আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউরোপ এ অ্যাপ্লাই করার ধাপ এবং আমার ভিসা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা

ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাব। হয়ত আমার মত অনেকের ই এটাই ইচ্ছা। আমি আমার পুরো অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি যে কিভাবে আগাতে হবে এটার জন্য। আশা করি সবার কাজে দিবে। দেশ হিসেবে আমি জার্মানি এর বাপার গুলো লিখছি।

১. যোগ্যতাঃ আমার জানা মতে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ই তাদের নিজস্ব একটা মিনিমাম যোগ্যতা দিয়ে রাখে ওয়েবসাইট এ কিন্তু এটা নির্ভর করে প্রতিবার অ্যাপ্লিকেশান এর উপরে। কারন দেখা যায় যে রকম রিকুয়ারমেন্ট দেয়া আসে তার ছেয়ে অনেক হাই আপ্পলিকেন্ট অ্যাপ্লাই করে। তাই এটার কোন নিদ্দিষ্টটা নাই যে এক্স্যাক্ট কত CGPA থাকলে আমি চাঞ্চ পাব। তাই বলে হতাশ হবার কিছু নাই। অনেক ছাত্র আসে তারা লো জিপিএ নিয়েও পড়তেছে।

তবে মনে রাখতে হবে যে তোমার ইচ্ছাতাই আসল। হতাশ না হয়ে অ্যাপ্লাই করতে থাক। কোথায়ও না কোথাও ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে। ২.কোর্স সার্চঃ কোর্স খোঁজার জন্যে সরাসরি( Click This Link) লিঙ্কে গিয়ে লেভেল, ফিল্ড অফ স্টাডি, এন্ড এ সাবজেক্ট এই প্যারামিটারগুলো ঠিক করে দিলে নিচে সবুজ বক্সে এভেইলেবল প্রোগ্রামের সংখ্যা দেয়া থাকবে। হলুদ বক্সে শৌ প্রোগ্রামস-এ ক্লিক করলে সব সাব্জেক্টের নাম লিঙ্ক সহ দেখাবে।

Winter Term:[All sub. are available] Enrollment: Sep-Oct & Application deadline: Feb-May Summer Term:[All sub. are NOT available] Enrollment: Feb-May & Application deadline: Sep-Oct ৩. কোর্স বাছাইঃ কোর্স বাছাই এর ক্ষেত্রে যে সব জানা প্রয়োজন টা হলঃ  সাবজেক্টঃ উপরের লিঙ্ক থেকে প্রোগ্রাম সার্চ দিলে অনেক প্রোগ্রামই হয়ত আসবে, কিন্তু সব প্রোগ্রামইতো আর আমাদের পড়ার জন্যে উপযুক্ত না।  ভাষাঃ এখানে ২ ধরনের ভাষায় অপশন থাকে। ১। জার্মান ২। ইংলিশ জার্মান ভাষায় চেষ্টা না করে ইংলিশ কোর্সে চেষ্টা করা ভালো।

তাহলে তোমাদের ই সুবিধা হবে। উপরের লিঙ্ক এ ল্যাঙ্গুয়েজ সার্চ করার অপশন আসে। সো সেইভাবে খুঁজে দেখবা।  সেমিস্টারঃ এই ব্যাপারটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেয়া থাকে Winter Semester only অথবা Summer semester only বা Both semester দেয়া থাকে। এটা অবশ্যই খেয়াল করতে হবে।

Beginning of program, Program duration এগুলোও লিঙ্কে দেয়া থাকে। আর Application deadline-তো অবশ্যই দেখা উচিত। Description of Content - এই জিনিসটা হাল্কা দেখে নেয়া ভালো, ভিসার ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে এটা অবশ্যই কাজে লাগবে (যদি বাঙ্গালী ইন্টারভিউয়ার থাকে তাহলেতো এটা জানতেই হবে। ) সাথে সাথে এর ঠিক নিচে Course Description (Read More)-এইটা পড়তে হবে, অন্ততপক্ষে কত ক্রেডিটের কোর্স তা জানার জন্যে।  কোর্স,টিউসন ফিঃ এইটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেখার বিষয়।

