ব্লগিং হোক আগামীর...
২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০১২, রাত ১২ টা ১ মিনিট।
আজ আমার ২৯ তম জন্মদিন।
গুরুত্বপূর্ন মানুষ হলে বলা হতো, ২৯ টি বসন্ত পেরিয়ে তিনি আজ ৩০ এ পা দিলেন। পত্রিকায় স্মার্ট একটা অভিব্যক্তিসহ ছবি ছাপা হতো। একটা নিবন্ধ থাকতো সেই ছবির নিচেই।
বেশি গুরুত্বপূর্ন কেউ হলে ২৯ পাউন্ডের একটা কেক চলে আসতো আমার বাসায়। হাসি মুখে কেকটা কেটে কোনো একটা শিশুকে খাইয়ে দিতাম, ভিডিও হতো, সন্ধ্যার খবরের শেষের দিকে দেখানো হতো। টিভি পর্দার নিচের দিকে স্ক্রলে ভাসতো, ওমুকের জন্মদিনে ওমুক টিভির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
কিন্তু আমি কোনো গুরুত্বপূর্ন মানুষ না। Below Average শব্দটা জীবনে অনেকবার শুনেছি, পড়েছি।
গুনবাচক এই শব্দটা আমার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় খুব বেশি। সেই Below Average ক্যটাগরির একজন মানুষের জন্মদিন কেমন হওয়া উচিৎ?
বলা বাহুল্য, ঘটা করে জন্মদিন পালন করার রেওয়াজ আমাদের পরিবারে নেই। তাও আবার আমি হলাম Youngest Son. বাপ-মা প্রথম সন্তানকে মানুষ করতে করতে কাহিল হয়ে যায়। শেষেরটার সময় আর এনার্জি থাকে না। তার উপর আমার জন্মদাতা এবং দাত্রী উভয়েই পরার্থপরতার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী।
তাই কেক কাটাকাটির আভিজাত্যে যাওয়া হয় নাই খুব বেশি। তবে দুএকবার কেক টেক এনে নিজেরা নিজেরা কাটা হয়েছিল। জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা না হলেও, ঐ দিন গিফট পেতাম নিশ্চিত। বয়স হওয়ার সাথে সাথে সেই গিফট এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। বার্ধক্য মানুষকে অনেক কিছু যেমন দেয়, অনেক কিছু কেড়েও নেয়।
আজকে কেন জানিনা একটা কেক খেতে ইচ্ছে করছে। Black Forest হলে ভালো হতো। তৃপ্তি সহকারে এক পিস কেক নিজেকে খাইয়ে জোর গলায় বলতাম, Well done comrade, you fought really well. You are not successful, but you are not a complete failure either. এটাই বা কম কিসে? সংস্কারের কারনে এলকোহল পান করা হয় না, তা না হলে এই পর্যায়ে এক গ্লাস Champaign নিয়ে পাশ্চাত্য কায়দায় নিজের উদ্দেশ্যে গ্লাসটা একটু উপরে তুলে ধরতাম, যাকে বলে Raising the glass. Every little win in every small battle deserves some celebration. এরপরে স্রেফ রাতের অন্ধকারে একটু হাঁটাহাঁটি, ঢাকার রাস্তায়। A walk for complete peace of mind.
