আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুড়োদের ছাত্রদল!

কবি হতে চেয়েছিলাম... বিশেষ মন্তব্য বুড়োদের ছাত্রদল! তায়েব মিল্লাত হোসেন স্বৈরশাহী এরশাদ পতনের আন্দোলনের শেষার্ধে বড় ভূমিকা রেখেছে বিএনপির আপোষহীন মনোভাব। এ কারণেই বিএনপির প্রতি তরুণরা আকৃষ্ট ছিলো। তারুণ্যের জোয়ারেই ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয় তারা। ক্ষমতায় ওই মেয়াদেও তারুন্যের প্রতীক হিসেবেই পরিচিত ছিলো দলটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তখন বর্ষীয়ান নেতাদের দ্বারাই আবৃত ছিলো।

প্রাচীন এ দলটি যেন ছিলো বুড়ো বটের মতো। এর প্রতি ভক্তি-ভালোবাসার কারণে নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের অফুরান প্রাণশক্তি আর মরিয়া আন্দোলন বার বার রাজনীতির ময়দানে সাফল্য এনে দিয়েছে দলটিকে। এভাবেই চলছিলো আওয়ামী লীগ। তবে এক-এগারোর পর রাজনৈতিক সংস্কারের যে ঝড় উঠে, সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় যেন জেগে উঠে তারা। তথ্য-প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে আওয়ামী লীগ।

তাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার শ্লোগান আর রূপকল্প-২০২১ (ভিশন-টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান) দারুণ দোলা দিয়ে যায় তরুণদের। তাই ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের পেছনে তরুণ ভোটারদের বড় অবদান দেখেন বিশ্লেষকরা। তথ্যপ্রযুক্তিমুখী রাজনীতি থেকে আর সরে আসেনি আওয়ামী লীগ (বাস্তবে অতোটা না হলেও প্রচার-প্রচারণায় অন্তত ব্যাপকভাবে আছে)। আবার তরুণদের রাজনীতির প্রধান ক্ষেত্র ছাত্র সংগঠনেও প্রাচীন ধ্যান-ধারনা বাদ দিয়ে ঠিক সময়ে নেতৃত্বের বদল (প্রকৃত গণতান্ত্রিক উপায়ে না হলেও) এবং ছাত্রদের হাতে ছাত্র নেতৃত্বের ভার রেখে কিছুটা হলেও বিতর্কমুক্ত থাকছে আওয়ামী লীগ। সবাই আশা করেছিলো আওয়ামী লীগের সাফল্য দেখে মাঝবয়সে ঝিমিয়ে পড়ার অবস্থা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে বিএনপি।

আগের মতোই আবার তারুণ্যের দলে পরিণত হতে যা যা দরকার, তা তা করবে বিএনপি। এর জন্য ছাত্রদলের রাজনীতিতে এমন সংস্কার দরকার ছিলো, যাতে এর নেতৃত্বে দিতে পারে প্রকৃত ছাত্ররা। অথচ গতকাল বলা যায়, ‘বুড়োদের’ নেতৃত্বেই গঠিত হলো ছাত্রদল। তাতে আবার অছাত্রদেরও জয়-জয়কার। কেউ আগে দলের বিরুদ্ধে কাজ করে মামলা খেয়েছেন, কেউ ছিলেন বিদ্রোহী, কেউবা ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার! গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটির পাঁচজন করে নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া চার নেতাই অছাত্র, বিবাহিত ও চল্লিশোর্ধ্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির পাঁচজনের মধ্যে তিনজন অছাত্র। বাকি দুজন সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন আবদুল কাদের ভূঁইয়া ওরফে জুয়েল। ৪৪ বছর বয়সী এই নেতা ১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে দুই দশক আগে। তাঁর বিরুদ্ধে গত বছরের ২১ জুলাই বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ আছে। ওই ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা মামলায়ও তিনি আসামি ছিলেন। মাস দুয়েক আগে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নতুন সভাপতি ২০০১ সালে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করেছিলেন।

এই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতির ওপর হামলার অভিযোগ আছে। ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ রাজধানীর আবুজর গিফারী কলেজের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বয়সও ৪০ পেরিয়েছে। তাঁর দুই সন্তান মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ে। দীর্ঘদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন।

নতুন কমিটির সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী ওরফে আবেদের বয়সও ৪০ পেরিয়েছে। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম ওবায়দুল হক ওরফে নাসির ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অর্ধযুগ আগে। তিনিও বিবাহিত। নাসিরের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের নামে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ আছে বলে পত্র-পত্রিকার অনুসন্ধান জানায়।

সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব আহসানই কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র নেতা, যাঁর বয়স চল্লিশের নিচে, ৩৪ বছর। তিনি ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। তাঁরও ছাত্রত্ব নেই। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নতুন সভাপতির পরিচয় তুলে ধরে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানায়, ‘২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। বইমেলা উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের প্রতিবাদ জানিয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল বের করে ছাত্রদল।

বিপরীত থেকে মিছিলে সশস্ত্র হামলা ও গুলি চালায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ছাত্রলীগের সেই হামলায় অংশ নেন মাহিদুল হাসান হিরু নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। কালপরিক্রমায় সেই ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় পাল্টে যায়। ছাত্রদলের মিছিলে হামলা চালানো সেই ছাত্রলীগ নেতা সোমবার রাতে মনোনীত হন ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হিসেবে। ’ আজকের পত্র-পত্রিকায় ২০০১ সালের হামলার সেই ছবিও এসেছে।

যাতে চিহ্নিত করা হয়েছে মাহিদুল হাসান হিরুকে। ছাত্রদলের নতুন কমিটির রূপ দেখে নজরুলের ‘ছাত্রদল’ কবিতার প্যারোডি করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু যুতসই শব্দ পাচ্ছি না। তাই কিছুটা নজরুল থেকে নিয়ে, কিছুটা নিজের মতো করেই বলছি: ‘তারা অপশক্তি, তারা দূর্বল; বুড়োদের নিয়ে ছাত্রদল!’ লেখক: সাহিত্যপ্রেমী, গবেষণাকর্মী ও সাংবাদিক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।