আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইএসপিএন--খেলার ধারক, খেলার বাহক

ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি কিংবা বাস্কেটবল খেলা যেটাই হোক এখন মাঠের চেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়ায় টেলিভিশনের পর্দা। মাঠ থেকে তুলে টিভি পর্দা পর্যন্ত আনতে পৃথিবীব্যাপী ব্যস্ত চ্যানেলের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু সেরার আসনটি দখল করে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইএসপিএন বা এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড স্পোর্টস নেটওয়ার্ক। ১৯৭৯ সালে যাত্রা করে টিভি নেটওয়ার্কটি। এর পর দর্শকদের জন্য খেলা উপভোগের সেরা জায়গা কেবল মাঠই নয়, ইএসপিএনের পর্দাও।

ওয়েব ম্যাগাজিন গ্র্যান্ট্যল্যান্ডের সম্পাদক বিল সিমন্স ও বর্তমান প্রধান জন স্কিপারের মত নির্বাহীরা চালিয়ে নিচ্ছেন বহুজাতিক এ টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে। খেলার পূক্সক্ষানুপুঙক্ষ তথ্য দর্শকের সামনে তুলে ধরা চ্যানেলটি আজ আর প্রচার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নেই। এখন খেলার নিয়ন্ত্রকও ইএসপিএন। যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের ব্রিস্টলে ১২৩ একর জায়গায় ১৮ টি ভবনজুড়ে দাড়িয়ে ইএসপিনের সদর দফতর । ডিজিটাল সম্প্রচারের জন্য নির্মিত সবচেয়ে নতুন ভবনটির আয়তন ১ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট।

বিশাল ক্যাম্পাসে একটি ফুটবল মাঠও আছে। ওয়াল্ট ডিজনির অন্যতম ইউনিট ইএসপিএনের বার্ষিক রাজস্ব বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এসএনএল ক্যাগানের তথ্যানুসারে চলতি বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮২০ কোটি ডলার। দুনিয়াজুড়ে কর্মী সংখ্যা গত ৭ বছরে দ্বিগুণ বেড়ে ৭ হাজারে দাড়িয়েছে। ইএসপিএনের ব্যাপকতা বুঝা যাবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এর অবস্থান দেখে।

প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র্রের সব ধরনের টিভি চ্যানেল মিলে ৪ ডলার আয় করলে, ১ ডলার যায় ইএসপিএনের পকেটে। ক্যাবল টিভির গ্রাহকরা গড়পড়তা ৫ ডলার ১৩ সেন্ট ব্যয় করেন চ্যানেলটির পেছনে। দর্শক সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। বার্ষিক বিজ্ঞাপণ রাজস্ব ২০০ কোটি ডলার। আগামী বছর আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯০০ কোটি ডলার।

১৯৭৯ সালে পর্দা ওঠে ইএসপিএনের। এর পর মাঠ থেকে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের ক্যামেরা। যেখানেই খেলা, সেখানেই ইএসপিএন। তার পর থেকে ক্রমেই ফুলে ফেপে উঠছে ইএসপিএন। গণমাধ্যমের বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে খেলার সম্প্রচার পরিণত হয়েছে সেরা বিনোদন মাধ্যমে।

হাজারো স্ক্রিণ, সর্বদ্রষ্টা ক্যামেরা, অসীম ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, তথ্য জমিয়ে রাখার সুবিধা- সব মিলে মাঠে না বসে, মাঠের চাইতে বেশি উত্তেজনা পাওয়া যায়। ইএসপিএন শুধু টিভিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ইন্টারনেট ও সেলফোন আজ গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যম। রেডিও ব্যবহারের দিনও এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো টুর্নামেন্টের প্রচারস্বত্ব ইএসপিএনের কাছে।

এর মধ্যে অন্যতম ন্যাশনাল ফুটবল লীগ, মেজর লীগ বেসবল, ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন, গ্র্যান্ডস্লাম টেনিস, মেজর লীগ সকার, গাড়ী রেসিং টুর্নামেন্ট নাসকার, গলফ ইউএস ওপেন, ব্রিটিশ ওপেনসহ আরও কত কী। যুক্তরাষ্ট্রে যতগুলো খেলা সরাসরি টিভি পর্দায় দেখানো হয়, তার অর্ধেকের বেশি দেখায় ইএসপিএন। জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটির ইএসপিএন সূচিত চ্যানেল সংখ্যা ডজনের বেশি। ইএসপিএন, ইএসপিএনটু, ইএসপিএননিউজ, ক্লাসিক, প্লাস, লংহর্ন নেটওয়ার্কসহ আরও অনেক। টুর্ণামেন্টগুলো কখন, কোথায় আয়োজন করা হবে- তার অনেকের নিয়ন্ত্রনও মাঝে মাঝেই বর্তায় ইএসপিএনের কাধে।

