আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টেম সেল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান (শেষ পর্ব)

নিচের লিংক দুইটিতে স্টেম সেলের লেখা আছে যাদের স্টেম সেল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে জানার আগ্রহ আছে তারা পড়তে পারেন, আশা করি ভাল লাগবে। স্টেম সেল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান-পর্ব-১ স্টেম সেল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান - পর্ব-২ ভ্রুনিয় স্টেম সেলের মত iPS কোষও প্রতিনিয়ত বিভাজিত হতে পারে এবং পৃথকইকরনের মাধ্যমে অন্য যেকোনো ধরনের দেহ কোষে রুপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু iPS কোষ ছিল পৃথকীকৃত একটি নির্দিষ্ট দেহকোষ, যার ফলে iPS কোষগুলো ত্বকের কোষ অথবা পেশীকোষ হিসেবে তার পূর্ববর্তি জীবনের কিছু সৃতি এখনও ধরে রাখতে পারে। সম্প্রীতি গবেষণায় দেখা গেছে iPS কোষগুলো সৃতি ধরে রাখে কিছু এপিজেনেটিক markers আর মাধ্যমে, এই মার্কারগুলো হচ্ছে ডিএনএ এর সাথে যুক্ত মিথাইল, এসেটাইল এবং অন্য অন্য রাসায়নিক গ্রুপ যা কিনা কোন নির্দিষ্ট জীনকে সক্রিয় এবং নিস্ক্রিয় করে রাখতে পারে। কোষ পৃথকীকরণের সময় এই মার্কারগুলো অর্জন করে, কিন্তু iPS কোষে পরিণত হওয়ার পরও ডিএনএ কিছু কিছু মার্কার ধরে রাখে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদালয়ের গবেষক George Daley কোষের এই সৃতি ধরে রাখার বাপারটি লক্ষ করেন। তিনি দেখতে পান যে যে iPS কোষ পূর্বে রক্তের কোষ ছিল তা থেকে সহজে রক্ত তৈরি করা সম্ভব কিন্তু, যে iPS কোষ পূর্বে ত্বকের কোষ ছিল তা থেকে রক্ত তৈরি করা অপেক্ষাকৃত কঠিন। George Daley ও অন্য গবেষক দল দেখতে পান যে iPS কোষ কিছু কছু এপিজেনেটিক মার্কার ধরে রাখে, যার ফলে iPS কোষেও তার মাতৃ কোষের কিছু জীন সক্রিয় এবং নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এখন প্রশ্ন হল আমারা কীভাবে এই মার্কার গুলোকে ডিএনএ থেকে সরাতে পারি, যখন আমারা এই মার্কারগুলোকে সরাতে পারব একমাত্র তখনি বলতে পারব যে iPS কোষ ভ্রুনিয় স্টেম সেলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। স্টেম সেল নিয়ে গবেষণার কারন হচ্ছে যেন স্টেম সেলকে রুগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়।

স্টেম সেল থেকে কান্সার হওয়ার ঝুকি থাকার কারনে অনেক বিজ্ঞানী এই iPS কোষকে এখনও চিকিৎসার জন্য ব্যাবহারের বিপক্ষে। তাহলে আমরা কি এমন কোন ওষুধ বের করতে পারি না যা, রুগীর শরীরের অন্য কোষ থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষ তৈরিতে প্রভাবিত করবে। এই ধারনা অনেকটা বাস্তব সম্মত মনে হওয়ায় কিছু গবেষক এই বিষয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী দেখাতে পেরেছে যে, স্টেম সেল তৈরি না করে সরাসরি এক জাতের কোষ থেকে অন্য জাতের কোষ তৈরি করা সম্ভব। এই পদ্ধতিকে বলা transdifferentiation, খুব আকর্ষণীয় পদ্ধতি হওয়ায় অনেক বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছে।

২০০৮ সালে হার্ভার্ড গবেষক Qiao (Joe) Zhou and Douglas Melton অগ্নাসয়ের একধরনের কোষকে অন্য ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম beta-islet কোষে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। beta-islet কোষ হচ্ছে সেই কোষ যা টাইপ-১ ডায়েবাটিক রুগীর ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যা ফলে তারা ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার প্রধান সুবিধা হচ্ছে রুগীর দেহের পরিবেশেই কোষগুলো তৈরি। ২০১০ সালে Marius Wernig র তত্ত্বাবধায়নে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইদুরের fibroblasts কোষকে নিউরনে পরিণত করতে সক্ষম হয়, যা গবেষণার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে। তার এক বছর পরেই তারা মানব fibroblasts কোষকে নিউরনে পরিণত করতে সক্ষম হয়।

