আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যারা ছ্যাঁক খেয়েছেন বা খেতে যাচ্ছেন বা যারা এমনি এমনি খান, তাদের জন্য কিছু কথামালা।

আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo প্রিয় ব্লগার, প্রথমেই আপনাকে আন্তরিক সমবেদনা। যেহেতু আপনি শিরোনাম দেখে পোষ্টে প্রবেশ করেছেন, তখন ধরে নেয়া যেতেই পারে আজকের আলোচ্য বিষয়ের স্বাদ ইতিমধ্যে আপনি পেয়েছেন বা কিছুটা হলেও পরিচিত আছেন। এটা নিষিদ্ধ স্বাদ। এই স্বাদ পেলে শুভেচ্ছা জানানোর নিয়ম নেই।

তাই আপনাকে আমার ব্লগে আসার জন্য শুভেচ্ছা জানাতে পারছি না। আর যদি কৌতুহলের বশে এসে থাকেন তাহলে সেই চিরচেনা হাসিতে অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কারন বাঁচতে হলে জানতে হবে। আমার জীবনে সরাসরি ছ্যাঁকা খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তবে যেহেতু আমি অনেক স্পর্শকাতর তাই আমার আশেপাশের মানুষদের ছ্যাঁকা খাওয়া আমাকেও প্রবল ভাবে কাতর করেছে।

আমার অনেক দিন কেটেছে মানুষকে সান্তনা দিতে গিয়ে, অনুপ্রেরনা দিতে গিয়ে। কখনও অনুপ্ররনা দিয়ে জীবনকে নতুন ভাবে চিনিয়েছি, আবার কখনও উল্টা ফাপড়ে পড়ে, ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলে চিৎকার করেছি। তবে মিশ্র এই অভিজ্ঞতায় সফলতার পরিমান কিছুটা বেশি হওয়াতে তা সবার সাথে শেয়ারের সাহস পাচ্ছি। আশেপাশে অনেক বিষন্ন মানুষ দেখি। অনেকের বুকে ছ্যাঁকা ছাই চাপা আগুনের মত জ্বলে।

আমি কারো হৃদয়ে ছাই চাপা আগুন দেখতে চাই না। সেই আগুন নিবানোর জন্যই এই পোষ্ট। কেউ উপকৃত হলেই এই পোষ্টের সার্থকতা। মানুষ হিসেবে আমরা একটি সামাজিক প্রানী। সামাজিকতা রক্ষা করার জন্য আমাদের নানা রকম সর্ম্পকের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

যেমন মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজন ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পারিবারিক সর্ম্পক। বন্ধু বান্ধবের সাথে থাকে বন্ধত্বের সর্ম্পক, প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার ভালবাসার সর্ম্পক। পারিবারিক সর্ম্পকগুলোতে খুব বেশি জটিলটা দেখা দেয় না। কারন পরিবারই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। মানুষ তার শেষ আশ্রয়স্থল কখনও হারাতে চায় না।

এটা আমাদের অবচেতম মন ভালো করেই জানে। তাই পারিবারিক সর্ম্পক এর অনেক কিছুই আমরা ক্ষমা সুন্দর ভাবে দেখি। ফলে সাধারনত সর্ম্পকটা সুন্দরই থাকে। কিন্তু আমরা এই মনোভাব অন্য কোন সর্ম্পক এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি না। ফলে তৈরী হয় জটিলতার।

সেই কারনে ভালোবাসার সর্ম্পকগুলোতে এতটা জটিলতা। আর এই জটিলতা বাড়তেই বাড়তেই এক সময়টা বিচ্ছেদে রুপ নেয়। আর বিচ্ছেদের আধুনিক নাম, ছ্যাঁক। আমরা যখন কোন ভালোবাসার সর্ম্পকে জড়াই, তখন আমাদের চিরচেনা পৃথিবী অনেকটাই বদলে যায়। পৃথিবীর সুখী মানুষের দূর্লভ তালিকাতে নাম লেখাই আমরা।

নতুন সর্ম্পক এর প্রভাবে পুরানো সর্ম্পকগুলো গৌন হয়ে পড়ে। তাই তো ভালোবাসা ধনী,গরীব, ধর্ম,বর্ন, জাতি কিছুই মানে না। হতে পারে ভালোবাসা কিছুটা অপ্রতিরোধ্যই। তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু দায়বদ্ধতা আছে। আর তাই যেকোন অসীম ভালোবাসার অপ্রতিরোধ্য গতি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক।