কাজেই খেলা প্রচারের একটি চ্যানেল হিসাবে আখ্যায়িত করলে ইএসপিএনকে খাটো করে দেখা হয়। বলা উচিত খেলা নিয়ন্ত্রন করে তারা। শতকোটি ডলার বিনিয়োগ করলেই কেউ লাভের নিশ্চয়তা পেতে পারেন না। কিন্তু ইএসপিএনের একাধিক প্রচার মাধ্যম থাকায় তাদের লাভ প্রায় নিশ্চিত। একই টুর্নামেন্টের ফুটেজ শুধু টেলিভিশনে প্রচার করাই সীমিত নয়।

তা দেখানো হয় ইন্টারনেট ও সেলফোনে। যেমন, গত ২৮ আগস্ট তারা যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লীগ বাস্কেটবল টুর্ণামেন্টের প্রচার স্বত্ব কেনে ৫৬০ কোটি ডলারে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত টুর্ণামেন্টের টেলিভিশন প্রচার, রেডিও স্বত্ব, আন্তর্জাতিক স্বত্ব, সীমাহীন হাইলাইটস প্রচারের সুবিধা সবই আদায় করে নিয়েছে ্ইএসপিএন। সবচেয়ে বড় কথা, এ সব ফুটেজ প্রচার করা হবে সেলফোনেও। এ ব্যাপারে ইএসপিএনের প্রোডাকশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নরবি উইলিয়ামসন বলেন, ‘আপনি সেই জিনিসকেই সম্পদ বলতে পারেন যা আপনাকে আরও সম্পদ এনে দিবে।

’ গেটি অয়েলের বিনিয়োগে বিল রাসমুসেনের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে ইএসপিএনের যাত্রা। শুরুর দিকে কয়েকটি স্টুডিও অনুষ্ঠান দেখানো হত। পরে বাড়তে থাকে সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচারের মাত্রা। ৯০ দশকের শুরুতে চ্যানেলটিতে যোগ হয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান স্পোর্টসসেন্টার। এর মাধ্যমে জনপ্রিয় টিভি ব্যাক্তিত্বে পরিণত হন ক্রেইগ কিলবর্ন ও কিথ ওবারম্যান।

বলা হয় এ অনুষ্ঠানের দেখানো পথেই তৈরি হয় এবিসি টেলিভিশনে অ্যারন সরকিনের স্পোর্টস নাইট। ইএসপিএন, ইএসপিএনটু, ইএসপিএননিউজ ও ইএসপিএনথ্রিসহ সবগুলো চ্যানেলে দৈনিক ১৮ টি স্পোর্টস সেন্টার প্রচার করা হয়। ৫০ জন নির্বাহী অনুষ্ঠানটির জন্য কাজ করেন। সারাদিনের খেলাধুলার খোঁজ খবরকে ঠেসে ১ ঘন্টার অনুষ্ঠানে হাজির করেন তারা। ইএসপিএনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কনটেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন স্কিপার।

স্পোর্টস সেন্টারের জন্যও কাজ করেন তিনি। তার মতে ইএসপিএনের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ প্রচারস্বত্ব। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিতে মাস্টার্স করেন তিনি। এর পর জনপ্রিয় সাময়িকী রোলিং স্টোনে যোগ দেন। ইএসপিএনের ম্যাগাজিনের জন্য কাজ শুরু করেন ১৯৯৮ সালে।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটটির পিছনেও তার ভুমিকা অনেক। খেলার রাজ্যে অনলাইন রাজাও এখন ইএসপিএন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ইএসপিএন কনটেন্ট বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ শুরু করেন। তার হাত ধরেই কয়েকটি বড় বড় টুর্ণামেন্টের প্রচারস্বত্ব দীর্ঘদিনের জন্য ইএসপিএনের ঝুলিতে। এগুলো- ২০২১ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ফুটবল লীগ, ২০২১ পর্যন্ত মেজর লীগ অব বেসবল, ২০১৬ পর্যন্ত ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন, ২০১৩ পর্যন্ত গাড়ীর দৌড় নাসকার ও ২০২৩ পর্যন্ত উইম্বলডন।

