সংগঠনের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য দেন আবদুল করিম কিম।
জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ বিলাল সর্ব ধর্মের প্রাণবন্ত এই আলোচনাসভা সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি বড় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, সব শুভ কাজ সিলেট থেকেই সূচনা হয়। আমার মনে হয় আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের আলোচনা সভা আরও বড় পরিসরে হওয়া উচিত। সিলেটের এই আয়োজন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান তিনি আলোচনা সভার মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
মুখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ইমাম প্রশিক্ষন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের সহকারী পরিচালক শাহ মো. নজরুল ইসলাম, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ চন্দ্রনাথানান্দজী মহারাজ, সিলেটের ক্যাথলিক চার্চের প্রধান বিশপ বিজয় এনডি ক্রোস, বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমত অভিজ্ঞানানন্দ ভিক্ষু।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের সহকারী পরিচালক শাহ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর প্রভাব অপরিসীম। স্রষ্টার বন্দেগির মধ্যে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাস ও দায়িত্বশীলতার শিক্ষা আমরা শাহজালের জীবন ও কর্মের মধ্যে পাই। তিনি মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, প্রেম ও ভালোবাস জাগিয়ে ধর্ম প্রচার করে গেছেন। তাঁর দরবার সব ধর্মের মানুষের জন্য ছিল উন্মুক্ত । এ জন্য তিনি সকল ধর্মের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার।
রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ চন্দ্রনাথানান্দজী মহারাজ বলেন, কোনো ধর্মই মানুষকে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ দেখাতে শেখায় না। মানুষের প্রতি মানুষের মমতা থাকতে হবে। এ শিক্ষা আমরা সকল মহাপুরুষের মাধ্যমেই পাই। নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকলে সমাজে অশান্তির ছায়া থাকবে না।
প্রধান বিশপ বিজয় এনডি ক্রোস বলেন হজরত শাহ জালালের জীবন দর্শনেই প্রকৃত ইসলাম বিরাজমান।
এই ইসলাম মানবতার কথা বলে। সিলেটের ঐতিয্যগত ধর্মীয় সদ্ভাব বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনুকরণীয়।
কক্সবাজারের রামুর ঘটনা উল্লেখ করে শ্রীমত অভিজ্ঞানানন্দ ভিক্ষু বলেন, রামুর ঘটনায় শুধু একটি ধর্মের ঐতিহ্য বিনষ্ট হয়নি। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ইতিহাসের উপর আঘাত এসেছে। সম্মিলিতভাবে এই আঘাত প্রতিহত করতে হবে।
কেননা ধর্মীয় সম্প্রীতি না থাকলে সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ বজলুল করিম বিপিএম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার ছিলো অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গলাদেশ গড়ে তোলার এই অঙ্গীকারের পূর্ণতা লাভ হবে সেদিন যেদিন আমরা শাহ জালালের (রহ)-এর শিক্ষা ধারণ করে সর্বধর্মের মানুষের প্রতি রাষ্ট্রীয় ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে ।
আলোচনা সভায় উপস্থিত নাগরিকদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন প্রামান্য চিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক একেএম মাজহারুল ইসলাম, পলিটিকেল স্টাডিজের শিক্ষক মাওলানা এমদাদুল হক, পাত্র সম্প্রদায়ের নেতা গৌরাঙ্গ পাত্র, সামাজিক সংগঠন পাঞ্চজন্য'র দীপিকা চক্রবর্তী রিমি।
আলোচনা সভায় অন্যানের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জাসদ’র উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য মুহিব উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমেদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসিত ভট্টাচার্য, প্রবীন নাগরিক আবদুর রহমান চৌধুরী, দরগা ই শাহ মোস্তফা (রহ-এর মোতয়াল্লি সৈয়দ খলিলুল্লাহ সালিক, রবীন্দ্র গবেষক মিহির কান্তি চৌধুরী, ফাদার শরৎ গোমেজ, ফাদার সুভাস কস্তা, ফাদার জোসেফ ডি তপ্ন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের প্রভোস্ট নাজিয়া চৌধুরী, প্রভাষক সামশাদ নওরিন, কারিতাসের এরিয়া মেনেজার শিশির সী, কবি বাসিত ইবনে হাবিব, ইসলামী ছাত্র সেনার সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতি এস এম নুরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী, সংস্কৃতিকর্মী জাকির হোসেন সোহেল, অরূপ শ্যম বাপ্পি, জয়দীপ দাস সুজক, হাসান মুরশেদ, নারী উদ্যোক্তা তাহেরা স্বপ্না, নিনাই সভাপতি তায়য়্ফ আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। .
সুত্র: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।