ফলাফল কষ্ট, কিছু দীর্ঘশ্বাস, দু'ফোটা চোখের জল এবং অভিমানের অতল সাগরে নিজেকে নিজে ডুবিয়ে মারা। আমার এই পোষ্টের শিরোনাম দেখে হয়ত অনেকে ভাবছেন এটা হয়ত কোন ফান পোষ্ট। না, এটা আসলে কোন ফান পোষ্ট না। আমি চাইছিলাম সিরিয়াস এই বিষয়টি কিছুটা হাল্কা করে লিখব। আমার মনে হয়, ছ্যাঁক কথাটার মধ্যে কষ্টের গভীরতা কম , যতটা না বিচ্ছেদ বা বিরহে আছে।

জীবনের কঠিন কষ্টের সময় গুলোকে আরো কঠিন করে লেখার কোন মানে নেই। মানুষের জীবন প্রেমময় জীবন। সবারই জীবনে কখনও না কখনও প্রেম আসেই। আবার হয়ত কখনও কখনও প্রেম হারিয়েও যায়। এটা হয়ত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

কিন্তু এই হারানো ভালোবাসা বা প্রেমকে ফিরে পেতে অনেক সময় আমরা নিজেকে একটি কষ্টের জগতে বন্দি করে ফেলি, যা হয়ত মোটেই স্বাভাবিক বা কাম্য নয়। আমি অনেকে দেখেছি তারা ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে জগৎ সংসার সব ভুলে যায়। হাতপা কাটাকাটি করে, মদ খায়, নেশা করে। অনেকে আবার বলেন ভালো থেকে কোন লাভ নেই, খারাপ হয়ে যাব ইত্যাদি। আসলে যারা এমনটা করে তারা তাদের ভালোবাসাকে, তাদের আত্মাকে অস্মমান করেন।

কারন যে নিজেকে ভালোবাসে না সে অন্যকে ভালোবাসবে কি করে? কেউ যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে সেটা তার ব্যর্থতা, সে আপনার ভালোবাসা বুঝতে পারে নি। একজন ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ফেলাটা তার জন্য লজ্জাজনক, আপনার জন্য নয়। ক্ষতি তার, আপনার নয়। তাই যে আপনাকে ভালোবাসে না, কিংবা কোন কারনে ভালোবাসা/বাসির সমাপ্তি ঘটেছে তার জন্য নিজের ক্ষতি করে কোন লাভ নেই। আমাদের সমস্যা হলো আমরা আমাদের আশেপাশের ভালোবাসার মানুষগুলোকে চিনি না।

আমাদের সকল কষ্ট কেবল সেই সব চলে যাওয়া দূরের মানুষের ভালবাসা নিয়ে। আমি একটা জিনিস বুঝি না ভালোবাসার মত গুরত্বপূর্ন একটা সর্ম্পক শুধু মাত্র কেন আবেগের বশবর্তী হয়ে নিতে হবে? আমার সকল প্রেমিক বন্ধুদেরকে কথাটি জিজ্ঞেস করতেই অনেক তিরস্কার আমার কপালে জুটেছিল। তারা আমাকে বলে, ভালোবাসা এত হিসেব করে হয় না। এটা হঠাৎ করেই হয়ে যায়। তাদের কেমনে বোঝাই, হঠাৎ করে কারো খুব কাছে চলে আসাটা, অনেক সুন্দর।

হঠাৎ করে কারো এই দূরে চলে যাওয়াটা, বড় কষ্টের। হঠাৎ করে হয়ত কিছু হওয়াটাই বিপদজনক। কথাগুলো হয়ত কঠিন, কিন্তু বাস্তব। আমি জানি এই কথা গুলো হয়ত আমার জন্যও মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু আমি নিজেই মেনে নিয়েছি।

তবে এটা সত্য এক এক জনের ভালোবাসার কষ্ট এক এক রকম। সবার দাবি তাদের কষ্টের সাথে কারো কষ্টের তুলনা হয়না। সত্যি বলতে হয়ত তুলনা করাও ঠিক না। যে যার কষ্ট নিয়ে থাকুক, কারন কষ্ট ভালোবাসার একটি অংশ। তবে যখন আপনি ভালোবাসার চেয়ে কষ্ট বেশি পাবেন তখনই সেটা সমস্যা।

অনেকে একটি সর্ম্পকে থেকে বিচ্ছেদের পর বলেন, আমার পক্ষে আর অন্য কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। আমার ভালোবাসা মরে গেছে। আমি বলব এটি একটি ভূল কথা। প্রকৃ্ত ভালোবাসার কোন মৃত্যু নেই। একশ বার ভালোবাসা সম্ভব।

কারন মানুষ ভালোবাসা কাতর একটি প্রানী। অন্যের জন্য না হলেও নিজের জন্যই আপনাকে ভালোবাসতে হবে। কিছু মনে করবেন না, যারা কোন বিচ্ছেদের পর আবার নতুন করে জীবনটা শুরু করতে চান না, তারা শুধুই নিজেকে কষ্ট দেন, নিজের আত্মাকে কষ্ট দেন। এই কষ্টে আর যাই হোক ভালোবাসা পাওয়া যায় না, বড় জোড় সহানুভূতি বা করুনা পাওয়া যাবে। আপনি যদি চান, আপনার জীবন হোক মানুষের করুনাময় তাহলে আপনি সেই চলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে ধরে বসে থাকুক।

