খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো...
রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের একদল নিবেদিত প্রাণ, তরুন বৈঙ্ঘানিকরা একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে ও কূপ খননে ব্যস্ত সময় পার করছে। যাদের অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে চিনি। অনেকের সঙ্গে রয়েছে হৃদ্যতাপুর্ণ সম্পর্ক। রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ফান্ডসহ নানান অসুবিধার মধ্যেও শুধু দেশের প্রতি কমিটম্যান্টের কারণে তারা বাপেক্সে কাজ করছে। একই ধরনের অভিঙ্ঞতা নিয়ে যদি বহুজাতিক কোম্পানীতে ওরা চাকরি করতো, তাহলে তাদের জীবন থেকে আর্থিক অসঙ্গতিতো দুর হতোই সেই সঙ্গে সোনালী ভবিষ্যতের দৃঢ় ভিতও রচনা করতে পারতো।
কিন্তু তাই বলে তাদের আক্ষেপ নেই। তারা ফিল্ডে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। একাডেমিক শিক্ষার সহিত বাস্তবিক শিক্ষার যোগসাজশে আস্তে আস্তে ওরা তেল গ্যাস অনুসন্ধানে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হচ্ছে। আর এ সেক্টরে অভিঙ্ঘদের পরিধি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। শ্রীকাইলে গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে।
শ্রীকাইলের পর এখন সুনেত্রে কাজ চলছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড: হোসেন মনসুর তিনি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর। কোয়াটারিনি জিওলজি নিয়ে যার রয়েছে সুদীর্ঘকালের গবেষণা। বলতে গেলে ড: হোসেন মনসুরের নেতৃত্বে পেট্রোবাংলা তথা বাপেক্সের সাফল্য দেশের মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। বিভিন্ন ফোরামে আলাপ আলোচনায় যতোটুকু জানি সরকার পেট্রোবাংলার কাজের উপর খুব একটা হস্তক্ষেপ করছেনা।
বলতে গেলে পেট্রোবাংলা অনেকটা স্বাধীনতা ভোগ করছে। আর এ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পেট্রোবাংলার বরাদ্দও বেড়েছে শতভাগ। ফান্ড রিলিজ নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা কমে যাওয়ায় বাপেক্সের ফিল্ড লেভেলে কাজের পরিধি বেড়েছে। অনুসন্ধানি দলে নতুন নতুন রিগও যোগ হওয়ায় বাপেক্সের কাজের গতি বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও বাপেক্সের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বাপেক্স যদি সলভেন্ট হতো তাহলে অনাবিস্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলো আবিষ্কারে কর্মযঙ্ঞ পরিচালনা করতে পারতো। কিন্তু সেটা আপাতত সম্ভব হচ্ছেনা। যতোটুকু ফান্ডই পাওয়া যায় তা দিয়েই বাপেক্স সাধারন জনমনে সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষমতা অর্জন ও বাপেক্সের কাজে দেশের মানুষকে আশান্বিত করার ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠান অনেকাংশে সফলত বলে পরিগণিত।
কুমিল্লার শ্রীকাইলে প্রাকৃতিক গ্যাসের বাণিজ্যিক রিজার্ভ আবিষ্কারের পর সুনেত্র স্ট্রাকচারে কুপ খনন শুরু হয়েছে। বাপেক্সের মতে‘ সুনেত্র একটি সম্ভাবনাময় স্ট্রাকচার।
রিগ বিজয়-১০ দিয়ে সুনেত্রে কুপ খননের কাজ চলছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৭ শত মিটার পর্যন্ত খনন করার কথা জানিয়েছে বাপেক্স। আর এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকার বেশি। স্ট্রাকচারের কিছু অংশ নেত্রকোনা ও কিছু অংশ সুনামগঞ্জে হওয়ায় এর নাম দেয়া হয়েছে সুনেত্র। দুটি জেলা নিয়ে এ স্ট্রাকচারের অবস্হান হলেও প্রথম কুপ খনন হচ্ছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ উপজেলার গাভি গ্রামে।
পুরো খনন কার্য সম্পন্ন হতে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে বলে বাপেক্সের ধারণা। কুপ খননের জন্য ঐ এলাকায় ইতোমধ্যেই ৯ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সুনেত্র নিয়ে বাপেক্স আশাবাদি। এ গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস প্রাপ্তির পর প্রায় ৮০ কিমি পাইপ লাইনের প্রয়োজন হবে যা কিশোরগঞ্জে বিবিয়ানা গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত হয়ে জাতিয় গ্রিডে পৌছবে। আর এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ২০০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস জাতিয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
