আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোঝাপড়া..

আমার 'কলম' আজো আছে আমার সাথে, আমার কষ্টের সঙ্গী হয়ে,আমার সুখের ভাগ নিয়ে দেনা-পাওনা চুকিয়ে,এক চিলতে হাসি হয়ে... অফিস ছুটির সময় প্রায় হয়ে এলো বলে,শেষ মূহুর্তের ছুটোছুটি চলছে এখন সব গুলো ফ্লোরে। সবাই ব্যস্ত,রাহাত সাহেব দ্রুত হাতের কাজ শেষ করে প্রজেক্ট ফাইলটা নিয়ে নাফিসা ম্যামের রুমে গেলেন,বরাবরের মতো ম্যাম একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। রাহাত পরিস্কার গলায় বলল, ---ম্যাম,ইমপ্রেস গ্রুপের সাথে যে প্র্জেক্ট টা হচ্ছে তার খসড়া দেখিয়ে সাইন করাতে বলেছিলেন,ফাইলটা নিয়ে এসেছি,আশিক স্যার ও দেখে দিয়েছেন,জাস্ট আপনার সাইন দরকার। নাফিসা ম্যাম মাথা না তুলেই বললেন, ---ওকে,বাট আজ আর সাইন করতে পারব না,কাল সকালে দেখাবেন। --বাট ম্যাম,আমি কাল ছুটি নিয়েছি,খুব ভালো হয় যদি আজ সাইন করে দেন।

কিছুটা ভ্রু কুঁচকালো নাফিসা! ---কাল কিসের জন্য ছুটি নিয়েছেন আপনি?! রাহাত সাহেব কিছুটা লাজুক ভাবে বললেন, --ম্যাম,পারসোনাল কাজ আছে,আসলে কাল আমাদের ম্যারিজ অ্যানিভার্সেরি,একটু ব্যাস্ত থাকবো। নাফিসা একটু কপাল কুঁচকে ভাবলো,তারপর বলল, --ওকে,দিন সাইন করে দিচ্ছি। রাহাত সাহেব হাফ ছেড়ে বাঁচল যেন! ফাইলে সাইন করতে যেয়ে নাফিসা মনে হলো ধাক্কা খেল,মাথা তুলে কিছুক্ষন সামনের দিকে তাকিয়ে রইল,তারপর আবার রাহাত সাহেবের দিকে তাকালো, --রাহাত সাহেব আজ কি ২৮তারিখ? --জ্বী ম্যাম। --ওহ!ওকে... রাহাত কিছুটা অবাক হল!সারাদিন পর এখন কয় তারিখ আজ সেটা জিজ্ঞেস করছে নাফিসা! অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে না উঠে রিকসা নিল,নাফিসা। রিকসায় উঠার পর নাফিসা নিজেই একটু অবাক হয়!সে রিকশায় কেন উঠেছে!নাহ...!কি যে হচ্ছে,কি যে সে করছে নিজেও বুঝতে পারছে না!যাই হোক,উঠে যখন গেছে আর কি করা! পল্টনের মোড়ে এসে রিকশা ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ল,নাফিসা প্রচন্ড গরমে ঘামতে লাগল।

বিরক্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই সামনের রিকশায় একটা কাপল চোখে পড়ল। স্বামী-স্ত্রী কি না বুঝতে পারল না,দু'জনকে মানিয়েছে বেশ,একই কালারের ড্রেস পড়েছে!কোন বিশেষ উপলক্ষ্য আছে হয়তো। কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে আপনমনে হাসল নাফিসা। হঠাৎ মনে পড়ল আজ আঠাশ তারিখ!নাফিসা কিছুটা থমকে রইল। ধীরে ধীরে মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল,বিস্বাদের ছায়া সেখানে জায়গা করে নিল,কতক্ষন এভাবে রইল ঠিক জানে না নাফিসা, কিছুক্ষন পর আবিস্কার করল,ও প্রেসক্লাব পাড় হচ্ছে।

