এটা আমাদের এ বাঙাল দেশের বাজে একটি কালচার। মানুষ মইরা গেলেই তারে নিয়া উতালা হইয়া পড়ি। কাগজের পাতায় রঙিন ছবি, ভূরি ভূরি লেখা। স্মৃতিকথা, শোকগাথা, শ্রদ্ধাঞ্জলি আহা তার কী ওড়াউড়ি! অথচ জীবিত মানুষটার অপচয়, য়ে যাওয়া, নীরবে শেষ হওয়া নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। এত টাইম কই? নিজের জীবন নিয়ে মিয়া টানাহেঁচড়া করার সময়ই নাই।
এইগুলান হুদাই কালচার। হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর এক বিকেলে কালের কণ্ঠের ক্যান্টিনে বসে চা আর বিড়ি পান করতে করতে আমরা এ আলোচনা করছিলাম।
জীবনের কী জাদু? সেই আপন মাহমুদ মারা যাওয়ার পর এখন চারদিকে সংবাদপত্রের পাতায় তারে নিয়া হরেক আইটেমের লেখা চোখে পড়ে। পড়িও দু-একটা। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি একলা চায়ের টেবিলে।
বিকেলের রোদে ওড়াই সিগারেটের কুয়াশা ধোঁয়া। নয়নতারা বাগানটার পাশে নাম না জানা হলদে ফুল গাছের নিচে। আর মনে মনে বলি শালারা এখন এসব লেখা কবি আপন মাহমুদের কড়ইতলা গ্রামে তার কবরে পুঁইতা দিয়া আসো। ফালতু সব… মেজাজটাই গরম হইয়া যায় বাল…। পাশ থেকেই কে যেন একজন বলে ওঠে, ‘ওই মিয়া রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
’ হলুদ ফুল ছিটানো রাস্তায় পায়চারী করতে করতে বলি ‘কবি আপনার কোয়ান্টামের সূত্র দিয়ে আমাকে ঠাণ্ডা করতে চাইতাছেন? ‘কী করবেন বলেন নিজের ভিতর ডুব দেন। ’
হ আপনি তো মিয়া একেবারে ডুবসাঁতার দিছেন। এত মেডিটেশন করলেন নিজেকে স্থির রাখার জন্য, আসনে বসতেন প্রতিরাতে সে গল্প আমায় শোনাতেন। কী হলো এতসব করে… হুদাই… যান আপনার সঙ্গে কোন কথা নাই। মেজাজ গরম করবেন না।
এত তাড়াহুড়া আপনার? আমারে আপনার যে কবি-বন্ধুরা কবি বইলা স্বীকার করে না। যাদের মুখে কবি হিসাবে আপনার নাম শুনি নাই কোনো দিন। হেই বন্ধুরা আপনার শোকসভার আয়োজন করতাছে। হুনলে শরীরের জ্বালা ধরে। মনে লয় হালাগো ধইরা পিটাই।
ভণ্ড সব! মুখে এক অন্তরে আরেক।
‘পাগলা ঠাণ্ডা হন…’ আর ঠাণ্ডা হওয়া। আপনি তো চিরতরেই ঠাণ্ডা হইয়া গেলেন মিয়া। যান আপনি আমার সামনে থেকে যান। আপনার হাতে ওইটা কী? ‘ক্যান মিয়া মনে নাই… আমার কফিনে যে হলুদ ফুলের ডালটা ভাইঙা দিছিলেন…? হ দিছি তাতে কী হইছে? আর দিমু না কি করুম।
একজন কবি মহামিলনে যাচ্ছে। বাসর হবে তার। ফুলসজ্জা লাগবে না… একটা ফুলও জুটল না আপনার কপালে… আমি থাকতে এইটা হইবার পারে। আপনি এইটা নিয়া এমন নয়া প্রেমিকের লাগান ঘুরবার লাগছেন কেন? এটা বুক পকেটে রাখেন। এখানে আপনার কবিতার সব প্রজাপতি এসে বসবে।
‘হ্যাঁ রঙ ছাড়া প্রজাপতি আছে এখানে বেশ কয়েকটি। ওদের প্রজাপতির রঙ চিনাইতে নিয়ে এলাম। আর এই ফুলগাছটার সঙ্গে খানিক কথা বলতে মন চাইলো। ওর তো নামই জানা হলো না। ’
আমিও কয়েকজনরে জিগাইলাম, কেউ বলতে পারল না একজন বলল, ঠাকুর নাকি এর নাম দিছে অলকানন্দা… হালার ঠাকুর দুনিয়ার সব কিছুর নাম দিছে নাকি? কিন্তু আরেকজন বলল, না এটা অলকান্দা না।
আমি ভাবছি এটার নাম দিমু আপন ফুল… কি বলেন ভালো হবে না?
