শহরের প্রানকেন্দ্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ ২০ তলা হসপিটাল ভবনটার ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে পাশাপাশি বসে আছে ওরা দুজন। আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য্য আর রোদের ঝাঁঝ দেখে সময়টা ঠিকঠাক আন্দাজ করে নেবার চেষ্টা করে ঝুমন। । তার পরপরই ঠিক পায়ের নীচে বয়ে চলা রাজপথের জনস্রোত আর পিপড়ের সারির মত পিলপিল করে ছুটে চলা ছোট ছোট যানবাহনগুলোর দিকে তাকিয়ে আঁচ করলো কোনো মতেই সকাল ৯টা, সাড়ে ৯টার বেশী হবেনা। মুখ গোমড়া করে বসে আছে ঝুমন।
ওর চেহারাতেই মনমরাভাবটা বেশ ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে দীপ্ত যেন ফুরফুরা মেজাজে মেতে উঠেছে! তাকে দেখে মনে হচ্ছে মহাফুর্তিতে আছে সে। ২০ তলা বিল্ডিংটার অপ্রসস্থ রেলিংটার উপর দিয়ে বেশ সার্কাসিয় ভঙ্গিতে দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে হাঁটছে সে। ভুতুমপেঁচার মত মুখ বানিয়ে ঝুমনকে এখনও ঐভাবে বসে থাকতে দেখে ওকেও তেমনিভাবে ওর সাথে রেলিং এর ওপর দিয়ে হাঁটবার জন্য ডাকলো দীপ্ত। ঝুমন সেদিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
ভীষন মন খারাপ লাগছে ওর। কেন যে হুট করে এমন ডিসিশানটা নিতে গেলো সে? এখন বাবা মা আর ছোট ভাইটার জন্য ভীষন কষ্ট হচ্ছে। হাঁটাহাঁটি ছেড়ে সুপারম্যানের মত হালকা হাওয়ায় ভেসে উড়ে এসে ওর পাশে বসলো দীপ্ত।
কিছুক্ষন গুন গুন করে অজানা সূর ভাজলো বসে বসে। ঝুমনের সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই।
তার মন ডুবে আছে এক রাশ গাঢ় নীল বিষাদে। আরও কিছুক্ষন পর সা করে এক নিমিষে নীচে নেমে এলো ওরা দুজন। ২০ তলা বিল্ডিংটার ছাঁদের রেলিং হতে সোজা সামনের সবুজ ভেলভেট গালিচার মত বিছানো ঘাসের উপর। হসপিটাল ভবনটার সামনের মনোরম বাগানটার লাল হলুদ আর কমলা ডালিয়াগুলোর পাশে গিয়ে বসলো ওরা। এই অপরুপ আলো ঝলমলে সকাল।
চারিদিকে কর্মময় জীবনের ব্যস্ততা। পথচারীদের চলাচল। স্কুলের বাচ্চারা,হকার ও নানা শ্রেনীর মানুষের চলাচলে রাজপথটা মুখরিত। এমন একটা প্রাণ চন্চল সকালে চারিদিকে কোনো কিছুর অভাব নেই অথচ ঝুমনের জন্য এসব কোনোকিছুরই মূল্য নেই আর আজ।
বাংলার পাঁচ বানিয়ে রাখা ঝুমনের মুখটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলেলো দীপ্ত।
-এই যে ম্যাডাম এমন গোমড়া মুখ করে থেকে লাভ কি? এসব দেখার জন্য এখন আর কেউ বসে নেই। এখন আপনি সুখ দুঃখ হাসি কান্না সব কিছুর উর্ধে। এমন পেঁচার মত মুখ করে বসে না থেকে চলেন একটু বেড়িয়ে আসি। চলেন না হয় ভার্সিটির দিকেই যাই। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে একটু দেখা সাক্ষাৎ করে আসি।
বলেই হে হে করে হাসতে থাকে দীপ্ত।