নাফিসা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো,আকাশ এখন অনেকখানী আধারে ঢেকে গেছে,কিন্তু এখনো কিছু আলো রয়েছে সেখানে,অনেকটা ফিঁকে আলো। জীবনের এই প্রান্তে এসে আজ নাফিসার মনে হচ্ছে,ওর জীবনের আলো ও অনেকটা ফিঁকে..অস্পষ্ট। এই আলোতে না পথ দেখা যায় না প্রত্যাশা করা যায়। এই আলো কিছুই উদ্ভাসিত করতে পারে না, যতই দিন যায়,সময়ের রঙ টাকে ততোই ফিঁকে করে দেয়.. বাসায় ফিরে আজ অনেকদিন পর বারান্দায় এসে বসল নাফিসা। অনেকদিন পর খোলা চুলে অন্ধকার বারান্দায় পায়চারী করতে লাগল...কি ভাবছে নিজেও জানে না।

কারো ছায়া পাশে দেখতে পেল নাফিসা। মাথা তুলে তাকালো,মায়া ভাবী দাঁড়িয়ে আছে। একটু হেসে ভাবীর দিকে তাকালো, --কিছু বলবে ভাবী? --হুম,আজ অনেকদিন পর তোমাকে বারান্দায় দেখলাম,অনেকটা উদাসভাবে। কি হয়েছে? মন খারাপ? --কিছুটা। মায়া কিছু না বলে চুপ করে রইল।

তারপর আস্তে আস্তে হেটে ভেতরে চলে গেল। নাফিসা আবারো হাটতে লাগল। হঠাৎ আপন মনেই বলতে লাগল, আজ ২৮তারিখ!আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। অথচ আমার মনেই নেই!আর মোবাইলে ও তো কোন এসএমএস আসলো না..! তাহলে কি তপু ও ভুলে গেল! --শোন,তোমার আর তপুর বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে,সামনের মাসের ২৮তারিখ! আম্মুর মুখ থেকে কথাটা শুনি মুখে পানি নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল নাফিসা!কিছুক্ষন পর কথা বলার জন্য হা করতেও মুখ থেকে পানি পড়ে গেল!কিন্তু সেদিকে কোন খেয়াল নেই.. --আম্মু এইটা কি ডেট ঠিক করলা তোমরা!আআঠাআশ তারিখ! এক্কেবারে মাসের শেষে!ধুর!! আম্মু হাসলেন একটু, --কেন?মাসের শেষে হলে সমস্যা কি?প্রস্তুতির তো একটা ব্যাপার আছে.. --আরে ধুর আম্মু!মাসের শেষ বিয়ে করে মানুষ!নাহ,হইল না! ভাবছিলাম,ভালো একটা দিনে বিয়ে করবো!তা আর হইল না..! মানুষজন তো মনে হয়না,আমার বিয়ে খেতে আসবে!বলবে মাসের শেষ টাকা নাই!ছি ছি ছি! --কি সব উদ্ভট কথা যে বলিস না!এই বিয়ে করবি না করবি না আবার এখন বলিস এতো দেরিতে ডেট কেন!বুঝিনা বাপু আমি! --আহারে আম্মু,তুমি যদি বুঝতা!তাইলে কি আর দুঃখ থাকতো! মাথায় একটা চাটি মেরে আম্মু বলল, --থাআক,আর দুঃখ দেখাইতে হবে না...হুহ! অনেকদিন পর এসব কথা মনে করে আপনমনেই হাসতে লাগল নাফিসা...দেখতে দেখতে অনেক হৈ হুল্লোরের মধ্যদিয়েই বিয়ে হয়ে যায় ওর আর বড় ভাইয়ার বন্ধুর ছোট ভাই তপুর। তপুর সাথে নাফিসার কথা হয়েছিল,ভাইয়ার বন্ধুর বোনের বিয়েতে।