কবি আমার কথা শুনে হাসে মিটি মিটি। এবার সে হেলান দেয় দেয়ালে। আমি পাশে দাঁড়াই। বলি, ও ভালো কথা মনে পড়েছে, হানযালা সেদিন বলল আপনি নাকি মহামিলনের আগের দিন আমার কানে গোঁজা হলুদ ফুল দেখে নিজেও রাতে হানযালাকে নিয়ে হলুদ ফুল কানে গুঁজে ছবি তুলেছেন। হানযালার ছবি তুলে দিয়েছেন।
‘আরে কইয়েন না… কোনো কাজ নাই তাই দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া ছবি তুলছিলাম… মোবাইলে তোলা ছবি আর কতটা ভালো হবে। এই ফুলের তো প্রেমে পড়ে গেলাম। ’
চলেন চা খাই… সেদিন রাতে কইলেন ‘চলেন চা খাই’। আর আমি কইলাম পরের দিন খামু… কিন্তু আমারে চা না খাওয়াই একগাদা ফালতু চাপাতা বুকে নিয়া আপনি মিয়া চইলা গেলেন।
আমরা চা খেলাম একসঙ্গে।
ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে আমরা পা বাড়ালাম অ্যাপোলো হাসপাতালের পেছন দিয়ে বসুমতীর পিচঢালা রাস্তার দিকে। একটি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালেন আপন মাহমুদ। কী মিয়া থামলেন কেন? চলেন…
‘আর যেতে হবে না। এইখানেই স্পটটা। হ্যাঁ এইখানেই।
দুটো রাজহাঁস হেঁটে যাচ্ছিল… আপনারে বলছিলাম না।
হ বলছিলেন… বলছিলেন একটা রাজহাঁসের গলার ওপর দিয়ে দামি গাড়ির চাকা চলে যায়। রাজহাঁস হত্যার পর ড্রাইভারের ভাবখানা এমন ছিল, যেন তার দামি চাকা নাপাক হয়ে গেছে। নোংরা লেগেছে ধুইতে হবে…
‘হ্যাঁ আপনার তো দেখি সব মনে আছে। আর আমি আহত রাজহাঁসটার চিৎকার শুনছিলাম, ওর চোখের জল খুঁজছিলাম।
আমার অন্তরটা ফেটে যাচ্ছিল নিহত নয়, আহত রাজহাঁসের জন্য। এর পর আমি বহুদিন এ পথে হাঁটিনি। আহত রাজহাঁসটাকে মাঝেমধ্যে একা নিঃসঙ্গ হেঁটে বেড়াতে দেখতাম। ওটাকে দেখলেই আমি পালিয়ে যেতাম। এভাবে পালিয়ে বহুদিন রাস্তা পার হয়েছি।
প্রতিদিন এত মৃত মানুষের খবর আমি এডিট করি… কষ্ট লাগে না… লাশকাটা ঘরের ডোমের মতো অবস্থা। কিন্তু রাজহাঁসটির মৃত্যু আমাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। মাথাহীন শরীরটা নিয়েও সে দৌড়াবার চেষ্টা করেছে। বাঁচবার সে কী আকুতি তার। ’
হ্যাঁ সে আকুতি নিয়ে আপনিও একলা ঘর থেকে বাইর হইছিলেন বুক চেপে।
খুব ভোরে… এই পথ ধরেই হেঁটে এসেছিলেন। কিন্তু আপনার খুব তাড়া ছিল। মৃত রাজহাঁসের কাছে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। এটাই হচ্ছে লাইফের ম্যাজিক।
