আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিবিয়া যুদ্ধ এবং ইউরোপ

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

আগের পর্বঃ link|http://prothom-aloblog.com/posts/84/123005|লিবিয়া যুদ্ধ এবং আমেরিকা লিবিয়া যুদ্ধ -- কেউ ভালোবাসে, কেউ বা ঘৃণা করে। কিন্তু বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করে যে তাদেরকে এই সংঘাতের ভেতরে তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আর এই যুদ্ধের ভেতর দিয়ে পৃথিবী বোধহয় আমেরিকা-উত্তর দুনিয়াতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যে নতুন দুনিয়াতে আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তাতে বোধহয় আমেরিকার নেতৃত্বে মানবতা-রক্ষার নামে যুদ্ধে হবে না আর, যা হবে তা হবে আমেরিকা-ব্যতীত অন্য কোন দেশের নেতৃত্বে যুদ্ধ।

হয় তো এমনও হতে পারে, লংঘিত মানবতার নামে কোন যুদ্ধ হতে পারে, আবার যুদ্ধ নাও হতে পারে! যদি আমরা ফিরে দেখি ১৯৯০-এর ঘটনার দিকে, তাহলে আমরা দেখব যে প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া ভেঙ্গে যাচ্ছে, আর স্লবোদান মিলোচিভিচ সেই ভাঙ্গন-উম্মুখ দেশটিকে একত্রিত রাখার জন্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে -- তাও আবার পৈশাচিক গণহত্যার মাধ্যমে। সে সময়ে ইউরোপীর দেশগুলোর সরকার বলতে চাইলো যে তারা নিজেরাই এই ঘটনাটি 'দেখবে'। কিন্তু তাদের ভেতরকার অনৈক্য, মত-বিরোধ, সামরিক দূর্বলতা, এবং সর্বোপরি সভ্যতার সংঘাতের কারনে খুনী ও মৃতদের ভেতরে পার্থক্য না করতে পারার কারনে তারা তা করতে পারে নাই। প্রায় দুই বছর ধরে এমন কান্ড চলার সময়ে আমেরিকা এই ব্যাপার থেকে দূরে দূরে থেকে শেষ পর্যন্ত নাক গলায়। তারা ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে সার্বদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।

আর সেটা ছিল মানবতা-রক্ষার জন্য যুদ্ধ। স্মরন করে দেখুন, সেই সময় ছিল একটা স্বর্ণালী সময়। আমেরিকার অর্থনীতি বিকাশমান, বিভিন্ন সূচক উর্ধ্বমুখী। সেই প্রেক্ষিত চিন্তা করলে দেখা যায় যে আজকে আমেরিকার অবস্থা বিশ বছর পরে এসে ভীষন ভাবে বদলে গেছে। আজকের আমেরিকা ইরাক আর আফগানিস্তানের মাটিতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে।

তাদের দুইটি যুদ্ধের একটিও কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য লাভে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এই দুই যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর একটা বড় অংশের বিরাগভাজন হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ২০১০-এর শেষ দিকে এসে পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসাবে গণচীনের আত্মপ্রকাশ। পাশাপাশি আমেরিকার অর্থনীতির দুর্দশা আজকে দুনিয়া জোড়া বহুল আলোচিত একটি বিষয়। সে তুলনায় আজকের ইউরোপের ক্ষুধা যেন বেড়েছে।

তাদের ভেতরকার অনৈক্য আজও বজায় আছে, শ্রেষ্ঠতের তুলনা-বিচারে তারা একে অপরের সাথে টেক্কা দিতে চাচ্ছে। কিন্তু, কোথাও কোন সংঘর্ষে তাদের সামান্য সামরিক শক্তি নিয়ে কিছুই করার সামর্থ্য নেই। তাই তারা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে একত্রিত হলেও কার্যকর কিছুই করতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত আমেরিকার উপরেই নির্ভর করতে তারা বাধ্য হচ্ছে। আমেরিকার কাছে মেক্সিকো যেমন, ফ্রান্স আর ইতালির কাছে লিবিয়াও তেমনই।

তারা তাই চাইবে এই সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব যেন তাদের হাতেই থাকে। এটা প্রয়োজনীয় নয় যে তাদের সেই নেতৃত্বদানের ক্ষমতা আছে কি না? তাদের সেই শক্তিমত্তা আছে কিনা? কোন কিছু বলার শেষ সময় আসে নাই এখনো। লিবিয়া তার দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করে যাবে। দেখা যাক কি হয় আগামীতে। আমেরিকা কি তার প্রাধান্য বজায় রাখতে পারবে, নাকি ইউরোপীয় শক্তির উত্থান হবে আরেক বার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।