আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘সত্যায়িত অনুলিপি’র প্রয়োজন আছে কি ?

অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে ‘সত্যায়িত অনুলিপি’ কথাটির সাথে আমাদের পরিচয় অনেক দিনের। আমরা attested শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবেই বাংলায় সত্যায়িত শব্দটি ব্যবহার করি। attestation মূলত এমন একটি ধারণা যা প্রধানত আইনি প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। যখন কেউ কোন কাগজপত্রে সই করেন (বিশেষ করে আইনি কাগজপত্র), তখন সাধারণত সই এর উপর একটি স্টে’টম্যান্ট থাকে যে যিনি সই করছেন তিনি নিজের ইচ্ছায়, বল প্রয়োগ ছাড়াই (এ ধরণের আরো প্রাসঙ্গিক কথা থাকতে পারে) সই করছেন। যেমনটা এফিডেভিট এর বেলাতেও দেখা যায়।

এই জায়গায় স্বাক্ষরকারীর স্ব-ইচ্ছা জ্ঞাপক টেকনিক্যাল শব্দমালা হল “I hereby attest that...” কিন্তু অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার যে আমাদের এখানে, এবং আমার জানামত প্রতিবেশী ভারতেও, attestation এর ধারণার সাথে জড়িয়ে আছে জাতীয় চরিত্রে মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং অসততার উন্মুক্ত সন্দেহ। আমাদের এখানে attestation এর ধারণা তার মূল থেকে পালটে গিয়ে দাঁড়াল ‘সত্যায়ন’। সব সরকারি জায়গায় এবং অনেক প্রাইভেট সেক্টরে চাকরির আবেদন করার সময় নিজের অর্জিত সনদগুলোকে বিশেষ কেউ ‘সত্যায়িত’ করে দিলেই কেবল তা গ্রহণযোগ্যতা পায়। অর্থাৎ ধরেই নেওয়া হয় সব চাকরিপ্রার্থী মিথ্যাচার করবে, কাজেই ‘সত্যায়ন’ প্রয়োজন। এই ‘সত্যায়ন’ প্রক্রিয়ার প্রকৃত প্রয়োজনটা আমার বোধগম্য নয়।

চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে শেষ পর্যন্ত মূল সনদপত্রগুলো কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির করতেই হয়। কাজেই, আগের ‘সত্যায়ন’ প্রক্রিয়া বাহুল্য বলেই মনে হয়। এই ‘সত্যায়ন’ প্রক্রিয়া যে কতটা মিথ্যায় ভরা তা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরোটা জুড়েই দেখেছি। মাঝ খান থেকে নীলক্ষেতের সিল বানানোর দোকানগুলো কিছু লাভবান হয়। ক্যাম্পাস লাইফে এই সত্যায়ন প্রক্রিয়ার অসারতা নিয়ে একটা স্যাটায়ার মঞ্চস্থ করার ইচ্ছা ছিল।

হয়ে ওঠেনি। প্লটটা মাথায় ছিল। আর এগোয়নি। প্লটটা ছিল এরকম- সদ্য স্নাতক পাশ করা এক মিঃ বিন টাইপ ছাত্র/ছাত্রী ভাল একটা সরকারি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করতে চাইল। কিন্তু যখন দেখল ‘সব সনদের সত্যায়িত অনুলিপি জমা দিতে হবে’, তার খুব মন খারাপ হয়ে গেল।

সে চিন্তা করে দেখল তার কোন সনদে যেহেতু কোন মিথ্যা নেই, কেউ তো তার সনদ সত্যায়িত করে দেবে না। একবার ভাবল, যা থাকে কপালে, এই সনদগুলোই সত্যায়িত করে নিয়ে আসা যাক। কিন্তু ভয়ও হল। বিজ্ঞপ্তিতে বোল্ড করে লেখা আছে- ‘কোন প্রকার অসততার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাবে। ’ এখন সত্য জিনিস যদি আবার সত্যায়িত করা হয় সেটা তো এক ধরণের অসততাই।

পরে যদি তার তদন্তে পায়, যে সনদটা সত্যায়িত করা হয়েছে তা মূলত সত্যই ছিল তাহলে তো চাকরিটা হবে না। কিন্তু চাকরিটা বেশ ভাল। সে অনেক চিন্তা করে একটা উপায় বের করল। একটা গোপন সোর্স খুঁজে নিজের নামে একটা জাল সনদ তৈরি করিয়ে নিল। এবং বেশ খুশি মনে ভাবতে লাগল – যাক এবার নিয়ম মেনেই আবেদন করা যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।