টিউশন ফি, এনরোলমেন্ট ফি অনেক ভার্সিটিতে লাগেনা, কোথাও আবার লাগে প্রতি সেমিস্টার ৫০০-৭০০ ইউরোর মত। তবে কিছু সাবজেক্ট, যেমন- এরোস্পেস, লাগে ২ বছরে ২০০০০ ইউরো+ ভ্যাট। যেসব ইউনিভার্সিটি তে টিউসন ফী সেগুলো লিস্টে আগে রাখা উচিত। Cost of Living ৮০০ইউরো দেয়া থাকলেও জার্মানিতে পড়ছেন এরকম সিনিয়ররা বলেছেন ৫০০ ইউরো অনেক যথেষ্ট।  ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক ভার্সিটিই Ielts, Toefl চায়না।

তাই বলে এইগুলা না করে অ্যাপ্লাই করাটা আমার মতে বোকামি। কারন এখন যেহারে স্টুডেন্ট অ্যাপ্লাই করতেছে এখন তাই রেসাল্ট এর সাথে এই গুলো থাকলে তা প্লাস পয়েন্ট। তাই আমি বলব এইগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে অ্যাপ্লাই করে ফেল।  অনলাইন ইন্টারভিউঃ অনেক ভার্সিটি আবার হয়তো ইন্টারভিউও নিতে পারে। ভয়ের কিছু নাই।

এই ইন্টারভিউ একেবারে সোজা। যেটা পারবানা সেটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলবা -পারিনা, কিন্তু শিখে নিবো। জার্মানির চাকরির ইন্টারভিউতে একজন বাঙ্গালী তার অভিজ্ঞতা লিখছে এভাবে- কর্মকর্তারা বললো “আমাদের কোম্পানি এই এই কাজ করে......” তারপরে জিজ্ঞেস করলো “আপনি আপনার জ্ঞান, মেধা দিয়ে কোম্পানির কিভাবে সাহায্য করতে পারবেন?” সুতরাং যারা বাংলাদেশে কোনো চাকরির ইন্টারভিউ বা ভার্সিটিতে বোর্ড ভাইভা দিছে তাদেরকে বলবো- টেনশন এর কিচুই নাই। এইগুলা তোমাদের কাছে দুধভাত।  শহরঃ শহর একটা ইম্পরট্যান্ট বিষয়।

অনেক শহরে লিভিং কস্ট অনেক বেশি আবার অনেক শহরে এটা কম। তাই আগে থেকে জেনে নেয়া ভালো যে তুমি যে শহরে যেতে ইচ্ছুক সেখানের অবস্থা কেমন। ৪. এপ্লাই করাঃ এই সবগুলো বিষয় মনমতো হলে পেজের উপরের দিকে ডানপাশে Contact বা Submit Application to থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কাউঞ্চিলর এর মেইল এড্রেস দেয়া থাকে। প্রথমেই আমি সরাসরি Contact থেকে উনার মেইল এড্ড্রেস নিয়ে মেইল করে নাম, ভার্সিটি থেকে পাশের সাল আর সাবজেক্ট লিখে বলছিলাম এই ভার্সিটিতে (ভার্সিটির নাম) এই কোর্সে (কোর্সের নাম) স্টাডি করতে ইচ্ছুক। তাহলেই উনি তমাকে নেক্সট সব স্টেপ বলে দিবে যে কথায় কি করতে হবে।

উনাকে মেইল দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে টা হলঃ *তোমার সব ইনফর্মেশন(রেসাল্ট,কোন স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে তা) *IELTS স্কোর *তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ডিপার্টমেন্ট সহ (ওয়েব এড্রেস দেয়া বেটার) উনি তোমার মেইল এর রেসপন্সে দ্রুত তোমাকে নেক্সট স্টেপ গুলো বলে দিবে। তারপর উনার গাইডলাইন মতে অ্যাপ্লাই করে ফেলবা। উসুয়ালি মাক্সিমাম ইউনিভার্সিটি তেই পোস্ট করে সব ডকুমেন্টস পাঠাতে হয়। তাই ডেডলাইন এর মিনিমাম দেড় মাস আগে সব কিছু পাঠাবা যদি নরমাল পোস্টে পাঠাতে চাও। আর যদি DHL এর পরিকল্পনা থাকে তাহলে ডেডলাইন এর ৭ দিন আগে পাঠালেও হবে।