স্পোর্টসসেন্টারের মত অনেক অনুষ্ঠান নিয়ে সফলতা থাকলেও, স্কিপারের কাছে খেলার সরাসরি সম্প্র্রচারই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে রাজস্ব আয়ে এর বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ইএসপিএনের বড় পার্থক্য সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর যোগ্যতা। ইন্টারনেট ও সেলফোনে টেলিভিশনের মতই সক্রিয় তারা। এসব প্ল্যাটফর্মে জুন পর্যন্ত ব্যবহারকারী আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।

এর মধ্যে সেলফোনে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে বেশি গতিতে। এখন সেলফোনে খেলাধুলা সম্পর্কে যত কনটেন্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি হয়, তার ৭০ শতাংশই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। এর সর্বশেষ সংস্করণ ‘ওয়াচইএসপিএনে’র মাধ্যমে যে কোন জায়গা থেকে ইএসপিএনের অনুষ্ঠান দেখা যায়। অ্যাপ্লিকেশনটি এ পর্যন্ত ডাউনলোড করা হয়েছে কোটিবারেরও বেশি। তবে সেলফোনে এখনো খুব বেশি বিজ্ঞাপণ দেখানো হচ্ছে না।

এটা নাকি ইএসপিএনের ব্যসায়িক কৌশলেরই অংশ। ইএসপিএন নামকরা কয়েকজন ক্রীড়া সংাবাদিকেরও জনক। তাদের মধ্যে অন্যতম ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক কলামিস্ট মাইকেল উইলবন ও রিক রেইলি। সব খাতেই মেধাবী নির্বাহী নিয়োগের জন্য সচেষ্ট ইএসপিএন। ২০০১ সালে স্কিপার নিয়োগ দিয়েছিলেন ইএসপিএন ডট কমের কলামিস্ট বিল সিমন্সকে ।

তিনি এখন ইএসপিএনের অন্যতম পাওয়ার হাউস। কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে বিল সিমনস বলেন, আমরা কাউকে নিয়ে চিন্তা করি সে টিভি, রেডিও, ইন্টারনেট বা কোন প্ল্যাটফর্মে ভালো করবে। বিল সিমন্সের কলাম পড়া ও পডকাস্ট ডাউনলোড করা ইএসপিএন ভক্তদের দৈনিন্দন কাজ। তিনি ১৬ জন পূর্ণকালীন ও ১২ জনের বেশি ফ্রিল্যান্সার নিয়ে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির কাজ করেন। যেগুলো পরিচালনা করেন ব্যারি লেভিনসন ও আইস কিউব।

ডট কম বিভাগের জন্যই বেশি কাজ করলেও ইএসপিএনে সিমন্সের অবদান অনেক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা ক্রীড়া কলামিস্ট। তার ‘স্পোর্টস গাই’ কলাম পড়তে প্রতি মাসে সাড়ে ৭ লাখ পাঠক ইএসপিএনের সাইটটে ঢু মারেন। তার ‘বি এস রিপোর্ট’ পডকাস্ট ডাউনলোড করা হয় মাসে ৬ লাখ বার। তিনি ওয়েব বিত্তিক ম্যাগাজিন গ্রান্টল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক।

ইএসপিএনের ‘থার্টি ফর থার্টি’ ডকুমেন্টারির নির্বাহী প্রযোজকও তিনি। অনুষ্ঠানটি তাকে ‘পিবয় অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। রেডিও-টেলিভিশনের নির্বাহীদের দেওয়া হয় এ পুরষ্কার। এ বছরের শুরুতে ইএসপিএনকে সাক্ষাতকার দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তখনও গুরু দায়িত্বটি পালন করেন সিমন্স।

কয়েকদিন আগের এক শুক্রবার দুপুরে ইএসপিএনের সাইটে ভিজিট করা ১ লাখের মধ্যে ৬০ হাজারই বিল সিমন্সের কলাম পড়ছিলেন। কাজেই এত জনপ্রিয় একজন কলামিস্ট যখন স্কিপারের কাছে অনলাই ম্যাগাজিন ‘গ্র্যান্টল্যান্ডে’র প্রস্তাব নিয়ে আসলেন, তা জন স্কিপার ফিরিয়ে দেয়ার মোটেও সুযোগ ছিল না। সিমন্স সোজাসাপ্টা স্কিপারকে বললেন- ‘আমি ইএসপিএনে না থাকলেও এমন কিছু করার পরিকল্পনা করছিলাম। আপনি যদি এ ব্যাপারে রাজি না থাকেন, সমস্যা নেই। আমার মন খারাপ হবে না।