ওর কথা শুনে আরো বেশী মন খারাপ হলো ঝুমনের। দিব্যচোখে দেখতে পায় ক্লাসরুম , ক্লাসের সারি সারি চেয়ার। মনে করতে চেষ্টা করলো এখন ঠিক কোন ক্লাসটা হচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকিয়ে , রোদ্দুরের ঝাজ দেখে আবারও সময়টা আঁচ করবার চেষ্টা চালালো সে ।
বেলা ১১টার মত হবে এখন। চোখের সামনে ভেসে উঠলো, ক্লাসরুম ,প্রিয় বন্ধুরা। পি.কে স্যারের হাত পা নাড়িয়ে লেকচার আর সব সহপাঠীদের গম্ভীর মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য। ধীরে ধীরে ওর মুখখানা হয়ে গেলো যেন আষাড়ের মেঘলা আকাশ। সেই আরও ভয়াবহ, দুঃখী মুখ দেখে দীপ্ত আর বেশী ফান করার ট্রাই করলোনা।
কিন্তু তার আগেই ফ্যাচ ফ্যাচ কান্না শুরু করলো মেয়েটা। ভড়কে গেলো সে। হঠাৎ দীপ্তর মনটাও খারাপ হতে শুরু করলো ভীষন। ওর হাতটা ধরে চুপচাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ।
বেশ খানিকটা সময় হসপিটালের সামনের ছোট্ট একরত্তি পার্কটার বেন্চিতে শুয়ে বসে কাঁটিয়ে ওরা দুজন গেটের সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ালো।
সূর্য্যটা মধ্যাকাশে গড়িয়ে গেছে ততক্ষনে। ঝুমন ভীষন মন খারাপ করে আছে এখনও । হাসি হাসি মুখে দীপ্ত বললো,
-চলো উড়ি। ওরদিকে চেয়ে রইলো ঝুমন।
-হাত ধরো।
-না, রিক্সা করে ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে। গম্ভীরভাবে বললো ঝুমন।
-জো হুকুম মহামান্যা। নিজের অজান্তে পকেটে হাত চলে গেলো দীপ্তের। রিকশাভাড়া খুঁজতেই বুঝি।
একরাশ শূন্যতার মাঝে হাত ডুবিয়ে পরক্ষণেই সব কিছু মনে পড়ে গেলো ওর। এবার ওর মনটাও খারাপ হতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগেও ওর মত বেকার যুবকের রিক্সার পেছনে অতি জরূরী খরচটাকেও অপচয় মনে হত । বাবার কাছে, মায়ের কাছে, এমনকি ছোটবোনটার কাছেও হাত পাততে দ্বিধা করতো না। ম্লানদৃষ্টিতে সামনে তাকায় সে।
সামনের হাজারো মানুষের ভীড়ে কি যেনো খোঁজার চেষ্টা করে। কেমন আছে আদরের বোনটা? নাহ, আজই গিয়ে দেখে আসবে একবার ওকে।
একটা খালি রিক্সায় চেপে বসলো ওরা দুজনে।
-দেখলে তো রিকশা ভাড়া দেবার কোনো ঝক্কি নেই। এমন নির্ভাবনাময় জীবন, ভালোই তো তাইনা? শুধু ভালো না অনেক ভালো আরে অনেক না শুধুই, মহাভালো।
এমন নির্ভাবনাময় জীবন ছেড়ে মানুষ কেনো যে এতকিছু নিয়ে ঝামেলায় মেতে থাকে সেটা সে ভেবেই পায়না একদম, এসব একগাদা ছাইপাশ ঝুমুকে বুঝাতে লাগলো সে। এরপর ঝুমুর মনটা ভালো করতেই বুঝি হেড়ে গলায় আবোল তাবোল স্বরচিত গান ধরলো দীপ্ত। বন্ধু মহলে উদ্ভট গানের গীতিকার হিসাবে তার জুড়ি কেউ ছিলোনা, এখনও নেই । সে গান শুনে হঠাৎ ঝুমন হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যাচ্ছে ঝুমনের।
দীপ্ত এই প্রথম ভালোভাবে খেয়াল করলো ঝুমনকে। নিজের অজান্তেই মনে মনে ভাবলো , মেয়েটা এত সুন্দর!
