আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামচর্চা, সাম্প্রদায়িকতা এবং ইসলামভীতি.।.।.।.।.।

May be good man ইসলাম ভীতি নামক একটা শব্দ বিশ্বের সব মুসলিমদের কমবেশি সমস্যার সম্মুখীন করছে। যেই ইসলাম মধ্যযুগকে আধুনিক যুগে উত্তরণে সর্বাত্মক সাহায্য করল সেই ইসলাম এখন অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে ভীতির কারণ হয়ে গেল কীভাবে? ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়ায় ইসলাম তার আগমনের সময় ভীতি হিসেবে সমালোচিত হলনা কিন্তু এই পড়ন্ত সময়ে কেন ভীতির কারণ হয়ে গেলো? ইসলামের আগমনের সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে মুসলিম মনীষীগণ অবদান রাখল। যদিও তখন তথ্য প্রযুক্তি নামক শব্দ বিশ্ববাসী কল্পনাই করতে পারেনি। এই আধুনিক সময়ে এতো সুযোগ সুবিধা, সহজলভ্যতা তার পরেও কেন সব থেমে আছে এবং কেন আজ ইসলাম আতঙ্ক? আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, খুব সাধারণ চিন্তা থেকে যা পাই, এই সমস্যার জন্য আমরাই দায়ী। মুসলিম জনগোষ্ঠী নিজেদের যোগ্যতা আর চারিত্রিক উৎকর্ষতা ছেড়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক আধিকার প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

ইসলাম এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ) সমগ্র মানবজাতির। সেকারনেই ইসলামের সব কিছুই বিশ্বের সব জাতির, জনগনের। ইসলাম কায়েম করার নামে যা চলছে তা আদৌ ইসলামের সাথে যায় কিনা তা আমার বলা ধৃষ্টতা। কিন্তু ফলাফল তো দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। অন্যায়ের প্রতিবাদ আর নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক উত্থানের আন্দোলন এক নয়।

ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করবে এবং সেই সংগঠন হবে তাদের সব। এই ধারণা কতটা ইসলামিক তা আমি জানিনা। কিন্তু এই চেতনাই যে মুসলিমদের ইসলামের দড়িকে শক্ত কোরে ধড়ে রাখার নামে নিজেদের সাম্প্রদায়িক কোরে ফেলছে এবং অন্য বিশ্বের কাছে আতঙ্ক কোরে দাড় করাচ্ছে তা কেঊ দেখতে পাচ্ছেনা। ব্রিটিশ উপনিবেশিক উত্তর কালে মধ্যপ্রাচ্যে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিস্ট দেশে এই চেতনার বিকাশ ঘটে। উনিশ শতকে বা অষ্টাদশ শতকে জন্মনেওয়া রাজনৈতিক সংগঠনের চেতনার সাথে ইসলামের দড়ির সম্পর্ক কতটুকু আছে তা আমি জানিনা।

শুধু এইটুকু জানি ইসলামের প্রথম রাষ্ট্র এবং সেখানে নেতৃত্ব দেওয়া পাঁচ জনের কেউই এমন কোন সংগঠনের জন্ম দেননি। প্রয়োজন বোধ করেননি। ইসলাম নিজেই সেখানে একমাত্র মাধ্যম ছিল। সেই বোধ ব্রিটিশদের ডাণ্ডা বাড়ি খেয়ে জাগ্রত হল। সেই বোধ এখন গণতন্ত্রের পতাকাতলে দাড়িয়ে ইসলামিক গণতান্ত্রিক দল তৈরী করেছে।

যদি আমরা সোভিয়েত রাশিয়াকে ব্রিটিশ শাসনের মত পেতাম, এবং পরবর্তীতে সমাজতন্ত্রের পতাকা নিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্র লাফিয়ে পড়ত। তবে আজ আমরা ইসলামিক সমাজতান্ত্রিক দলও পেতাম ভোট দেয়ার জন্য। আমরা এখন সব কিছুতেই ইসলামিক একটা আলাদা নাম দিতে পছন্দ করি। ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান, ইরান ইত্যাদি। রাষ্ট্রেরও একটা ধর্ম থাকতে হয় যা কিনা সংখ্যাগরিস্টতার ভিত্তিতে ইসলাম বা হিন্দু বা ইহুদি।

কিন্তু মদিনা রাষ্ট্রের এমন কোন নাম বা বিশেষ ধর্মের প্রয়োজন হয়নি। বর্তমান ইসলামি বিপ্লব বলতে যে স্বপ্ন দেখা হয় তার আর মক্কা বিজয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। সব কিছুরই ইসলামি নাম দিলে তা জায়েজ হয়ে যায়না। কিন্তু আমরা এখন বিশ্বের একটি সম্প্রদায় হয়ে দাঁড়িয়েছি। ইসলামিক গান, চলচ্চিত্র, পোশাক, খাবার, রাজনৈতিক দল, সমাজতান্ত্রিক দল, শিক্ষা ব্যবস্তা, নৃত্য(সম্ভাব্য), হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ।

দাওয়াত দেওয়াও এখন এমন হয়েছে যে ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন করার আহ্বান এখন ইসলামিক দাওয়াত। জমি দখল, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করাও এখন ইসলামিক বিপ্লব। অর্থাৎ আমরা সব কিছুই আমাদের মত করে দেখব। আমরা যা দেখব তাই ইসলাম। হাজার হাজার মাইল ইসলামের পতাকাতলে ছিল তখন ইসলাম এমন ছিলনা কিংবা প্রাথমিক যুগেও ছিলনা।