আর এ দিকে নতুন আবিষ্কৃত কুমিল্লার দাউদকান্দির শ্রীকাইলে ডিএসটি ( ড্রিল স্টিম টেস্ট) সম্পন্ন হওয়ার পর শ্রীকাইলকে বাণিজ্যিক গ্যাস ফিল্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ফিল্ডের প্রাথমিক আবিষ্কৃত গ্যাস মজুদ ধরা হয়েছে ২৫০ বিলিয়ন ঘনফুট। শ্রীকাইলের দুই নম্বর কুপে ড্রিলিং শুরু হয় গত মে মাসে আর ড্রিলিং শেষ হয় জুলাই মাসের ১০ তারিখে। সাইসমিক সার্ভে ও লগিংয়ে এ কুপে সন্তোষজনক গ্যাস আধার পাওয়ার পর বাণিজ্যিক গ্যাসের অস্তিত্ব প্রমাণে সেখানে ড্রিল স্টিম টেস্ট বা ডিএসটি সম্পন্ন করা হয়। ডিএসটিতে সন্তোষজনক রেজাল্ট পাওয়ার পর এ গ্যাসক্ষেত্রকে বাণিজ্যিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে পেট্রোবাংলা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদাণ করে।
দেশে বর্তমানে ৮১ টি কূপ থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। যার ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও গৃহস্হলি ও সার উৎপাদনে বাকি বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে।
কামতা গ্যাস ফিল্ডটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণার কারণটা ঠিক বুঝা গেলনা। ইতোমধ্যে কামতাতে বাপেক্সের টিম কাজ করেছে। সন্তোষজনক মজুদও পাওয়া গেছে।
কিন্তু জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিরোধ থাকায় কামতার মতো সম্ভাবনাময় একটা ফিল্ডকে পরিত্যাক্ত করা হয়েছে। জার্মানিতে পুরো একটি শহরকে রিলোকেট করা হয়েছে। কারণ ঐ শহরের নিচে পাওয়া গেছে উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লা। আর কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে জার্মানির সরকারকে ছোট্র একটা শহরের সকল বসতিকে পুর্ণবাসন করতে হয়েছে। কিন্তু কামতাতে প্রাইভেট ল্যান্ড ওনার্সরা জমি দিতে রাজি না হওয়ায় ঢাকার উপকন্ঠের এ গ্যাস ফিল্ডটিকে কাজে লাগানো যাচ্ছেনা।
অতচ কামতা থেকে গ্যাস উত্তোলন করা গেলে এ গ্যাস ঢাকা শহরে অনায়াসে পৌছানো যেত। ঢাকার ভিতরে বর্তমানে যে গ্যাস ক্রাইসিস রয়েছে তার সমাধান হয়তো কামতা থেকেই করা যেত। কিন্তু সরকার দৃশ্যত কামতা থেকে পিছিয়ে গেছে। তাই কামতা নিয়ে এখন আর পেট্রোবাংলা বাপেক্স কিংবা খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মনোযোগ দুরে সরে গেছে। কিন্তু কামতা গ্যাসক্ষেত্রের সফলতার সহিত জড়িত রয়েছে সম্ভাবনাময় ঢাকার উপকন্ঠে ভবিষ্যত আবিষ্কৃত অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্রগুলোর।
কারণ সরকার কামতার পাশে রুপগঞ্জের পুর্বাচল এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানে ৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। সুনেত্রের পর হয়তো রুপগঞ্জকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। রুপগঞ্জে কাজ করতে গিয়ে যদি বাণিজ্যিক গ্যাস মজুদ আবিষ্কৃত হয়। তাহলে তা উত্তোলনেও সরকারকে বেগ পেতে হবে। কারণ রুপগঞ্জের জমির দাম এখন আকাশছুয়া।
তাছাড়া আর্মিদের হাউজিং প্রকল্পও কিন্তু রুপগঞ্জে জনপ্রতিরোধে বন্ধ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে বাপেক্স কিভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করাও জরুরি। কারণ বাপেক্স মাটির নীচে গ্যাস মজুদ পেলেই যে রুপগঞ্জের জনগণ তাদের জমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে তা ভাবার কোন কারণ নেই।
পরিশেষে কামতা গ্যাস ফিল্ড নিয়ে বাপেক্সকে পুণরায় এ্যাক্টিভিটি শুরু করার আহবান জানানো যেতে পারে। কারণ কামতা দিয়েই ঢাকার উপকন্ঠে ছোট ছোট গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উত্তোলনের মান নির্ধারণ করা যাবে।
আর জনগণের প্রতিরোধের মুখে যদি সরকার এসব বাণিজ্যিক গ্যাস ফিল্ড থেকে সরে যায় তাহলে মুল্যবান সম্পদ কখনোই জনকল্যাণে ব্যবহৃত হবেনা। ভবিষ্যত বাংলাদেশের কথা ভেবে আমাদেরকে মাটির নিচের প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারের কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি সন্তোষজনক হয়। আর সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন কমিয়ে আনতে হবে।
আর এ সেক্টরকে বিদেশী কোম্পানীর নির্ভরশীলতা শুন্য পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলেই ভবিষ্যত বাংলাদেশের চেহারা উজ্জ্বল হবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আমরা সেইদিনের প্রত্যাশায় রইলাম যেদিন প্রাকৃতিক সম্পদ তেল গ্যাস অনুসন্ধানে রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করবে। আর সেক্ষেত্রে বড়জোর টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য কুটনৈতিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বৈদিশিক প্রতিষ্ঠানকে কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।