দীপ্তকে অমন হা করে ওর দিকে চেয়ে থাকতে দেখে ঝুমন হাসতে হাসতে এক ধাক্কায় ফেলে দিলো ওকে রিক্সা থেকে। আচমকা ধাক্কা খেয়ে দীপ্ত পপাৎ ধরণীতল। রাস্তার মাঝখানে সোজা ডিগবাজী খেয়ে পড়লো সে আর সাথে সাথে কার্টুন ছবির মত একখানা দ্রুতগতী ৬নং বাস চাপা দিয়ে দিলো ওকে । আবারও কার্টুন ছবি স্টাইলেই বাসের তলা থেকে আরেকটা ডিগবাজী দিয়ে উঠে দাঁড়ালো দীপ্ত।
গম্ভীর মুখে এসে উঠে বসলো আবার রিক্সায়। কিছুক্ষণ আগে তার হেড়ে গলায় গানের কথা মনে করে আর তার পরবর্তী ঘটনাগুলো ভেবে ঝুমু তখনও হেসেই যাচ্ছে। হঠাৎ ঝুমন হাসি থামিয়ে হাত দিয়ে ওর এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলো । দীপ্ত খেয়াল করলো ঝুমুর মন এখন এতটুকুও আর খারাপ নেই। তাই দেখে দীপ্তর মনটাও অনেক ভালো হয়ে গেলো।
এবার হাসতে শুরু করলো সেও। সেই মুহুর্তে ওদেরকে দেখাচ্ছিলো পৃথিবীর সবচাইতে সুখী একজোড়া মানবমানবী।
সারাদিন এখানে সেখানে টইটই ঘুরে সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই মুহুর্তে ঝুমু বললো, -চলো এবার ফিরি।
দীপ্ত হেসে বলললো, -কোথায় ফিরবে? আমাদের কি আর বাড়ী-ঘর আছে? আমরা তো এখন জন্মস্বাধীন,শঙ্কাবিহীন, চিত্তমুক্ত শতদল। হাহা করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো সে।
ঝুমু বললো, বাড়ীঘর না থাকুক এখনও তো শরীরটা আছে। ওটার কাছেই ফিরে যাই চলো।
-তথাস্তু রাজকন্যা। তবে হাতটা বাড়াও।
ঝুমু নির্ভাবনায় হাতটা ধরলো ওর আর তারপর উড়ে চললো ওরা আকাশপথে, ব্যস্ততম নগরীর সকল কোলাহল, ট্রাফিক জ্যাম, হিংসা বিদ্বেষ ও ভালোবাসা ছাড়িয়ে, সকলকিছুর উর্ধে, সকল সীমানা ভেদ করে ঐ দূর নিলীমায় ভেসে চললো তারা।
সন্ধ্যার আবছায়া আলোয় তখন রাজপথে নিয়ন বাতিগুলা জ্বলে উঠেছে মিটিমিটি। কেউ খেয়াল করলোনা, দুটো আবছায়া ছায়ামূর্তী মিশে চলেছে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে। গোধূলীর হিমহিম হাওয়ায় ঝুমুর মন ভরে যাচ্ছিলো। পৃথিবীটাকে হঠাৎ ওর অসম্ভব মায়াময় মনোরম মনে হতে শুরু করলো। অথচ দুদিন আগেও এই পৃথিবীর দিনগুলিই কি ভয়াবহ নিদারুন ও কষ্টকর ছিলো ওদের কাছে ।
ফিরে এলো ওরা দুজন আবারও সুউচ্চ বিশ তলা হাসপাতালটার ছাদেই। গতকাল এখানেই ওদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। তারপর সারারাত ওরা এই ছাঁদে বসেই গল্প করে কাটিয়েছে। দীপ্ত বলেছিলো, তার বেকার জীবনের দুর্বিসহ দিনগুলোর কথা। গল্পগুলো অকপটে, নির্দ্বিধায়, কখনও কখনও রসিকতায় বলে যাচ্ছিলো সে।
ভাবাই যায় এত প্রাণচ্ছল ছেলেটার বুকে এত কষ্ট লুকিয়ে ছিলো। দীপ্ত বলেছিলো তার দরিদ্র পরিবারের অক্ষমতা, লান্ছনা গন্জনা আর অপমানের ইতিহাস। যার ফলশ্রুতিতে তিনদিন আগে বড়লোক বন্ধুর বাবার অফিসে ইন্টারভিউ দেবার পর চুপিচুপি উঠে গিয়েছিলো আকাশের কাছাকাছি। তারপর লাফিয়ে পড়েছিলো সাততলা ভবনটার নীচে।
পক্ষান্তরে ঝুমুর ব্যাপারটা ভিন্ন।
স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান সে। তবে গতকালই বি্শ্বাসঘাতক প্রেমিকের বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারেনি। মায়ের রিলাক্সেশন ট্যাবলেট মুখে পুরেছিলো পাতার পর পাতা। ওরা দুজনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু পৃথিবী ওদের বিদায় দিলোনা।