আমরা উদ্ভট মুসলিম জাতীয়তাবাদের উত্থান দেখেছি ব্রিটিশ ভারতে, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্ম। কচুকাটা হতে দেখেছি নিরীহ হিন্দু-মুসলিম উভয়কেই। কিন্তু এই মুসলিম জাতীয়তা পারলনা পাকিস্তানে বাংলাদেশ কে আঁটকে রাখতে। মুসলিম নেতা সাদ্দাম হোসেন ইসলামের পতাকা বহন করতে যেয়ে হত্যা করলেন হাজার হাজার নিরীহ কুর্দি, আক্রমণ করলেন কুয়েত। কিন্তু তিনি কি সত্যিই ইসলামিক নেতা ছিলেন? তিনি নিজেকে ত্রাস নায়ক বানিয়ে ফেললেন অন্যদের কাছে।

মার্কিন বিরধী কথা বলে হয়ে গেলেন মুসলিমদের প্রিয় নেতা। আব্বাসীয়, উমাইয়া স্বঘোষিত খলিফাদের কথা নাই বললাম। মিশর এবং তিউনিসিয়াতে যা ঘটলো তা কোন ভাবে কি সেখান কার মানুষের ইসলাম চর্চা এবং ইসলামিক জীবনবিধান মেনে চলার জন্য??? এটা গনতন্ত্র আর একনায়কের দ্বন্দ্ব। তালেবান, লস্কর- ই-তইয়েবা, আল কায়েদা কি যথেষ্টনা ইসলামভীতি তৈরী করার জন্য??? গণতন্ত্রের/ সমাজতন্ত্রের/ একনায়ক্তন্ত্রের/ চেয়ারে বসে ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠা করা আর জনগন নিজেরা চেয়ে নেবে কোনটা উত্তম??? যারা চায়না এবং বোঝেনা তাদের উপর প্রতিষ্ঠা করাটা চাপ প্রয়োগের মত যে কারনে প্রতিষ্ঠাকারী তার কাছে ভয়েরই কারণ হয়ে দাড়ায়। হযরত আলী (রাঃ) এর মৃত্যুর পরেও অসংখ্য সাহাবী জীবিত ছিলেন।

আমি বুঝিনা তারা কখনই কোন সংগঠন, বংশ প্রতিষ্ঠা করলেন না। বরং নীরবে সারা বিশ্বে শান্তিপূর্ণ ভাবে ইসলাম বিস্তার করে গেলেন। তারা কোন রাষ্ট্র বা জনগোষ্ঠীর কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়ালেন না। সব সম্প্রদায় তাদের শ্রদ্ধা করেন আজও। শুধু তারা নয় তাদের পরবর্তীতে যারা এসেছেন তারাও।

কিন্তু যেই মানুষেরা শুধু ক্ষমতা আর চেয়ারের স্বপ্নে বিভোর তারা সবকিছুর সাথে আপোষ করে, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র কোনটাই সমস্যা নাই। মসজিদ এবং মন্দিরের দ্বন্দ্বে আমরা কচুকাটা হতে ও করতে পারি কিন্তু মসজিদে নামাজের বেলায় আমাদের আলস্য আসে। এই সাম্প্রতায়িকতা বোধ আমাদের অন্যদের থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ক্ষমতার লোভ আমাদের হারামের সাথেও আপোষ করতে সেখাচ্ছে। মুসলিম বলে আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ ইসলামিক স্বার্থ হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের শত্রু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি নয়। আমাদের শত্রু শয়তান। আমরা সেটা ভুলে যাই। খ্রিস্টান, ইহুদিও যে মুসলিমকে ডেকে ক্ষমতায় বসাতে পারে তার উদাহরণ আমাদের নবী(সঃ)। আমাদের চার খলিফাও উদাহরণ।

কিন্তু তারপর সব অন্যরকম। কারণ আত্মিক উৎকর্ষতা বাদদিয়ে সবাই ক্ষমতার চেয়ার আঁকড়ে ধরে রেখেছে। যুগে যুগে এই ক্ষমতালোভিরাই ইসলামের নামে রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র সব জায়েজ বানিয়ে ফেলেছে। আমি মুসলিম আমিই ঠিক যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে। কেউ পালন করুক আর নাই করুক শরিয়াহ কে জোর করে প্রতিষ্ঠা করব।

এরা সর্বদাই ভুল করে এবং তার সব দোষ যেয়ে পরে ইসলামের উপর। আমাদের নবী করীম(সঃ) সর্বদা আল্লাহর সাহায্য পেতেন। সাহাবা একরাম, তাবে তাবেঈন, অলিগণ ও তাই। তাদের আত্মিক ও বাহ্যিক সব কিছুই ছিল পরিশুদ্ধ। ইসলামের যে আধ্যাত্মিক পাওয়ার তা তাদের মাঝে ছিল।

এই জন্য তারা ইসলামের এতো প্রসার করতে পেরেছেন, কোন মানুষ তাদেরকে ক্ষতিকর মনে করেননি। তারা দাওয়াত দিয়েছেন এবং সবাই তাদের সর্বদা সম্মান করেছেন। ইসলাম তাদের হাতদিয়ে প্রসারিত ও সম্বৃদ্ধ হয়েছে। তারাই ধরে রেখেছেন ইসলামের রজ্জু। ক্ষমতা তাদের কখনই আকর্ষণ করেনি।

তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিক্ষা সব খানেই অবদান রেখেছে। তাদের অনুসরণই পারে আবার ইসলামের উজ্জ্বল দিন এনেদিতে। না হলে সংঘাত আর ইসলামভীতি বাড়বে। ইসলাম কোন সম্প্রদায়ের না সমগ্র মানবজাতির । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।