নিজেকে আরো কষ্ট দিন। আপনার জন্য অনেক অনেক করুনা। আপনি যাকে ভালোবাসতেন সে যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায় বা কোন একটি অনিবার্য কারনে যদি আপনাদের মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তাহলে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই যে সব কিছু শেষ। কিছু দোষ না হয় আপনার ছিল, কিছু দোষ না হয় তার ছিল, কম বেশ দোষ আমাদের সবারই থাকে। যে চলে গিয়েছে তাকে যেতে দিন।

আপনার মধ্যে যে অফুরন্ত প্রানশক্তি আছে সেটাকে কাজে লাগান। নিজেকে প্রস্তুত করুন ভালোবাসার জন্য। আপনার আসেপাশে অনেক অনেক মানুষ আছে, যারা এই জীবনে হয়ত ভালোবাসার সেই ছোঁয়াটুকু পায়নি। যারা ভালোবাসতে চায়, সুন্দর একটি ভালোবাসাময় জীবন তারা পেতে চায়, কিন্তু হয়ত পায় না। পাবে কি করে আপনার মত অনেকেই হয়ত শুধু কষ্ট ভালোবাসেন, তাকে বা তাদেরকে ভালোবাসতে চান না।

ভালোবাসা চর্চা করা একটি চমৎকার ব্যাপার নয় কি? তাই দূলর্ভ এই ভালোবাসাকে শুধু কষ্ট পাওয়ার মাধ্যমে শেষ করার কোন মানে হয় না। আপনার ভালোবাসা সঞ্চিত থাকুক কোন এক কল্পনার মানুষের জন্য, যিনি আপনার স্পর্শে পরিপূর্নতা পাবেন। যার ভালোবাসার অদেখা ভূবন আলোকিত হবে আপনার ভালোবাসায়। তবে নতুন জীবন শুরু করার জন্য একটু সময় নেয়া ভালো। এই সময় নেয়া বলতে বুঝাচ্ছি, এই সময়টাতে আপনি নিজেকে গুছিয়ে নিন, পড়াশুনা, সামাজিক বা পারিবারিক সর্ম্পক গুলো আরো ভালোভাবে ঝালাই করে নিন।

বই পড়ুন, বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। নিজের মনের কথা ব্লগে লিখতে পারেন। ব্লগ এক ধরনেরই ডায়রীই বলতে পারেন। এরই মাঝে আপনার সাথে অনেকের পরিচয় হতে পারে, অনেকেই ভালোলাগতে পারে। বিচ্ছেদপ্রাপ্ত মন অনেকটা কাদার দলার মত নরম থাকে।

তাই হয়ত অনেকের সামান্য সহনুভূতির কথায়, কিংবা সান্তনায় তাকে নিয়ে ভূল ভাবার অবকাশ থাকে। তাই নতুন মানুষটিকে একটু সময় নিয়ে জেনে, শুনে বুঝে, আপনার সর্ম্পকে ভালোমন্দ সব বলে তারপর সর্ম্পকে জড়াবেন। শুধু মাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি আরো খারাপ দিকে যাবেন। জীবনটা আপনার, আপনাকে আপনারই আগে ভালোবাসতে হবে তারপর অন্য কেউ। জীবনে খুব বেশি একটা ভালোবাসার দেখা আমি পাইনি।

অনেক আগে নিয়মিত বাসে দেখা একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম। সেই কথা মনে হলে এখনও হাসি পায়। একদিন মেয়েটিকে দেখেছিলাম তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাসে করে যেতে। কি যে প্রচন্ড অভিমান হয়েছিল, তা বলার মত নয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার অন্য একটি সুন্দর মেয়ে দেখে সে অভিমান মিলিয়ে গিয়েছিল ।

এই এই লেখাটি লিখতে গিয়ে মনে হলো আমার সামান্য সেই ভালোলাগার ব্যাপারটিতেই আমার এত কষ্ট লাগলে, যারা ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছেন তাদের কেমন লাগছে। নিঃসন্দেহে ব্যাপারটা অনেক কষ্টের। আমি যেমন অন্য একটি মেয়ে দেখে সব ভূলে গিয়েছিলাম তেমনি আশা করি নতুন কোন এক মানুষের ভালোবাসায় আপনাদের জীবনও হবে অনেক সুন্দর। আমি আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করেছি, কারো খারাপ লাগলে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। সবাই অনেক ভালো থাকুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।