একজন ভীরু মানুষ... আমেরিকানদের কাছে যে কাজ অন্যান্যদের থেকে একটু হলেও আলাদা না তা তাদের কাজ হিসেবে গণ্যই হয়না। তারা যেটি করবে তা দেখে অন্যরা হা হয়ে তাকিয়ে থাকবে তাতেই তাদের সুখ। এই আলাদা কিছু করার ভাবনা থেকে তারা মাঝে সাঝেই বিকট কিছু জিনিস আবিষ্কার করে। ঠিক এমন একটি কাজের উদাহরণ ‘হেমলক সোসাইটি’। ১৯৮১ সালে আমেরিকাতে এই সংস্থার জন্ম হয়।
এই সংস্থার কাজ মরতে ইচ্ছুক মানুষকে মৃত্যুর নিত্তনুতুন বা পরীক্ষিত উপায় বাতলে দিয়ে মৃত্যুর পথ সুগ্ম করে দেওয়া। এই সোসাইটির নাম হেমলক সোসাইটি রাখার কারণ হেমলক এমন এক মৃত্যু দূতের নাম যার সাথে জড়িয়ে আছে এক মহামনীষী “সক্রেটিস” এর মহাপ্রয়াণ।
হেমলক এমন এক চিজ যার প্রয়োগে এক ফেরেশতার দেখা পাওয়া গ্যারান্টেড, ফেরেশতাটির নাম আপনি যেটি ভাবছেন সেটি তাই- “আজরাইল”। আশা করছি আপনি আমার লেখার শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত নন। আসুন এবার সেই ফেরেশতা দর্শন করানেওয়ালা-র সর্ম্পকে কথা বলি।
হেমলক এর মূল দেখতে অনেকটাই গাজর এর মত; অফ সিজনে বাজারে তুললে চড়া দামে বিষ কিনে বাসায় ফিরবেন নিশ্চিত।
এদের বেশি দেখা পাওয়া যায় উত্তর আফ্রিকা,পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্ছলে। তাছাড় ও অষ্টেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নর্থ আমেরিকাতেও এদের দেখা পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও এদের চাষও হয়ে থাকে।
গ্রীকদের ধারণামতে হেমলক এমন এক বিষ যার প্রয়োগে মৃত্যু যন্ত্রণা তুলনামূলক কম।
প্লেটোর লেখা সক্রেটিসের মৃত্যুকালীন বর্নণা থেকেও সেরকমই কিছুটা মনে হয়। হেমলকের পুরো গাছই প্রায় বিষাক্ত, তবে বিষ হিসেবে এর মূল ভীষন সরেস। এর রস চা বা যেকোন পানীয়তে মিশিয়ে দিলে কেউ বুঝবে না কিন্তু কম্ম কাবার কারণ এর স্বাদ মিষ্ট। অনেকে তাই একে ভালবেসে আদর করে মিষ্টি বিষও বলে থাকে।
এর মূল বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী উপাদানের নাম “কোনিন” যা প্রাণীর সেন্ট্রাল নার্ভাস সিষ্টেম কে অকার্যকারী করে ফেলে, ফলে পেশিসমূহ প্যারালাইজড হয়ে যায় যার দরুন ব্রেন ও হার্ট-এ অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় ও মৃত্যু ঘটে।
উল্লেখযোগ্যভাবে ধূমপায়ীদের জন্য সুখবর হচ্ছে এই কোনিন ও সিগারেটের নিকোটিন সর্ম্পকে চাচাতো-মামাতো ভাই, তাই ধূমপায়ীদের ও ফেরেশতা দেখার পথ বেশ সলসলে।
সেই গ্রীকদের আমল থেকে মৃত্যুদন্ড কাজে হেমলকের ব্যবহার শুরু করে একে মানুষ বিষ হিসেবে চেনে কিন্তু এর ঔষধি ব্যাবহারও কিন্তু প্রাচীন। মূলত অ্যাংলো স্যাক্সান-রা প্রথম একে ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার করে; এমনকি এই হেমলক নামটা ও অ্যাংলো স্যাক্সানদের দেয়া। আরব ও গ্রীক-রা চেতনা ও ব্যাথা নাশক হিসেবে হেমলকের বহুল ব্যাবহারকারী।
হেমলক এমন এক নাম যার সাথে জড়িয়ে আছে নানা রথী-মহারথীর নাম আর তাই এর সাহিত্য মূল্যও কম নয়।
শেক্সপিয়ারের কিং লেয়ার, জন কিটসের ওড টু আ নাইটঅ্যাংগেল বা রুশ ছবি দ্যা পেনকভ অ্যাফেয়ার, টপ গান আর হেমলক সোসাইটির মত বিখ্যাত মুভি ও শিল্পকর্মে হেমলক এর দেখা মেলে।
কিটসের কবিতার দুটো লাইন দেবার লোভ সামলাতে পারলাম নাঃ
My heart aches, and a drowsy numbness pains
My sense, as though of hemlock I had drunk;
ফেরেশতা দেখা খুব একটা বড় বিষয় না, দেখার সময় হলে না দেখতে চাইলেও ফেরেশতা দেখা দেবে। তার চেয়ে বড় বড় বিষয় সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেখার ও চেনার জন্য রেখেছেন। চারপাশে নানা ধরণের হেমলক এর মত মিষ্টি বিষ ছড়িয়ে আছে, আসুন তাদের চিনি; নিজে বাঁচি আর অন্যকেও বাঁচায়।
(হেমলকের দুটো ছবি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু বারবার ইনভ্যালিড ফরম্যাট দেখায় তাই দিতে পারলাম না)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।