বুদ্ধিমত্তা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনি তখনই বুদ্ধিমান যখন আপনার পাশের লোক বোকা !!
আইসিস, পৃথিবীর অধিকর্তা গেব স্বর্গের অধিকর্তী নাট দেবীর চার সন্তানের একজন। আইসিস এবং তাঁর স্বামী অসিরিস ছিলেন জমজ ভাই বোন। তাদের অন্য দুই ভাইবোন নেফথিস এবং তার স্বামী সেথও ছিলেন জমজ। এক রাতে অসিরিস নেফথিসকে তার স্ত্রী আইসিস মনে করে তার সাথে রাত্রি যাপন করে।
যার ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় আনুবিস ।
নেফথিসের স্বামী সেথ ব্যাপারটা স্বভাবতই সহজ ভাবে মেনে নিল না। গোপনে সে ফন্দি আঁটতে শুরু করল কি করে অসিরিসকে হত্যা করা যায়। তার গোপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেথ গোপনে অসিরিসের দেহের মাপ নেয় এবং সেই মাপে একটি সুন্দর কারুকার্য খচিত কফিন তৈরী করে যাতে সেই কফিনে নিখুঁত ভাবে অসিরিসের দেহ এঁটে যায়। একদিন দেবতাদের ভরা মজলিশে সেথ তার কারুকার্য মন্ডিত কফিনটি প্রদর্শন করে এবং ঘোষণা দেয় যে এই কফিন যার দেহের সাথে নিখুঁত ভাবে মানিয়ে যাবে কফিনটি তাকে উপহার দেয়া হবে।
মজলিশের সবাই একে একে তাদের মাপ দেয়ার জন্য যায় কিন্তু কারো সাথেই কফিনটি মিলে না। অবশেষে অসিরিস কফিনের ভেতর যায় এবং তা আবশ্যিক ভাবেই তার সাথে একদম মিলে যায়। এদিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অসিরিস কফিনে ঢোকা মাত্রই সেথ কফিনের ঢাকনা বন্ধ করে দেয় এবং কফিনে বন্দী করে নীল নদে ডুবিয়ে তাকে হত্যা করে। আনুবিসের জন্মের কারণে অসিরিসের মৃত্যুর উপাখ্যানের মাধ্যমেই প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় শেয়াল দেবতা আনুবিস মৃত্যুর দেবতার আসনে আসীন হয়। আর অসিরিসের মৃত্যু হয়ে উঠে নীল নদের বন্যা এবং উর্বরতার প্রতীক।
আর এই বন্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় মৃত্যুর দেব শেয়াল দেবতা আনুবিস।
আনুবিসের সাথে নীল নদের সম্পর্ক জানতে আমার আগের পোষ্ট-
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিহাস এবং একটি ধর্মের সম্ভাব্য বিবর্তন
এদিকে অসিরিসের মৃতদেহ নীল নদে ভেসে ভেসে সিরিয়ার উপকূলে চলে যায়। এবং সমুদ্র সৈকতে তার শবদেহ সহ কফিনটি একটি গাছে পরিণত হয়। যার থেকে বেরুতে থাকে দারুণ সুগন্ধ। এদিকে সিরিয়ার রাজার সেসময় একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে।
রাজা গাছের সুখ্যাতি এবং সুবাসের কথা শুনে তার সন্তানকে উপহারের জন্য গাছটি কেটে এনে প্রাসাদের থাম বানিয়ে রাখে।
এদিকে আইসিস তার স্বামীকে খুজতে বের হয়। নীল নদের ধারে ধারে স্বামীর মৃতদেহ খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে হাজির হয় সিরিয়াতে। সিরিয়াতে উপস্থিত হয়েই আইসিস লোকমুখে সেই আশ্চর্য কারুকার্য খচিত গাছ এবং তার সুবাসের কথা শুনতে পায়। এবং শোনা মাত্রই তার স্থির বিশ্বাস জন্মে এটাই তার স্বামীর মৃতদেহের পরিবর্তিত রুপ।
অবশেষে স্বামীর খোঁজে আইসিস রাজার সন্তানের পরিচারিকা হিসেবে কাজ নেয়। রাজা তার সন্তানের প্রতি আইসিসের মমত্ব দেখে আপ্লুত হয় এবং আইসিসকে তার ইচ্ছা মতো রাজার থেকে পুরষ্কার নিতে বলে। তখন আইসিস সেই সুগন্ধী গাছের থামটা চেয়ে নেয়। তারপর সেই থাম নিয়ে রাজকীয় নৌকায় চড়ে আইসিস মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে আইসিস সেই গাছের থামের সাথে মিলিত হয় এবং তাদের এই মিলনের ফলে জন্ম নেয় দেবতা হোরাস ।
তুলনামূলক মিথ তত্ত্বে হোরাসকে প্রাচীন মিশরের যীশুও বলা হয়। যে প্রাচীন মিশরের কুমারী মাতা আইসিসের পুত্র। বিস্তারিত-
View this link
ছবি ব্লগঃ
হোরাসকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে মা আইসিস। যেটাই প্রাচীন মিশরের ফারাও সিংহাসনের প্রতীক।
পাখীর বেশে দেবী আইসিস
ডান দিক থেকে আইসিস, অসিরিস এবং হোরাস
শিবু এবং নাট দেবীকে পৃথক করছেন বাতাসের দেবতা শু
নীল নদের মোহনায় আইসিস মন্দির
আইসিস মন্দিরের ভেতরের চিত্র
সবশেষে শিল্পীর কল্পনায় প্রাচীন আইসিস মন্দির
ডিসক্লেইমারঃ ইহা কিঞ্চিত ফাঁকিবাজি মূলক পোষ্ট শরতের আকাশপট, কুমারী মাতা তত্ত্ব এবং সম্ভ্যাব্য বিবর্তনবাদ নিয়ে একটি পোষ্ট লিখতে গিয়ে মনে হল ইউটিউব বন্ধ রয়েছে দু'টি ভিডিও চিত্র ছাড়া পোষ্টটি দেয়া সম্ভব নয় বিধায় সেই পোষ্টের সাথে সম্পর্কিত মিথের একটি কাহিনী লিখে ফেললাম।
আশাকরি ইউটিউব চালু হলে মিথের আংশিক ব্যাক্ষা উপস্থাপন সম্ভব হবে।
** ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট
** সকল লিংকঃ উইকিপিডিয়া
উৎসর্গঃ আছিয়াকে। প্রাচীন মিশরের ইতিহাস থেকে পুনঃ জন্ম নেয়া এক রাণী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মেয়ে। নীল নদের মোহনায় দাঁড়িয়ে সে কি কোন মুসাকে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছে নাকি শুধুই নিজের হাতব্যাগটা ঠিক করছে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।