আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুলময় সড়ক ভ্রমণ এবং পম অর নট পম গানা

ব্লগার না পাঠক হওয়ার চেষ্টায় আছি কিছুদিন আগে সক্কাল বেলা আর্জেন্ট কাজ আছিল। ভোর বেলায় ঘুম হইতে উঠিয়াই গন্তব্যের দিকে রওনা দিলাম। উল্লেখ্য, সেদিনকা ইসলামী হুজুররা হরতাল দিয়াছিলেন। ইউটিউব বন করনের পরেও হরতাল দেওনের কাহিনী আমি বুজি নাইক্কা। আমি গাধা মানুষ, এইসব বুঝিয়া আমার কুনু কাম নাই।

বাসা হইতে সূর্য মামা উঠনের বেশ কিছু পরে বাহির হইয়া গেলাম। বাস স্ট্যান্ডে আসার পরে বুজিলাম হরতালের আমেজ বিরাজমান! বাসওয়ালারা বোধ করি বুঝিতে পারিতেছিলেন না বাস বের করিবেন কি না। যাহা হোক, একখান বাস পাইয়া গেলাম। কোন দিক না চাইয়া দৌড়াইয়া বাসে উঠিয়া পড়িলাম। বাসে উঠিয়া কাক অথবা কোকিলতালীয় ভাবে পিছনের দিকে একখান সিট খালি পাইয়া গেলুম।

গন্তব্য মেলা দূর। আবার এই বাস হইতে নামিয়া আরেকখান বাসে উঠন লাগব। কাজেই তড়াক করিয়া আসনে বসিয়া পড়িলাম। ধীরে ধীরে বাস লুকে লুকে লুকারণ্য হইয়া উঠিল। কতিপয় লুক আমার দিকে আড়চোখে তাকাইয়া ছিল।

কেউ কেউ মুচকি হাসতাছিল! আমার চেহারা কিঞ্চিত পাগলের লাহান। তয় লুকদের এইরাম চাহনী দেইখা মনে হইল আমি পাবনা হইতে শিকল ছিড়া বাহির হইয়া আসিয়াছি। যা হোক, হঠাত করিয়া আমার চোখে চুল আসিয়া পড়িল। আমি আস্তে করিয়া ডাইনে তাকাইলাম। পোড়া কালারের জিন্স আর একখান গেঞ্জি পড়িয়া এক ব্যাক্তি জানালার দিকে ঘুড়িয়া বসিয়া আছেন।

এই ব্যাক্তি যে ললনা হইতে পারে ইহা আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবিতে পারি নাই। ক্ষণকালের মইধ্যে যখন উনি জানালা হইতে ফিরিয়া সোজা হইয়া বসিলেন আমি তো পুরাই লুল হইয়া গেলাম। তখনই বুঝিলাম লুল ভাই-ব্রাদাররা ক্যান আমার দিকে ওমনে তাকাইয়া ছিল। সক্কালে সাধারণত ডিজুস ললনারা বাহির হয় না। উহাদের ভ্রমণের সময়কাল বিকাল।

এই সক্কালে উনার মতন ডিজুসকে দেখিয়া আমি যে শুধু লুল হইয়াছি তাহাই নহে মাথাও কিঞ্চিত আউলাইয়া গেছে। সচরাচর ললনাদের দেখিলে আমার হাত-পা কাঁপে, তয় উহাকে দেখিয়া আমার সুহানার কথা মনে পড়িয়া গেল। ওই যে, বডিগার্ডের নায়িকা ববি আর কি। ললনা যখন আমার দিকে তাকাইল আমি তখন তাহার চোখে আমাকেই দেখিতে পেলুম। ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বাজিবে, “দিওয়ানা কত দিওয়ানা, ঘুরে আগে পিছে হয়ে মস্তানা!”।

