তারিখঃ ১৪ই এপ্রিল, ২০১০।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক অভিনীত।
শিল্পীদের নাম ও ভূমিকার পরিচয়ঃ
সাঈদুর রহমান----- সাদাত
ফারিয়া রহমান----- মুনিরা
মাজেদ----- সোহেল
কাশেম----- তপু
নাদিয়া----- বৈশাখী
রচনায়ঃ মোঃ সাদাত কামাল
নির্দেশনায়ঃ সোহেল ভাই ও দিপুল ভাই।
নব্বর্ষের বোধোদয়
চরিত্র লিপি
সাঈদুর রহমান----- ধনী ব্যবসায়ী
ফারিয়া রহমান----- সাঈদুর রহমানের স্ত্রী
মাজেদ----- ফারিয়া রহমানের খালাত ভাই
কাশেম----- ফারিয়া রহমানের খালাত ভাই
নাদিয়া----- ফারিয়া রহমানের বোন
প্রথম দৃশ্য
(স্থানঃ ফারিয়া রহমানের গ্রামের বাড়িতে)
[আজ সকালে ফারিয়া তার স্বামী সাঈদুরকে নিয়ে গ্রামের নব্বর্ষের উৎসবে যাবে। তাই ফারিয়া আয়নার সামনে টুলে বসে সাজাগোজা করছে এবং সাঈদুর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
]
ফারিয়া। কই তুমি, ওঠো। রেডি হও।
সাঈদুর। (মুখের উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে, আড়মোড়া দিয়ে) ডাকছো কেনগো?
ফারিয়া।
ভুলে গেলে। আজ না আমাদের নব্বর্ষের উৎসব দেখতে যাবার কথা।
সাঈদুর। কোনো দরকার নেই যাবার। আজ ছুটির দিন, একটু আরাম করে ঘুমতে দাও।
ফারিয়া। (টুল থেকে উঠে এসে সাঈদুরের হাতধরে টেনে তুলবে) আমি রেডী। আর তুমি আরাম করে ঘুমোবে। ওঠো বলছি।
সাঈদুর।
আচ্ছা বাবা। উঠছি উঠছি। রেডি হচ্ছি।
(আস্তে আস্তে পর্দা পড়বে)
দ্বিতীয় দৃশ্য
(স্থানঃ নব্বর্ষের উৎসবে)
[ফারিয়া সাঈদুরকে নিয়ে মঞ্চের বামদিক থেকে প্রবেশ করবে। মাজেদ, কাসেম আর নাদিয়া ডানদিক থেকে প্রবেশ করবে।
সাঈদুর শার্ট-প্যান্ট ইন করে জুতা-টাই পরে থাকবে। আর অন্যরা সবাই পাঞ্জাবি, শাড়ি পরে থাকবে। ]
মাজেদ। আপা-দুলাভাই, কেমন আছেন? আপনাদেরকে নব্বর্ষের শুভেচ্ছা।
সাঈদুর।
তোমাদের সবাইকে নব্বর্ষের অনেক-অনেক শুভেচ্ছা। আমরা ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
মাজেদ, কাসেম, নাদিয়া। ভালো দুলাভাই।
নাদিয়া।
তা দুলাভাই, আপনার পাঞ্জাবি কোথায়? আজকের দিনেও যে আপনি শার্ট-প্যান্ট, টাই-জুতা পরে এসেছেন।
ফারিয়া। তোমাদের দুলাভাই কি আর এসব জানেন? এই প্রথম তিনি কোন নব্বর্ষের উৎসবে এলেন।
কাসেম। সে কি কথা, তাহলে তো দুলাভাই বাঙালি হলো না!