শান্তি থেকে আবার অশান্তিতে আসি। পাশ্চাত্য থেকে এই কেক কাটার সংস্কৃতি কিভাবে এলো তা জানি না, কিন্তু সত্যি বলছি, পুরো বিষয়টা আমার খুব হাস্যকর লাগে।
কেক খাবো ঠিক আছে, খাওয়ার জিনিস তো খাবই। কিন্তু মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নেভানো, কেক কাটা, হাততালি, আবার একে ওকে খাইয়ে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি, এগুলো কেমন যেনো ফালতু মনে হয়। কেউ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও কেমন জানি বিব্রত বোধ করি। কাউকে অযথা ‘হ্যপি বার্থডে’ বলার ন্যকামিটাও করতে ইচ্ছা করে না। তবে আজ পর্যন্ত যে কয়জন মানুষকে নিজস্ব ঢঙে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছি, সাধারন আনন্দ দিতে না পারলেও, অসাধারন ভালো লাগা তাদের দিতে পেরেছি।
অতি অবশ্যই এই শুভেচ্ছা দানের সাথে নিজস্ব ভালো লাগা ছাড়া কোনো স্বার্থ জড়িত ছিলো না।
আজকাল ফেইসবুকের কল্যানে শুভেচ্ছা জানানোর প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে, পরিমানও তাই বেড়েছে। শুধু HBD লিখেই কাজ সারা। শর্টকাটে করার জন্য উপরে একেবারে ডানদিকের কর্নারে ক্লিক করলেই হয়ে যায়। যেহেতু শুভেচ্ছা আশা করি না তাই আমার প্রোফাইলে এই অপশনটি বন্ধ করা।
আগেই বলেছি, কেউ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর চেষ্টা করলে কোনো এক অদ্ভুত কারনে বিব্রত বোধ করি। গিফট দিলে তো কথাই নেই।
এসব বাদ দিয়ে দৃষ্টিটা একটু অন্যদিকে ঘোরাই। ফার্মগেটের বড় ব্রীজটা মনে পরছে? ইন্দিরা রোডের সাথে যেটা। ওখানে দেখার মতো অনেক জিনিস আছে।
একদিন দেখলাম কয়েকটা টোকাই মার্কা ছেলে-মেয়ে খুব উত্তেজিতভাবে ছোটাছুটি করছে। একজনের মাথায় একটা মস্ত বড় কেক। বোঝাই যাচ্ছে, কোনো বেকারীর পচে যাওয়া কেক ফেলে দিয়েছে, তাতেই তাদের আনন্দ। সৃষ্টিকর্তা পচে যাওয়া খারাপ জিনিসের মধ্যেও আনন্দ লুকিয়ে রেখেছেন। যেহেতু আমি বিরাট কোনো মানবদরদী না, তাই আনন্দের এক ঝিলিক আমার স্মরণকোষে নিয়ে ঐ স্থান থেকে পালিয়ে বাঁচলাম।
এমন যদি হতো, বিপরীত জেন্ডারের কোনো বিশেষ ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় আছে, তাহলে হয়তো তিনি এই উপলক্ষে আমাকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করতেন। এজন্য তাকে শ্রম ব্যয় করতে হতো। কেননা বাবা-মায়ের মতো সেটা স্বয়ংক্রিয়/প্রাকৃতিকভাবে হয় না। সেই অনুভূতি, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম রং দিয়ে পরিবেশন করাটাই নিয়ম। সে যাই হোক, যেহেতু এমন কেউ নেই, এই মুহুর্তে সেটাও অবাস্তব।
পরাবাস্তবতা থেকে এবার একটু বাস্তবতায় আসি। আমাদের সমাজে, জাগতিক সফলতার বাইরেও যে মানুষের একটা জীবন থাকতে পারে, সেই চর্চাটা নেই। আমি চোখে কম দেখি, এই জাগতিক বিষয়বস্তু দেখার ব্যপারে আমার অক্ষমতাটুকু আছেই। তবে বিষয়বুদ্ধিহীন মাজু এতে মোটেও উদ্বিগ্ন না। তার উদবাগ (উদ্বেগ) অন্য আরেকটি প্রাপ্তি নিয়ে যেটা শরীরি মানুষের কাছে গোপন থাকাই ভালো।
There are other foods than bread. অপরিনামদর্শী এই ভারী শরীরটা পুরোপুরি ভাবে ব্যকটেরিয়ার খাদ্যে পরিনত হওয়ার আগে সেই অশরীরি প্রাপ্তিটা জরুরী।
৩০ এ পা দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু পা সামনের দিকে চলবে কিনা সেই ব্যপারে অতটা নিশ্চিত নই। কোনো এক বিজ্ঞাননিবন্ধে পড়েছিলাম, পুরুষ মানুষের আয়ু নাকি আসলে ২৫ বছর। বাকী সময় বেঁচে থাকাটা ফাও। আমি ইতিমধ্যে ৪ বছর বেশি পার করে ফেলেছি।
এখন আমার মৃত্যু আতংকে থাকা উচিৎ। পিছনে ফিরে তাকালেই দেখতে পাই, ২৯টা বছর ভাগ্যের উপর নির্ভর করে হাসি-আনন্দেই কাটিয়ে দিলাম। বলা যায় মোটামুটি জীবনের অর্ধেক। বাকি অর্ধেকও একই ভাবে কাটবে, এটুকুই শুধু আশা করতে পারি। আর ভাবতে পারি সেইসব অনাগত শিশুদের কথা, মানুষের ভালোবাসায় যাদের জন্ম।
শুভ জন্মদিন মাজু !!
২৪.০৯.২০১২ রাত ১২:০১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।