লুলরা অন্য কিছু ভাবিয়েন না। উনি সানগ্লাস পরিহিতা ছিলেন, কাজেই আমি আমার রিফ্লেক্টেড ছবিই দেখিয়াছি। কিছুকাল পরে ললনা মুবাইলে কথা বলিতে লাগিল। কথা কি কহিল বুজিলাম না, তয় খালি “জানু জানু” এই দুই খান শব্দই শুনিয়াছি। শ্লার কপাল! অবশ্য এইটাইপ ললনাদের বয়ফ্রেন্ড থাকিবে না- ইহা হতেই পারে না।

দুনিয়া আগামী ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখ ধ্বংস হবে- বৈজ্ঞানীদের এই তথ্য মানা গেলেও এই টাইপ ললনার বয়ফ্রেন্ড থাকিবে না ইহা মানা যাইবে না। বেশ কিছুকাল ললনা জানু জানু করিল। তারপর হঠাত করিল দাঁড়াইয়া গেল। আমার দিকে তাকাইয়া কহিল, “সড়েন ভাইয়া, নামিব। ” শ্লার কপাল! ভাবিলাম ললনার সাথে গপ-সপ করিব তাহা না! যাহা হোক, আমি লাফাইয়া বাসের ছাদে থাপড়াইয়া চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কহিলাম “থামেন থামেন”।

বাস থামিয়া গেল। অতঃপর ললনা নামিল। বাস ছাড়িল না। আমি আবার চিল্লাইয়া কহিলাম, বাস ছাড় না ক্যান। হেল্পার কহিল আপনি নামবেন না? আমি তাজ্জব! আস্তে কহিলাম, বাস ছাড় মামা।

বাস হইতে নামিয়া আরেক বাসে উঠনের লাগিয়া ওয়েট করিতে লাগিলাম। বাসের আকাল। আমার সময়ও নাই। চিন্তা করিয়া ভাবিলেম সিএনজি লই। টেকা-পয়সা কম এবং গার্লফ্রেন্ড নাই বলিয়া সচরাচর সিএনজিতে উঠি না।

যাহা হোক, এক সিএনজি ওয়ালাকে জিগাইলাম যাবেন নাকি? কহিল যাবে। জিগাইলাম ভাড়া কত? কহিল আড়াইশ! আমার মাথায় হাত। ভাড়া হাইয়েস্ট ৬০ বা ৮০ টাকা হওয়ার কথা। উনি চায় আড়াইশ! আমি কহিলাম, “কস কি মমিন। ” বেচারা সিএনজিওয়ালা হা কইরা আমার দিকে তাকাইয়া ছিল।

যা হোক, আরও তিনটা সিএনজিওয়ালা ভাড়া ২০০ করিয়া ভাড়া চাইল। সর্বশেষে এক সিএনজিওয়ালা কহিল ৩০০ টাকা। আমি তাহাকে আর কিছু কহিলাম না। শুধু একটা কথাই কহিলাম, “ইউ নট পম গানা?” বেচারা তাজ্জব হইয়া আমার দিকে চাইয়া ছিল। পরে ১০০ দিয়া একটা সিএনজি ঠিক করিলাম।

স্টার্ট নেওনের কিছু পর উহা আমাকে কহিল, “সামনে পুলিশ। ” আমি কহিলাম, “তো?” উনি কহিল, যদি কয় মিটারে কিনা আপ্নি কইবেন মিটারে। আমি কহিলাম, আপনে ত মিটারে যাইতাছেন না। আমি মিটারে কমু ক্যান? উনি কহিল, আপনে নামেন। আমি যামু না।

আমি কহিলাম, ওকে ওকে, আপনে মিটারেই যাইতাছেন। কিছুদূর যাওনের পর আমি জিগাইলাম, মিটার নষ্ট নাকি। বেটা পিছন ফিরা আমার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকাইল। নামার পর উহাকে টাকা দিয়া আমি কহিলাম, সব সিএনজি ওয়ালারাই দেড়শর উপ্রে চাইয়াছে। খালি আপ্নেই চান নাই।

ইউ সার্টেইনলি পম গানা! বেচারা হা করিয়া আমার দিকে তাকাইয়া রহিল। আমি উহাকে উক্ত অবস্থানে রাখিয়াই প্রস্থান করিলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।