আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাভাবিক মৃত্যু চাই, 'মেধাবী' ছাত্র হতে চাই না

শাহবাগে ঢাবির জনৈক ছাত্র গাড়িচাপায় মারা গেছে। হয়তো অস্বাভাবিক কিছু নয়, স্বাভাবিক। প্রতিদিনই কেউ-না- কেউ তো গাড়িচাপায় মারা যাচ্ছে, এর মধ্যে আজকের জন ঢাবির ছাত্র ছিল। কী প্রতিক্রিয়া জানাব? কী প্রতিক্রিয়া আর জানাব! শাহবাগ তো শাহবাগ, খোদ ঢাবি ক্যামপাসের ভেতরেই পাবলিক বাস, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাসগুলো যে গতিতে চলে; তাতে আমিও প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয়ে ভীত থাকি। ডাস বা রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে রাস্তা পেরোতে ভয় হয়।

ঢাবির ভেতর দিয়ে যেখানে পাবলিক বাস চলাচলের নিয়ম নেই, সেখানে দানবাকার ট্রাকও মাঝেমধ্যে ঢুকে পড়ে! তখন কোথায় থাকেন মহামতি প্রক্টর? উপাচার্যকে লাগে না, এক প্রক্টর শাহবাগ আর নিউ মার্কেট থানাকে বলে দিলে ঢাবির ভেতরে একটা অবাঞ্ছিত গাড়িও ঢুকতে পারত না। সেখানে কী করেন উপাচার্য? কী করেন উপ-উপাচার্য? কী করেন প্রক্টর? এদের প্রত্যেককে আমরা চিনি। আগে নাকি একজন ছাত্রের মারা যাবার খবর শুনলে শত শত শিক্ষক ঘটনাস্থলে, হাসপাতালে, ছাত্রের বাড়িতে ছুটে যেতেন। এখন শিক্ষকেরা টিভিতে ছাত্রের মৃত্যুসংবাদ শুনে চ্যানেল ঘুরিয়ে অন্য চ্যানেলে চলে যান! কোন্ অধঃপাতে গেছে শিক্ষককূল! জীবন কত কঠিন, মরণ কত সহজ! সলজ্জ উপাচার্যেরা এখন ব্যস্ত নির্লজ্জ সরকারতোষণ আর পদলেহনে, প্রক্টরেরা ব্যস্ত উত্সব- পার্বণে ক্যামপাসের কনসার্টগুলোয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে কমিশন আদায়ে, সাধারণ শিক্ষকেরা ব্যস্ত খ্যাপে! ছাত্রদের নিরাপত্তাবিধানের সময় কোথায় উপাচার্যের-প্রক্টরের? ছাত্রদের সুখদুঃখে সাড়া দেয়ার সময় কোথায় শিক্ষকের-প্রোভোস্টের? গত সমাবর্তনের গাউন বিতরণের সময় প্রক্টরের যে ন্যাক্কারজনক মাস্তানি দেখেছি, তাতে 'প্রক্টর' শব্দটা উচ্চারণ করতেও আমার ঘেন্না হয়, মাথা হেট হয়ে আসে। প্রক্টরকে আমি ট্রাক্টর বলি।

এই শাহবাগ মোড়েই তিন-চার বছর আগে এলইডি পরদা বসিয়ে বিজ্ঞাপন দেখানো হতো, পথচারীরা হাঁ করে তাকিয়ে বিজ্ঞাপন দেখত আর গাড়ির নিচে পড়ত। ছাত্ররা আন্দোলন করে সেই অভিশপ্ত পরদা সরিয়েছে। সেখানে কোনো ভূমিকা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়! ২০০৪ সালে মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী হ্যাপি নিহত হবার পর ব্যাপক ভাঙচুর হলো, দাবি উঠল শাহবাগে ওভারব্রিজ নির্মাণের। নির্মিত হলো। কোথায় হলো? শিশু পার্ক থেকে বারডেমে! দু গাছি বালকে জোড়া লাগিয়ে একগাছি ওভারব্রিজ হলো।

দুর্ঘটনা হলে মোড়ে, ওভারব্রিজ হয় শিশু পার্ক পয়েন্টে! কী চমত্কার! দাবি ছিল শাহবাগ মোড়ে মগবাজার- যাত্রাবাড়ির মতো চতুর্মুখী ওভারব্রিজের। হয়নি। কেন হয়নি? শাহবাগে চতুর্মুখী ওভারব্রিজ হলে তাতে নাকি জাদুঘরটা ঢাকা পড়ে যাবে এবং নাকি জাদুঘরের 'সৌন্দর্যহানি' ঘটবে! মানুষের প্রাণের চেয়ে জাদুঘরের জাদুর দাম বেশি। আবার বলি চমত্কার, এই ব্যাপারে অমত কার! স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আমি 'মেধাবী' ছাত্র হতে চাই না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.