আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু,এবং আমার ভাবনা

আমি একজন ছাএ আসলে কিছুই বলার নাই । গত কয়েকদিনে ব্লগ আর ফেসবুকে যা আলোচনা হল তাতে মনে হল আমাদের ছোট ভাই তৌহিদ বাসচাপায় মারা যেয়ে এক মহা অপরাধ করে ফেলেছে । কিছু বিশেষ টাইপ লোকজন তাকেই দোষ দিচ্ছে সাথে আমাদেরকেও । কেন আমরা এর প্রতিবাদ করলাম এজন্য । প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী তারেক মাসুদের আহত স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদকে বলেছিলো “আপনাদের ড্রাইভার এর দোষ” ।

তখনো এই ব্লগ ও ফেসবুকেও তুমুল সমালচনার ঝড় উঠেছিলো এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রদানের জন্য । আজ যারা বলছেন তৌহিদের দোষ, তারাও হয়তো আবুলের সেই মন্তব্যের তুমুল প্রতিবাদে মেতেছিলেন ব্লগ ফেসবুকে । কিন্তু আমরা সাধারণ ছাত্ররা আজ জোটবদ্ধ হয়ে কেন তৌহিদের জন্য শোকপ্রকাশ করলে মৃত তৌহিদকে গালাগালি শুনতে হয় । হ্যাঁ । শুনতে তো হবেই ।

তৌহিদ তো আর বিখ্যাত বা প্রখ্যাত কেউ না । আমাদের ক্যাম্পাসের মত প্রশস্ত রাস্তা ঢাকা শহরে তেমন নাই । আমাদের ভার্সিটিতে কোটিপতিদের সন্তান পড়ে না । গাড়ি নিয়ে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা । শিক্ষকরা যারা গাড়ি নিয়ে আসে তাদের গাড়িতে স্টিকার লাগানো থাকে ।

কিন্তু ক্যাম্পাসে প্রতিদিন প্রবেশ করা গাড়ির সংখ্যা শত শত । বিকল্প রাস্তা থাকা সত্ত্বেও জ্যাম কাটানোর জন্য তারা ঢুকে পড়ে এই এলাকায় । আমরা ক্লাস করে টিএসসি তে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হই ভয়ে ভয়ে । কেন আমাদেরকে ভয় পেতে হবে? আমরা কি শান্তিতে রাস্তা পার হওয়ার অধিকার রাখি না? নিরপরাধ মালিকের গাড়ি ভাঙ্গা সমর্থনযোগ্য নয় । তবে গাড়ি ভাঙ্গায় একটা লাভ হইসে ।

কিছুদিন বহিরাগত গাড়িগুলো ক্যাম্পাসে ঢুকতে ভয় পাবে । অন্তত কিছুটা দিন আমরা শান্তিতে রাস্তা পার হতে পারব । মির্জা খালেদ নামক এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের মৃত তৌহিদ কে গালি দিয়ে করা পোস্ট এর পরে আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা অনলাইনে উত্তপ্ত হয়ে উঠি । তার গালাগালিটা শোভন ছিলো না । তারপর থেকে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশ উত্তপ্ত হয়ে আছে অনলাইনে ।

কয়েকবছর আগে এক শিক্ষকের স্ত্রী সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলেন । তার গায়ে গাড়ি তুলে দেয় জনৈক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী যে কিনা গাড়ি চালানো শিখছিলো । হায় রে বাংলাদেশ । সত্যি এ এক হীরক রাজার দেশ । যাই হোক, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ম্যানার নিয়ে প্রশন তুলেছেন তাদের বলছি ।

ভাইরে, কিছু হইলেই তো এই ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন । উৎসব গুলোতে ফোন দেন ক্যাম্পাসের বন্ধুদের কনসার্ট আছে নাকি... পহেলা বৈশাখ তো সারা দেশেই পালিত হয় । আমরা আমাদের মত করে পালন করি । আপনারা এসে ভীর করেন । ৩৫০০০ হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাস পরিণত করেন ১ লাখ লোকের ক্যাম্পাসে ।

কথায় কথায় বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়াশোনা হয় না । খালি প্রেম হয় । অথচ গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে ডেটিং করতে ভেন্যু হিসেবে টিএসসি কেই বেছে নেন । বলেন পড়াশোনার পরিবেশ আর নাই । অথচ বাহির থেকে অনার্স করে এই ক্যাম্পাসের একটা মাস্টার্স ডিগ্রী নিতে পারলে ফেসবুকে সবার আগে এডুকেশন ইনফরমেশন পাল্টায়ে দেন ।

সত্যি বললাম কি না? একটু ভদ্রতা শিখেন । আমি কিন্তু হাতে গোনা দুই একটা সরকারি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে কাউকে গোনায় ধরি না । হ্যাঁ । আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরেছি বলেই এটা বলতে পারছি । কপাল গুনে হয়তো আমাকেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হতে পারতো তা হোক সরকারি বা বেসরকারি ।

তবে এই ক্যাম্পাসের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জায়গাতে কোন কমতি ছিলো না । অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কেমন বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বা জগন্নাথের আন্দোলনে বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন বৃদ্ধিতেও কিন্তু আমরা নৈতিক জায়গা থেকে আপোস করি না । আপনাদের পাশে থাকি । আপনারা না থাকতে চাইলে প্রবলেম নাই । আমরাই যথেষ্ট ।

কেউ রাগ করলে কিছু করার নাই । জগতে সকল প্রাণী সুখী হোক । এটাই হোক আমার প্রার্থনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.