দুজনেই কমায় চলে গেলো, এই পৃথিবীরই একই হাসপাতালের দু দুটো বেডে, আশংকাজনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে দুদুটি নিথর দেহ। দীপ্তকে ঐ বড়লোক বন্ধুর বাবাই ভর্তি করিয়েছিলো এই ব্যয়বহুল হসপিটালটিতে। বাবা মায়ের চোখের পানি, অবিশ্রান্ত বিলাপ এসব সহ্য করতে না পেরে দুজনেই পালিয়ে এসেছিলো,হাসপাতালের খোলা ছাঁদটায়। শরীর অচল তবে অবিনশ্বর হৃদয়টাকে টেনে এনেছিলো তারা শরীরের বাইরে।
খুব ভোরে ছাদে উঠে এলো ঝুমু।
গাঢ় অন্ধকার ছেয়ে আছে চারিদিক। ধীরে ধীরে আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে। ঝুমুর হঠাৎ মনে হলো কাকডাকা এমন ভোর আগে কখনও দেখা হয়নি তার। রেলিং এ ভর দিয়ে দাড়ালো সে। অনেক নীচে ঝাড়ুদারনীরা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে।
রাস্তার পাশের দেবদারু গাছের পাতায় পাতায় এখনও জমাট বেঁধে আছে ভুতুড়ে অন্ধকার। কোথায় যেন একটা কোকিল ডাকছে। এক ঝাঁক টিয়া বা কোনো নাম না জানা পাখির দল উড়ে গেলো সামনে দিয়ে। কতকিছুই দেখা হয়নি তার এ জীবনে। কত শত ব্যাপার অজানা ছিলো তার আরও ।
হঠাৎ ওর খেয়াল হলো অনেকটা বেলা হয়ে এসেছে। দীপ্তর দেখা নেই এখনও। ধীর পায়ে নেমে এলো সে নীচে। ইনটেনসিভ কেয়ার রুমে দীপ্তের চারিদিক ঘিরে বেশ কিছু ব্যাস্ত সমস্ত ডক্টর নার্সদেরকে দেখতে পেলো ঝুমু। অজান্তেই ধ্বক করে উঠলো তার বুকের ভেতরটা।
তবে কি দীপ্ত চিরবিদায় জানালো তাকে? আর কি কখনও দেখা হবেনা ওর সাথে তার?
পা টিপে ওর বেডের কাছে এগিয়ে এলো ঝুমু। খুব কাছে গিয়ে দাড়ালো আর অবাক হয়ে দেখলো দীপ্ত চোখ মেলে চেয়ে আছে সামনে। তবে সে দৃষ্টিতে ঝুমুকে দেখতে পাবার কোনো লক্ষনই নেই। ওর কপালে হাত রাখলো ঝুমু । ওর মুখের খুব কাছে মুখ নিয়ে গেলো সে ।
কিন্তু দীপ্তের চোখ ভাবলেশহীন। দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ওর গাল বেয়ে। অদৃশ্য জল। কেউ যা দেখতে পায়না এই পৃথিবীর। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিলো সে দীপ্তের কপালে।
একা একা পুরো হাসপাতালটায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঝুমু। নিসঙ্গ একাকী। ঐ তো কিছু দূরেই দীপ্তের আত্নীয় স্বজন, বাবা মা অপেক্ষা করছে। সবার চোখে আনন্দাশ্রু। কেউ দো্য়া দরুদ পড়ছেন, একধারে একজন বৃদ্ধ লোক।
হ্যা দীপ্তর বাবাই হবেন হয়তো। শোকরানা নামাজ আদায় করছেন।
আবার ফিরে এলো সে দীপ্তের কাছে । চুপচাপ বসে রইলো ওর পাশে কিছুক্ষণ। দীপ্তের সারা শরীরে ব্যান্ডেজ ।
মাথাও অক্ষত নেই। তার মাঝেই তার অপূর্ব সুন্দর একজোড়া চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সে। শূন্যে। কিছু কি ভাবছে সে? একটু একটু ঠোট নড়ছে ওর।
চোখে পানি এসে গেলো আবারও ওর।
আনন্দে, ভালো লাগায় নাকি দুঃখে? একা একা ফিরে এলো সে আবার ছাঁদের এক কোনে। রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে বসে রইলো ঠিক সেদিনের মত।
শূন্যে দৃষ্টি মেলে কি ভাবছিলো মেয়েটা?
প্রায় ছ'টা মাস কেঁটে গেছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পরও বাড়ীর লোকজন হতে বাড়ীর বাইরে পা রাখবার ছাড়পত্র পায়নি দীপ্ত। এ ক'টা দিন সবার চোখে চোখে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে সে।
এরই মাঝে অনেক অনেকবার মনে পড়েছে তার ঝুমুর কথা। কি এক অলৌকিক উপায়ে দীপ্তের পুরোপুরি মনে রয়ে গেছে তার অচেতন দিনের সেই স্মৃতিটুকু। ঝুমুর কথা চুপিচুপি বলেওছিলো সে দু একজন বন্ধুদের কাছে। অনুরোধ করেছিলো হাসপাতালে গিয়ে একটি খবর এনে দেবার। ঝুমু নামের মেয়েটির, কি অবস্থা এখন তার ? সেও কি তবে তারই মত সুস্থ্য হয়ে উঠতে পেরেছিলো? নাকি ...