আমরা আবার হাঁটতে থাকি গন্তব্যহীন হয়ে।
কথা চলে…
আচ্ছা আপনি যে বলেছিলেন রাজহাঁস নিয়ে একটি বই করবেন এবং মৃত রাজহাঁস নিয়ে তিনটি কবিতাও লিখলেন।
‘ইচ্ছে তো ছিল। একটি বই করব, যেখানে রাজহাঁস নিয়ে একটি দীর্ঘ কবিতা, একটি গল্প এবং একটি উপন্যাস থাকবে। এক মলাটে পুরো রাজহাঁস। মুকুল মল্লী আমাকে এ বিষয়ে চাকা সভ্যতার কিছু ডকুমেন্ট জোগাড় করে দেবার কথা ছিল।
চাকা কিভাবে আমাদের গতি দিয়েছে এবং পিষ্ট করছে সে ইতিহাসটা ডিটেইল জানতে চেয়েছিলাম। ’
এর মধ্যে একটি বড় উড়োজাহাজ চলে গেল তালগাছের মাথার ওপর দিয়ে। আমি কবিকে বলি, ওই যে দেখেন মন দিয়া দেখেন বড় উড়োজাহাজ পেট বোজাই করে ডিমওয়ালা মাছের মতো চলে যাচ্ছে। এ এলাকায় যখন প্রথম বাসা নিলেন আমারে কইতেন… আপনার জানালা দিয়ে বড় বড় উড়োজাহাজের ওড়াউড়ি দেখেন। দাওয়াত দিছিলেন কয়েকবার।
এই তো সেদিনও কইলেন বউ বাপের বাড়ি গেছে, আসতে পারেন বাসায়। সারা রাত কবিতার আড্ডা দেওয়া যাবে। আর আমি বললাম আমার বউ তো ঘরে আছে। সে বাপের বাড়ি যাক… তারপর আমরা পার্টি দিমু… কেরু সাহেবকে জবাই দিমু। দুর মিয়া দূরে যান আপনার লগে কথা কইতেই এখন ভালো লাগছে না।
কিছুই হইল না।
‘আহা এত রাগ করছেন কেন? আমি একটু আগেই চলে আসলাম। আপনিও তো আসবেন। ’
দেখেন মেজাজ গরম করবেন না। আপনার মনে আছে আমরা প্রায় বছর দেড়েক আগে এক সন্ধ্যায় পিককে বসে মদ খেয়েছিলাম।
সেদিন আপনার বন্ধু কবি মামুন খান আর আপনি ভালোবাসার খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন। মামুন খান টেবিলের ওপর উঠে কথা বলা শুরু করেছিলেন। আর আমার ছোট ভাই মামুন মিজানুর রহমান ও আমি দর্শক হয়েছিলাম। সেদিনের আড্ডাটা মিস করি। এরপর বসব বসব বলে বসাই হয়নি।
আপনার সময়ই নাই।
‘ওই মিয়া শ্রমিক দিবসে আপনাগো লগে গোলাপ গ্রামে গিয়া মদ খাইলাম না বউসহ। ’
কবি হাসাইলেন সেটা ছিল তালের রস।
‘যেটাই হোক… আমার একটি কবিতার কিছু লাইন ছিল এমন ‘ঈশ্বর যেখানে আছে থাকুক, ওপথ আমার সরু মনে হয় আমাদের চিয়ার্সের শব্দ থেকেই শুরু হবে অনাগত গানের প্রবাহ এই ভেবে এখনো আমরা পানশালায় যাই। ’
‘আপনারা এবারও যাবেন নিশ্চয়ই রস উৎসবে?’