ভাবীর কথা মতো শাড়ী পড়ে অনেকটা বেহাল দশা নিয়ে বিয়ে বাড়িতে কি যেন খুঁজচ্ছিল নাফিসা,তা দেখে তপু এগিয়ে এসে বলল, --কোন সমস্যা?'নাফিসা ওর দিকে না তাকিয়েই বলল, --হুম --কি সমস্যা?আমাকে বলুন''নাফিসা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, --কেন?আপনাকে বলব কেন? --না মানে বললে হেল্প করতে পারব মনে হয় --ওহ,আচ্ছা!ওকে,শুনেন,আজকের রান্নার বাবুর্চি কে জানেন?আমি তাকে খুঁজছি। --জ্বী!তাকে কেন খুজচ্ছেন?! --কারন,সে আজকে বোরহানীতে একটু ও ঝাল দেয়নি!এই বোরহানী মানুষ খায়?!!সেই জন্য তাকে খুজছি! তপু প্রথমে ভেবেছিল এই মেয়ের মনে হয় ঘাড়ের রগ ত্যারা!এখন মনে হচ্ছে মাথার তার ও ছিড়া!অনেক কষ্টে হাসি চেপে বলল, --ও আচ্ছা!বাট উনিতো মনে হয় তার ম্যানেজারকে দায়িত্ব দিয়ে চলে গেছেন,আচ্ছা,আমি অনুষ্ঠান শেষে সে আসলে তাকে বলব। '' নাফিসা চোখ ছোট করে তপুর দিকে তাকালো, --আপনাকে বলতে হবে না,আমি নিজেই বলব,কারন আমি তাকে ভালো মতো চিনি,বলেন তো এখানকার হেড বাবুর্চির নাম কি? তপু ভ্যাবাচেকা মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলল, --স্যরি জানিনাতো!''নাফিসা এবার হাঁটা শুরু করে দিল,হাটতে হাটতে বলল, --তার নাম হালিম বাবুর্চি,আমাদের বাসার বেশির ভাগ অনুষ্ঠানে উনিই রান্না করেন,সে জন্যই তো রাশেদ ভাই উনাকে এখানে রেখেছেন,রাশেদ ভাই আমার ভাইয়ার বন্ধু... বলতে বলতে চলে গেল নাফিসা। তপু আরো কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। সাদামাটা পরিচয় থেকেই শুরু হয়েছিল তপু আর নাফিসার গল্পটা।

সেদিনের পরেই রাশেদ ভাইয়ের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল নাফিসাদের বাসায়। বাসার সবার পছন্দ ও হয়,নাফিসা ও রাজী হয়ে যায়। নাফিসা হুটহাট কাজ করে ফেলা টাইপের মেয়ে,কিছুটা ছেলে মানুষী ভাব আছে আর সেই সাথে আবেগী। অন্যদিকে তপু ঠান্ডা মাথার মানুষ!সচেতন ভাবে,অনেক কিছুই সে মাথায় রেখে কাজ করে,আর নাফিসার এতো ভাবনার সময় নেই,মনে আসছে,ঠিক মনে হয়েছে করে ফেলেছে... নাফিসার এরকম স্বভাবকে তপুর কাছে হেয়ালী আর অবহেলা মনে হতো। অন্যদিকে তপুর স্বভাব গুলোকে নাফিসার কাছে বেশী বোরিং মনে হতো... বিয়ের প্রথম একবছর এ নিয়ে অনেক বোঝাপড়া চলত দু'জনের মধ্যে।

নাফিসার মনে হতো,ওর কোন কিছুই তপুর পছন্দ না। যা করে তপু সব কিছুতেই ভুল ধরে...!কেন এমন করে ও?!একটু কি বুঝবে না ওকে?... অন্যদিকে তপু...?নাফিসাকে নিয়ে তার চিন্তার অন্ত নেই...!মেয়েটা এখনো ছোট মানুষের মতো করে,বিয়ে হয়েছে,সংসারের দায়িত্ব আছে ওর মাথায় কথাটা মনে হয় তার মনেই থাকে না...!এমন হলে কেমন করে চলবে...?!একটা না একটা ভুল সব সময় করেই যাচ্ছে,একটা ম্যাচিউরড মেয়ে হিসেবে কেন যে নিজেকে ভাবে না তপু সেটা ভেবেই কূল পায় না...! ধীরে ধীরে হাসি-খুশী,চঞ্চল নাফিসা,অনেক চুপচাপ হয়ে গেল সেই সাথে নিজের ভেতর নিজেকে অনেকখানী গুটিয়ে নিতে লাগল। পড়াশুনা,সংসার,আত্নীয়-স্বজন এসবের মাঝেই নিজেকে ডুবিয়ে দিল। নিজের শখ,পাগলামী টাইপ অভ্যাস গুলোকে বাস্তবতার সিন্দুকে তালা মেরে রাখল। ধীরে ধীরে তপু ওর প্রতি সন্তুষ্ট হতে লাগল।

