আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রোবায়োটিক: জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের এক অজানা বন্ধু। জেনে নিন সেই বন্ধুর উপকারের কাহিনী

সবার ভালোবাসায় ঢাকায় আজকের এই আমি পিএইচ ডি করার জন্য একটা রিচার্স প্রোপোজাল নিয়ে ভাবতেছিলাম বেশ কিছু দিন ধরে নেটে হাজার রকমের টপিকের ভিড়ে একটা বিষয়ের উপর হঠাৎ চোখ স্থির হয়ে গেলো। বিষয়টি হলো প্রোবায়োটিক, যা নিয়ে বতর্মানে ব্যাপক বানিজ্য হচ্ছে আমাদের দেশে। বাজারে সয়লাব হওয়া অনেক খাদ্য পণ্য আছে যারা নির্বিবাদে দাবি করে যাচ্ছে তাদের পণ্যটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ। আদতে সেই সব খাদ্য পণ্যে আদও প্রোবায়োটিক আছে কিনা তা সঠিক কেউ বলতে পারবেনা। গত মাসে নিজের একটা কাজে কিছু প্রোবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার দরকার হয়ে পড়েছিল আমি বাজার থেকে একটা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ স্যালাইন কিনে অনেক চেষ্ট্রা করেও প্রোবায়োটিক আলাদা করতে পারি নাই।

যাই হোক মূল কথায় আসি, অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেছিলাম, প্রোবায়োটিকের সাইড এফেক্ট নিয়ে প্রপোজাল লিখব, কিন্তু বিধিবাম নেটে অনেক সার্চ দিয়েও উল্লেখ করার মত সাইড এফেক্ট পেলাম না (অতি রোগাক্রান্ত রুগির ক্ষেত্রে এই প্রোবায়োটিক গুলার কিছু সাইড হলেও হতে পারে)। এত বেশি উপকারী হতে পারে যে এই ব্যাক্টেরিয়া গুলো(যা প্রোবায়োটিক নামে পরিচিত) আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। মানব দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ন রোগ যেমন ইউরিনারি ইনফেকশন, ইউরোজেনিটাল ইনফেকশন, ভেজাইনাল ঈস্ট ইনফেকশন, ডায়ারিয়া, কলেরা, অটোইমুনো ডিজিজ এমনকি অনেক ধরানের ক্যানসার প্রোবায়োটিক দিয়ে যে কোন সাইড ইফেক্ট ছাড়া ট্রিটমেন্ট করা যায়। প্রোবায়োটিক আসলে কি? প্রোবায়োটিক শব্দ টি এসেছে গ্রীক ওয়ার্ড Pro থেকে যার অর্থ হল বেগবান করা আর Biotic মানে হলো জীবন সারমর্ম হলো জীবন বেগবানকারী। ঐ সকল ব্যাকটেরিয়াকে আমরা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বলি যারা মানুষের সুস্থ জীবন ধারনের জন্য অনবদ্য ভুমিকা পালন করে।

কিছু প্রোবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার তালিকা Lactobacillus bulgaricus, Lactobacillus plantarum, Lactobacillus rhamnosus, Lactobacillus casei, Bifidobacterium, Bacillus infantis, Streptococcus thermophillus, Enterococcus faecium. প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলা সাধারনত দুই ট্র্যাকে আমাদের উপকার করে থাকে প্রথমত এই ব্যাকটেরিয়া গুলা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে কাজ করে, আমাদের সুস্থ দেহে সাধারনত উপকারী ও অপকারী ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে একটা ব্যালেন্স বজায় থাকে। অপকারী ব্যাক্টেরিয়া গুলো প্রভাব বিস্তার করে তখনেই যখন আমরা অপুষ্টিকর খাবার, ঘুমের অনিয়ম, মানসিক চাপ, অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিক সেবন করি। এই অপকারী ব্যাক্টেরিয়া গুলো যখন আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার চেয়েও বেশি পরিমানে থাকে তখন ডায়েরিয়া, দূর্বলতা, ইউনারি ইনফেকশন সহ নানান জটিলতার সৃস্টি হয়। আমরা যদি পরিমিত এই প্রোবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার খাই তাহলে ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকের অনেক অসুখ থেকেই আমরা রেহাই পেতে পারি। দ্বিতীয়ত হলো এরা আমাদের ইমুনো সিস্টেম শক্তিশালী করনের গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে, বিশেষ করে ন্যাচারাল কিলার সেলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে এই সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলে ফলে অটোইমুনো ডিজিজ থেকে হোস্ট খুব সহজে রক্ষা পায়।

Bacillus infantis তো সাইটোকাইনস উৎপন্ন করে সরাসরি Salmonella, Shigella, Clostridia এর মত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া গুলাকে হত্যা করে। যে ভাবে এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়তেসে তাতে করে অনেক এন্টিবায়োটিক এক সময় অকার্যকর হয়ে যাবে, বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা প্রোবায়োটিক ট্রিটমেন্টের উপর জোর দিচ্ছেন। জন্মের সময় মায়ের বার্থ ক্যানেল হতে এই আজন্ম বন্ধু ব্যাক্টেরিয়া গুলো আমাদের দেহে সন্চারিত হয়ে থাকে। সিজারিয়ান বেবিরা অবশ্য এই সুযোগ থেকে বন্চিত হয়। যার ফলে সিজারিয়ান বেবিরা অনেক রকমের এলার্জিক রোগ ভোগ করে।

নিয়মিত যেসকল খাবর খেয়ে খুব সহজে আমরা এই সকল ব্যাক্টেরিয়া গুলাকে পেতে পারি সেগুলো হলো যে কোন দুগ্ধ জাত পণ্য যেমন পনির, ইউগার্ট, দধি, দুধ ইত্যাদি। আমরা চাইলে নির্দিষ্ট রোগের জন্য প্রকৃতি থেকে নির্দিষ্ট প্রোবায়োটিক আলাদা করে বাজারজাত করতে পারি, এতে করে দেশের চিকিৎসা ব্যায় অদূর ভবিষ্যতে অনেকাংশেই কমে যাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।