ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মিত হয়। সম্রাট নেবুচাদনেজার সম্রাজ্ঞীর প্রেরণায় এটি নির্মাণ করেন। প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিতটিকে স্থাপন করা হয় তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট।
এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর পুস্পবাগ। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার যুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেচানো নলে সাহায্যে।
৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।
মেসোপটেমিয় সভ্যতার মধ্যে এই ব্যাবিলনের সভ্যতা অন্যতম ব্যাবিলনে। ইফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে ওঠা ব্যাবিলন শহরটি ছিলো জাঁকজমকপূর্ণ। চারকোণা এ শহরটি তখন প্রশস্ত প্রতিরক্ষা প্রাচীরে ঘেরা ছিল, যা উচ্চতা এবং প্রশস্তের দিক থেকে ছিলো বিস্ময়কর। শহরের সামনে ছিল মজবুত ও উচু প্রবেশ পথ।
আবার শহরের মধ্যে একটি বড়ো স্তম্ভও তৈরি করা হয়েছিল। যার নাম ছিলো ব্যাবিলন টাওয়ার। নামটির সঙ্গে সম্ভবত ব্যাবিলন নামটির সম্পর্ক ছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ এর দিকে সুমেরীয় সভ্যতার পতন হলে ব্যাবিলন সে অঞ্চলের শক্তিশালী একটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। ব্যাবিলনের প্রথম সম্রাট সারগন ছিলেন মোটামুটি সফল, কারণ তিনি ব্যাবিলনের সভ্যতা সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে সম্রাট হামুমারাবির সময়ে (১৭৯২ - ১৭৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) সুমেরীয় সংস্কৃতি, জ্ঞানবিজ্ঞান উন্নয়ন করেন।
পরবর্তী কয়েকশ বছর ব্যাবিলনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর হাতে। হিট্টাইট, অ্যাসিরিয়ান, ক্যাসাইট এবং ক্যালডিয়ান জাতি প্রায় হাজার বছর ব্যাবিলনের ক্ষমতা হরণ করে। তারপর ৬২৫ খ্রিষ্টপূর্বে নানোপোলাসার-এর নেতৃত্বে ব্যাবিলন আবার জেগে ওঠে। তিনি অ্যাসারিয়ানদের রাজধানী নিনেভে দখল করে নেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে নেবুচাদনেজার ক্ষমতায় আসেন।
তিনি ব্যাবিলকে আরো সমৃদ্ধ এবং জাঁকজমকপূর্ণ করে গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন স্থাপত্য ও শিল্পের প্রতি বিশেষভাবে অনুরাগী। তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির, প্রাসাদ ও স্থাপত্য পূনর্নির্মাণ করেন। ব্যাবিলন শহরকে গড়ে তোলেন সরম্য ও আকর্ষণীয় করে।
নেবুচাদনেজার-এর (৬০৪ - ৫৬১ খ্রিষ্টপূর্ব) সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপন হলো ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত উদ্যান।
এই ঝুলন্ত বাগান গড়ে তোলার পিছনে তাঁকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল তার প্রিয়তম সম্রাজ্ঞী। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান বিশ্বের সপ্তাশ্চাযের একটি হয়ে ব্যাবিলনের সুখ্যাতি প্রকাশ করছে। সম্রাট নেবুচাদনেজার ছিলেন ভীষণ আমুদে। নিনেভে দখল করার সময় মিডিয়ান সম্রাট তাহে সহযোগিতা করেছিলেন। মিডিয়ান রাজকন্যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর রাজকন্যা হলেন ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞী। কিন্তু ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞীর আদৌ ভালো লাগত না, কারণ মিডিয়া ছিলো পাহাড় পর্বতের দেশ। আর ব্যাবিলন ছিল সমতল ভুমি। সম্রাজ্ঞী পাহারী দৃশ্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। সম্রাট সম্রাজ্ঞীর মনের কথা বুঝতে পেরে তাঁকে খুশী করতে প্রাসাদের ওপর বিশাল পাহাড় তৈরি করেন।
পাহাড়ের সঙ্গে তৈরি হলো মনোরম বাগান। সারা পৃথিবী থেকে চমৎকার সব উদ্ভিদ আর ফুল এনে সাজিয়ে দেয়া হল বিশ্ববিখ্যাত এই বাগান। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীর সব আনন্দ আর সুখের সম্রাজ্ঞীর জন্য ভালোবাসার প্রতীক অঙ্কন করতে।
পারস্য সম্রাট সাইরাস ৫১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জেরুজালেম দখল করে শহরটি ধ্বংস করেন। তাদের উপসনালয় এবং রাজপ্রাসাদ পুড়িয়ে দেন।
তার সময় থেকেই ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য ম্লান হতে থাকে। তার পরবর্তীকালে নেবোনিডাস সম্রাট হন। তবে ব্যাবিলনের সমৃদ্ধি হারিয়ে যেতে থাকে। ব্যাবিলন এখন ধ্বংস স্তুপ। পারসিয়ান সম্রাটের প্রচন্ড আক্রমণে নিমিষেই ধুলোয় মিশে গিয়েছিলো ব্যাবিলন নগরী।
(সংগৃহীত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।