আল-হামদুল্লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। ওয়াস সালামু ওয়াস সালামু আলা সায়্যিদিল মুরছালিন। ওয়ালা আলিহী ওয়াছাহাবীহী আযমাইন। সকল প্রশংসা জগতসমুহের প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর দরুদ ও সালাম।
আযুযুবিল্লাহি মিনাসসায়তানির রাজিম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। "ইক্করা বিসমি রইব্বকাল্লাজ্বি খালাক্ক। খালাক্কাল ইনসানা মিন আলাক্ক। ইক্করা“ ওয়া রাব্বুকাল আকরাম।
আল্লাজ্বী আল্লামা বিল ক্কালাম। আল্লামাল ইনসানা মা“লাম ইয়ালাম। "
ব্লগের সন্মানিত পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ, আপনাদের সবাইকে জানাই শান্তির বার্তা, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মহান আল্লাহর ক্ষমা, অনুগ্রহ ও মেহেরবান আপনাদের সবার উপর বর্ষিত হোক।
পবিত্র কোরআন শরীর বিদ্যার অনন্য এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ।
পৃথিবীতে মানুষ সহ অনান্য সকল প্রানের একমাত্র স্রষ্ঠা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। যখন মানব সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুদির্ঘ ২২ বছর ৫ মাস ১৪ দিন ব্যাপি সে সময় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর এই বিজ্ঞানময় গ্রন্থ আল-কোরআনের আয়াত সমূহ নাজিল করেন।
"কিভাবে পৃথিবীতে এল এই প্রণবন্ত মানব শিশু? কে তাকে প্রাণ দিলেন কিছুদিন পূর্বে যার কোন অস্তিত্বই ছিল না? কে তার খাবার যুগিয়েছে মাতৃগর্ভের অন্ধকার প্রকোষ্টে? কে, কিভাবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করেছিল মাতৃগর্ভে যেখানে ছিলনা পৃথিবীর মুক্ত ঝিরিঝিরি বাতাস?"
মানব শিশু ঃ নারী-পুরুষের স্বাভাবীক যৌন ক্রিয়ার ফসল
নারী-পুরুষের পারস্পারিক ভালবাসার অনুভূতি থেকে সৃষ্ট স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু কিভাবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা দাহারে(৭৬/১,২) বলেন- "মানুষের উপর কি সিমাহীন মহাকালের এমন একটা সময়ও অতিবাহিত হয় নাই, যে সময় সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। আমি তো মানুষকে সষ্টি করিয়াছি (নারী-পুরুষের) মিলিত শুক্রবিন্দু হতে(এ জন্য যে) যেন তাকে পরীক্ষা করা যায, এ জন্য আমি তাকে করিয়াছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন"। এ ব্যাপারে রাসুল(সাঃ) এর হাদিসটি(মুসনাদে আহমদ) উল্লেখ্য- " হযরত আহমদ ইবনে হামাবল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা একজন ইহুদি রাসুল(সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করল, যে, কিভাবে মানুষ সৃষ্টি হয়।
রাসূল (সাঃ) বললনে, " ওহে ইহুদি, মানব সৃষ্টি হয়েছে কেবল স্ত্রী ও পুরুষের মিলিত বীর্য ও নিসৃত রস হতে"। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এ আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, পূরুষ শুক্রানু প্রকৃতপক্ষে সমভাগে স্ত্রী ডিম্বানুর সাথে সংমিশ্রিত হয়ে ভ্রন তৈরি ও সন্তান জন্ম দিতে অংশগ্রহণ করে যা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর অহির মাধ্যমে মহান স্রষ্ঠা আল্লাহ মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন প্রায় ১৪৩০ বছর পূর্বে যা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে মাত্র ১৫০ বা ২০০ বছর পূর্বে।
"ইন্না খালাক্কনাল ইনসানা মিন নুতফাতিন আমসাজ" (সূরা আদ-দাহার,৭৬/২)
কোরআনে ভ্রনতত্ব ঃ আধুনিক বিজ্ঞানের সাপ্রতিক আবিষ্কার
