বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে চাই। বয়কট শব্দটা কোথা থেকে এলো, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। তাহলে কোন দেশে কিভাবে এর উদ্ভব ঘটল? এর পেছনে আছে এক মজার ইতিহাস। শব্দটির উৎসবিন্দু একজন আইরিশ, যার নাম চার্লস কানিংহাম বয়কট। তিনি পেশায় ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন।
বয়কট শব্দের উৎপত্তি কোনো কিছুর বিরুদ্ধে বা কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমরা অনেক কিছুই বর্জন করি। কিংবা ঘৃণা প্রকাশের জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে বর্জন করি। এভাবে কোনো কিছু বর্জন করার কথায় প্রথমেই 'বয়কট' শব্দটি চলে আসে। আমরা কাউকে ত্যাগ করতে চাইলেই বলি 'তোমাকে বয়কট করলাম'। কিন্তু বয়কট শব্দটা কোথা থেকে এলো, তা হয়তো অনেকেই জানি না।
তাহলে কোন দেশে কিভাবে এর উদ্ভব ঘটল? এর পেছনে আছে এক মজার ইতিহাস। শব্দটির উৎসবিন্দু একজন আইরিশ, যার নাম চার্লস কানিংহাম বয়কট। তিনি ছিলেন পেশায় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। যুদ্ধ শেষে বিয়ে করে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন। এর পর আয়ারল্যান্ডের মেয়ো কাউন্ট্রিতে তৃতীয় আর্ল অব আনরাউর এক স্টেটের ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
সেখানকার বর্গাচাষিদের কাছ থেকে জমির ভাড়া নিয়মিত আদায় করাই ছিল তার কাজ। সে সময় দেশটিতে জমির বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে গোলযোগ চলছিল। চাষিরা দাবি জানায়, ন্যায্য ভাড়া, বর্গা না বদলানো এবং ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিতে হবে। ১৮৭০ সালে আইন হলো, বর্গাচাষিরা উপযুক্ত দাম দিয়ে জমির মালিকও হতে পারবে। কিন্তু বয়কট যখন দায়িত্ব নিয়ে এলেন তখন চাষাবাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। ১৮৮০ সালে পার্লামেন্ট মেম্বার চার্লস পারনেলের নেতৃত্বে গঠিত হলো আইরিশ ন্যাশনাল ল্যান্ড লীগ। পারনেল ছিলেন বেশ জনপ্রিয় নেতা। তিনি আমেরিকা থেকে আইরিশদের জন্য সাহায্য নিয়ে এসেছিলেন। দেশে ফিরে ঘোষণা দেন, যদি কোনো বর্গাচাষি এমন কোনো জমিতে কাজ নেয়, যেখান থেকে তার আরেক বর্গাচাষি ভাই উৎখাত হয়ে গেছে, তবে তাকে সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়া হবে এবং জমির মালিক যদি বর্গাচাষিদের নির্ধারিত রেটে জমি বর্গা দিতে রাজি না হন, তবে তাকেও সামাজিকভাবে একঘরে করা হবে।
পারনেলের এ ঘটনার প্রথম শিকার হলেন বয়কট। বর্গাচাষিরা জমির রেট কমাতে বললেও তিনি তা করতে পারলেন না এবং চাষিদের বরখাস্ত করলেন। চাষিরা এতে খেপে যান। তারা বয়কটকে উচিত শিক্ষা দিতে চাইলেন। তারপরই তার জীবনে নেমে এলো বিভীষিকা।
চাষিরা দলবেঁধে তার বাসায় এলেন। তাদের সব কর্মচারী বয়কটকে ত্যাগ করে চলে গেল।
ফলে জমির ফসল তোলার মতো কোনো লোক রইল না তার। চাষিরা সবাইকে তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলল। বাজারে গিয়ে দেখলেন, কেউ তার কাছে কিছু বিক্রি করছে না।
এমনকি ডাকপিয়নও তার চিঠি বিলি করছে না। রীতিমতো সবাই তাকে একঘরে করে ফেলেছে। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে তিনি ব্রিটিশ সৈন্যদের পাহারায় ৫০ জন কৃষক এনে ফসল তোলার কাজ সারেন। পরের বছর নিরুপায় হয়ে বয়কট আয়ারল্যান্ড ত্যাগ করেন। কিন্তু ততদিনে সামাজিকভাবে একঘরে করার এ নিয়মকে বয়কটের নামে অভিহিত করা হয়ে গেছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন/রকমারি ডেস্ক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।