আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম নালিতাবাড়ি, শেরপুর

ক্ষুদ্র এই জীবনে অনেক কিছুই করতে চাই, কিন্তু পারি না। আর কিছু কথা আছে, যা হয়ত বলা যায় না, লিখে প্রকাশ করাই একমাত্র পথ। তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। সকাল এ ঘুম ভেঙে গেল প্রায় ৫টার দিকে, অবচেতন মনে আসলেই কি কোন ঘড়ি আছে? হয়ত তাই, কারন আজকে যাওয়ার কথা শেরপুর এ, ইভানের ওখানে। ও অনেক দিন থেকেই বলছিল যাওয়ার জন্য, কিন্তু সময় হয় না আর সাথে কাউকেই পাই না।

কাল রাতে ইস্কুলের বন্ধু পাটু যখন বলল যে, ও ফ্রি আছে, আর আমার সাথে যেতেও কোন আপত্তি নাই, তখনই ডিসিশন নিয়ে ফেলছিলাম যে, যাবই, যা থাকে কপালে। আর এখন এই ভোরে ঘুম ভাঙল। কিন্তু মেজাজটা ধীরে ধীরে বেশ গরম হয়ে যাচ্ছিল কারন, পাটু কোন কারন ছাড়াই ফোন রিসিভ করছিল না। জানা মতে, ভাল বাস গুলো ৭টার মধ্যে ছেড়ে যায়, আর এখন যদি না রওনা দেই, তাহলে তো আর যাওয়া যাবে না! কি যে ভেজাল এ পড়লাম! এর মধ্যে ইভান কে দিলাম একটা মেসেজ, দেখি শালায় আবার ফোন করছে, কথা বললাম, আর জানালাম যে আসব না, আমার আবার একা একা ঘুরতে ভাল লাগে না কিন্তু, কপাল ভাল, প্রায় ৬টার একটু পরে দেখি পাটু ফোন দিছে, যাক, ওরে মাফ করে দিলাম। তারমানে জাওয়া হচ্ছে, মনটা খুশি হয়ে গেল বেশ।

রওনা দিলাম ও, বাস পেলাম মহাখালী থেকে, কিন্তু মনে হল পুরাই লোকাল। কি আর করার, যাক, তাও তো যাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ময়মনসিনহ এর পরে গিয়ে দেখি বাসের চাকা পাংচার হয়ে গেল, আমি আর পাটু তখন নেমে চা খেলাম, আর তারপরে কিছুটা ফাঁক বুঝে ফটো-শুট করলাম। বেশ কিছু ম্যাক্রো শুট নিলাম, খারাপ হওয়ার কথা না। তারপরে নামলাম নালিতাবাড়ি তে।

রিকশা নিয়ে গেলাম ইভানের কোয়ার্টার এ। গিয়ে দেখি ও ওর একজন মার্কেটিং অফিসারকে পাঠাইছে, আমাদেরকে রিসিভ করার জন্য। একটু পরে ইভান আসল, আর সাথে ওর কলিগ শরিফ, আমরা এক সাথেই খেলাম, খালা রান্না করেছিল, গরুর ভুনা, সবজি আর পোলাও। রান্না খুবই মজার, কারন খড়ির চুলায় রান্না করা, আলাদা একটা ফ্লেভার আছে। আর আমাদের খিদাও ছিল সেই রকম।

তারপরে বের হলাম আমরা, সাথে ছিল সুমন ভাই আর রাসেদ ভাই (মার্কেটিং অফিসার) আর তাদের বাইক। প্রথমে গেলাম বকের বাড়ি, খুব ই সুন্দর। এইখানে নাকি বকেরা আছে প্রায় কয়েক যুগ ধরে। অনেক বক, বাড়ি ভর্তি হয়ে আছে, তবে যেটা শুনলাম, বকেরা নাকি সন্ধ্যায় এসে ভরে যায়, কিন্তু এখনও যা দেখতেছি, তাতেই মন খুশি হয়ে গেল। বেশ কিছু স্নাপ নিলাম।

তারপরে গেলাম মধুটিলা ইকো পার্ক এ। ঐখানে গিয়ে আগে একটু চা খেলাম আমরা সবাই। তারপরে টিকেট করে ভিতরে ঢুকলাম, জায়গাটা খুব সুন্দর। পুরোটাই সবুজ, আর উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ। তবে এটা আরও ভাল লাগল কারন, হোন্ডায় করে উঁচু থেকে নিচুতে যাওয়ার একটা মজা আছে (তবে খুব ভাল ড্রাইভার না হলে খবর আছে)।

ও হ্যাঁ, ওখানে একটা মিনি চিড়িয়াখানা আছে, যদিও আমরা দু-একটা হরিণ ছারা আর কিছুই দেখলাম না তেমন। তবে, হরিণ গুলা তরতাজা ছিল, আমার আর পাটুর দেখেই লোভ লেগে গেছিল একটু! কিন্তু কি আর করার। এর পরে গেলাম আমরা টাওয়ার এর দিকে, ওটা অনেক উঁচু, প্রায় ৮তলা হবে। ঐখানে উঠতে হবে চিন্তা করেই তো হাত পা পেটের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার পথে! পাটু দেখি সাহস দেখায়! কিন্তু আমার আর শরিফ এর তো খিধা লেগে গেল একটু। পাশেই আমড়া বেচতেছিলেন একজন মামা, আমরা ওটাই খেলাম, সবাই ই ২/৩টা করে, কিন্তু খেয়ে দেখি দাঁত টক হয়ে গেছে খুব, কেমন জানি লাগতে ছিল! যাহোক, উঠলাম অনেক কষ্ট করে উপরে, কিন্তু উপরে উঠে মনটা খুব ভাল হয়ে গেল।

চারপাশে খুবই সুন্দর দৃশ্য, সবুজ আর সবুজ, আর দূরে মেঘালয় দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের প্রাচীর দেওয়া। কি যে সুন্দর, তা না দেখলে বুঝাই যাবে না! আর আকাশে নীল মেঘ, সাথে সূর্যর হাল্কা আভা, খুব ই চমৎকার। আমরা অনেকক্ষণ ধরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলাম প্রাণ ভরে, আর তারপরে কিছু স্নাপ নিলাম। পাটু তার ত্রাইপড দিয়ে আমাদের বেশ কিছু গ্রুপ স্নাপ নিয়ে নিল। আর তারপরে চলে আসার পালা, আর ফিরতি পথে গেলাম খ্রিস্টান দের একটা জায়গায়।

আসলে এখানে নাকি ওদের কি কি অনুষ্ঠান হয়। কেউ ই ঠিক ভাবে বলতে পারল না। তবে, এখানে ওদের বড় দিনের নাকি একটা বেশ বড়সড় অনুষ্ঠান হয়, সেটা শুনলাম। ইনফ্যাক্ট, এই অনুষ্ঠানের জন্য নাকি দেশের বাইরে থেকেও ফান্ড আসে! এর পরে গেলাম পোর্ট এর দিকে। যাওয়ার পথে দেখলাম ইন্ডিয়া থেকে পাথর আর কয়লা এসে ভরে গেছে।

তবে সীমান্ত গিয়ে কোন ছবি নেওয়া গেল না। আমাদের দেশের বিডিআর ভাইরা বলল যে, ক্যামেরা বের করবেন না, কিছু ঝামেলা হয়, এর আগে নাকি কাকে যেন গুলি করেছিল। তবে, জায়গাটা কিন্তু বেশ সুন্দর, নদীর ধারে, আর কাশবন আছে বেশ কিছু। তারপরে চলে আসলাম আজকের মতন। (চলতে পারে ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.