তারা যে নিউরন তৈরি করেছিল টা শুধু কোন নির্দিষ্ট নিউরন ছিল না কিন্তু তারা ছিল বিভিন্ন ধরনের নিউরনের মিশ্রণ। একই বছর অন্য এক দল গবেষক fibroblasts কোষকে একটি নির্দিষ্ট নিউরন কোষে পরিণত করতে সক্ষম হয়, যা ডোপামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে। ডোপামিনের কাজ হচ্ছে নড়াচড়া করতে সাহায্য করা, আর পারকিন্সন রোগের ক্ষেত্রে রুগীর এই রাসায়নিক পদার্থ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কোষগুলো ধংশ হয়ে যায়। এখনও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না যে সরাসরি একধরনের কোষগুলো অন্য ধরনের কোষে পরিণত হয় নাকি, মধ্যবর্তী কোন undifferentiated অবস্থার অন্য ধরনের কোষে পরিবর্তিত হয়। এখন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর জানা নেই।

এ পক্রিয়া মানুষের ব্যাবহারের উপযোগী করে তোলার আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। গবেষকরা পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেল ব্যাবহার নিয়ে গবেষণা করছে, এই পক্রিয়ার প্রধান সুবিধা হচ্ছে কোষগুলোকে কোন ভ্রুন থেকে সংগ্রহ করতে হয় না যার ফলে কোন ethical প্রশ্ন আসে না। বয়স্ক স্টেম সেল ব্যাবহারের প্রধান বাধা হচ্ছে এরা খুব কম পরিমানে থাকে, এবং টিস্যুর অনেক গভীরে থাকায় সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু চিকিৎসকরা পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেল প্রায় ৪০ বছর আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছে, প্রধানত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন এবং ত্বকের গ্রাফটিং করার ক্ষেত্রে। এখন বিজ্ঞানীরা অন্য অন্য ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেল ব্যবহার করার চিন্তা ভাবনা করছে, কিন্তু এখনও তারা নিশ্চিত না এই স্টেম সেল গূলোর উৎস কী এবং কখন কোন পরিবেশে এরা নির্দিষ্ট জাতের কোষে রূপান্তরিত হয়।

যদি এই রহস্যগুলো ভেদ করা যায় তাহলে আমারা ওষুধ মাধ্যমে পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেল কে ব্যাবহার করে নষ্ট হওয়া কোষগুলোকে পরিবর্তন করতে পারব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, হার্ট অ্যাটাক হৃদপিণ্ডের পেশীকোষগুলোকে নষ্ট করে দেই। হৃদপেশীর পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষগুলো পরিবর্তন করে নতুন কোষ তৈরি করে হৃদপেশী ঠিক করতে পারবার কথা ছিল। কিন্তু এখনও স্টেম সেল চেষ্টা করে কিন্তু সংখ্যায় খুব অল্প হওয়ায় তার কোন ফলাফল আমারা দেখতে পারি না। ২০১১ সালে কিছু গবেষক একটি আমিষ অনুর সন্ধান পান যা পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেল থেকে হৃদপিণ্ডের পেশীকোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।

যদি এই আমিষ ব্যবহার করে দ্রুত অনেক বেশি সংখ্যক হৃদপিণ্ডের পেশীকোষ তৈরি করা যায় তাহলে ডাক্তার এই আমিষের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডকে নিজে নিজে ঠিক করে নেয়ার একটা পদ্ধতি দিতে পারবে। স্টেম সেল আমাদের শিক্ষা দিতে পারে কীভাবে ভ্রুন থেকে মানব দেহ তৈরি হয়, কোন রোগ হলে দেহের কি পরিবর্তন হয়। নতুন ড্রাগ ডিজাইন এবং পরীক্ষা করার জন্য স্টেম সেল ব্যবহার অনেক নিরাপদ। নুতন ড্রাগ প্রথমে স্টেম সেলের উপর টেস্ট করে, কোন ড্রাগের ক্লিনিকাল টেস্টের সময় অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রুগীকে রক্ষা করা যেতে পারে। আর স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা ডিজেনারাটিভ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কিছু কিছু রোগ যেমন macular degeneration এবং spinal cord injuries এর ক্ষেত্রে ডাক্তার চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা স্টেম সেল ব্যবহার করতে চান। স্টেমকে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে, হয়তো এদের মধ্যে গুটি কয়েক হয়তো চিকিৎসার জন্য অনুমোদন পাবে। তার আগে যে বাপার গুলো নিশ্চিত করতে হবে তা হল, স্টেম সেল চিকিৎসা জেন রুগীর জন্য নিরাপদ হয়, দেহের যে অংশে সেল থেরাপি দেয়া হবে সেখান থেকে স্টেম সেল যেন দেহের অন্য কথাও ছড়িয়ে না পরে, দেহের রোগপ্রতিরোধ সিস্টেম যেন কোষগুলোকে নষ্ট করে না দেয়। আরও একটা বাপার অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তা হল স্টেম সেল কোন ভাবেই যেন কান্সার কোষে পরিণত না হয়। আর এইসব কারনেই, কোষ থেরাপির মাধ্যমে macular degeneration আর চিকিৎসার জন্য চোখ একটি সবিধাজনক অবস্থায় আছে কারন কোষ মানুষের রোগপ্রতিরোধ সিস্টেম থেকে blood–brain barrier এর মাধ্যমে আলাধা করা তাছারাও চোখকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর্যাপ্ত হাতিয়ার ডাক্তারদের কাছে আছে।

