আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ষণ, ধর্ষক এবং ধর্ষিতারা...

কবে যাবো পাহাড়ে... কবে শাল মহুয়া কণকচাঁপার মালা দেব তাহারে.... বিগত কয়েক বছরে ধর্ষণ জিনিসটাকে মোটামুটি আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গেছি আমরা। বিবাহিত এবং চার সন্তানের জননীকে ধর্ষণ, দশ বছরের শিশুকে ধর্ষণ; চলতি বাসে ধর্ষণ, ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করলে ধর্ষণ। ধর্মের নামে ধর্ষণ, শিক্ষকের হাতে ছাত্র ধর্ষণ, ইত্যাদি ইত্যাদি। কোথাও কোথাও ধর্ষণের পরে মেয়েটিকেই পুরো গ্রামের সামনে চাবুকপেটা করছি, আবার কোথাও ধর্ষিত মেয়েটাকে তার ধর্ষকের সাথেই সংসার করতে বাধ্য করছি। এসব প্রতিটি ঘটনাই শেষ পর্যন্ত পুরনো পত্রিকার মলিন পাতায় হারিয়ে যাচ্ছে।

বিচার মিলছে না কোনো একটা ঘটনারও; প্রায় কখনোই কারো সাজা হচ্ছে না। অনেকে বলেন ধর্মীয় অনুশাসনই সমাজে শৃংখলা ফিরিয়ে আনবে; কিন্তু আমি দেখি ধর্মকেও ধর্ষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কিছু পিশাচ। অনেকে বলেন সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বাড়লে ধর্ষণ কমবে, নারী নির্যাতন কমবে; কিন্তু ধর্ষণের অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের সমাজের ওপরতলাতেও। কাজেই, আমার মনে হয়- ধর্ম কিংবা অধর্ম কোনোটাই ধর্ষণের কারণ না, কোনোটাই ধর্ষণের সমাধান না। কারণ, ধর্ষণ কোনো রোগ নয়; এটা রোগের উপসর্গ মাত্র... আমি দেখি- যে সমাজে হতাশা, ক্ষোভ, বেকারত্ব যত বেশি, সে সমাজে এসব ঘটনা তত বেশি ঘটে।

রাস্তাঘাটে যতগুলো লোকের চেহারা দেখতে পান- দেখবেন, এদের প্রত্যেকের চোখেমুখে হতাশা, ক্ষোভ, ক্লান্তি, অসন্তুষ্টি। আপাতদৃষ্টে শান্তিপ্রিয় এই লোকগুলি হঠাৎ কোনো পকেটমার দেখতে পেলে নিমিষেই হিংস্র পিশাচে পরিণত হবে। এই লোকগুলিই বাসায় গিয়ে বিকৃত রুচির নীলছবি ডাউনলোড করে দেখবে। এদের মাঝেই কেউ কেউ সুযোগ পেলে কোনো অসহার নারীকে অত্যাচার করবে। একটা সমাজে একজন গড়পরতা নাগরিক যখন দিনরাত অশান্তিতে থাকে, দুশ্চিন্তায় থাকে- তখন তাদের একটা অংশ তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার মধ্যেই শান্তি খুঁজে পায়।

ঠিক একই কারণে যুদ্ধের সময় ধর্ষণ হয়; যে সৈনিক জানেনা যে কাল সে বেঁচে থাকবে কিনা, তার কাছে মরালিটির কোনো মূল্য নেই। আমাদের সমাজে এসব অনাচার প্রতিদিনই বাড়ছে, আরো বাড়বে। এর সাথে যেমন রাস্তার যানজটের সম্পর্ক আছে, ঠিক তেমনি সম্পর্ক আছে শেয়ার বাজারের ধ্বসের, বেকারত্বের এবং দুর্নীতির। এর সাথে সম্পর্ক আছে রাজনীতির এবং গণতন্ত্রের। যতদিন এদেশে যেটা যেভাবে চলার কথা- সেটা সেভাবে চলবে না, ততদিন এদেশে অবিচার এবং অপরাধ কমবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।