কিন্তু টাকার শ্রাদ্ধ হবে র কি। সব ডকুমেন্টস পাঠায় দিয়া এখন অপেক্ষা কর আরউন্ড ১ থেকে ১.৫ মাস। তারপর ইউনিভার্সিটি তোমাকে জানাবে যে তুমি সিলেক্ট অর নট। ৫. ভিসা ও অন্যান্যঃ ভার্সিটি থেকে অফার লেটার মেইলে আসার সাথে সাথে ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করে ফেলা ভাল। কারন ইদানিং এতই চাপ যে তোমার ডেট পেতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তাই অফার লেটার পেলেই ভিসা ইন্টারভিউ এর জন্য মেইল করে দিবা () এই এড্রেস এ। সাথে অফার লেটার এবং পাসপোর্ট এর কপি এটাচ করে পাঠাতে হবে। তারপর ওরা রিপ্লাই মেইল দিলে প্রুস্তুতি নিতে হবে। Click This Link এই ফাইল এ সব লিখা আসে কি কি নিতে হবে। ৬.ব্লকড একাউন্টঃ এটা নিয়া সবার মধ্যে একটা ভয় কাজ করে।

এইটা জাস্ট একটা ভিসা ফরমালিটি। এখন যে সিস্টেম তা হল এই টাকা তা ভিসা হবার পরে জার্মানিতে যাবার পরে ঐখানের ব্যাংক এ ট্রান্সফার করতে হবে। তারপর ঐখানে ভিসা এক্সটেন্ড করার পরে টাকা তুলে ফেলতে পারবা। সো এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। আমি ব্রাক ব্যাংক এ এটা করছি।

অ্যাকাউন্ট এ টাকা থাকলে ২ দিন এর বেপার স্টেটমেন্ট পেতে। 7.ডকুমেন্ট তৈরী করাঃ সব ডকুমেন্ট ৩ কপি নিতে হবে। আবারো বলসি সব ডকুমেন্ট ৩ কপি নিতে হবে। তোমার ২কপি ছবি প্রয়োজন এবং ছবি নিয়ে অনেকে ঝামেলায় পরে। ছবির মাপ হবে (৩৫*৪৫) এবং সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড।

গুলশান এর যে কোন স্টুডিও তে গিয়ে বললেই হবে যে জার্মান এম্বাসী এর জন্য ছবি ত্তুলবা। তাইলেই হবে। ইন্টারভিউ এর দিন টেনশন এর কিছু নাই। জাস্ট তোমার ইউনিভার্সিটি,শহর, সাবজেক্ট,ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এইসব বেপার একটু জেনে যাবা। তাহলেই হবে।

৮.ভিসা পাওয়াঃ ইন্টারভিউ এর পর থেকে ভিসা পেতে অনেকের দেখা যায় ১ মাস এর মত লাগে(যাদের ভাগ্য ভালো)। আবার অনেকের দেখা যায় যে ২-৩ মাস লেগে যায়(ভাগ্য খারাপ-যেমন আমি)। তাই হতাশ হবার কিছু নাই। ভিসা ইনশাল্লাহ হয়েই যাবে। ভিসা রেডি কিনা তা জানতে হলে ওদের সাইট এর ভিসা সেকসনে ওরা রেগুলার আপডেট দেয়।

ঐখানে তোমার অ্যাপ্লিকেশান নম্বর আসে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। শেষকথাঃ ভুলেও কোন রকমের কোন ধরনের কোন প্রকারের দরকার নাই কোন ভিসা প্রসেসিং এজেন্সীকে টাকা দেয়ার। তুমি নিজেই সব কিচু একটা একাই করতে পারবা। তাহলে শুধু শুধু টাকা কেন দিতে যাবা। অনেকে বিভিন্ন জিনিস না জানার ফলে এই সব এজেন্সী তে যায় র গাদি গাদি টাকা দিয়া আসে।

তাই বলতেসি সাবধান এই সব ভাঁওতাবাজ থেকে। সবাইকে অগ্রিম অভিনন্দন… এবং সুখি প্রবাস জীবনের প্রত্যাশায়… ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।