স্টেম সেল ব্যাবহার করে অন্ধত্বের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ আছে যেমন, প্রথমে ভ্রুনিয় স্টেম সেল থেকে রেটিনার কোষ তৈরির জন্য একটি রেসিপি তৈরি করতে হবে। তারপর পরীক্ষাগারে তৈরি করা কোষ দিয়ে প্রথমে অন্য প্রাণীর উপর পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোষগুলো রোগ সারাতে সক্ষম কিনা। কিছু কিছু ইদুরের macular degeneration অথবা Stargardt's macular dystrophy তাদেরকে এই কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। যখন বিজ্ঞানীরা তাদের পরীক্ষাগারে তৈরি করা রেটিনা কোষ অন্য কোন প্রাণীর রেটিনাতে প্রবেশ করায় তখন তার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এখন বিজ্ঞানীরা খুব আল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে এই কোষ থেরাপি কি ফল হয় তা দেখছে।

যদি তারা দেখে যে, এই স্টেম সেল থেরাপি মানুষের জন্য নিরাপদ এবং চখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে তাহলে এই স্টেম সেল থেরাপি সত্যিকার অর্থেই কাজ করে কিনা দেখার জন্য তারা অধিক সংখ্যক রুগীর উপর পরীক্ষা চালাবে। আরও একটি আশার খবর হচ্ছে Geron, নামের একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি স্টেম সেল নির্ভর থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে তারা ভ্রুনীয় স্টেম সেল থেকে নিউরন তৈরি করে সেটা দিয়ে spinal cord injuries চিকিৎসা করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করছে। যেকোনো ইনজুরির কারনে স্নায়ু কোষ নষ্ট হয়ে গেলে তা খুব কম ক্ষেত্রেই পুনারায় আবার তৈরি হয় না কারন হচ্ছে স্নায়ু কোষের বাইরের যে মায়লিন নামক প্রোটিনের যে রক্ষাকারি আবরন থাকে তা নষ্ট হয়ে যায়। প্রোটিনের এই আবরনকে ইলেক্ট্রিক তারের বাইরে যে রাবারের আবরন থাকে তার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। oligodendrocytes নামক একধরনের কোষ এই স্নায়ু কোষের চারদিকের এই আবরন তৈরি করেন।

তাই বিজ্ঞানীরা ধারনা করলেন যে তারা যদি এই oligodendrocytes কোষকে নতুন কোষ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারে তাহলে এই কোষগুলো স্নায়ুকোষের চারদিকে মায়েলিনের আবরন তৈরি করবে এবং স্নায়ুকোষের পুনরায় তৈরি হওয়ার জন্য যেসব ফ্যাক্টর দরকার তাও সরবরাহ করবে। সেজন্য তাদের অবশ্য ভ্রুনিয় স্টেম সেল থেকে কীভাবে oligodendrocytes তৈরি করা যায় তার রেসিপি তৈরি করতে হবে, অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষার পর Dr. Keirstead এর তত্ত্বাবধায়নে গবেষক দল ভ্রুনিয় স্টেম সেল থেকে oligodendrocytes তৈরিতে সক্ষম হয়। যখন এই কোষ গুলোকে ধারা ইদুরকে চিকিৎসা দেয়া হয় তখন তাদের স্নায়ু কোষের চারদিকে মায়েলিনের আবরন তৈরি হয়, এবং ইদূরগুলো নাড়াচাড়া করতে সক্ষম হয়। Garon এখন এই কোষ থেরাপি spinal cord injuries এর রুগীদের জন্য ফলদায়ক কিনা তা পরীক্ষা করে দেখছে। মানব রোগপ্রতিরোধ সিস্টেম যেন কোষগুলোকে নষ্ট না করে দেয় সেজন্য বিজ্ঞানীরা iPS ব্যবহার করার চিন্তা করেছে।

এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা রুগীর দেহ থেকে কোষ নিয়ে iPS তৈরি করবে এবং সেখানে রোগ সারানোর জন্য যেধরনের মেরামত দরকার তা সম্পন্ন করে রুগীর দেহে স্থাপন করা হয়। আর চিকিৎসার জন্য চোখ একটি সবিধাজনক অবস্থায় আছে কারন কোষ মানুষের Advanced Cell Technology কোষ থেরাপির ক্ষেত্রে একটা বড় সুবিধা পাচ্ছে তা হল, স্টেম সেল ব্যবহার করে গবেষকরা পরীক্ষাগারে তাদের পছন্দের কোষগুলো তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে কীভাবে পরীক্ষাগারে স্টেম সেল থেকে বিভিন্ন দরনের কোষ তৈরি করতে। অনুবাদ- Nirupama Shevde (2012) Stem Cells: Flexible friends Nature, 483, S22–S26, doi:10.1038/483S22a বিঃ দ্রঃ জেনারেল হওয়ার পর আমার প্রথম পোস্ট (রেজিঃ করার ১ মাস ৩ সপ্তাহ পর)। মডূকে ধন্যবাদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।