মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ। মাঝে মাঝে উপলব্ধি হয়;
এই শহরবাসী আমাদের প্রতিটা মুহূর্তের নাটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে- বিভিন্ন গণমাধ্যম গুলোর বিভিন্ন স্তরের আকর্ষণ বিন্দু। আর তার ছটায় আমরা হচ্ছি বিন্দুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর।
আরও ছোট... আরও ছোট...
অনেক দিন ধরেই খুব একটা টিভি দেখা হয়না। দেখলেও খবর দেখা হয়। চ্যানেল ঘুরোতে ঘুরোতে কাল দেখি সানি লিওন-কে নিয়ে ফিচার করছে এক ভারতীয় চ্যানেল। কৌতূহল আর জিজ্ঞাসু ভাব নিয়ে দেখলাম, এই মহীয়সী নারী অনেক পন্যের ব্রান্ড এম্বাসেডর হিসেবে চুক্তি করছেন। অনেক নতুন ছবিতে হাত দিচ্ছেন।
অসাধারণ, অসাধারণ। অবশ্যই ভালো। তার আগের পেশার চেয়ে অনেক বেশী ইজ্জতের, অনেক বেশী সম্মানের।
কিন্তু; প্রমোট হচ্ছে কি?
আপনি পর্ণস্টার হলে পরবর্তীতে মেইনস্ট্রিমে এমন ল্যাভিশ জীবন চালাতে পারবেন? অন্তত আর দশটি সাধারণ মেয়ের কি সম্ভাবনা জাগবে না, আরও ভালো থাকার আশায়, গাড়ী হাকাবার আশায়, রূপোলী পর্দার সাধ, মর্ত্যে স্বর্গীয় সুধা পানের আশায় ও পথ বেছে নেবার। অবশ্যই থাকবে, আলবৎ থাকবে।
এদের জীবনে এমন নোংরা হাহাকারের দায়ভার কে নেবে? অবশ্যই তা সানি-র নয়। সে যে পথে হাটছে, সে পথ তার তৈরি করা নয়। পেটে খিদে থাকলে যে আপনি আজকে মেয়েদের স্রেফ স্বামী সেবার বানী শোনান; সেই আপনারও ঐ একই রাস্তা ধরা অমুলক নয়। মানুষের এ বড় সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য- শর্টকাট...!!...
নারীমুক্তির বানী ছড়ানো, নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করতে করতে ভারত নষ্ট হয়েছে, বাংলায় তার নাটাইয়ের সুতোর বন্ধন জোড়া লেগেছে মাত্র।
কাল ইনডিপেনডেন্ট নিউজে ফিচার করেছে পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত আমাদের সমাজের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে।
একটা খুপড়ি মতো জায়গার ভিডিও দেখলাম- ডিজে না ভিজে পার্টি হচ্ছে; দরিদ্রশ্রেণীর কিশোর- কিশোরীরা তাতে নাচছে। কিশোরী কয়েকটা মেয়ে নির্লজ্জ হাসছে, একে অন্যের শরীরে গড়িয়ে পড়ছে। অদ্ভুত দৃশ্য। ঠিক একই দৃশ্য দেখা যাবে হয়তো, উচ্চবিত্তের এসব পার্টিতে গেলেও।
এই কিশোরীদের কেউ হয়তো হবে আগামীর সানি লিওন, কেউ হয়তো এখনই হয়েছে।
আগে যা ছিল নিখাদ কলঙ্কের তাতে এখন পশ্চিমা সিল লেগে তা অনেকটাই জাস্টিফাইড বা জায়েজ। প্রথমে এক্সট্রিম লেভেল থেকে শুরু করে, তারপর মেইন স্ট্রিমে আসতে থাকবে সবাই।
উচ্ছন্নে যাক ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, জার্মান।
বাংলার বোনেরা, তোরা লিওন রে দেখ, কিন্তু বেছে নে কষ্টের পথ। আমাদের আছে অনেক সফল মহিলা, তাদের পথ।
তোরা কি ব্যাবসায়, কি পেশায়, কি কর্পোরেট, কি শিক্ষায়, কি শ্রমে, কি রাজনীতিতে, কি শিল্পে- মাথা উচু করে দাঁড়াবি আমাদের সামনে। আমরা লোলুপ চোখে নয়, সম্মানে নুয়ে করবো কুর্নিশ।
বন্ধ করো এই সব অদ্ভুত ধারনার মার্কেটিং, প্রোমোশন। পন্য বিক্রি করতে গিয়ে, নিজেকে পন্য বলার ধারণা।
Yes, I am a Business Student, But I oppose the theory of being a product in job market for every single human. I am not a product.
দর্শন আনো, ব্যাবসায় শিক্ষাতেও দর্শন আনো।
বড্ড জরুরী হয়ে পড়েছে। মুখস্ত বিদ্যা কপচাতে কপচাতে মনের কোমল বিচার্য যে ধ্বংসের পথে সে কেউ বুঝছেনা। DOUBLE STANDARD- পড়ালেখার ইতি ঘটাও। আগে বল- কি চাই বাংলার। বড় সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া যায়, যুক্তির সাথে যে নিজেকে বিক্রি করো- sell your self, market your self. শব্দ কি এতই সোজা।
এগুলোর impact হচ্ছে ধীরে ধীরে।
জানি, অনেক ব্যাবসায় শিক্ষা বোদ্ধাই আজ আমার সাথে একমত হতে পারবেন না। কিন্তু, এই বলে রাখলাম- আমার জীবনের সত্য আর সেরা উপলব্ধির মধ্যে এটা একটা।
ব্যাবসায় শিক্ষায় দর্শন প্রবেশ করুক। Ethics আর Moral values- একটা অধ্যায়ে স্রেফ নম্বর তোলার ফর্দ না হোক।
আর সানি লিওন রা আমাদের মেয়েদের সে একজনই বা হোক না কেনো- আদর্শ না হোক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।