তবে আমি পরিকল্পনা অন্যভাবে বাস্তবায়ন করব। ’ এভাবেই গতবছরের জুনে গ্র্যান্টল্যান্ডের যাত্রা। নামকরণটি করা হয় প্রয়াত ক্রীড়ালেখক গ্র্যান্টল্যান্ড রাইসের নাম অনুসারে। সাইটটির কনটেন্টে খেলার সঙ্গে যোগ হয় যুক্তরাষ্ট্রের পপ সংস্কৃতি। গ্র্যান্টল্যান্ডের চারটি ছাপানো সংস্করণও আছে।

এভাবেই ক্রীড়ামোদীদের ক্ষুধা মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে ইএসপিএন। স্কিপার বলেন, ‘আমরা ভক্তদের চমক দিয়ে যেতে চাই। এ কাজে আমরা অন্য যে কারো চেয়েই পটু। বিশেষ করে গ্র্যান্টল্যান্ডের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হয়েছিল। কারন আমি বন্ধু সিমন্সকে খুশি দেখতে চাই।

’ অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক, ইএসপিএনের সাংবাদিক ভুমিকা নিয়ে তোলা প্রশ্ন নতুন নয়। এ ব্যাপারে স্কিপার বলেন, যারা অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপণা করেন, তারা যথাযথ তথ্যই সরবরাহ করেন। ইএসপিএনের প্রতিটি জায়গায় যার অবাধ বিচরণ সে ব্যাক্তি একমাত্র আমি। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়িক স্বার্থে কোন তথ্যই পরিবর্তন করা হয়নি। গণমাধ্যম পর্যবেক্ষকরা ইএসপিএনের যথেষ্ঠ সমালোচনা করছেন।

সমালোচনার অন্যতম কারন, কিছুদিন আগে ন্যাশনাল ফুটবল লীগে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু যৌনহয়রানির একটি ঘটনার খবর দেরিতে প্রকাশ করে ইএসপিএন। একইভাবে খেলোয়াড়দের ইনজুরির কথাও দেরিতে প্রকাশ করে তারা। অভিযোগের জবাবে স্কিপার বলেন, আমরা কোন ঘটনাই ভিন্নভাবে দেখিনি। অন্য যে কোন বার্তা সংস্থার মতই আমরা এগুলোর খবর প্রচার করি। অনেকে আমাদের সমালোচনা করেন, কারন আমরা সেগুলো সরাসরি প্রচার করিনি।

বিতর্ক এড়াতে ২০০৪ সালে তুমুল জনপ্রিয় টিভি শো ‘প্লেমেকার’ বন্ধ করে দেয় ইএসপিএন। প্লেমেকারে ন্যাশনাল ফুটবল লীগকে (এনএফএল) নেতিবাচকভাবে দেখানো হয় বলে ডিজনির সিইও মাইকেল এইনারের কাছে অভিযোগ করেন ততকালীন টুর্নামেন্ট কমিশনার পল ট্যাগলিয়াবিউ । এ ব্যাপারে ইএসপিএনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বডেনহেইমার ইএসপিএন নিয়ে লেখা বই ‘দিজ গাই হ্যাভ অল দ্যা ফান’ এ মন্তব্য করেন, যে বিষয় আমাদের অংশীদারকে বিব্রত করে, আমরা সে অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে চাই না। ’ ইএসপিএনের এখনকার ব্যবসায়িক অংশীদাররা দারুন খুশি। কারণ চ্যানেলটির খবর এবং খেলার প্রচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা।

ন্যাশনাল বাস্কেবটবল অ্যাসোসিয়েশন কমিশনার স্টার্ন বলেন, ইএসপিএেনর বিভাগ দুটি এখন সত্যিই আলাদা। আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাভারেজ ইএসপিএনের থেকেই পাই। এমনকি বিল সিমন্সের আভাস পা হড়কালেও আমরাও ইএসপিএনের সঙ্গেই আছি। সিমন্স বলেন, যে কোন পরিস্থিতিতে কোম্পানির জন্য নিজেকে গুরুত্বপূর্ন ভাবতেই পছন্দ করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘প্রভাবশালীদের একজন হিসাবে আমি প্রতিযোগিতায় থাকতে চাই।