পবিত্র কোরআনে মানব ভ্রনতত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আলাকে(৯৬/২) বলা হয়েছে- মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আলাকা (আঠাল বা জোকের মত ঝুলন্ত বস্তু) থেকে। ভ্রনতত্বের উপর বিশেষজ্ঞ ও বিখ্যাত লেখক প্রফেসর কেইথ মূর পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি শ্রবণের পর সত্যতা প্রমানের জন্য জোকের ফটোগ্রাফ নিয়ে তার গবেষণাগারে অত্যান্ত শক্তিশালী অনুবীক্ষন যন্ত্র দ্বারা মানব ভ্রণ এর প্রাথমিক ধাপগুলো পরীক্ষা করেন।
এরপর তিনি ভ্রণের প্রাথমিক ধাপগুলোকে জোকের ফটোগ্রাফের সাথে তুলনা করে স্বাদৃশ্য খুঁজে পেলেন। এরপর তিনি বললেন, কোরআন যা উল্লেখ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে সঠিক। তারপর তিনি তার লিখিত বই “দি ডেভোলোপিং হিউম্যান” এর তৃতীয় সংস্করণে পবিত্র ক্কুরআনের সাথে সংগতিপূর্ণ এ তথ্যটি যুক্ত করেন এবং এ বইটির জন্যই তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পান। এরপর তিনি ঘোষনা করেন ভ্রণতত্ব সম্পর্কে ক্কুরআন যা উল্লেখ করেছে তা আমাদের দ্বারা সপ্রতি আবিস্কৃত হলো। এটি কোন মানুষের লেখা হতে পারে না, এটার মূল অরশ্যই স্বর্গীয়।
মানুষ তার সৃস্টি রহস্য ও সন্তার উৎপাদনের উপাদান সর্ম্পর্কে জানাতে মহান আল্লাহ পবিত্র ক্কুরআনের সূরা আত তারিক (৮৬/৪-৭) এ বলেছেন “এমন কোন প্রাণী নাই যাহার উপর কোন সংরক্ষক নিযুক্ত নাই, অতএব- মানুষ এটুকুই লক্ষ করুকনা, যে তাহাকে কি জিনিষ দ্বারা সৃষ্টি করা হইয়াছে। সবেগে স্থলিত পানি দ্বারা তাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে, যাহা পৃষ্ঠ ও বক্ষের অস্থি সমূহ হতে নির্গত হয়। ”
বিজ্ঞান এখন জানতে পেরেছে যে, মানুষের যৌনাঙ্গ গুলো নারী-পুরুষের ভ্রনের বয়স ব্যাপী যেখানে কিডনী স্থাপিত সেখান থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। মেরুদণ্ড এবং একাদশ ও দ্বাদশ পাঁজরের মধ্যখান থেকে। পুরূষের বীর্য যখন স্ত্রী-গর্ভে ভ্রন আকারে গঠিত হবার জন্য স্থলিত হয় তখন তা থেকে যে শিশুটির জন্ম হবে তার লিঙ্গ সর্ম্পর্কে পবিত্র ক্কুরআনের সূরা আন নজমে (৫৩/৪৫-৪৬) আল্লাহ বলেছেন, “ এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল পুরুষ ও নারী।
একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্থলিত করা হয়। ” অতএব, স্ত্রী গর্ভে ছেলে বা মেয়ে শিশু জন্ম নেবার ক্ষেত্রে পুরুষরাই দায়ী তা পবিত্র কোরআনে প্রায ১৪৩০ বৎসর পূর্বেই বলা হয়েছে, যা বিজ্ঞান সপ্রতি ১৫০ বা ২০০ বৎসর পূর্বে জানতে পেরেছে।
আল্লাহ সূরা ক্বিয়ামাহ (৭৫/৩৬-৪০) - এ বলেছেন, “ মানুষ কি ভেবে নিয়েছে যে, তাকে এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? সে কি স্থলিত বীর্য ছিলনা? অত:পর সে ছিল রক্ত পিন্ড, অত:পর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অত:পর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল পুরুষ ও নারী। তবুও কি সে আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করতে সক্ষম নয়?”
এছাড়াও ভ্রনের স্তরগুলো সম্পর্কে পবিত্র ক্কুরআনে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।
সূরা মূমিনুন (২৩/১২-১৪)-এ আল্লাহ বলেছেন, “আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান থেকে। অত:পর আমি তাদেরকে শুক্র বিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আঁধারে। পরে আমি শুক্র বিন্দুকে পরিনত করি আলাকে। অত:পর আলাককে পরিণত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপাঞ্জরে, অত:পর অস্থিপাঞ্জরকে ঢেকে দেই মাংসপিন্ড দ্বারা, অবশেষে তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে। অতএব, সর্বোত্তম সৃষ্ঠা আল্লাহ কত মহান!”