অবশ্যই যাব।
আপনি কি ভেবেছেন আপনি চলে গেছেন এর জন্য পৃথিবীর সব বারের শাটার নেমে যাবে। সব ফুলের রঙ কালো হয়ে উঠবে। প্রজাপতি রং হারাবে… কারো জন্য কিচ্ছু আসে যায় না… জীবন খুবই বদমাইশ।
‘আরে পাগল আমি কি তাই বললাম। কারণ আমি জানি ‘আমার মন খারাপ হলে একটাও জানালা নিভে যায় না কোথাও একটাও প্রজাপতি হারায় না উড়াল।
’
চলেন আরেক কাপ চা খাই। আপনার বুকে সেদিন যে চা পাতা দেখেছি। সেখান থেকে কিছু চা পাতা দেন। দোকানির হাতে দিয়ে বলি ভালো করে দুকাপ চা বানিয়ে দিতে। কবি তার বুক পকেটে রাখা চা পাতা দেয় একমুঠো।
দোকানি তা দিয়ে চা বানান। আমরা সে চা পান করে আরামছে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে হাঁটতে থাকি। কবির কাঁধে এখন আর কবিতার ব্যাগ নেই। কবিতা লেখার তাড়া নেই। সে নিজেই এখন আস্ত কবিতা।
আচ্ছা বলেন তো আপনি যে আপনার নতুন কবিতার বইয়ের নাম ‘হাত তুলেছি সাব এডিটর’ রেখেছিলেন। সেটার কী হবে? এই নামে আপন মাহমুদের কোনো কবিতার বই বের হবে না আর কোনো দিন। যা হবে আপন মাহমুদের অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র। কবি কোনো উত্তর দেয় না। নিজের স্বভাবের মতোই চুপ করে থাকেন।
দীর্ঘশ্বাস লুকাতে চান। শুধু অসহায়ের মতো বলেন, ‘আমার আর কিছু করার মতা নেই বন্ধু… কবিতার আলাপ বাদ দেন। আপনাদের ব্যান্ড তারছিঁড়ার কী খবর?’
খবর আর কী। আপনি বলেছিলেন একটা গান দিবেন। ডলার সুর করেছিল।
হারিয়ে ফেলেছিলেন। খুঁজে পাইলেন। একদিন অফিসে এসে বললেন, ‘ওই মিয়া গানটা তো পাইছি। ’
আপনি পাইছেন কিন্তু আমরা আর পাইলাম না। চলেন হাঁটি।
আপনি আন্দাজ করতে পারছেন না কি পরিমাণ মেজাজ গরম আমার আপনার উপর। আতিক ভাইয়েরে নিয়া একটা লেখা দিবেন কইছিলেন। সেটাও দিলেন। বিজয় আহমেদের কাছ থেকে সিডিগুলো নিয়ে আপনারে দিলাম। সিনেমাগুলো দেখে লেখা তৈরির কথা ছিল।
আরো কত কিছু করার কথা ছিল আমাদের। উফ শুধু আফসোস। কুড়িল বিশ্বরোডের রেইল গেটের কাছে চলে আসি আমরা। সিগন্যাল পড়েছে। ট্রেন আসবে।
আমাকে সে বলে, ‘আপনার সেই হলুদ ট্রেনের গল্পর কী খবর? … আর খবর! লিখতে পারছি না। লিখে ফেলতে হবে… সব দেনা মেটাতে হবে। কবে চলে আসতে হয় আপনার কাছে। কবি বলে, ‘মনে আছে আমরা একবার ট্রেনে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। ’
হ্যাঁ… মনে আছে।
তূর্ণা নিশিতা ট্রেন। কমলাপুর থেকে আমরা উঠেছিলাম। কবি ফেরদৌস মাহমুদ, রুদ্র আরিফ, তানজিমও ছিল। কবি বিজয় আহমেদের আমন্ত্রণে তার প্রিয় চুয়েট ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম আমরা। সেবারই আপনার সঙ্গে আমার প্রেমের সূচনা হয়।
সারা রাত ট্রেন, চুয়েট, পাহাড়, আড্ডা আহা!’