নিজেদের বিজয়ী দেখতে চাই। আমার শুরুর দিকে আমি আমার কলামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। এখন উপলব্ধি করি আমি ইএসপিএনের অংশ। ’ তার মতে, ইএসপিএনে সুযোগ অনেক বেশি, অন্য যে কোন মিডিয়া ব্যবসার চেয়ে বেশি ঝুকি নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তার ভাষায়, ‘আসলে আমাদের যথেষ্ঠ অর্থ আছে, কর্মীরাও দক্ষ, আপনি যদি খেলাধুলার স্মার্ট ভক্ত হোন, ইএসপিএনই আপনার জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম।

’ আবারও আসা যাক স্পোর্টস সেন্টারের ব্যাপারে। এর গ্রহনযোগ্যতা কীভাবে ধরে রাখা হচ্ছে। হাইলাইট ম্যানেজার টম ম্যাকার্টারকে জিজ্ঞাসা করা হয় এ ব্যাপারে। তিনি বলেন, ‘ভালো মানের অনুষ্ঠানের জন্য ভালো কর্মী গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর প্রোডাকশনে কাজের জন্য হাজার হাজার আবেদনপত্র পাই আমরা।

এখান থেকেই বাছাই করা হয় যোগ্য কর্মী। তিন বছর অন্যান্য বিভাগে কাজ করার পর স্পোর্টস সেন্টারে কাজের সুযোগ পান আগ্রহীরা। প্রযোজক টিমথি ম্যাকহিউ বলেন, মেধার মূল্যায়নে কার্যকর উপায় এটা। খেলার মাঠ ছাড়াও যেখানেই খেলা সম্পর্কিত ঘটনা, সেখানেই ইএসপিএনের ক্যামেরা। ইএসপিএনের পেশাগত দক্ষতার ব্যাপারে জেমস অ্যান্ড্রু মিলার ‘দিস গাইজ হ্যাভ অল দ্যা ফান’ বইতে বলেন, তারা অবিশ্বাস্য রকমের বেপরোয়া।

তারা সব সময়ই বড় কিছু করার পিছনে ছোটে, ব্রিস্টল দফতরের সম্পূর্ন মনোযোগ কাজের প্রতি। আসলে, আপনি যদি ইএসপিএনের কর্মী হয়ে থাকেন, আপনি কখনোই ইএসপিএেনর সঙ্গে ডেটিংয়ে যেতে পারবেন না। এর সঙ্গে বিয়ের মত বন্ধনে জড়িয়ে থাকতে হবে আপনাকে। ’ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে এটা অনেক বড় পার্থক্য। এনবিসি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক কিংবা ফক্স অনেক জনপ্রিয় টুর্ণামেন্টের প্রচার স্বত্ব কিনছে।

তার পরও ইএসপিএনকে টলাতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। এনবিসি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক গ্রাহকপ্রতি চার্জ নেয় ৩১ সেন্ট। আর ইএসপিএন নেয় ৫ ডলার ১৩ সেন্ট। এ অবস্থায় ইএসপিএনের চার্জ কমাতে গ্রাহকরা জেদাজেদি শুরু করতেই পারেন । এটা হয়তো সম্ভব তবে সহজে নয়, এ ব্যাপারে ক্রীড়া সাংবাদিক ও ইএসপিএনের অংশীদার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ক্রিস বেভিলাকোয়া বলেন, ইএসপিএনকে হঠাতে গেলে তাদের অসংখ্য ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে নতুন করে সখ্যতা করতে হবে।

ইএসপিএনের জন্য ঝুকির বিষয় হতে পারে- অনেক বেশি খেলার প্রচারস্বত্ব নেয়ার পর তা থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব করতে না পারা। স্কিপার বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বড় পার্থক্য অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম; যার মধ্যে রয়েছে প্রিন্ট, রেডিও, টেলিভিশন সম্প্রচার, ক্যাবল, ইন্টারনেট ও সেলফোন অ্যাপ্লিকেশন। এখন পর্যন্ত আমাদের এমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই যারা সব খাতেই তাদের কাজের আওতা সমান ভাবে বাড়াতে পেরেছে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।