বুকের ভেতর বহু দূরের পথ... ছবিব্লগ: সাগরকন্যা কুয়াকাটা (১ম পর্ব)
কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। তাই ১৮ কিমি দীর্ঘ এই সৈকতটি বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ! আমরা যখন কুয়াকাটায় গেলাম তখন ভরা পূর্ণিমা। এরই মাঝে একদিন ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামলো। সূর্যাদয় দেখতে গিয়ে তাই মেঘের চোখ রাঙানি দেখতে হলো। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে না পারলেও প্রকৃতি আমাদের যে রূপ দেখালো তাতেই আমরা বিমুগ্ধ!
লাল কাঁকড়া দ্বীপ।
কিন্তু লাল কাঁকড়ার দেখা মিললো না
কাঁকড়ার পরিবর্তে পেলাম প্রচুর শামুকের খোলস
অন্য একটি চরে গিয়ে লাল কাঁকড়ার দেখা পাওয়া গেলো
গঙ্গামতির চর
ম্যানগ্রোভ
প্রচলিত আছে এটি অনেক পুরনো একটি নৌকার ধ্বংসাবশেষ যার নাম স্থানীয়দের কেউ বলে সোনারতরী কেউ বলে আগুনমোহনা। সোনালী আভা ছড়ানোর কারনে এর নাম আগুনমোহনা এবং এ নামটিই বেশি প্রচলিত
সুন্দরবনের শেষ সীমানা!
সমুদ্রবিলাস
সূর্যাস্ত
পূর্ণিমা
দিনের আলো তখন পুব দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে কিন্তু চাঁদের চোখে তখনও ঘুম নেই
আকাশে আজ আগুন লেগেছে। সূর্যোদয়ের সময়...
ঐ যে সূয্যি মামার দেখা পাওয়া যায়!
ভোরের আলো ফুটলো বলে..
যেভাবে যাবেন:
** ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ৩৮০ কিমি। ঢাকা থেকে দুইটি উপায়ে কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। বাস অথবা লঞ্চ।
সদরঘাট থেকে বিকেল বেলা বরিশালের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লঞ্চ ছেড়ে যায়। তারপর বরিশাল থেকে বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। আমরা বাসে করে গিয়েছিলাম। টেকনিক্যাল থেকে রাত সোয়া নয়টায় সাকুরা পরিবহনের সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ৭০০টাকা।
প্রতিদিন সাকুরা পরিবহনের এই একটা বাসই সরাসরি কুয়াকাটা যায়। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে অনেক বাস সার্ভিস আছে। এগুলো মাওয়া হয়ে যায়। সাকুরা যায় আরিচা মহাসড়ক হয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে। সম্প্রতি সাকুরা পটুয়াখালি পর্যন্ত এসি বাস সার্ভিস চালু করেছে।
কুয়াকাটা থেকে সাকুরা পরিবহনে সরাসরি ঢাকা ফিরতে চাইলে সন্ধ্যা সাতটায় দিনের একমাত্র গাড়িতে চড়ে বসতে হবে। সেজন্য কুয়াকাটা গিয়েই ফেরার টিকেট কেটে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে আরো কিছু বাস সার্ভিস পাবেন কিন্তু কোনটাই সকাল বেলায় কুয়াকাটা থেকে ঢাকা ফিরবেনা। সবগুলো সার্ভিস বিকেল-সন্ধ্যা বা রাতে। সকালে ফিরতে চাইলে লোকাল বাসে করে বরিশাল পর্যন্ত আসতে পারেন।
তারপর বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার অনেক ভালো বাস পাবেন। তবে লোকাল বাসে করে কুয়াকাটা থেকে বরিশাল আসাটা বিশাল ঝক্কির ব্যাপার।
** কুয়াকাটায় আমরা মোটামুটি বেশ কিছু হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেছি। হোটেল রাজধানী, হোটেল আপ্যায়ন, হোটেল তরঙ্গ। খাবারের মান সবগুলোতে মোটামুটি একরকম।
বেশিরভাগ সময়েই আমরা শুটকি, ইলিশ মাছ আর ইলিশ মাছের ডিম খেয়েছি । কুয়াকাটায় খাবারের দাম বেশ চড়া।
** ফাতরার চর যেতে ট্রলার ভাড়া করতে হবে। আমাদের ভাড়া পড়েছিলো মাথাপিছু ১০০টাকা। তবে সমুদ্র উত্তাল থাকলে ফাতরার চরে যাওয়া যাবেনা।
** সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ, গঙ্গামতির চর, ঝাউবন, কাউয়ার চর, মিশ্রীপাড়া, রাখাইন পল্লী, শুটকিপল্লী ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য মোটর সাইকেলের বিকল্প নেই। আমরা একেকটা মোটর সাইকেল ভাড়া করেছিলাম ৫০০টাকায়। প্রতি মটর সাইকেলে দুইজন করে।
** কুয়াকাটায় থাকার জায়গা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। বেশ ভালো মানের কিছূ হোটল আছে।
যেমন হোটেল গ্রেভার ইন, নীলাঞ্জনা ইত্যাদি। এছাড়া সস্তায় আরো অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। সমুদ্রের কাছাকাছি কোন হোটেলে থাকাই শ্রেয়।
** বারবিকিউ করতে চাইলে কলিম বাবুর্চির খোঁজ করবেন। কুয়াকাটা বীচে একমাত্র কলিম বাবুর্চিই বারবিকিউ আয়োজন করে দেয়।
আমরা দেড় কেজি ওজনের তিনটা মুরগী কিনে দিয়েছিলাম। কলিম এক হাজার টাকায় বীচে সব অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছিলো।
** কুয়াকাটা ঘুরাঘুরি বেশ ব্যয়বহুল। জনপ্রতি আমাদের প্রায় ৪০০০ টাকা খরচ হয়েছে। তবে একটু কিপ্টেমি করলে ৩০০০-৩৫০০টাকায় ঘুরে আসা সম্ভব।
_____________________________________________
কুয়াকাটা ট্যুরে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে ব্লগার সাজিদ ঢাকা ।
সাজিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।