তপুর পরিবারে থেকেও নাফিসার ব্যাপারে অভিযোগ কমে আসল। কিন্তু বিশাল আকশের এক কোনে একটু একটু করে যে মেঘ কালো হয়ে জমতে লাগল তা আর কেউ খেয়াল করলো না। হয়তো নাফিসা নিজেও বুঝেনি ঐ কালো মেঘ থেকে এতো বড় ঝড় শুরু হবে কখনো... পড়াশুনা শেষ করে চাকরীতে ঢুকল নাফিসা,তপুর এ ব্যাপারে খুব একটা আপত্তি ছিল না,যেহেতু সংসারে এখনো বাচ্চা-কাচ্চা আসেনি সুতরাং বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করুক । আর তাছাড়া তার নিজের ব্যাস্ততাও দিন দিন বাড়ছে,তাই আর বেশি কিছু বলেনি। চাকরীতে ঢুকার পর নাফিসার মনে হলো,সে অন্য এক দুনিয়াতে এসেছে...!অনেকদিন পর মনে হলো,একটা বন্দী পাখী খাঁচা মুক্ত হলো!আর তাই করপোরেট দুনিয়ার ব্যাস্ততার মাঝে নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিল সে।

নিজের যোগ্যতা আর চেষ্টা দিয়ে অল্প সময়েই প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে চলে আসল নাফিসা। কিন্তু জীবন আর করপোরেট দুনিয়া এক হয় না,জীবনকে জীবনের মতোই সাজানো উচিত,সব কিছুর সমান সমাহার না হলে জীবন খাপছাড়া হবে এটাই স্বাভাবিক। একটা বাচ্চার জন্য তপু যেন পাগল হয়ে উঠেছে...বিয়ের তিন বছর পেরিয়ে গেছে,এবার একটা বাচ্চা চাই। কিন্তু নাফিসার হাতে এখন সময় নেই,সময় নেই নাকি ইচ্ছে নাই কে জানে,তবে নাফিসা এতটুকু জানে,সংসারের সেই কঠিন জগতে আর সে ফিরে যেতে চায় না। এই করপোরেট জগতে সে তার সিদ্ধান্তের মূল্য পেয়েছে,সম্মান পেয়েছে,কিন্তু সংসারে? তপু তো কোনদিন ই ওর মতামত জানতে চায়নি,তপুর কাছে তো সে অযোগ্য!আবেগী মানুষ! তপুর পরিবারের কাছে তো সে ,সংসার সম্পর্কে উদাসীন একটা মানুষ...! নাফিসার মাথা কাজ করে না যেন...!বিয়ের পর যতবার বাবার বাড়ি এসেছে,তপু আর ওর পরিবারের লোকদের অভিযোগের কারনে মা-আপুর কাছে বকা শুনেছে সে!ওর বাড়ি থেকে যে ই ওর বাসায় গেছে,নাফিসার সম্পর্কে অভিযোগ না শুনে আসেনি।

নাহ,এই জীবনে নাফিসা আর ফিরতে চায় না...কোনভাবেই না। তারপরের সময় গুলো ঝড়ের বেগেই চলে গেছে বলা যায়। নাফিসা আলাদা বাসা ও ঠিক করে ফেলেছিল,আর তপুও ডিভোর্সের কাগজ রেডি করেছিল,শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে সব শেষ হওয়া বাকী...সেই সময়ই হঠাৎ করে বাঁধ সাধল মায়া ভাবী। অনেক রিকোয়েস্ট করে ডিভোর্স আটকালেন...দু'জনকে পাশে বসিয়ে অনেক বুঝালেন ভাবী, ''দেখো,আমি জানি তোমাদের দু'জনের ই যথেষ্ঠ বয়স হয়েছে সিদ্ধান্ত নেবার মতো,দু'জনেই ম্যাচিউরড তারপরেও বলছি আরেকবার ভেবে দেখো,আরেকটু সময় নাও। তোমাদের দু'জনেরই দু'জনের বিপক্ষে অনেক অভিযোগ,এবং সেগুলো অমূলক তাও বলছিনা।

কিন্তু তারপরেও সব কিছুর সমাধান ডিভোর্স হতে পারে না। দোষ দু'পক্ষেরই আছে,তোমাদের উচিত তা বের করে সেগুলকে সংশোধন করার চেষ্টা করে,আর কিছু না পারো অন্তত চেষ্টা তো করতে পারো একবার,নিজেদের কথা না ভাবো,অন্তত দুই পরিবারের কথা ভেবে...প্লিজ,একটু চেষ্টা করো দু;জন দু'জনের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবতে,আরেকবার শুরু থেকে নতুন করে...একটু সময় নাও...'' তারপর কেটে গেছে অনেক গুলো সময়... আজ নাফিসা আর তপুর বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ন হলো। গত দেড় দু'বছরে নাফিসা অনেকবার চেষ্টা করেছে জীবনটা কে ভীন্ন ভাবে ভাবতে,কিন্তু পারেনি। আর দশটা সাধারন মেয়ের মতোই নিজেকে ভাবতে ভালো লাগে নাফিসার...কাজের চাপে পড়ে প্রায়ই মনে হয়,এর থেকে ঐ সংসার জীবনই অনেক ভালো ছিল। এখানে তো পাশে কেউ নেই আর ওখানে?সবাই ছিল...সব ছিল।

