আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হতে চাওয়া কি অপরাধ

প্রতিবাদও এদেশে নিষিদ্ধ যেন! প্রতিবাদীর বুক বুটদলিত হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে! "আমরা পড়তে চাই, পরীক্ষা দিতে চাই" এমন দাবিতেও মার খেতে, লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি মধ্যবিত্ত বাবা মায়ের স্বপ্ন থাকে তাঁর সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। জন্মের পর থেকে তার ভেতরে সেই স্বপ্ন প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। শিশুটি সেই স্বপ্ন লালন করতে থাকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। তারপর অপেক্ষা করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হলেই ডাক্তার হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে তার। যদিও আমাদের সমাজে ডাক্তারদের গ্রহণযোগ্যতা-সম্মান-অবস্থান আর ডাক্তারের প্রতি আস্থা-ভরসা সেই আগের মতো নেই। তারপরও যারা ডাক্তারির মতো মানবসেবামূলক পেশায় আসতে চায় তাদের স্বাগত জানানো দরকার। আমাদের দেশে অসুস্থ মানুষের তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অনেক কম। ডিসপেনসারির কমপাউন্ডার বা ঔষধ বিক্রেতার কথা মতো ঔষধ সেবন করতে হচ্ছে অনেক মানুষকে।

এই সেবামূলক পেশার লেখাপড়ায় প্রবেশের মুখে নানা বাধা, নানা বৈষম্য! মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন অনেকটাই কমে এসেছে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে। অনেকের সরল মত, গ্রেডিং পদ্ধতিতে কে শতকরা ৮০ আর কে ৯৫ নম্বর পেল তা বোঝা যায় না। সুতরাং কেউ একজন অন্যজনের চেয়ে ঠিক কতটা এগিয়ে এটি নির্ধারণ করা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়ায়। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের লেখাপড়ায় বেশি নম্বর পাওয়ার বিষয়ে রয়েছে নানা হঠকারিতা। স্কুল কলেজের শিক্ষকদের হাতে রয়ে যায় ব্যবহারিকসহ কিছু নম্বর যা পড়ুয়া ছাত্র না হয়ে কৌশলী ছাত্র হলে পাওয়া যায়।

আর এভাবে খুব অল্প পড়ে বা অনেকটাই না পড়েও জিপিএ ৫ পাওয়ার বাস্তব নজির রয়েছে বহু। সুতরাং জিপিএ ৫ বা গোল্ডেন জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সরাসরি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ দিলে সেটি খুব একটি সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত হবে না। আবার যারা ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছে তাদের বিড়ম্বনাও বর্ণনাতীত। ভর্তি পরীক্ষার ফাঁদে কোটি কোটি টাকা আয় করে নিচ্ছে ভর্তি কোচিংসহ যে যেখান থেকে পারছে। প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা বিড়ম্বনায় বিব্রত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলে।

বহু টাকায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে ডাক্তারিতে ভর্তি হচ্ছে তুলনামূলক কম মেধাবী কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল পিতার সন্তানরা। আর এভাবেই অর্থের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে মেধা। আমাদের সামনে খোলা আছে একটিই পথ। তা হচ্ছে সর্বস্তরে সততা ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা যেন দুর্নীতিগ্রস্থ না হয়, তাদের যৌক্তিক বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা, তাদের পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।

এতে শিক্ষার্থীরা তথাকথিত শিক্ষার বদলে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণে গুরুত্ব দেবে। নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র বাংলাদেশের স্কুল কলেজে পর্যবেক্ষণ করার চেয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নসংশ্লিষ্টদের পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে। আর জিপিএ-এর ভিত্তিতে ভর্তি করাতে হলে যথেষ্ট মানসম্পন্ন পাবলিক পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং জিপিএ-এর ভিত্তিকে ভর্তি করানোর অন্তত ৩ বছর আগে এ ঘোষনা দিতে হবে। হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে সেটি হয়ে যায় স্বেচ্ছাচারিতা।

মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুদের যারা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চায় চট্টগ্রামে তাদের সমাবেশের উপর পুলিশের এ অমানবিক, বর্বরচিত, কান্ডজ্ঞানহীন আক্রমন চরম নিন্দনীয়। শান্তিপূর্ণ অবস্থান বা প্রতিবাদের অধিকার সবারই রয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.