আমার একজন বন্ধু আছে, যার সামনে কথা বলার সময় আমি একটু চিন্তা করে বলি। কারন বন্ধু হবার পরেও তার সাথে আমার মতের যত মিল তার চেয়ে অমিলই বেশি। সেটা সে প্রকাশও করে নিঃশঙ্কাচিত্তে। এমন অনেক হয়েছে, আমার কিছু ভালোবাসার ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে গিয়ে পুরা উল্টিয়ে গেছি। শারীরিক না, আমার বিশ্বাস উল্টিয়ে গেছে।
আমার মতের বিপক্ষে তার তীব্র আক্রমণ দেখে হতচকিত হয়ে গেছি, যুক্তির তোড়ে আমার বিশ্বাস ভেসে গেছে। প্রথম প্রথম মনে আঘাত পেতাম। আমার মতের উপর, আমার বিশ্বাসের উপর, আমার দৃষ্টিভঙ্গির উপর তার এতো বিরাগ দেখে আমিও পাল্টা আক্রমণ করতাম। তখন উদ্দেশ্য থাকত শুধুমাত্র তর্কে বিজয়ী হওয়া। এরকম কিছুদিন চলার পরে যুক্তি প্রয়োগ করতে শিখলাম আগের চেয়ে ভালো ভাবে।
এটাও শিখলাম যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তর্ক করার উদেশ্য কোনভাবেই তর্কে বিজয়ী হওয়া নয়, আসল উদ্দেশ্য আসলে সঠিক মত/ সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি টাকে খুজে পাওয়া। আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি কোনও ভুলত্রুটি থাকে সেটা এই বিতর্কের মাধ্যমেই সংশোধন হবে।
আমার আরেকজন বন্ধু আছে। অমায়িক ব্যবহারের জন্য, সবসময় সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলার জন্য অনেকেই তাকে অনেক পছন্দ করে। সে কিন্তু কখন কারো সাথে তর্কে যায় না।
আমি এ পর্যন্ত মনে করতে পারছিনা, কখনো তাকে কোনও বিষয়ে কারো সাথে তর্ক করতে দেখছি। তর্ক করা দূরে থাক কখনো কোনও বিষয়ে কারো সাথে তার দ্বিমত পর্যন্ত হয় না, সুযোগই সে দেয় না। সবসময়, সববিষয়ে, সবার সাথে সে একমত। আমি তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য, ‘নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে’ একবার পক্ষ মত নিয়ে; এবং ২ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই একই বিষয়ে বিপক্ষ মত নিয়ে তার সাথে কথা বলেছি। অবাক বিষয় সে ২ বারই আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে।
আল্লাহ্র অপূর্ব সৃষ্টি!!!
আসেন এবার ২ বন্ধুর মধ্যে একটু তুলনা করি,
১) ১ম বন্ধু বেশিরভাগ সময় আমার সাথে খ্যাচখ্যাচ করে। ২য় বন্ধু সবসময় আমাকে সমর্থন করে। আমাকে ঝগড়া করার কষ্ট দেয় না। ১ম বন্ধু মিষ্টি কথা সাধারণত কম বলে। তারসাথে আড্ডা দেয়ার পরে মাথার ভিতরে থাকে যুক্তি/ তর্ক/ঝগড়া ।
২য় বন্ধু সবসময় মিষ্টি হেসে আমার সাথে মিষ্টিমিষ্টি কথা বলে। তার সাথে সময়টা ভালই কাটে, আনন্দদায়ক। ফেরার সময় অনাবিল মেজাজে বাসায় ফিরি।
২) ২য় বন্ধু আমার সাথে বেশিক্ষণ সাধারণত সময় ব্যয়/ অপচয় করে না। যখন করে তখন অযথা বকবক না করে হাসি/ আনন্দ দেয়।
আমার যেকোনো মতে সমর্থন দেয়। ১ম বন্ধু কথা বলতে বসলে নিজের সময় অনেক ব্যয় করে আমার সাথে আলোচনা করে।
৩) আমার মতের বিরুদ্ধে তর্ক করে ২য় বন্ধু কখনো সাময়িক বা স্থায়ীভাবে আমার বিরাগভাজন হয় না। অযথা বিরাগভাজন হবার ঝুকি সে নিতে চায় না। ১ম জনের কথা আর কি বলব, তর্ক আর বিতর্ক, মাঝে মাঝে বিরক্তও হই বটে।
তিক্ততা সৃষ্টি হতে পারে এটা জেনেও সে তর্ক করে।
এখন কেউ কি আমাকে একটু সাহায্য করবেন, যে; আসলে কে আমাকে care করে? আর কে আমাকে ignore করে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।