'জীবন' হলো এক কাপ গরম চা আর একটা জ্বলন্ত বেনসনের মতো। গরম চা একসময় জুড়িয়ে যাবে, বেনসনের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। এবারের অষ্টগ্রাম যাওয়াটা ছিল অনেকটা জোর করেই। কিশোরগঞ্জ শহরে গিয়েছিলাম যথারীতি অফিসের কিছু কাজ হাতে নিয়ে। প্রজণ্ড ব্যাস্ততার মাঝেও ভুলতে পারিনি শেষ বারের অষ্টগ্রাম ট্যুরের কথা; যেবার খুব ভোর বেলায় ফজরের ওয়াক্তে গিয়েছিলাম কুতুবশাহী মসজিদটি দেখার জন্যে।
সেবার ভোরের লঞ্চ ধরে কুলিয়ারচর হয়ে কিশোরগঞ্জ শহরে ফেরার তাড়া ছিল বলে বেশি সময় থাকতে পারিনি প্রাচীন এই মসজিদটিতে। আর আলোর স্বল্পতার কারণে মন ভরে ছবিও তোলা হয়ে ওঠেনি সেবার।
সেই অপূর্ণতা পূরণের উদ্দেশ্যেই এবার কাজের শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে নিলাম অষ্টগ্রাম যাবার জন্যে। তবে বরাবরের মতো কুলিয়ারচর হয়ে না গিয়ে বাজিতপুর ঘাটকেই বেছে নিলাম। কুলিয়ারচর থেকেও গতবারের মতো ভোরের লঞ্চে যাওয়া যেত।
কিন্তু সহকর্মী সাব্বির ভাই বললেন, তাঁর নাকি ট্রলারে চড়ার শখ হয়েছে। তাই বাজিতপুর ঘাট থেকেই ট্রলার রিজার্ভের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, কারণ বাজিতপুর থেকে তাড়াতাড়ি অষ্টগ্রাম পৌঁছানো যাবে।
কাক ডাকা ভোরে কিশোরগঞ্জ শহর থেকে রওনা হলাম বাজিতপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে। সেখানে আগে থেকেই ট্রলার রিজার্ভ করা ছিল। লাইফ জ্যাকেট সাথে নিয়ে উঠে পড়লাম ট্রলারে।
শুরু হলো আমাদের অষ্টগ্রাম যাত্রা।
বাজিতপুর ঘাট থেকে অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে আমাদের ট্রলার যাত্রা
বিচ্ছিন্ন এ গ্রাম আর তার মানুষগুলো এভাবেই বেঁচে আছে
ওই যে, দূরে দেখা যাচ্ছে অষ্টগ্রাম!
আগেই বলেছি যে, এবারের অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যটাই ছিল কুতুবশাহী মসজিদ দেখা। সুতরাং সকালে পৌঁছানোর পর দেরী না করে রিক্সা করে সোজা পৌঁছে গেলাম কালের কিংবদন্তী কুতুবশাহী মসজিদের কাছে।
কালের কিংবদন্তী কুতুবশাহী মসজিদ
কুতুবশাহী মসজিদ
কুতুবশাহী মসজিদের একাংশ
কাছ থেকে দেখা কুতুবশাহী মসজিদ
মসজিদের দেওয়ালে প্রাচীন মোগল স্থাপত্যের কারুকার্য
আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে কুতুবশাহী মসজিদ
কুতুবশাহী মসজিদ
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় ১৭০০ শতাব্দীতে নির্মিত প্রাচীন এই মসজিদটিতে সুলতানী এবং মোগল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। বিখ্যাত দরবেশ কুতুব শাহ-এর নামে এই মসজিদটির নামকরণ করা হয় যাঁর কবর এই মসজিদটির পাশেই অবস্থিত।
অসংখ্য কারুকার্য সংবলিত পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটিকে ১৯০৯ সালে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কুতুবশাহী মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কুতুবশাহী মসজিদ
কুতুবশাহী মসজিদ
কুতুবশাহী মসজিদ
মসজিদের ভিতরের একাংশ
দুপুরে অষ্টগ্রামের নাজির হোটেলে লাকড়ির চুলায় রান্না করা দেশী মুরগী, গরম ভাত আর মাসকালাই -এর ডাল পেট পুরে খেয়ে রওনা দিলাম বাজিতপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে।
না বলা কথা:
১. কুলিয়ার চর থেকে অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে সকাল ৬ টা (ভাড়া জনপ্রতি ৮৫ টাকা), ৮ টা, দুপুর ১২.৩০ এবং ২ টা (ভাড়া জনপ্রতি ৬৫ টাকা)।
২. অষ্টগ্রাম থেকে কুলিয়ারচরের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে ভোর ৪.৩০ থেকে সকাল ১১ টা পর্র্যন্ত
৩. অষ্টগ্রাম ডাক বাংলোতে থাকতে হলে কেয়ারটেকার রঞ্জনকে ফোন করুন: ০১৭১০২৯১২২৫
৪. বাজিতপুর থেকে অষ্টগ্রাম যাবার জন্যে ট্রলার ভাড়া করতে হলে ট্রলারের মাঝিকে ফোন করুন: ০১৭৬২৩৯২০৫৩
৫. বাজিতপুর হয়ে অষ্টগ্রাম যাবার জন্যে (সারাদিনের জন্যে রিজার্ভ) ট্রলার ভাড়া পড়বে ১৫০০-১৬০০ টাকা
৬. কুলিয়ারচর হয়ে অষ্টগ্রাম যাবার জন্যে (সারাদিনের জন্যে রিজার্ভ) ট্রলার ভাড়া পড়বে প্রায় ৩০০০ টাকা
৭. কিশোরগঞ্জ শহরে থাকার ভালো হোটেলের ফোন নম্বরের জন্য এখানে ক্লিক করুন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।