শুধু সঠিক ভাবে ও বুঝতে পারেনি,তপুও বুঝতে পারেনি। কিন্তু তপুর তরফ থেকে কোন সাড়া পায়নি নাফিসা। আর তাই নিজে থেকে আর ক্ষমা চাওয়া হয়নি। তবে আজকাল কেন জানি তপুকে বেশীই মিস করে সে...মনে হয়,মানুষটা তো বেশী ইগো ওয়ালা,মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু বলছে না...আসলে তপুর একটা রুপই সব সময় ও দেখেছি হয়তো চেষ্টা করলে ভিন্ন রুপও দেখতে পেতো...ভালোবাসায় কি না হয়...কিন্তু কখনো আসলে ওভাবে ভাবতে ইচ্ছে হয়নি। তপুও কি এভাবে ভাবে?কে জানে...!ভাবে হয়তো...!জানার চেষ্টা তো করা হয়নি কখনো... ''অনেক রাত হয়ে গেছে নাফিসা,ভেতরে এসো''।

ভাবীর ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে,রুমে এসে দেখে রাত ১১টা বাজে। মোবাইল চেক করল,নাহ,কোন খবর নেই। একটা এসএমএস ও করেনি তপু। যাকগে..সে নিজেই একা একা সেলিব্রেট করবে নিজের এনিভার্সেরি। অনেকদিন পর ডিপপেষ্ট কালারের শাড়ি পড়ল একটা,এই রংটা ওর খুব প্রিয়,কিন্তু তপুর কখনোই পছন্দ ছিল না।

এ নিয়েও বোঝাপড়া কম হয়নি...শাড়িটা পড়ে চুল বাঁধতে বাঁধতে কলিংবেলের আওয়াজ পেল নাফিসা,এত রাতে কে এলো!হবে কেউ...মনোযোগ আবারো সাজের দিকে ফেরালো...কাজল দিবে কি দিবে না এই নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল! ''কাজল দিলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে,এই কথাটা কতোবার বলেছি। মনেই থাকে না...নাহ,কবে যে বুঝবা!'' প্রচন্ডভাবে চমকে পেছনে ফিরল নাফিসা!!দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে... নাফিসা হতভম্ভ হয়ে গেল!কি করবে ঠিক বুঝতে পারল না...! তপু আস্তে আস্তে ওর সামনে এসে দাড়ালো,ওর কানের কাছে মুখটা আস্তে করে বলল,''হ্যাপি এনিভার্সেরি বউ!স্যরি,আমি না আসলে ভুলে গিয়েছিলাম,ঘন্টাখানেক আগে মনে পড়ল আর দৌড়ে চলে আসলাম...'' নাফিসা কিছু না বলে চুপ করে রইল,তপু তা দেখে একটু অবাক হলো! ''কি হলো?!উইশ করবা না?সময় কিন্তু শেষ প্রায়...'' নাফিসা চোখ ছোট করে ওর দিকে তাকালো তারপর ওর সামনে এসে,দুই হাতে তপুর গাল টানতে টানতে বলল, ''হ্যাপি এনিভার্সেরি পঁচা জামাই,আমিও আজকে ভুলে গিয়েছিলাম বিকেল বেলা মনে পড়ল,তারপর থেকে ওয়েট করছিলাম আর রাগ হচ্ছিলাম,...' --আআআইইই,হইছে হইছে ভালো বউ,ভুল হইছে আর হবেনা স্যরি..!স্যরি..! এখন রেডি হও আজকে গাড়ি নিয়ে আসছি লং ড্রাইভে যাবো..আপনার অনেক দিনের শখ তাইনা ম্যাম?যাও দ্রুত রেডি হও...! হাসতে হাসতে আবার আয়নার দিকে ফিরল নাফিসা।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।