এরপর সূরা আল হাজ্ব (৫) - এ বলা হয়েছে, “হে মানুষ! পুনরুত্থান সর্ম্পর্কে যদি তোমাদের মনে সন্দেহ থাকে তবে অনুধাবন কর, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে, তারপর আলাক থেকে, তারপর পূর্নাকৃতি অথবা অপূর্নাকৃতি মাংসপিন্ড থেকে।
তোমাদের কাছে ব্যাক্ত করার জন্য আমি যা ইচ্ছা করি তা এক নির্দিষ্টকালের জন্য মার্তৃগর্ভস্থ রাখি তারপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও । ”
পবিত্র ক্কুরআনের এ আয়াত সমূহকে বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, মানব ভ্রন আবৃত হয় তিনটি স্তরে-
১. নুতফাত (একবিন্দু রস)
২. আলাকাহ (জরায়ুতে ঝুলন্ত একটি বস্তু)
৩. মূদগাহ (চর্বিত মাংসপিন্ড)
নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া থেকে মানব সৃষ্টির রহস্য বিস্তারিত ভাবে বিজ্ঞান মাত্র কিছুদিন পূর্বে জানতে পেরেছে, যা পবিত্র ক্কুরআনে প্রায় ১৪৩০ বৎসর পূর্বে বলা হয়েছে। পবিত্র ক্কুরআনের উদ্ধৃতিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মানব ভ্রন রূপান্তরীত হয় ৬টি স্তরে।
১. নুতফা আমসাজ
২. আলাকা
৩. মুদগাহ
৪. ইযামা
৫. লাহম
৬. আনসা
সুতরাং আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সামান্য পরিমান তরল পদার্থ থেকে, এমন কিছু থেকে যা লেগে থাকে-জোকের মত বস্তু। এরপর তিনি তাকে মুদগাহতে পরিণত করেন-চর্বিত গোস্তের মত বস্তু।
এরপর ইজামান-হাড়ে পরিণত করেন। এরপর তাকে আবৃত করেন গোস্ত দ্বারা, পেশী দ্বারা। বস্তুত, আল কোরআন ই একমাত্র ও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নারী-পূরূষদের বিস্তারিত ও সর্বোত্তম শ্লীল পন্থায় যৌন শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের ভবিশ্যৎ প্রজন্ম সৃষ্টির রহস্য উম্মোচন করেছেন।
ছবি- পুরুষ ও নারী শুক্রানুর মিলিত অবস্থান(জাইগট)
০১. নুতফা আমসাজ
নুতফার আরবি শব্দ। শাব্দিক অর্থে নুতফা হচ্ছে-এক ফোঁটা তরল পদার্থ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে তিন শ্রেণীর নুতফার উল্লেখ করেছেন।
ক্স পুরুষ নুতফা (পুরুষ গ্যামেট)
ক্স স্ত্রী নুতফা (স্ত্রী গ্যামেট)
ক্স নুতফা আমসাজ (পুরুষ-নারীর মিলিত নুতফা)
পুরুষ নুতফা (পুরুষ গ্যামেট)
পবিত্র কোরআনে নুতফা(এক ফোঁটা তরল পদাথ) শব্দটিকে মোট ১২বার এবং মানি(শুক্রণু) শব্দটিকে মোট ৩বার বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ সূরা ক্বিয়ামাহ (৭৫/৩৭-৩৮) - এ বলেছেন, “সে কি স্থলিত বীর্য ছিলনা? অত:পর সে ছিল রক্ত পিন্ড, অত:পর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। ”
ছবি- পুরূষ হতে স্থলিত বীর্য
এ সম্পর্কে সুরা ওয়াকেয়ায় (৫৬/৫৭-৫৯) বলা হয়েছে- “আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তবে কেন তোমরা বিশ্বাস করছ না? তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে? তা কি তোমরা সৃষ্টি কর না আমি করি?”
স্ত্রী নুতফা (স্ত্রী গ্যামেট)
পবিত্র ক্কুরআনে স্ত্রীর বীর্য সম্পর্কে বিস্তারিত কোন বর্ণণা নেই। তাছাড়া স্ত্রী থেকে কোন বীর্য স্থলিত হয় না যাহা বিজ্ঞানের দ্বারা বর্তমানে এটি প্রমানিত সত্য।
তবে মিলনের একপর্যায়ে পুরুষ হতে স্থলিত বীর্য নারী জরায়ুতে এক ধরনের নিসৃত রসের সহিত মিলিত হয়। বিজ্ঞানে একে শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলন বলে। এই দুইয়ের সমন্বয়ে জাইগট গঠিত হয়। পবিত্র ক্কুরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণণা এসেছে।
নুতফা আমসাজ (পুরুষ-নারীর মিলিত নুতফা)
ছবি- পুরূষ ও নারীর মিলিত বির্য ও নিসৃত রস হতে ভ্রূন গঠনের প্রাথমকি স্তর(শুক্রানু ও ডিম্বানুর প্রাথমিক অবস্থান)
চলবে. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।