‘শোনেন মিয়া রেল লাইন নিয়া আমার একটা কবিতা আছে, তার কয়েকটা লাইন বলি, ‘রেললাইনের দূর, কী আছে ওই দূরে! নদী ভালোবাসে এমন বাতিওয়ালাই হয়তো জানে : কত কান্না কুয়াশা হয়ে ছড়িয়ে থাকে রেললাইনের পথে পথে…
রেললাইনের ওই দূরে, ওই কুয়াশাময় ভোরে পড়ে থাকে শীতকাল, মৃত নদীদের আত্মা নিয়ে। ’
একটি রেল চলে গেল বিচ্ছেদী হুইসেল বাজিয়ে। আমরা বিশ্বরোডে এসে পড়ি। কবিকে বলি, ‘চলেন কবি আমার নদীর পাড়ে যাই। আপনি তো আসলেন না আমার নদীর পারে।
আপনাকে বলেছিলাম বিশ্বরোডে আমি একটা নদী কিনেছি। নদীর নাম দিয়েছি অপরাজিতা। ’
‘হ্যাঁ আমি জানি। এখানে প্রজাপতিরা আসে। নানা রঙের খেলা দেখায় তারা।
মাছরাঙা, শালিক, বুলবুলি… কুমারী খেজুর গাছ… এ গল্প তো আমি আপনার মুখে শুনেছি। আর আপনাকে বহুবার আমার সেই কবিতাটা পড়ে শুনিয়েছি’
এক-একটি নদী পেরোনোর চে এক-একটি নারী পেরোনো অনেক ভয়ের
কেননা এক-একটি আহত পাখি এক-একটি মৃত পাখির চেয়ে অনেক
বেশি বেদনা বহন করে তবু আমাদের পেরোতে হয়, পেরোতে হয়
সুদীর্ঘ ঝড়ের আর্তনাদ…
এক-একজন নারীর সঙ্গে পরিচয় হওয়া মানে এক-একটা
অচেনা নদীর দেখা পাওয়া এক-একটা নারীর চলে যাওয়া
মানে এক-একটি নদীর মরে যাওয়া…
বস্তুত, কতগুলো মৃত নদীতেই আজ সাঁতরায় মানুষ, কতগুলো
ভুল মানুষ আর ভুল সম্পর্কের যোগফলই মানুষের প্রাপ্তি
এক-একটি নদী পেরোনোর চে এক-একটি নারী পেরোনো অনেক
ভয়ের কেননা, সাঁতার জানলেই সব নদী পেরোনো যায় না। ’
এরপর আমরা দুজনেই চুপ হয়ে বসে থাকি। সন্ধ্যার চাঁদ ভেসে ওঠে অপরাজিতা নদীতে। নদীটা মস্ত আয়না হয়ে ওঠে আমাদের সামনে।
প্রেমিকার কপালের টিপের মতো কতগুলো জোনাকপোকা দেখি আয়নাজুড়ে। ময়মনসিংহগামী বাসের দলের চিৎকার, ট্রেনের হুইসেল, লোকাল বাসের হেলপারের আওয়াজি গলা, সবকিছু ছাপিয়ে এক মহাজাগতিক নীরবতার দেয়াল উঠে যায় আমাদের চার পাশে। কয়েকটি সিগারেট শেষ করার পর খেলাল করলাম… নদীর জলে একটা সাদা ধবধবে রাজহাঁস গলা উঁচিয়ে সাঁতার কাটছে… হাঁসটাকে যেন আমি চিনি। কবি দেখেন, রাজহাঁস দেখেন… আপনার সেই রাজহাঁস… বলে পাশে তাকাতে দেখি কবি নেই। পানিতে এখন দুটি রাজহাঁস… তাদের পা দিয়ে চাঁদটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
চাঁদ নিয়ে ফুটবল খেলছে তারা… এ দৃশ্য দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ে যায় লাল জিপের ডায়রির জন্য লেখা লিখতে হবে। আপন মাহমুদকে নিয়ে কী লেখা লিখব? সে বিষয় খুঁজে পাই না। শুধু এইটুকু ভাবি মৃত মানুষকে নিয়ে লিখলে কী আর না লিখলেই কী? এতে তার কিছু যায় আসে না। এই চর্চা বন্ধ হওয়া দরকার। যাই বাসায় যাই, কবিকে নিয়ে একটি লেখা লেখি, দেখি কী হয়।
রুপনগর
২২/৯/২০১
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।