বন্ধুরা তেমন একটা পাত্তা বা গরজ কোনোটাই দেখায়নি।
হয়তো মনে মনে পাগল ভেবেছে ওকে।
প্রথম যেদিন বাড়ীর বাইরে পা রাখলো দীপ্ত। সবার আগে ছুটে গেলো সে হাসতালটায়। অফিস রেকর্ড, হাসপাতালের হাজারো কর্মচারী, নার্স ,ডাক্তাদেরকে অনুরোধ উপরোধ শেষে দীপ্তকে খুব অবাক করে দিয়ে শেষপর্যন্ত হদিশ পাওয়া গেলো ঝুমন খান এর। হদিশ মিললেও তাকে এক নজর দেখা পাবার অনুমতি , পারিবারিক সন্মতি ছাড়া সম্ভব নয়।
ঝুমুর বাবা মা আজ ছ, ছটা মাস ঝুমুর অচেতন দেহটাকে আগলে রেখেছেন। ক্লিনিক্যালি ডেড মেয়েটির দেহ হতে সরিয়ে নিতে দেননি কোনো রকম চিকিৎসা ব্যাবস্থাই।
হাসপাতাল হতে ঠিকানা নিয়ে দীপ্ত ছুটলো ঝুমুদের বাসায়। তখন দুপুর গড়িয়েছে। ঝুমুদের ধানমন্ডির বিশাল বাগান ওয়ালা বাড়ীটার চৌহদ্দিতে দাড়িয়ে হঠাৎ দীপ্তের মনে হলো ঝুমু যেন কোথাও হতে বোবা দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে তারই দিকে।
বেশ খানিকটা সময় ধরে ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে দীপ্ত। ঝুমুদের বাড়িটা খুব আশ্চর্য্যরকমের চুপচাপ আর শান্ত। ঝুমুর মা এসে ঢুকলেন। উনার হাতে তসবিহ। সম্ভবত নামাজের পাটিতে ছিলেন।
হাসপতাল কতৃপক্ষের কাছে আগেই উনি শুনেছিলাম দীপ্তের কথা। তার অনুমতি নি্য়েই দীপ্ত ঝুমুদের ঠিকানা পেয়েছে। খুব শান্ত, নির্লিপ্ত ভাবেই উনি শুনলেন দীপ্তের সব কথা। অন্য কেউ হলে দীপ্তকে পাগল ভাবতো শুধু তাই নয় অলরেডী যা দু একজনকে বলেছে তারাই বলেছে এসব কাউকে না বলতে, আরও বলেছে এসব তার অবচেতন মনের নিছক কল্পনা। কিন্তু ঝুমুর মা ওকে খুব অবাক করে দিয়ে সব কথা বিশ্বাস করলেন।
ঝুমুর অচেতন দেহখানি একনজর দেখবার অনুমতি মিললো শেষপর্যন্ত।
ঠিক সেই সন্ধ্যাটির মত সন্ধ্যা নেমেছে পৃথিবীতে আজও। অনেকদিন আগে এমনি এক সন্ধ্যায় বিদায় দিয়েছিলো সে ঝুমুকে। হয়তোবা সে ছিলো কোনো এক অন্য ভুবন। আর আজ এইতো কিছুক্ষন আগে সে হাসপাতালে দেখে এসেছে ঝুমুর সজ্ঞাহীন অচেতন ফ্যাকাসে পান্ডুর মুখখানি।
হয়তোবা শেষ বারের মতই। ২০ তলা হাসপাতালটির সামনের পার্কটিতে বসে আছে দীপ্ত ।
অন্ধকার গাঢ় হতে উঠে দাঁড়ালো সে। হাসপাতালটির দিকে তাকিয়ে অলখে হাত নেড়ে বিদায় জানালো তারই মত ভীষন অভিমানী আর ভীষন দুঃখী অন্য ভুবনের ক্ষনিকের পাওয়া প্রিয় বন্ধুটিকে।
তারপর রাজপথের লাখো জনতার ভীড়ে হেঁটে চললো অসম্ভব ভারাক্রান্ত হৃদয়ের এক ব্যাথাতুর যুবক।
মিশে গেলো হাজারো রকম চলমান মানুষের মিছিলে।
বেশ কিছুদিন ধরে আমার কোনো অংবং লেখা লেখা হয়নি। তাই একটা পুরোনো অংবং নতুন সাজে নিয়ে আসলাম। অংবং হলেও এই অংবংটা আমার অনেক প্রিয়। আর প্রিয় অংবংটা দিলাম আার একজন প্রিয় পিচকি ভাইয়া সাইফুল ইসলাম সজীবভাইয়াকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।