সাঈদুর।
(কোনো কথাই কোন কিছু মনে না করে) তোমাদের কথা ছাড়ো। আজ চলো ব্রেকফাস্টটা একটু স্পেশালভাবে করা যাক। বলো তোমরা, কে কী খেতে চাও? আজ আমি তোমাদেরকে খাওয়াবো।
মাজেদ। দুলাভাই, আজ পান্তা আর ইলিশ মাছ খাব।
তার সাথে ঝাল, পেঁয়াজ আর একটু নুন হলেই চলবে।
ফারিয়া। তোমাদের দুলাভাই পান্তাভাত চেনেন না।
নাদিয়া। দুলাভাই, আপনি বাঙালি কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
সাঈদুর। (রেগে গিয়ে বলবে) আচ্ছা, এক দিনের জন্য বাঙালি সেজে কি লাভ হয় বলতো?
কাসেম। (প্রথমে হেসে-হেসে কথা বলবে। এরপর ধীরে-ধীরে গম্ভীর হয়ে কথা বলবে) কেন দুলাভাই, আপনি কি প্রতিদিন বিদেশী সাজেন? আপনার ভাব, ভাষা, ভালবাসা সবই কি বিদেশী? দেশের রীতিনীতি, সংস্কৃতির অস্তিত্ব না জানলে আপনি তো কোনো মানুষের সাথে মিশতে পারবেননা।
সাঈদুর।
তুমি যা বলতে চাও তা স্পষ্ট করে বলো ?
মাজেদ। দেখুন দুলাভাই, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বাহক এই পহেলা বৈশাখ। এটাই বাঙালির একমাত্র সর্বজনীন, সর্ববৃহৎ এবং অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন।
নাদিয়া। আর দুলাভাই, আমাদের দেশের কৃষিকাজ, সরকারি খাজনা, ব্যবসায়িক লেনদেন সবই বাংলাতারিখ অনুযায়ী হয়।
কাসেম। সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন দুলাভাই, আমরা জাতিতে বাঙালি। আমাদের একটা স্বাধীন নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। বিদেশি সংস্কৃতি আমাদের দেশের সংস্কৃতিটাকে রোগা করে তুলছে। মানুষ তার দেশাত্মবোধ, তার নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে খারাপ সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এইভাবে গোটাজাতি আজ হুমকির সম্মুখীন।
মাজেদ। কাজেই দুলাভাই, আমাদেরকে আবার অন্তত একটা সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। যাতে করে আমরা আবার আমাদের অবস্থানটাকে ফিরে দেখতে পারবো। আর এই সুযোগটা আমাদেরকে এনে দেয় পহেলা বৈশাখ।
নাদিয়া। মাজেদ ঠিক বলেছে দুলাভাই। আসলেই পহেলা বৈশাখের মর্ম আমাদের ব্যক্তিস্বত্তাকে জাগ্রত করে। আমাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে যে, আমরা পারবো আমাদের সংস্কৃতিটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমরা চাই বিশ্ব আমাদের সংস্কৃতিকে অনুসরন করুক, আমরা কেন বিদেশিদের সংস্কৃতি অনুসরন করব?
সাঈদুর।
তোমরা সবাই ঠিক কথাই বলেছ। কিন্তু সবাই কি তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে? তা কি তোমাদের মতো মেনে চলে?
কাসেম। মানবে দুলাভাই, অবশ্যই মানবে। একদিন না একদিন সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেই। কারণ, এটাই যে আমাদের অস্তিত্ব, এটাই বাস্তবতা।
ফারিয়া। তোমরা সবাই এসব কী শুরু করলে?
সাঈদুর। আসলে নব্বর্ষের আনন্দটাকে খুঁজে পেতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল। আমার পাঞ্জাবিটা কোথায় রেখেছো? আর চলো আমরা আজ ইলিশ-পান্তা খাই। আজকে আমার নব্বর্ষের গান গাইতে ইচ্ছে করছে।
নাদিয়া। তাহলে, শুরু করা যাক। এক, দুই, তিন ---
এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো,
তাপস নিঁশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা, দূর হয়ে যাক্ যাক্ যাক্ না
এসো, এসো।
(আস্তে-আস্তে পর্দা পড়বে)
[সমাপ্ত]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।